কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার ১২টি ঘরোয়া উপায়

প্রিয় পাঠক বৃন্দ কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার ১২টি ঘরোয়া উপায় বিষয়ে আজকের আর্টিকেল লিখতে বসলাম। এছাড়া আজকের আর্টিকেলে আরো লেখা হবে কিডনি ড্যামেজ এর লক্ষণ। কিডনি 
ইনফেকশনের লক্ষণ। কিডনি ভালো রাখার জন্য কি খাবেন। কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভাল হয়।




















কিডনি অত্যন্ত জটিল ও মারাত্মক রোগ। এ রোগের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সবার জন্য সম্ভব নয়। যার কারণে পূর্ব থেকে কিডনির পরিচর্যার মাধ্যমে কিডনি ভালো রাখা যায়। কিডনি ভালো রাখারও উপায় সম্পর্কে জানতে আমাদের আর্টিকেলটির এর সঙ্গে থাকুন।

ভূমিকা

আজকের আর্টিকেলের বিষয় কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার ১২টি ঘরোয়া উপায়। কিডনি আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। কিডনির মাধ্যমে টক্সিন সহ সকল অপদ্রব্য অপ্রসারিত করে প্রস্রাব আকারের দেহের বাহিরে বের করে।এছাড়া হার্ট রক্ত বিশুদ্ধ করলেও প্রায় ২০ ভাগ রক্ত কিডনি বিশুদ্ধ করে।
কিডনির কার্যকারিতা কমে গেলে দেহের সকল অঙ্গানু নিস্তেজ হয়ে যায়। শুরু থেকে কিডনির যত্ন গ্রহণ করলে কিডনি ইনফেকশন ও ড্যামেজ এর মত সমস্যা হয় না। কিডনির যাবতীয় যত্ন ব্যাপারে আমাদের আজকের আর্টিকেলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এগুলো বিষয় জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ

কিডনি ড্যামেজ হতে থাকলে কিছু লক্ষণ বোঝা যায়। লক্ষণ হলে বোঝা যাবে কিডনি ড্যামেজ হয়েছে। আস্তে আস্তে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হতে শেষ পর্যন্ত ড্যামেজ হয়ে আমাদেরকে শেষ করে দেয়।

সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা যায় মানুষের মারাত্মক স্বাস্থ্য জটিলতা হার্ট অ্যাটাকের পরেই কিডনি ড্যামেজ সমস্যা। আজকের বিষয় কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার ১২টি ঘরোয়া উপায়।কিডনি ড্যামেজের লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলোঃ

ফোলা ভাবঃ হঠাৎ করে মুখ অথবা চোখের চারিপাশে অত্যাধিক ফুলে যায় তখন লক্ষ্য করতে হবে কিডনি ড্যামেজ হয়েছে কিনা। পায়ের গোড়ালি পা অথবা শরীর ফুলে যদি দুই সপ্তাহ থাকে তাহলে ধরে নিতে হবে কিডনি ড্যামেজ হয়েছে। কিডনি ড্যামেজ হওয়ার কারণে শরীর থেকে পানি বাহির না হওয়ার কারণেই শরীরের ফুলে যায়।

শরীর দুর্বল হওয়াঃকোন কারন ছাড়াই অত্যধিক ক্লান্তি বোধ শরীর দুর্বল এবং দ্রুত ওজন কমে যাওয়ার সমস্যা কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ। বিশেষজ্ঞদের মতে কিডনির ড্যামেজ হলে রক্তস্বল্পতা বৃদ্ধি পায় এবং রক্ত পরিশুদ্ধ হয় না। এছাড়া রক্তের টক্সিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি হয় যার কারণে শরীর অত্যন্ত ক্লান্তবোধ ও দুর্বল হয়।

প্রস্রাবের সমস্যা হওয়াঃ ঘন ঘন প্রস্রাব অথবা প্রস্রাব কমে যায় এ সমস্যা দেখলে মনে করতে হবে কিডনি ড্যামেজ হয়েছে। শরীর থেকে পানি বাহির করা ছাড়াও কিডনি শরীর থেকে পানি শোষণ করে। এই জন্য পানি গ্রহণ অথবা পানি বের করা অথবা শোষণ করতে না পারায় মূত্রথলিতে সমস্যা দেখা দেয়।

