গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন কয়টি

সুপ্রিয় পাঠকগন গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন কয়টি বিষয় লিখতে বসলাম। আজকে আরো আলোচনা করা হবে গর্ভবতী মায়ের চেকাপ কয়টি। নবজাতকের বিপদ চিহ্ন। গর্ভকালীন সময়ে করণীয়। বিষয়গুলো অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আমরা যদি গর্ভকালীন সময় মায়ের যত্ন নিতে পারি তাহলে সুস্থ সবল শিশু পেতে পারি।
মায়ের যত্ন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রকম চেকআপ সহ খাবারের মান উন্নয়ন করতে হবে। যা আজকের এই আর্টিকেলে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। এগুলো জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

ভূমিকা

একজন সুস্থ সবল গর্ভবতী সুস্থ সবল নবজাতক শিশুর জন্মদান করতে পারে। গর্ভবতী মহিলারা সুস্থ সবল থাকার জন্য পর্যাপ্ত নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। সবচেয়ে বেশি দরকার একজন গর্ভবতী নারী কমপক্ষে ৮ থেকে ১২ টি চেকআপ করা। মায়ের স্বাস্থ্য ও নবজাতক শিশুর বৃদ্ধির জন্য সুষম খাবার অত্যন্ত প্রয়োজন।
চিন্তা করতে হবে তাদের খাবার থেকেই গর্ভস্থ শিশুরা পুষ্টি গ্রহণ করে। যার কারণে প্রোটিন ভিটামিন ও খনিজ খাবারের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়াও খাবারের মেনুতে দুধ ও ফলমূল রাখার প্রয়োজন। আজকের বিষয় গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন কয়টি। বিষয় জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

গর্ভবতী মায়ের চেকআপ কয়টি

মহিলারা গর্ভধারণের পর যত দ্রুত সম্ভব গর্ভকালীন চেকআপ শুরু করার প্রয়োজন। গর্ভবতীদের কে যদি নিয়মিত চেকআপ করা যায় তাহলে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমে যায়। মহিলাদের প্রেগনেন্সি টেস্ট করার পরে গর্ভধারণের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায়। গর্ভধারণের পর থেকে প্রসব পর্যন্ত সময়কে গর্ভকাল বলা হয়।

বিভিন্ন রকম গবেষণায় দেখা গেছে যে সকল মহিলাদের কমপক্ষে চারবার চেকআপ করা হয়েছে তাদের তুলনায় যে সকল মহিলাদের চেকআপ নিয়মিত করা হয়নি তাদের জটিলতা অনেক বেশি। গর্ভকালীন সময় সাধারণত রক্তশূন্যতা, অকাল প্রসব, মৃত সন্তান প্রসব, কম ওজনের সন্তান জন্মদান, শুদ্ধ যা শিশুর শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, সহ বিভিন্ন জটিল রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নারীদের গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে ৮ বার চেকআপ করার সুপারিশ করেছেন। তবে এর চাইতে বেশি চেকাপ করলে ক্ষতি নাই বরং ভালো।গর্ভকালীন নারীদের চেকআপের বিবরণ।

*চেকআপের প্রথম দিন থেকে গর্ভকালীন ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি মাসে একবার করে চেকআপ করতে হবে।
*২৯ সপ্তাহ থেকে ৩৬ সপ্তাহ পর্যন্ত প্রতি দুই সপ্তাহে একবার চেকআপ করতে হবে।
*৩৭ সপ্তাহ থেকে প্রসবের আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার চেকআপ করা প্রয়োজন।

বাংলাদেশ সরকারের সুপারিশ হল গর্ভকালীন সময়ে কমপক্ষে চারবার গর্ভকালীন চেকআপ করতে হবে। নিয়মিত চেকআপের মাধ্যমে একজন সুস্থ মা একজন সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারেন। এছাড়াও মা ও শিশুর মৃত্যুহার কমে যায়।

গর্ভকালীন সময়ে নারীদের চেকআপের বিষয় লক্ষ্য করলে দেখা যায় গ্রামের মেয়েদের চারবার চেকআপ করার পরিমাণ অনেক কম। তবে শহরের মেয়েদের ক্ষেত্রে চেকআপের পরিমাণ অর্ধেক। সাধারণত নিম্নলিখিত জায়গা গুলোতে চেকআপ করানো যায়।

*মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
*সদর হাসপাতাল।
*উপজেলা হেলথ কমপ্লেক্স।
*নগর মাতৃসদন কিংবা মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র।
*কমিউনিটি ক্লিনিক।
*স্যাটেলাইট ক্লিনিক।
*এনজিও ক্লিনিক যেমন সূর্যের হাসি ক্লিনিক ও সাজিদা ফাউন্ডেশন।
*প্রাইভেট হাসপাতাল।
*গাইনি ও প্রসূতি বিদ্যা ডাক্তারের চেম্বার।

বাড়িতে অথবা নিজের অধীনে কোন গর্ভবতী মহিলা থাকলে তাকে নিয়মিত চেকআপ করে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমানো প্রয়োজন। আজকের আর্টিকেলের বিষয় গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন কয়টি।

গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন কয়টি

কেউ পাঠকগণ আমাদের সবারই জানা প্রয়োজন গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন কয়টি। আসুন জেনে নিই গর্ভবতী মহিলাদের বিপদ চিহ্ন গুলো।
রক্তস্রাবঃ গর্ভাবস্থায় যেকোনো সময় রক্তস্রাব বিপদ চিহ্ন প্রকাশ করে। যদি প্রথম ত্রৈমাসিক যোনিপথে রক্তস্রাব হয় এছাড়াও মাসিকের মত পেটে ব্যথা হলে, হঠাৎ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে, জরায়ুর বাহিরে গর্ভধারণের লক্ষণ। এছাড়াও মাসের প্রথম দিকে অথবা দ্বিতীয় মাসে পেট ব্যথাসহ রক্তস্রাব হলে গর্ভপাতের লক্ষণ হতে পারে।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে রক্তচাপ হলে প্লাসেন্টাল এবরাপসন এর কারণ হতে পারে। যার ফলে প্রসবের আগেই গর্ভফুল আলাদা হয়ে যায়। এর ফলে গর্ভকালিন শিশু মায়ের শরীর থেকে পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি উপাদান পায় না।

খিচুনি হতে পারেঃ গর্ভাবস্থায় প্রসবের সময় অথবা প্রসবের পরে খিচুড়ি হলে বোঝা যাবে বিপদ চিহ্ন। খিচুনি এক্লাম্পসিয়ার প্রধান লক্ষণ। গর্ভাবস্থায় এক্লাম্পসিয়া একটি মারাত্মক জটিলতা। সঠিক চিকিৎসা না নিলে মা ও শিশু উভয়ের ক্ষতি হয়।

মাথাব্যথা ও চোখে ঝাপসা দেখাঃ গর্ভাবস্থায় যে কোন সময়ই তীব্র মাথাব্যথা, এছাড়া চিকিৎসা করার পরেও মাথাব্যথা ভালো হয় না, আস্তে আস্তে খারাপের দিকে যায় তাহলে এই লক্ষণ গর্ভবতীদের জন্য বিপদজনক অবস্থা নির্দেশ করে।

এছাড়াও মাথাব্যথার সঙ্গে সঙ্গে চোখের ঝাপসা দেখা, শরীরে পানি আসা, ইত্যাদির সমস্যা হতে পারে। এই চিহ্নগুলো প্রিএক্লাম্পসিয়ার লক্ষণ। সময় মতো ইহার সঠিক চিকিৎসা না করলে মা ও শিশু উভয়ের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

পর্যাপ্ত জ্বরঃ গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০৪° ফারেনহাইট এর বেশি হলে ইহা শিশু ও মায়ের জন্য বিপদ চিহ্ন। গর্ভাবস্থায় অথবা প্রসবের পরে টানা তিন দিন এরকম জ্বর ও সাথে যোনিপথে দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব নিঃসৃত হলে শরীরে কোন ধরনের ইনফেকশন হয়েছে বলে নির্দেশনা দেয়। যা গর্ভাবস্থায় মা ও শিশু উভয়ের জন্য ক্ষতিকর।

