জ্বরের কারণে মুখ তেতো হলে করণীয়
প্রিয় পাঠক জ্বরের কারণে মুখ তেতো হলে করণীয় বিষয়ে আজকের আর্টিকেল লেখা শুরু করলাম। আরো লেখা হবে জ্বরের পরে মুখের স্বাদ ফেরানোর উপায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ তিতা লাগে কেন। জ্বর হলে মুখ তেতো হয় কেন। জ্বরের কারণে মুখ তিতো হওয়ার কারণে খাবারের রুচি কমে যায়। জ্বর হওয়ার ফলে শারীরিক দুর্বলতা বৃদ্ধি পায়।
এক দিকে খাবারের রুচি কমে যায় অপরদিকে দুর্বলতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। যার কারণে কিছু পদ্ধতি আছে যেগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে খাবারের রুচি পুনরায় ফিরে আসে। এগুলো বিষয় জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
ভূমিকা
আজকের আর্টিকেল জ্বরের কারণে মুখ তেতো হলে করণীয়। জ্বর হওয়ার ফলে মুখ তেতো হওয়া স্বাভাবিক সমস্যা। এ সমস্যার কারণে খাবারের রুচি হয় না। আমরা বিভিন্ন মসলা জাতীয় খাবার খাওয়ার মাধ্যমে মুখের রুচি ফিরিয়ে আনতে পারি। এছাড়া ঘুম থেকে উঠার পরে আমাদের মুখ তেতো লাগে।
ঘুম থেকে জাগার পরে পিত্তথলি থেকে স্বাভাবিক নিয়মে পিত্ত রস নিঃসরণ করে। ঘুম থেকে উঠে খাবার না খাওয়ার ফলে নিশ্রিত পিত্ত রস পাকস্থলী হয়ে মুখে চলে আসে। যার কারণে মুখ তিতা হয়। তিতা দূর করার নিয়ম সম্পর্কে আজকের আর্টিকেলে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যাবে।
জ্বরের পর মুখের স্বাদ ফেরানোর উপায়
জ্বর হওয়ার ফলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে যায়। কোন কিছু খাওয়া ভালো লাগেনা। অপরদিকে জ্বর হওয়ার ফলে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়। শরীরের দুর্বলতা কাটাতে খাওয়া প্রয়োজন কিন্তু রুচি হয়না। আজকের আর্টিকেল জ্বরের কারণে মুখ তেতো হলে করণীয়। জ্বরের পর মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনার উপায়।
লবঙ্গ ও দারুচিনি গুড়াঃ জ্বরের ফলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেলে লবঙ্গ ও দারুচিনি গুঁড়া খাওয়ার মাধ্যমে মুখের স্বাদ ফিরে আসে। এক চামচ লবঙ্গ ও দারুচিনি গুঁড়া মুখে নিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাবে মুখের তেতো স্বাদ দূর হয়ে অনেকটাই মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আসবে। এ ছাড়া খাবার রুচি বৃদ্ধি হবে।
লবণ পানি গারগলঃ সাধারণত কাশি অথবা গলা ব্যথা হলে লবণ পানি গড়গড়া করলে কাশি ও গলা ব্যথা নিরাময় হয়। অনুরূপভাবে জ্বর হওয়ার ফলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেলে লবণ পানি গারগোল করলে মুখের স্বাদ ফিরে আসে। খাবারে প্রতি রুচি বেড়ে যায়।
পুদিনা পাতাঃ পুদিনা পাতা খাওয়ার মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন উপকার হয়। এছাড়াও জ্বর হওয়ার ফলে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেলে পুদিনা পাতা মুখের স্বাদ ফিরিয়ে আনে। এছাড়াও পুদিনা পাতা খাওয়ার মাধ্যমে হজমশক্তি বৃদ্ধি হয়।
বোরহানি ও জিরা পানি খাওয়ার সময় পুদিনা পাতা মিশ্রিত করে খাওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও চায়ের সঙ্গে পুদিনা পাতা খাওয়া যায়। দুই তিনটি পুদিনা পাতা মুখের ভিতর রেখে দিন তাহলে মুখের স্বাদ ফিরে আসবে। খাবারের রুচি বৃদ্ধি হবে।
লেবু খাওয়ার মাধ্যমেঃ লেবু উপকারী ফল যার রস খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের বিভিন্ন স্বাস্থ্য উপকারিতা পাওয়া যায়। জ্বর আসার পরে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেলে লেবু খাবারের মাধ্যমে নতুন করে মুখের স্বাদ ফিরে আসে। এছাড়াও জ্বর আসলে পানির সঙ্গে লেবুর রস মিশ্রিত করে খেতে পারেন। লেবুর রস খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়।