যার কারণে বারবার মূত্র ত্যাগ এবং মূত্র এর সঙ্গে রক্ত বাহির হওয়া অথবা মূত্রে অতিরিক্ত ফেনা হওয়া কিডনি ড্যামেজের লক্ষণ। স্বাভাবিকের তুলনায় খুব বেশি প্রস্রাব হলেই কিডনি পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

শ্বাসকষ্ট হওয়াঃ কিডনি সাধারণত পানি শোষণ এবং পানি বাহির করে দেওয়ার কাজ করে। কিডনি ড্যামেজ হওয়ার ফলে শরীরের পানিগুলো ফুসফুসে জমা হয় যার কারণে শ্বাসকষ্ট হয়। এই সমস্যাকে ফ্লুইড ওভারলোড বা হাইপারভোলেমিয়া বলা হয়। এছাড়াও অনেকের বুকের ব্যথা হতে পারে।

অনিদ্রাঃ বিশেষজ্ঞদের মতে কিডনি আক্রান্ত লোকদের ঘুমের পরিমাণ কম হয়। কিডনি পানি বাহির করে দিতে না পারায় ফুসফুসে পানি জমা হয় যার কারণে ঘুম কম হয়।

ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ঃ রক্তে খনিজ ও পুষ্টির ভারসাম্য হীনতা হলে ত্বকে ফুসকুড়ি চুলকানি ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়। কিডনির ড্যামেজ হলে কিডনি পানি ও খনিজ পদার্থের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে না যার কারণে ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

কোন কাজে মনোযোগ থাকে নাঃ কিডনি ড্যামেজ হওয়ার কারণে রক্তে টক্সিন ও অন্যান্য খারাপ পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার কারণে শরীর সবসময় ক্লান্তি বোধ হয় এবং কোন কাজে মন বসে না। এছাড়াও আরো কিছু লক্ষণ পাওয়া যায় সেগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

*বমি বমি ভাব অথবা বমি হওয়া।
*ক্ষুধা, ঘুম, ওজন, ও যৌনতার আগ্রহ, কমে যাওয়া।
*অত্যাধিক তৃষ্ণা লাগা।
*মলের মধ্যে রক্ত থাকা এবং অনিয়মিত প্রস্রাব হওয়া।
*মাংসপেশির ক্ষয় শরীর কাঁপা এবং ক্র্যাম্প ও হাড়ের ব্যথা।
*শরীর অস্থির থাকায় এবং হাতও পায়ের অসারতা।
*নখ ও চুল ভঙ্গুর প্রকৃতির হয়।
*অত্যাধিক হেঁকসি উঠে ও চোখের চারপাশে প্রদাহ তৈরি হয়।
*প্রস্রাব অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত হয়।
*চারিদিকে তরল জমা হওয়ার কারণে বুকে ব্যথা হয়।
*ত্বকে ঘা অথবা রক্তপাতের প্রবণতা তৈরি হতে পারে।
*অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ হতে পারে।

এগুলো লক্ষণ দেখলে বোঝা যাবে কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেছে অথবা যাচ্ছে। এ অবস্থায় কিডনি ডায়ালাইসিস এর মাধ্যমে কিছুদিন সুস্থ থাকার গেলেও কিডনি ট্রান্সফার করা প্রয়োজন।

কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার ১২টি ঘরোয়া উপায়

কিডনি রোগ অত্যন্ত জটিল এবং এর চিকিৎসা অনেক ব্যয়বহুল। কিডনি ড্যামেজ এর পর্যায়ে গেলে ডালাইসিস ও কিডনি ট্রান্সফার ছাড়া কোন উপায় থাকে না। অত্যন্ত খরচের ব্যাপার সাধারণের জন্য যাহা বহন করা সম্ভব নয়। কিডনি শুধু পানির ছাকনির ব্যবস্থা করে তা নয়।

