শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

প্রিয় পাঠক আজকের কনটেন্ট শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার। ডেঙ্গু রোগ অর্থাৎ ডেঙ্গু জ্বর ব্যাপারে সকল তথ্য আমাদের জানা প্রয়োজন। ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার পূর্বে এডিস মশা থেকে আমরা কি ভাবে বাচতে পারি সে ব্যাপারে জানতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর হলে কি কি সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে সে বিষয়ে জানতে হবে। আসুন ডেঙ্গু জ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাময়ে এগিয়ে যাই।

ভূমিকা

ডেঙ্গু জ্বর ভাইরাস জনিত। সাধারণত এডিস মশা দ্বারা আক্রান্ত হয়ে এ জ্বর হয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্তের কারণে জ্বর মাথা ব্যাথা বমি বমি ভাব, পেশী ও জয়েন্টে ব্যথা, শরীরে ফুসকুড়ি বাহির হয়। একটু সচেতন হলে ডেঙ্গু রোগ হতে রক্ষা পাওয়া যায়।
তাই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে আতঙ্কিত না হয়ে নিরাময়ে চেষ্টা করতে হবে। আজকের কনটেন্ট শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার। সাধারণত শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত বেশি হয়। তাই আসুন আমরা ডেঙ্গু জ্বর এর বাহকেএডিস মশার বাসস্থান ধ্বংস করি।

শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণঃ মশা বাহিত ভাইরাস জাতীয় রোগ হল ডেঙ্গু রোগ। মহিলা এডিস মশার কামড়ের কারণে এটি হয়। সাধারণত লক্ষণ গুলি মশা কামড়ের ৪ থেকে ৭ দিন পরে দেখা দিতে পারে এবং ১০ থেকে ১২ দিন স্থায়ী হতে পারে।
কিছু লক্ষণ জানার পরে আমরা ডেঙ্গু রোগ হিসেবে চিহ্নিত করি। এরপরে রক্তের কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা করে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায়। শিশুদের ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলো।

*সাধারণত ডেঙ্গুর লক্ষণ গুলি হল পর্যাপ্ত জ্বর হবে। ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট থেকে ১০৪ডিগ্রি ফারেনহাইট তাপমাত্রা থাকতে পারে।
*জ্বর একনাগারে থাকতে পারে অথবা মাঝে মাঝে ছেড়ে ছেড়ে জ্বর আসতে পারে।
*মাথা ব্যথা, চোখের পিছনে ব্যথা, চামড়ায় লালচে দাগ অথবা ফুসকুড়ি অথবা গোটা শরীর অথবা গিটে ব্যথা হতে পারে।
*মাংসপেশী এবং অস্থিসন্ধি অত্যাধিক যন্ত্রনায় কাতড়াবে।
*মাথা ঘোরা বমি ভাব হওয়া এবং বমিও হতে পারে।
*শরীরের গ্রন্থিগুলো ফুলে যাওয়া। প্রচন্ড পেট ব্যথা করতে পারে।
*নাক ও দাতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। অনিয়ন্ত্রিত পায়খানা এবং প্রস্রাব ও পায়খানার সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।
*অত্যাধিক শরীর ক্লান্ত এবং দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস ও বিরক্তিকর অবস্থা হতে পারে।
*ডেঙ্গুর জীবাণু রক্তনালী কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। রক্তের প্লাটিনেট কমিয়ে দেয়।
*কোন আঘাত ছাড়াই ত্বকে ক্ষত অথবা সূক্ষ্ম ক্ষত হতে দেখা যায়।
*সঠিক চিকিৎসা না করলে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।

ডেঙ্গু রোগের প্রতিকারঃএডিস মশা আক্রান্তে ডেঙ্গু জ্বর হয়। ডেঙ্গু জ্বর হলে শুধু প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে। ডাক্তারগণ অন্য কোন ওষুধ খেতে নিষেধ করেন। সাধারনত শরীর ব্যথা হয়। এইজন্যে অনেকে ব্যথা নাশক ঔষধ খান। ডেঙ্গু জ্বর হলে কোন রকমেই ব্যথা নাশক ওষুধ খাওয়া যাবেনা।

