সোলার প্যানেল এর উপকারিতার বিবরণ

প্রিয় পাঠক গণ সোলার প্যানেল এর উপকারিতার বিবরণ বিষয়ে লিখতে বসলাম। আরো আলোচনা করা হবে সৌর শক্তি থেকে বিদ্যুৎ শক্তি রূপান্তরের পদ্ধতি। সোলার প্যানেল কত প্রকার ও কি কি এবং কোন সোলার প্যানেল ভালো তাও আলোচনা করা হবে। সোলার প্যানেল এর অসুবিধা দিকগুলো বর্ণনা করা হবে।
সোলার প্যানেল কিভাবে কাজ করে। সৌর বিদ্যুৎ সাধারণত বিদ্যুতের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়। সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে বিদ্যুতের লোডশেটিং থেকে অনেকটাই বাঁচা যায়। এছাড়াও অতিরিক্ত বিদ্যুৎ ব্যবহারের ফলে কোন বিল দিতে হয় না। তবে পর্যাপ্ত সূর্যালোক থাকা প্রয়োজন।

ভূমিকা

বর্তমানে গ্রীডের উপর বিদ্যুতের চাপ অনেক বেশি। এছাড়া জ্বালানি এর দাম বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা অত্যাধিক কঠিন হয়ে পড়েছে। মাঝে মাঝে জ্বালানির সংকট হলেই পাওয়ার প্লান্ট গুলো বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণত বিভিন্ন কলকারখানা বিদ্যুতের জন্য সবসময় চালানো কষ্টকর হয়ে থাকে।


এ অবস্থায় প্রত্যেকটি কল কারখানায় সোলার প্যানেল স্থাপন করলে দিনের বেলায় নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এছাড়াও বিদ্যুতের ওপর চাপ কমে। বর্তমান সরকার সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে সেচ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। সাধারণত ৮ বিভাগের ২২ টি জেলায় এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।

২০২৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের কাজগুলো শেষ হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সেচ কাজের জন্য অনেকটাই বিদ্যুতের চাপ কমবে। আজকের বিষয় সোলার প্যানেল এর উপকারিতার বিবরণ।

সোলার প্যানেল এর উপকারিতার বিবরণ

সোলার প্যানেল এর উপকারিতার বিবরণ পর্যালোচনা করলে বোঝা যায় যে সোলার প্যানেল এর ব্যবহার আস্তে আস্তে জনপ্রিয় হয়ে উঠতেছে। জাতীয় গ্ৰীডে বিদ্যুৎ ব্যবহারের চাপ কমানোর জন্য সোলার ব্যবহার করা আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারিতার দিক।

বিদ্যুতের লোডশেটিং এর মধ্যেও আমরা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পেতে পারি। সোলার প্যানেলের উপকারিতা গুলো বর্ণনা করা হলো।

বাসা বাড়ির কাজেঃ বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে বাসা বাড়িতে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সব সময় বিদ্যুৎ পেতে পারি। সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বাড়িতে আলোর ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। বাসাতে ফ্রিজ ফ্যান ও পানির মটর সোলারের মাধ্যমে চালানো সম্ভব।

এমনকি এসি সোলারের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে। এক কথায় বলা যায় বাসা বাড়ির যাবতীয় কাজ সোলারের মাধ্যমে করা সম্ভব। সোলারের মাধ্যমে বাসা বাড়ির যাবতীয় বৈদ্যুতিক কাজ করার পরিপ্রেক্ষিতে বিদ্যুতের উপর চাপ কমবে।

সেচ পাম্পঃ বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে সেচ পাম্প সোলার প্যানেলের মাধ্যমে চালানো হচ্ছে। সেচ পাম্প চালানোর জন্য সরকার সৌর বিদ্যুৎ সেচ পাম্প প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যে প্রকল্পের মাধ্যমে ৮টি বিভাগে ২২ টি জেলায় এই প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে বিদ্যুতের ওপর অনেকটাই চাপ কমে আসবে।

সোলার কারঃ নতুন করে সোলারের মাধ্যমে কার চালানো হচ্ছে। কারের উপরে সোলার প্যানেল সেট করে কার চালানো হচ্ছে। এভাবে কার চালানোতে একদিকে তেল সাশ্রয় অন্যদিকে পরিবেশ বান্ধব। আমাদের দেশেও সোলার কার আমদানি করা প্রয়োজন।

সোলার পাওয়ার ব্যাংকঃ সোলারের মাধ্যমে মোবাইল সহ বিভিন্ন চার্জার মাধ্যমে চার্জ দেওয়া হয়। বিশেষ করে সোলারের মাধ্যমে ব্যাটারি চালিত বিভিন্ন গাড়ি ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হয়।