কিডনি রক্ত শোধন রক্তকণিকা তৈরি হাড়ের সুস্থতা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ পানি ও লবণের ভারসাম্য রক্ষা সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। যার কারণে কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেলে শরীরের এগুলো সব সমস্যা তৈরি হয়।

সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনি পাথর অত্যধিক মাত্রায় ব্যথার ওষুধ সেবন ইত্যাদি কারণে কিডনি ড্যামেজ হতে পারে। একটু সচেতন হলেই এবং নিয়মিত কিডনি সুরক্ষায় কিছু খাবার খাওয়ার মাধ্যমে কিডনিকে সুস্থ রাখা যায়। কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার ১২টি ঘরোয়া উপায় আলোচনা করা হলো।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত রাখুনঃ অতিরিক্ত উচ্চ রক্তচাপের কারণে কিডনি বিকল হতে পারে। যার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রিত রাখুন এবং মাঝে মাঝে মেপে তা পরীক্ষা করুন। বয়স ৪০ বছর পার হলেই উচ্চ রক্তচাপ বারবার মাপুন এবং উচ্চ রক্তচাপ হতে দূরে থাকুন। রক্তচাপ হলে নিয়মিত ওষুধ খান যাহাতে রক্তচাপের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে।

রক্তের শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রিত রাখুনঃ রক্তের শর্করার পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে অর্থাৎ ডায়াবেটিসের সমস্যা হলে কিডনি ডেমেজ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। যার কারণে রক্তের শর্করা বারবার মেপে তা নিয়ন্ত্রণে রাখুন।

ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে যেগুলো খাবার গ্রহণ করলে রক্তের শর্করা বেড়ে যাবে সেগুলো খাবার বর্জন করুন। এছাড়াও শারীরিক স্বাস্থ্যের প্রতি সবসময় নজর রাখুন।

স্থূলতা পরিহারঃ অত্যাধিক স্থূলতার কারণে কিডনির সমস্যা হতে পারে। ২০১৭ সালের প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল অধিক ওজন মানেই কিডনি রোগ। সাধারণত কিডনিতে পাথর, ক্যান্সার অথবা দীর্ঘমেয়াদী কিডনি রোগ স্থূলতার সাথে জড়িত। ওজন বাড়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস এর মত সমস্যা হতে পারে। স্থূলতার দিকে নজর রাখতে হবে।

ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত ওষুধ না খাওয়াঃ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া। অতিরিক্ত মাত্রায় বিভিন্ন ওষুধ অথবা হারবাল বনজি ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত গ্যাসের ওষুধ ও ব্যথার ওষুধ খাওয়ার মাধ্যমে কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এইজন্য সব সময় যেকোনো চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ খেতে হবে।

ধূমপান বর্জনঃ ধূমপান করার কারণে কিডনিতে রক্ত চলাচল ব্যহত হয়। ধূমপানের কারণে কিডনি ক্যান্সারের সম্ভাবনা থাকে। যার কারণে ধূমপান বাদ দেওয়া প্রয়োজন। এছাড়া বিপদে পড়ে শিশু এবং অধুমপায়ী ধূমপানের মত ক্ষতিগ্রস্ত হন। শিশু ও যাহারা ধূমপান করেন না তাদের মাঝে কেউ ধূমপান করার কারণে এই ক্ষতিগ্রস্ত হন। এজন্য জনসমক্ষে ধূমপান বাদ দেওয়া প্রয়োজন।

সুষম খাবারের দিকে নজর দিতে হবেঃ কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাবারের দিকে নজর রাখতে হবে। বিশেষ করে সবুজ শাকসবজি ফলমূল বেশি খেতে হবে। লাল মাংস এর পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। বেশি করে পানি পান করতে হবে। প্রস্রাব কখনো আটকে রাখা যাবে না। এছাড়াও প্রস্রাবের ইনফেকশন দূর করার জন্য টয়লেট গুলো পরিষ্কার করে রাখতে হবে।