কিছু গবেষণায় জানা যায় গর্ভাবস্থায় জর গর্ভপাতের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় ১২ তম সপ্তাহের পরে গর্ভবতীর জ্বর হলে গর্ভে অটিজম শিশু হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় জ্বর আসলে তা দ্রুত কমানোর চেষ্টা করতে হবে। যদি জ্বরের অবস্থা খারাপ দিকে যায় তাহলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

বিলম্বিত প্রসবঃ প্রসব ব্যথা ১২ ঘণ্টার বেশি থাকলে সেটাকে বিলম্বিত প্রসব বলা হয়। বিলম্বিত প্রসবের সময় বাচ্চার মাথা ছাড়া অন্য কোন অঙ্গ বাহির হয়ে আসতে পারে। বিলম্বে প্রসব হলে জন্মের পর শিশুর শ্বাসকষ্ট ও খিচুনি হতে পারে।

অধিক মাত্রায় বমি হওয়াঃ গর্ভের প্রথম তিন মাস মেয়েদের কম বেশি বমন হয়। তবে অতিরিক্ত বমন মায়ের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। মায়ের দেহে পানি শূন্যতা, শরীরে খনিজ পদার্থের ঘাটতি, কিডনি ফেইলর, জন্ডিস, খিচুনি সহ অনেক জটিলতা হতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপঃ গর্ভবতী মায়ের জন্য উচ্চ রক্তচাপ একটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা। উচ্চ রক্তচাপের ফলে কম ওজনের শিশুর জন্মদান, অপরিনত অবস্থায় শিশুর জন্ম, সিজার করার সম্ভাবনা, বেড়ে যায়। গর্ভাবস্থায় উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে ইউরিনে প্রোটিন অথবা এলবুমিন পাওয়া গেলে বুঝতে হবে রোগী প্রিএক্লাম্পসিয়ায় ভুগতেছেন।

এই অবস্থায় তাড়াতাড়ি চিকিৎসা না করলে মা ও শিশু উভয়ের মৃত্যুর ঝুকি বেড়ে যায়। অতএব এগুলো লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। সঠিক চিকিৎসার বিনিময়ে সুন্দর জীবন হতে পারে। আজকের আর্টিকেলের বিষয় গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন কয়টি।

নবজাতকের বিপদ চিহ্ন

সকল পিতা-মাতাই একটি সুস্থ সবল শিশুসন্তান চায়। তারপরেও জন্ম গ্রহণের পরে কিছু শিশুসন্তান জন্মগত ত্রুটি যুক্ত হয়। আবার কিছু শিশুসন্তান জন্মের পরে অসুস্থতার কারণে ত্রুটিযুক্ত হয়। সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরে সন্তানের জন্য বিপদ চিহ্ন গুলো আলোচনা করা হলো।

জন্মের সঙ্গে সঙ্গে কান্না না করাঃ শিশু সন্তান জন্মগ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে কেঁদে উঠবে। জন্মের সঙ্গে সঙ্গে যদি না কেঁদে ওঠে তাহলে বিপদ চিহ্ন। শিশু সন্তান জন্মের সঙ্গে সঙ্গে না কাঁদলে বুঝতে হবে নবজাতকের কোন সমস্যা হয়েছে অথবা পরবর্তীতে কোন সমস্যা হতে পারে। নবজাতককে দেখতে সুস্থ মনে হলেও নাকাদা বিপদ লক্ষণ।

নবজাতকের শরীর নীল হয়ে যাওয়াঃ নবজাতকের জন্মের পরপরই শরীর কানের লতি অথবা নাকের ডগা নীল হয়ে গেলে সেটি বিপদ লক্ষণ। নবজাতকের শরীর গরম করে রাখার পরেও যদি নীল রং এর পরিবর্তে গোলাপি রং ধারণ না করে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এছাড়াও নবজাতকের হাতের তালু পায়ের তালু ও পিঠের শিড়দাড়ায় আস্তে আস্তে মালিশ করতে হবে।