ব্যথা নাশক ওষুধ খাওয়ার ফলে শরীরে যেকোনো সময় রক্তক্ষরণ হতে পারে। যার পরিণাম ভয়াবহ এমনকি মৃত্যু হতে পারে। চিকিৎসকরা ডেঙ্গু জ্বর হলে তরল খাবার খেতে বলেন। যেমন ভাতের মাড়, স্যালাইন, ডাবের পানি, ফলের রস, লেবু পানি ইত্যাদি। ডেঙ্গু জ্বর হলে তরল খাবার খেলে ৯০ ভাগ রোগ কমার সম্ভাবনা থাকে।

এছাড়া শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন।ডাল মুরগির মাংস কবুতরের মাংস ছোট মাছের ঝোল ও ডিমের ঝোল খেতে হবে। ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার ফলে রক্তের প্লাটিনেট কমে যায়। যেগুলো খাদ্য প্লাটিনেট বাড়ায় সেই খাদ্য খেতে হবে।

যেমন সাইট্রাস জাতীয় ফলের রস, কাঠবাদাম, চিনাবাদাম, আখরোট, দই, সূর্যমুখীবীজ, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি, পালং শাক, ইত্যাদি খেতে হবে। আদা রসুন হলুদ গ্রিন টি ইত্যাদি খাবার বেশি খেতে হবে। পেয়ারার রস খেতে হবে। পেয়ারার রস খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। নিম পাতার রস খেলে রক্তের প্লাটিনেট বাড়ে।

এছাড়া রক্তের শ্বেত কণিকাও বাড়ে। এজন্য নিম পাতা খাওয়ার প্রয়োজন। তাছাড়া নিমপাতার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে বারবার শরীর কুসুম কুসুম গরম পানি দিয়ে মুছতে পারেন। পরিপূর্ণ বিশ্রাম গ্রহণ করুন। কোন ভারী কাজ অথবা ব্যায়াম করা যাবে না।

ডেঙ্গু জ্বর কত দিন থাকে

এডিস মশা কামড়ানোর কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয়। তবে মশা কামানোর সঙ্গে সঙ্গে জ্বর হয় না। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধান ডাক্তার সাবেরা গুল নাহার বলেন এডিস মশা আক্রান্তের ৫ থেকে ৭ দিনের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।

এই সময়কে বলা হয় ইনকিউবেশন পিরিয়ড। সাধারণত এডিস মশা আক্রান্তের ৬থেকে৭ দিন পরে ডেঙ্গু জরের লক্ষণ ও প্রকাশ পায়। আর এই জ্বর ৬-৭ দিন থাকে। ডাক্তার গুলনাহার বলেন ডেঙ্গু জ্বর হলে ৬-৭ দিনের মধ্যে চিকিৎসা করলে ভাইরাস নষ্ট হয়ে যায়। আর ভাইরাস নষ্ট হয়ে গেলেই ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যায়। তাই আসুন শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার এর ব্যবস্থা করি।

ডেঙ্গু রোগের প্রতিরোধ

ডেঙ্গু জ্বর যেহেতু মশাবাহিত রোগ। তাই নিজে ও পরিবার মশা থেকে বাচতে হবে। বাড়ির চারপাশে কোন পানির জমতে দেওয়া যাবে না। সাধারণত পরিষ্কার কোন পাত্র ডাবের খুলি এগুলোতে যেন পানি না জমে। বাড়ির পাশে থাকা গাছের টপ ফুলদানি অথবা যে কোন পাত্রে পানি থাকে সেগুলো দূর করতে হবে। 