অ্যালকোহল ও কফি এড়িয়ে চলাঃ কিডনির শরীর থেকে যাবতীয় টক্সিন ও সাবস্টেন্স দূর করার জন্য ভূমিকা পালন করে। অতিরিক্ত মদ্যপান ও কফি খাওয়ার জন্য শরীরে অতিরিক্ত টক্সিন নির্মূল করতে কিডনির উপর অনেক চাপ পড়ে। যার কারণে কিডনির কোষগুলো কার্যক্ষমতা অনেক কমে যায়। যার কারণে কিডনি সমস্যা দেখা দিতে পারে

প্রোবায়োটিক খাওয়াঃ কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার খেলে শরীরে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি হয় এবং খারাপ ব্যাকটেরিয়া অপসারিত হয়।

 ভালো ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কিডনির ফিল্টার পদ্ধতি আরো সহজ হয় এবং কিডনির কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। যার কারণে কিডনি বিকল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবারঃ কিডনি ড্যামেজ প্রতিরোধের জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবার অনেক প্রয়োজন। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার কারণে শরীরে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। 

এছাড়াও শরীরের যাবতীয় প্রদাহ কমে যায়। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে কিডনির কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। ভিটামিন সি যুক্ত খাবার যেমন ব্রকলি পালং শাক টমেটো ইত্যাদি।

ক্রানবেরির জুসঃ নিয়মিত ক্র্যানবেরি ফলের জুস খাওয়ার মাধ্যমে কিডনি কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও ইউরিনারী ইনফেকশন প্রতিরোধ এর ক্ষেত্রে ক্র্যানবেরি জুস অত্যাধিক উপকারী। ক্র্যানবেরি জুসে পর্যাপ্ত পরিমাণ এন্ট্রি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা কিডনির কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। যার কারনে নিয়মিত ক্যানবেরি জুস খাওয়া প্রয়োজন।

নিয়মিত শরীর চর্চাঃ নিয়মিত শরীরচর্চার কারণে আমাদের শরীর সুস্থ থাকে। নিয়মিত শরীর চর্চার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গানুর সাথে কিডনি সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত শরীরচর্চার মাধ্যমে রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে। রক্তে সরকার মাত্রা বৃদ্ধি পায় না যার কারণে কিডনি রোগ থেকে বাঁচা যায়। এইজন্য প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ মিনিটে ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।


পর্যাপ্ত পানি খাওয়াঃ পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খেতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাওয়ার মাধ্যমে দেহ থেকে টক্সিন সহ বিভিন্ন সংক্রামক উপাদান বাহির হয়ে যায়। এছাড়াও বেশি পানি খাওয়ার ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। এইজন্য প্রতিদিন তিন থেকে চার লিটার পানি পান করার প্রয়োজন। পানি পানের মাধ্যমে কিডনি সুস্থ রাখা যায়।

কিডনি ইনফেকশনের লক্ষণ

শরীর থেকে দূষিত ও বজ্র পদার্থ বাহির করার জন্য কিডনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হার্ট পাম্পের সাহায্যে রক্ত পরিষ্কার করলেও রক্তের ২০ ভাগ কিডনি দ্বারা পরিষ্কার হয়। কিডনি সংক্রমণ অবস্থায় আমরা কিডনির দিকে লক্ষ্য করি না।
যার কারণে কিডনি সংক্রমণ হয়ে আস্তে আস্তে ড্যামেজ এর দিকে ধাবিত হয়। আজকের বিষয় কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার ১২টি ঘরোয়া উপায়। কিডনি ড্যামেজ এর লক্ষণগুলো আলোচনা করা হলো।

প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বাহির হওয়াঃ প্রস্রাবের সাথে প্রোটিন বাহির হলে ধারণা করতে হবে কিডনিতে ইনফেকশন হয়েছে। যতদূর সম্ভব তাড়াতাড়ি ডাক্তারের সরনাপন্ন হতে হবে এবং এগুলো বিষয়ে ডাক্তারকে ভালো করে বুঝিয়ে বলে চিকিৎসার মাধ্যমে কিডনি সুস্থ করা যায়।

খুদা কম ওজন কমাঃ আমাদের শরীরের সুস্থভাবে চলার জন্য প্রচুর পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন হয়। কিডনি ইনফেকশন হলে খুদার পরিমাণ কমে যায় এবং শরীরের ওজন কমে যায়। তাড়াতাড়ি ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা করলে কিডনি সমস্যা দূর হয়।