নবজাতকের শ্বাসকষ্ট হওয়াঃ নবজাতকের শ্বাসকষ্ট বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। যেমন শরীর নীল হয়ে যে শ্বাসকষ্ট হতে পারে। এছাড়াও শ্বাসকষ্ট হওয়ার সময় পেটের মাঝখানে বা কণ্ঠনালী ভেতরের দিক ডেবে যাওয়া। দ্রুত প্রথম শ্বাস নেওয়া শ্বাস বন্ধ হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ পাওয়া গেলে নবজাতকের বিপদ বুঝতে হবে। এই অবস্থায় ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

নবজাতকের খিঁচুনি হওয়াঃ নবজাতকের ক্ষেত্রে জোরে জোরে হাত-পা নড়ানো, চোখের পাতা উল্টানো, চোখের মনি ভিতর ঢুকে যাওয়া, চোখের সাদা অংশ বাহিরে চলে আসা ইত্যাদি লক্ষণ শিশুদের খিচুনি। শিশুদের খিচুনি হলে বিপদ লক্ষণ। দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

নবজাতকের নড়াচড়া কমে যাওয়াঃ নড়াচড়া কম করলে বিপদ মনে করতে হবে। সাধারণত রক্তের মধ্যে ইনফেকশন হলে এই সমস্যা হয় এছাড়াও দেখতে শান্ত লাগা, কাঁদে না, আদর করলে সাড়া দেয় না, বুকের দুধ খেতে কষ্ট হয়, অথবা দুধ খেতে পারে না, গরম কাপড় দিয়ে রাখলেও শরীর গরম হয় না, এমন অবস্থায় মনে করতে হবে বিপদ চিহ্ন। দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

নবজাতকের বমি হওয়াঃ নবজাতক কে কিছু খেতে দিলে সঙ্গে সঙ্গে বমি করতেছে অথবা কাশি হচ্ছে তাহলে বুঝতে হবে বিপদ চিহ্ন। এছাড়া বমণের সঙ্গে যদি রক্ত যায় তাহলে সেটিও বিপদ চিহ্ন। খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

অপরিণত শিশু জন্মগ্রহণঃ নির্দিষ্ট সময়ের আগেই শিশু জন্মগ্রহণ করলে অনেক সমস্যা হয়। এগুলো শিশুদের দ্রুত ইনফেকশন হয় এবং দ্রুত শরীর ঠান্ডা ও নিস্তেজ হয়। যার কারণে অপরিণত শিশু জন্মগ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ কে দেখাতে হবে।

শিশুর জন্মগত ত্রুটিঃ শিশুর জন্মগত ত্রুটি দেখে বোঝা যায় না। সমস্যাগুলোর মধ্যে হাত বা লিভারের সমস্যা। এগুলো বাহির থেকে বোঝা মুশকিল। পরীক্ষার মাধ্যমে সেগুলো বোঝা যায়। শিশুর ত্রুটি আছে মনে হলে শিশু বিশেষজ্ঞগনকে দেখাতে হবে।

অতএব শিশু জন্ম গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর অবস্থা ভালো করে দেখে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সমস্যা বুঝলেই ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। আজকের আর্টিকেলের বিষয় গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন কয়টি।

গর্ভকালিন সময়ে করনীয়

গর্ভকালীন সময়ে সঠিক নিয়ম কানুন মেনে চলল প্রসবকালীন কোন জটিল সমস্যা হয় না। এছাড়াও গর্ভকালীন সময়ে নির্দিষ্ট নিয়মে চেকআপের ফলে মা ও শিশু মৃত্যুর হার কমে যায়। গর্ভাবস্থায় সুষম খাবার গ্রহণের ফলে সুস্থ সবল নবজাতকের জন্ম হয়। গর্ভকালীন সময়ে নিয়ম মানার বিষয় আলোচনা করা হলো।
নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষাঃ সুস্থ সবল নবজাতক এর জন্য নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষা করার প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় প্রথম ৩০ সপ্তাহ প্রতি মাসে একবার করে চেকআপ করতে হবে। ৩০ মাসের পরের সময় থেকে প্রসব পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে একবার করে চেকআপ করা প্রয়োজন।

চেকআপের সময় ডাক্তারগণ আপনার রক্তশূন্যতা, পায়ে পানি আসা, রক্তচাপ, গর্ভের ভিতর শিশুর পজিশন ইত্যাদি পর্যবেক্ষণ করবেন।