ল্যাপটপ চালানোঃ সোলারের মাধ্যমে ল্যাপটপ ডেক্সটপ ও টিভি চালানো হচ্ছে। সোলারের মাধ্যমে বিদ্যুতের পরিবর্তে ল্যাপটপ ডেক্সটপ ও টিভি চালালে অনেকটাই বিদ্যুতের সাশ্রয় হয়।

এছাড়াও বিদ্যুতের পরিবর্তে যাবতীয় কাজ সোলার দিয়ে সম্ভব। সোলার প্যনেল একটি লাভজনক প্রক্রিয়া। তাই আসুন বিদ্যুতের চাপ কমিয়ে পরিবেশ বান্ধব সোলার প্যানেল ব্যবহার করি।

সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি

সোলারের প্যানেলের কাজগুলো সূর্যের আলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করা। এইজন্য প্যানেলে রাখা হয় ফটোভোল্টাইক সেল। ফটোভোল্টাইক সেল সূর্য রশ্মি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিশেষ ব্যবস্থা। সূর্যালোক থেকে ব্যবহার করে সিলিকন সেলে ইলেকট্রন গুলো আলোড়িত করে। যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।


এই বিদ্যুৎ আমরা দিনের বেলা ব্যবহার করতে পারি। আর এই বিদ্যুৎ যদি আমরা রাতে ব্যবহার করি তাহলে সঞ্চয় করে রাখতে হবে। তাই সঞ্চয় করে রাখার জন্য আইপিএস ব্যাটারি অথবা সোলার ব্যাটারি প্রয়োজন হয়। আর দিনের বেলায় আমরা সোলারের মাধ্যমে সব কাজ করতে পারি।

যেমন আলো জ্বালানো, ফ্যান, টিভি চালানো, ল্যাপটপ, ডেক্সটব, অথবা মোবাইল চালানো এমন কি বড় সোলার প্যানেলে সেচ কাজ পর্যন্ত করা সম্ভব। রাতের সময় ব্যাটারীতে সঞ্চয়  করে রাখা বিদ্যুৎ দিয়ে আমরা লাইট ফ্যান অথবা অন্য কিছু চালাতে পারি।

সোলার প্যানেল কত প্রকার

সোলার প্যানেল ব্যবহারের মাধ্যমে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বাসায় বিদ্যুতের পেয়ে থাকি। সৌর প্যানেল সাধারণত ব্যবহারের দিক দিয়ে তিন প্রকার।

মনো প্যানেল।

পলি প্যানেল।

থিনফ্লিন প্যানেল।

মনো প্যানেলঃ মনো প্যানেল অত্যন্ত শক্তিশালী হয়। সাধারণত বাসা বাড়ি অথবা দোকানের ছাদে মনো প্যানেল লাগালে ভালো। কারণ মনো প্যানেল অত্যন্ত শক্তিশালী এবং মজবুত ট্রাকচার। মনো প্যানেল কালো কালার এবং অনেক সুন্দর গঠন যা সহজেই পছন্দ হয়।

পলি প্যানেলঃ পলি প্যানেলগুলো একটু দুর্বল প্রকৃতির হয়। এই প্যানেলগুলো ব্যবহার করা খারাপ নয়। তবে কাঠামো গুলো দুর্বল। এছারাও দেখতে ও মনো প্যানেলের মতো ভালো লাগে না।

থিনফ্লিন প্যানেলঃ থিনফ্লিন প্যানেল ভাঁজ করে সেট করা যায়। কোথাও বড় প্যানেল সেট করা না গেলে এ প্যানেল ভাঁজ করে সেট করা যায়। সাধারণত সৌরকারেও থিনফ্লিন প্যানেল ছাদের উপর ভাঁজ করে লাগানো যায়। লাগানোর ক্ষেত্রে থিনফ্লিন প্যানেল অনেক ভালো।

তাই আসুন আমরা প্যানেল দেখে মনো প্যানেল ব্যবহার করার চেষ্টা বেশি করি। আজকে আমাদের বিষয় সোলার প্যানেল এর উপকারিতার বিবরণ।

সোলার প্যানেল এর অসুবিধা

সোলার প্যানেল আমাদের জন্য অনেক উপকারী। আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সব সময় পেয়ে থাকি। সোলার প্যানেল এর উপকারিতার দিক অনেক। এর পাশাপাশি অসুবিধার দিক রয়েছে। অসুবিধার দিকগুলো নিম্নরূপঃ

*সোলার প্যানেল বসানোর সময় একবারে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়। যা সবার পক্ষে সম্ভব হয় না।

*সোলার প্যানেল বসানোর সময় টিনের ঘরের উপরে অথবা বাসা বাড়ির ছাদে সোলার প্যানেল স্থাপন করতে হয়। যার কারনে বাসা বাড়ির ছাদের অনেক জায়গার নষ্ট হয়ে যায়।