পর্যাপ্ত পানিঃ পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। নিয়মিত পানি খেলে গ্যাসের সমস্যা থাকে না। এছাড়াও পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি হয় এবং খাওয়ার রুচি ফিরে আসে। পানি পানের ফলে পাকস্থলী পরিষ্কার হয় এবং শরীর থেকে টক্সিন বাহির হয়ে যায়।
টমেটোর স্যুপঃ জ্বর হওয়ার পরে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেলে টমেটোর স্যুপ খাওয়া যায়। টমেটোর স্যুপ খাওয়ার মাধ্যমে হজমশক্তি বৃদ্ধি হয় এবং মুখের স্বাদ ফিরে আসে।
অ্যালোভেরা জেলঃ অ্যালোভেরায় এন্টি এন্টিইনফ্ল্যার্মেটরি উপাদান রয়েছে যা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। জ্বর হওয়ার পরে এলোভেরা খাওয়ার মাধ্যমে মুখে তিতা ভাব দূর হয় এবং খাবারের রুচি বৃদ্ধি পায়।
মধু খাওয়াঃ জ্বরের পরে মুখের স্বাদ নষ্ট হয়ে গেলে মধু খাওয়ার ফলে মুখের স্বাদ ফিরে আসে। এছাড়াও এক চামচ মধু এবং আধাচামচ লেবুর রস কুসুম কুসুম গরম পানির সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। তাহলে মুখের রুচি ফিরে আসবে এবং হজমশক্তি বৃদ্ধি হবে।
তুলসী পাতাঃ তুলসী পাতা অত্যন্ত উপকারী। তুলসী পাতার রস খাওয়ার মাধ্যমে শরীর থেকে জ্বর দূর হয়ে যায়। এছাড়াও জ্বর হওয়ার কারণে মুখে রুচি না থাকলে পানিতে তুলসী পাতার দিয়ে ফুটিয়ে খেতে পারেন। এক্ষেত্রে নিয়ম এক গ্লাস পানিতে কিছু তুলসির পাতা দিয়ে পানি ফুটাতে হবে।
পনির রং পরিবর্তন হয়ে আসলে উক্ত পানি ছেঁকে নিতে হবে। পানি কুসুম কুসুম গরম অবস্থায় খেয়ে নিলে, মুখের স্বাদ ফিরে আসবে। এছাড়াও সর্দি কাশির মত সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
জ্বরের কারণে মুখ তেতো হলে করণীয়
জ্বর হওয়ার ফলে মুখের স্বাদ তেতো হয়। একারণে কোন কিছু খাওয়ার রুচি থাকে না। জ্বর হলে শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়। পর্যাপ্ত খাবার প্রয়োজন হলেও খাওয়া যায় না। জ্বরের কারণে মুখ তেতো হলে করণীয়।
আর ও পড়ুনঃকিডনি রোগ প্রতিরোধ করার ১২টি ঘরোয়া উপায়
*লবঙ্গ ও দারুচিনি গুড়া এক চামচ পরিমাণ মুখের ভিতর দিয়ে কিছুক্ষণ রাখলে মুখের তেতো ভাব দূর হয়ে যায়।
*এক গ্লাস পানিতে এক চামচ লবণ মিশ্রিত করে গড়গড়া করলে মুখের তিতো ভাব দূর হয়ে যায়।
*দুই তিনটি পুদিনা পাতা মুখের মধ্যে কিছুক্ষণ সময় রেখে দিলে মুখের তিতো ভাব দূর হয়ে যায়। চায়ের সঙ্গে পুদিনা পাতা ব্যবহার করে খাবারের মাধ্যমে মুখের তিতো ভাব দূর হয়ে যায়।
*লেবুর জাতীয় ফল অথবা লেবুর রস খাওয়ার ফলে মুখের তেতো ভাব দূর হয়ে যায়। লেবুর রস যেহেতু টক স্বাধযুক্ত তাই তিতো ভাব দূর করার জন্য লেবুর রস খাওয়া যায়।
*মুখের ভিতরে তেতো ভাবের সঙ্গে সঙ্গে কিছু ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বাসা বাঁধে। যার কারনে দিনে দুইবার ভালো পেস্ট দিয়ে দাঁত ভালো করে মাজতে হবে। তাহলে মুখের তেতোভাব দূর হয়ে যাবে।
*ব্রেকিং সোডা মুখের ভেতরের ব্যাকটেরিয়া দূর করতে ব্যবহার করা হয়। ব্রেকিং সোডা পানির সঙ্গে মিশ্রিত করে গড়গড়া করার মাধ্যমে মুখের তেতোভাব দূর হয়ে যায়।
*জ্বরের পরে টমেটো স্যুপ খাওয়ার মাধ্যমে মুখের তেতো ভাব দূর হয়ে যায়।
*হারবাল চা নারিকেলের তেলের সঙ্গে মিশ্রিত করে পানি দিয়ে মাউথ ওয়াশ তৈরি করতে হবে। এই মাউথ ওয়াশ দিয়ে গড়গড়া করলে মুখের তেতো ভাব দূর হয়ে যাবে।
*আদা কুচি কুচি করে চিবিয়ে খাওয়ার মাধ্যমে মুখের তিতো ভাব দূর হয়ে যায়। আদা খাওয়ার ফলে শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি হয় এবং খাবারের রুচি ফিরে আসে।