সুষম খাবার গ্রহণঃ গর্ভাবস্থায় সুষুম খাবারের দিকে নজর দিতে হবে। সাধারণত স্বাভাবিক খাবারের চাইতে একটু বেশি খাবার খাওয়া প্রয়োজন। খাবার থেকে গর্ভস্থ শিশু পুষ্টি গ্রহণ করে। গর্ভাবস্থায় ফলমূল দুধ নিয়মিত খাওয়ার প্রয়োজন। এছাড়াও ভিটামিন, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন, প্রোটিন, ও ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার নিয়মিত খাওয়া প্রয়োজন।

সময়মতো টিটেনাস এর টিকা গ্রহণঃ ডেলিভারির সময় নিরাপত্তার জন্য টিটেনাস এর টিকা গ্রহণ করা প্রয়োজন। আগে থেকে টিটেনাসের পাঁচটি ডোজ সম্পূর্ণ করা থাকলে নতুন করে কোন টিটেনাসের টিকা দেওয়ার প্রয়োজন নাই।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিনঃ গর্ভাবস্থায়ী ভারী কাজ এড়িয়ে চলুন। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া খুব জরুরী। রাতে ৭ থেকে ৯ ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। এছাড়াও দিনে ১ থেকে ২ ঘন্টা ঘুমাতে পারেন। প্রতিদিন নিয়ম মেনে একই সময় ঘুমাতে যাবেন এবং একই সময় ঘুম থেকে উঠবেন।

পূর্বের স্বাস্থ্য সমস্যা ও রোগ নিয়ন্ত্রণঃ পূর্বের কোন স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে অথবা কোন রোগ থাকলে সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ রাখার চেষ্টা করুন। সাধারণত যে রোগগুলো থেকে সাবধানে থাকতে হবে তাহলে।

*উচ্চ রক্তচাপ।
*হৃদরোগ।
*ডায়াবেটিস।
*যৌন রোগ।
*অটো ইমিউন রোগ।

সাধারণত খাবার অভ্যাস ও হালকা কাজকর্মের মাধ্যমে এগুলো রোগ নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে পারলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা কমে যাবে।

অতিরিক্ত খরচের জন্য সঞ্চয় করুনঃ গর্ভাবস্থায় অনাকাঙ্ক্ষিত জটিলতার কারণে অনেক খরচ হতে পারে। যার কারণে গর্ভবতী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিছু করে টাকা জমিয়ে রেখে সঞ্চয় করে রাখা প্রয়োজন। সমস্যা হলে উক্ত সঞ্চয়ের টাকা দিয়ে সমস্যা দূর করা সম্ভব হবে।

প্রয়োজনীয় হাসপাতালে যাওয়ার সিদ্ধান্তঃ গর্ভকালীন সময় কোন সমস্যা হলে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য পরিবেশ করে রাখতে হবে। যাহাতে কোন জটিলতা হলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে যাওয়া যায়।

প্রত্যেকটা পরিবারেরই আশা-আকাঙ্খা নবজাতক শিশুর যেন সুস্থ সবল রোগ মুক্ত হয়। সুস্থ সবল শিশুই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। যার কারণে সুস্থ ও সবল শিশু পাওয়ার জন্য গর্ভাবস্থায় পর্যাপ্ত সেবা শুশ্রূষা করতে হবে।

লেখকের মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠকগণ গর্ভবতী মায়ের বিপদ চিহ্ন কয়টি বিষয়ে আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। গর্ভবতী মায়েদেরকে খাবার ও চিকিৎসার ব্যাপারে অত্যন্ত যত্নবান হতে হবে। গর্ভবতী মায়েদেরকে সুস্থ রাখতে পারলে সুস্থ সবল শিশুর জন্ম হতে পারে। সাধারণত খাবারের ত্রুটি ও মাদের বিভিন্ন অসুস্থতার কারণে ত্রুটিপূর্ণ সন্তান জন্ম লাভ করে।

যাহা আমাদের কারোই কাম্য নহে। তাই আসুন গর্ভবতী মাদের যত্ন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য জানতে আজকের আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি উপকৃত হবেন। আপনারা উপকৃত হলে নিজেকে সার্থক মনে করব। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url