*সোলার প্যানেল থেকে আমরা সূর্যালোকের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি। সূর্যালোক না থাকলে অথবা কয়েকদিন ধরে মেঘ বৃষ্টি থাকলে সোলার প্যানেল থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব হয় না।

যা অনেক কষ্টকর।ক্ষতিকর দিক থাকলেও সোলার প্যানেলের উপকারিতা দিকগুলোই বেশি। অতএব উপকারিতা দিক ভেবে বাসা বাড়িতে সোলার প্যানেল লাগালে বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে উপকার পাওয়া যায়। আমাদের বিষয় সোলার প্যানেল এর উপকারিতার বিবরণ।

সৌর প্যানেল কিভাবে কাজ করে

সৌর বিদ্যুৎ সাধারণত ফটো তড়িৎ ক্রিয়া কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। সৌর প্যানেলের কাজ জানতে হলে আগে জানতে হবে ফটো তড়িৎ ক্রিয়া। যখন কোন তলে সূর্যের আলো এসে পৌঁছে তখন ইলেকট্রন নির্গত হয়। আর এই ইলেকট্রন নির্গত হওয়ার প্রক্রিয়াকে ফটো তড়িৎ ক্রিয়া বলে।

আর ও পড়ুনঃ ফুসফুসে পানি জমার ঘরোয়া চিকিৎসা

আমরা জানি কম্পাঙ্ক শক্তির সমানুপাতিক। অর্থাৎ কম্পাঙ্ক যত বাড়বে শক্তিও তত বাড়বে। সাধারণত আলোক কণা গুলো হল ফোটন। সূর্যালোক থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফোটন সোলার প্যানেলে আপতিত হয়। সোলার প্যানেলে থাকা ইলেকট্রন সূর্যালোক থেকে আপতিত ফোটন থেকে শক্তি শোষণ করে এবং ইলেকট্রন নির্গত করে প্যানেল থেকে।

ইলেকট্রন নির্গত হওয়া আলোর তাপের উপর নির্ভর করে না। ইহা আলোক কম্পাঙ্কের উপর নির্ভর করে। এরপরে জানা যাক প্যানেলের ভিতরে কি ঘটে। সোলার প্যানেলের প্রতিটি কোষ তৈরি হয় পি এন জাংসন ডায়োড দিয়ে। ডায়োটি হলো একটা পাতলা পি টাইপ সেমিকন্ডাক্টর এর আবরণ থাকে।

আর একটা এন টাইপ সেমি কন্ডাক্টরের উপর অল্প পরিমাণ তড়ি ৎ বিশ্লেষ্য দেওয়া থাকে। এনটাইপ সেমিকন্ডাক্টর এর ওপর থেকে বিদ্যুৎ সংগ্রহের জন্য ইলেকট্রোড। ্ড যখন আলো পি এন জংশনে এসে পড়ে তখন আলোর সাথে থাকা ফোটন খুব সহজে জংশনে প্রবেশ করে।

ফোটনের শক্তি জংসনে ইলেকট্রন হোল পেয়ার তৈরি করতে সাহায্য করে। বাকি কাজটা সাধারণত সেমি কন্ডাক্টরের মতোই হয়। সোলারের প্রতিটি কোষ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যাটারির মতো কাজ করে এবং যে ভোল্টেজ উৎপন্ন হয় তাই হলো ফটো ভোল্টেজ। আর এভাবেই একটি সোলার প্যানেলে থাকা হাজার হাজার সেল থেকে বিদ্যুৎ পেয়ে থাকি।

লেখকের মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠকগন আজকে আর্টিকেলে সোলার প্যানেল এর উপকারিতার বিবরণ বর্ণনা করা হয়েছে। এছাড়াও আরো বর্ণনা করা হয়েছে সৌরশক্তি থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতি। সোলার প্যানেল কত প্রকার ও কি কি এবং কোনটা ব্যবহার করা ভালো। সোলার প্যানেল এর বিভিন্ন অসুবিধার দিক গুলো বর্ণনা করা হয়েছে।

সোলার প্যানেল কিভাবে কাজ করে। আসলে সোলার প্যানেল আমাদের জন্য অত্যন্ত দরকার। বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে বাঁচার জন্য একমাত্র সোলার প্যানেল উপযোগী। কম্পিউটারে বিভিন্ন কাজ ও অফিস আদালতের বিভিন্ন কাজ বিদ্যুৎ না থাকার জন্য বন্ধ হয়ে থাকে।

তখন সোলারের মাধ্যমে আমরা সেগুলো চালাতে পারি। তাই আসুন সোলার প্যানেল সম্পর্কে জানতে এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।




এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url