উচ্চ রক্তচাপঃ অনেক সময় কিডনি সংক্রমণের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কিডনি বিশেষজ্ঞগণদের কাছে যেতে হবে।

চর্মরোগঃ কিডনির মাধ্যমে বজ্র পদার্থ নিষ্কাশন না হওয়ার ফলে ত্বকে চুলকানির মত সমস্যা হতে পারে। অতএব ত্বকে চুলকানির মত সমস্যা হলে জেনে নিতে হবে কিডনির ইনফেকশন হয়েছে কিনা।

শরীরের ক্লান্তি বোধঃ কিডনির ইনফেকশনের কারণে কিডনির কার্যকারিতা কমে যাওয়ার জন্য রক্তের মধ্যে বহু দূষিত পদার্থ থেকে যায়। শরীরের তরলের ভারসাম্য থাকে না। এই সময় শরীর অনেক ক্লান্ত এবং নিঃশ্বাসের সমস্যা হয়।

মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাবঃ মাথা ঘোরা ও বমি বমি ভাবের স্থায়ী সমস্যা হলে বুঝতে হবে কিডনিতে ইনফেকশন হয়েছে। আর এ অবস্থা হওয়ার কারণে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে কিডনি পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

ঘনঘন প্রস্রাবঃ যদি ঘন ঘন প্রস্রাব হয় এবং প্রস্রাবের পরিমাণ খুব বেশি না হয় তাহলে ধরে নিতে হবে কিডনি ইনফেকশন হয়েছে। এছাড়াও হলুদ প্রস্রাব অথবা প্রস্রাব করার সময় রক্তের সমস্যা হলেও মনে করা হবে। আর এই অবস্থা হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

হাত এবং পা জ্বালাঃ হাত এবং পা যদি জ্বলে অথবা পায়ে অথবা গুড়ালি ব্যথা হয় তাহলে ধরে নিতে হবে কিডনির সমস্যা হয়েছে। এক্ষেত্রে কিডনি পরীক্ষা করতে হবে।

কিডনি ভালো রাখার জন্য কি খাবেন

শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো আমাদের সুষম খাবারের উপর নির্ভর করে। সুষম খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান পাওয়ার কারণে অঙ্গানুর কার্যকারিতা বেড়ে যায়। তেমনি কিডনি যা শরীরের ছাঁকনি হিসেবে কাজ করে।

বিভিন্ন রকম খাদ্য খাওয়ার ফলে কিডনির কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। কিডনি রোগ হতে রক্ষা পাওয়া যায়। আজকের বিষয় কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার ১২টি ঘরোয়া উপায়। কিডনি ভালো রাখার জন্য খাবার গুলোঃ

ফুলকপিঃ ফুলকপিতে ভিটামিন কে ফোলেট ও ফাইবার সহ অনেক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এছাড়া ফুলকপিতে এন্ট্রিঅক্সিডেন্ট ও এনটি ইনফ্লামেটরি যোগ রয়েছে যা কিডনি পরিষ্কার করতে সহায়তা করে। যার কারণে নিয়মিত ফুলকপি খেলে কিডনির কার্যকারিতা বেড়ে যায়।

ব্লুবেরিঃ ব্লুবেরিতে এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা কিডনির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ব্লুবেরি তে সোডিয়াম ফসফরাস ও পটাশিয়াম রয়েছে যা হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ও ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে কাজ করে।

সামুদ্রিক মাছঃ সামুদ্রিক মাছের মধ্যে শ্যামন, টোনা মাছে পর্যাপ্ত চর্বি রয়েছে যাহা ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। মাছ খাওয়ার কারণে কিডনির কার্যক্ষমতার বৃদ্ধি হয়। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ এর ঝুঁকি কমে।

লাল আঙ্গুরঃ লাল আঙ্গুরের বাইরের আবরণ ও বিজে রিসভারিট্রল নামে এক ধরনের এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যা শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। লাল আঙ্গুর খাওয়ার ফলে কিডনি কার্য ক্ষমতা বেড়ে যায়।