বাড়িতে এয়ারকন্ডিশন থাকলে এয়ারকন্ডিশনের নিচে পানি পড়লে উক্ত প্রাণী পাঁচ দিনের বেশি রাখা যাবে না। এয়ারকন্ডিশনের পানি পাঁচ দিনের বেশি রাখলে সেখানে এদ্রিস মশার বংশবিস্তার লাভ করতে পারে। বাড়ির বাহিরে অব্যাহত গাড়ির টায়ার নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত চৌবাচ্চা পরিদপ্তর টিনের কোটা প্লাস্টিকের বোতল এবং পরিত্যক্ত হাড়ি ডাবের খুলি ইত্যাদি রাখা যাবে না। 

এগুলো রাখলে পানি জমে ইলিশ মশার বংশবিস্তার লাভ করতে পারে। এছাড়া বাড়ির চারপাশে ময়লা আবর্জনা দূর করে বাড়ি পরিষ্কার করে রাখতে হবে। ডেঙ্গু ভাইরাস বাহির মশা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যার আগে খুব সক্রিয় থাকে। 

তাই এই সময় একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। রাতে শোয়ার সময় মশারি খাটিয়ে ঘুমাতে হবে। মশা নিধন কেমিক্যাল যেমন প্যারামিথ্রিন প্রতি সপ্তাহে বাড়ি চারপাশে স্প্রে করুন।

ডেঙ্গু রোগের কারণ

এডিস মশা কামড়ানোর কারণে ডেঙ্গু জ্বর হয এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানিতে বংশবৃদ্ধি করে। এগুলো মশা দেখতে গায়ে সাদা ডোরাকাটা দাগ থাকে। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের ভাষায় বলেন সব এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু জ্বর হবে না। পরিবেশ থেকে ভাইরাস যদি এডিস মশায় সংক্রমিত হয়।

তাহলে উক্ত মশা কামড়ালে ডেঙ্গু জ্বর হবে। স্ত্রী এডিস মশা ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে। তাই স্ত্রী এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু জ্বর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়াও ডেঙ্গুজরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এডিস মশা কামড়ানোর ফলে ভাইরাস সংক্রমিত হয় এই মশা কামড়ালে ডেঙ্গু জর হবে।

এজন্য এডিস মশা আক্রান্ত হয়ে জ্বর হলে যত্ন সহকারে চিকিৎসা করতে হবে। সাধারণত এই মশা ভোর বেলায় অথবা সন্ধ্যার পূর্বে বেশি কামড়ায়। মেডিকেল রিপোর্ট থেকে জানা গেছে ১৭৭৯ সাল থেকে থেকে ডেঙ্গু জ্বরের অস্তিত্ব আছে। তবে বিংশ শতাব্দীতে এ রোগের প্রকোপ অনেক বেশী। এ রোগ সম্পর্কে আমাদের জানা দরকার। আজকের কনটেন্ট শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকার।

ডেঙ্গু হলে যা খাবেন

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। যেমন ভিটামিন সি জাতীয় ফল বিভিন্ন ধরনের লেবু সবুজ শাকসবজি আমলকি পেয়ারা ইত্যাদি খেতে হবে। জিংক জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন সামুদ্রিক মাছ মটরশুটি বিভিন্ন প্রকার বাদামে প্রচুর জিংক থাকে।
তাই এগুলো খেতে হবে। আয়রন যুক্ত খাবার যেমন মাংস মটরশুটি কাচা কলা ডুম্বর ইত্যাদি খেতে হবে। ওটমিল ও পেঁপে খেতে হবে। নারিকেলের পানি সহ পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি খেতে হবে। যাহাতে শরীর সবসময় হাইডেট থাকে।

লেখকের মন্তব্য

সাধারণত মার্চ মাস থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুর আক্রান্ত অনেক বেশি থাকে। এই সময় শিশুর ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ ও প্রতিকারের ব্যবস্থা করা দরকার। এছাড়াও বড়দের ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে জানা দরকার।

ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধে এডিস মশাকে নিধন করার ব্যবস্থা করতে হবে। তাই আসুন ডেঙ্গু সম্পর্কে সচেতন হই। আজকের এই কনটেন্ট আশা করি ভালো লাগবে। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url