*পর্যাপ্ত পানি খাওয়ার মাধ্যমে শরীরের টক্সিন গুলো বাইর হয়ে যায় এবং মুখের তিতা ভাব দূর হয়। পর্যাপ্ত পানি খেলে পাকস্থলীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে যার কারণে গ্যাস হওয়ার পরিমাণ কমে।
*টাটকা ফল খাওয়ার মাধ্যমে মুখের তেতো ভাব দূর হয়। ছাড়াও হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ তিতা লাগে কেন
ঘুম থেকে উঠে মুখে তিতা লাগে কেন বিষয়টি জানা প্রয়োজন। ছয় থেকে আট ঘন্টা ঘুমানোর পরে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পরে সঙ্গে সঙ্গে কোন কিছু খাওয়া হয় না। অপরদিকে ঘুম থেকে জাগার সঙ্গে সঙ্গে পাকস্থলীতে পিত্তরস ক্ষরণ করা শুরু করে। পিত্তথলির সহজাত প্রবৃত্তি হলো জেগে থাকার সময় খাদ্য হজম করার জন্য পিত্তরস ক্ষরণ করা।
এ অবস্থায় পেটে খাবার না থাকার কারণে পিত্তরল গুলো আস্তে আস্তে মুখের দিকে চলে আসে। যার কারণে পিত্তরসের স্বাদ অনুযায়ী মুখ তিতো হয়। এছাড়াও অনেকের মুখে টক সাটযুক্ত হয়। অনেকের মুখে ধাতব শাদ যুক্ত হয়। সাধারণত শারীরিক নানান কারণে মুখের স্বাদ বিভিন্ন ধরনের হয়।
সাধারণত মুখের স্বাদ তিতো হওয়া এর কারণ হিসেবে বলা হয় অনেকক্ষণ কিছু না খেলে পিত্তরস ক্ষরণের জন্য মুখ দিতে হয়। এছাড়াও চিকিৎসক গণ বলেছেন হরমোনের সমস্যা মানসিক স্রাব স্নায়ুগত সমস্যা লিভারের সমস্যা ইত্যাদির কারণে মুখে তিতোষযুক্ত হয়। স্বাভাবিকভাবে তিতো সাদ দূর না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
জ্বর হলে মুখ তেতো হয় কেন
জ্বর হলে মুখ তেতো হয় যার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। সাধারণত আমাদের মগজের ভিতর হাইপোথ্যালামাস রয়েছে যা শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরে বিভিন্ন রোগ জীবাণু বাসা বাঁধার কারণে এবং শরীরের টক্সিন এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হাইপোথ্যালামাস বাধাগ্রস্ত হয় যার কারণে শরীরের তাপ বৃদ্ধি পায়।
আর ও পড়ুনঃএশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন শহর কোনটি
ছাঢড়া হাইপোথ্যালামাসে তখন পাইরোজেন উদ্দীপ্ত হয় এবং টক্সিন এর বিরুদ্ধে কাজ করে। এছাড়াও কিছু পদার্থ আছে যেমন ইন্টারলিউকিন,প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। তাই এগুলোকে পাইরোজেন বা তা বৃদ্ধি কারক বলে। পাইরোজেন ক্ষরণের ফলে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয় ও মুখ তিতো হয়। আবার শরীর থেকে তাপ বেরিয়ে যাওয়ার সময় গা গরম হয় যাকে জ্বর বলা হয়।
আমাদের দেহে জ্বর হলে সাইটোকাইন্স এর সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। সাইটোকাইন্স একধরনের প্রোটিন যা আমাদের দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। আমাদের দেহের জ্বর আসলে সাইটোকাইন্স রিলিজ হয় যার কারণে মুখ তিতা হয়। এছাড়াও আমাদের ব্রেনগুলো পরিবর্তিত হয়ে তিতা ভাব তৈরি হয়। তার কারণে জ্বর আসলে মুখ তিতা হয়।
লেখক এর মন্তব্য
জ্বরের কারণে মুখ তেতো হলে করণীয় বিষয় সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল লেখা হয়েছে। জ্বর হলে আমাদের মুখ অনেক তিতো হয়। বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে মুখের তেতুল ও দূর করা যায়। আজকের আর্টিকেলে মুখের তেতো দূর করার বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো তথ্য গুগল সহ বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।
জ্বর হলে মুখো হয় যা দূর করার বিভিন্ন কারণ আজকের আর্টিকেলে পাবেন। এগুলো বিষয় জানতে আজকের আর্টিকেল ভিজিট করুন। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন। ভালো লাগলে নিজেকে সার্থক মনে করব। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url