ক্র্যানবেরিঃ ক্র্যানবেরি জুস খাওয়ার মাধ্যমে মূত্রনালীর সংক্রমণ প্রতিরোধ করে ও কিডনি ভালো রাখে।

সাইট্রাস জাতীয় ফলঃ লেবু কমলা ও কমলা জাতীয় ফল খাওয়ার মাধ্যমে আমাদের শরীর হাইড্রেট থাকে ও শরীর থেকে টক্সিন সহ বিভিন্ন উপদ্রব্য অপসারিত হয়। এই জাতীয় ফলের রস খাওয়ার ফলে কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে। এছাড়াও এই ফলের রস খাওয়ার মাধ্যমে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

মাশরুমঃ মাশরুম একটি উপাদেয় খাদ্য যাহা ছত্রাক জাতীয় উদ্ভিদ গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। মাংসের বিকল্প হিসেবে মাশরুম খাওয়া যায়। পর্যাপ্ত প্রোটিন ও ফাইবার রয়েছে যা কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

বেদানা খাওয়াঃ বেদানা খাওয়ার মাধ্যমে কিডনি কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। বেদানাতে পটাশিয়াম, জিংক, ওমেগা৬, এর মতো প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। বেদানা খাওয়ার ফলে কিডনিতে পাথর প্রতিরোধ করে।

শসাঃ শসাতে পানি পরিমাণ বেশি থাকে যা খেলে শরীর হাইড্রেট থাকে। বেশি পরিমাণ শসা খাওয়ার ফলে মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে। শসা খাওয়ার ফলে কিডনি পাথর প্রতিরোধ হয়। শসা খাওয়ার মাধ্যমে কিডনি ভালো থাকে।

পেঁয়াজ খাওয়াঃ পেঁয়াজে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে যা রক্তের চর্বি দূর করে ও কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখে। পেঁয়াজের পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম ও প্রোটিন রয়েছে যা কিডনির জন্য অনেক ভালো।

রসুন খাওয়াঃ রসুন এ ইনফ্লামেটরি উপাদান রয়েছে যা রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। এছাড়াও কাঁচা রসুন খেলে হার্ট ও কিডনি ভালো থাকে।

আপেল খাওয়াঃ আপেল পর্যাপ্ত আস জাতীয় খাবার। প্রতিদিন একগ্লাস করে আপেলের জুস খেলে কিডনির কার্যকারিতা বৃদ্ধি হয়।

কিডনির পয়েন্ট কত হলে ভালো হয়

স্বাভাবিক নারীদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ক্রিয়েটিনের মাত্রা ০.৫-১.১ মিলিগ্রাম। স্বাভাবিক পুরুষের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ক্রিয়েটিনের মান ০.৬-১.২ মিলিগ্রাম। যাদের একটিমাত্র কিডনি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিনের মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে রক্তে ১.৮ মিলিগ্রাম।
পর্যন্ত স্বাভাবিক। কিশোরদের ক্ষেত্রে প্রতি ডেসি লিটার রক্তে ক্রিয়েটিনের মাত্রা ০.৫-১.০ মিলিগ্রাম। শিশুদের ক্ষেত্রে রক্তের ক্রিয়েটিনের মান প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ০.৩-০.৭ মিলিগ্রাম।

লেখক এর মন্তব্য

কিডনি রোগ প্রতিরোধ করার ১২টি ঘরোয়া উপায় এ বিষয়ে আজকের আর্টিকেলটি লেখা হয়েছে। আজকের আর্টিকেলে কিডনি ড্যামেজ অথবা কিডনি ইনফেকশন হলে কি কি লক্ষণ বোঝা যায় সেগুলো সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও কি কি খাবার খাওয়া অথবা কিভাবে কিডনির যত্ন নিলে কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

আজকের আর্টিকেলটি গুগল সহ বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করে লেখা হয়েছে। কিডনি সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি ভিজিট করুন। আশা করি ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন। আপনারা উপকৃত হলে নিজেকে সার্থক মনে করব। বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url