সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা

সুপ্রিয় পাঠকগন সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা বিষয়ে আজকের আর্টিকেল লিখতে বসলাম। আরো আলোচনা করা হবে সুন্দরবন কেন বিখ্যাত। সুন্দরবন সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর। সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকা।
সুন্দরবন ভ্রমণের দিকনির্দেশনা। বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো বিষয়ে ভালোভাবে জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।

ভূমিকা

পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ লোনা পানির ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। সুন্দরবনের আয়তন ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশ ৬ হাজার ৫১৭ বর্গ কিলোমিটার। যা মোট বনাঞ্চলের ৬৬ ভাগ। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। 


সারা বিশ্বের মধ্যে একমাত্র সুন্দরবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাওয়া যায়। যা পৃথিবীর আর কোন বনে পাওয়া যায় না। এছাড়াও সুন্দরবনের সুন্দরী গাছের আধিক্য থাকায় সুন্দরী গাছের নাম অনুযায়ী এ বনের নাম সুন্দরবন ধারণা করা হয়। আজকের বিষয় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা।

সুন্দরবন কেন বিখ্যাত

গোটা পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ বন হল সুন্দরবন। সুন্দরবনের ভূপ্রকৃতি ও প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেক মনোরম। যার কারনে বাংলাদেশ সহ সারা পৃথিবীর মানুষ সুন্দরবন বেড়াতে আসেন। বাংলাদেশের প্রথম পর্যায়ের পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। যার কারণে আমরা বাংলাদেশের জনসাধারণ সুন্দরবনকে নিয়ে অনেক গর্ব করি। 

এছাড়াও সুন্দরবন আমাদের অন্যতম জাতীয় সম্পদ। যার কারণে সুন্দরবন এর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরি। বারবার প্রাকৃতিক দুর্যোগে সুন্দরবন অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চল ও ভারতের দক্ষিণ পূর্ব অঞ্চল নিয়ে সুন্দরবন গঠিত। 

১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পৃথিবীর বৃহৎ জোয়ার ভাটার বনটি হল সুন্দরবন। এর মধ্যে ৬৫১৭ বর্গ কিলোমিটার অংশ বাংলাদেশের মধ্যে রয়েছে। অবশিষ্ট ৩৪৮৩ কিলোমিটার বনাঞ্চল ভারতের মধ্যে রয়েছে। ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করে ইউনেস্কো। 

বাংলাদেশের বনাঞ্চলের মধ্যে ৪৭ ভাগ বনাঞ্চলই সুন্দরবন। সুন্দরবন প্রাকৃতিক সম্পদের সমাহার রয়েছে। সুন্দরবন থেকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। সুন্দরবন থেকে আমরা পর্যাপ্ত জ্বালানি কাঠ, মধু, মাছ, সংগ্রহ করে থাকি। এছাড়াও সুন্দরবন থেকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমান গোলপাতা পাই। 

এক কথা বলতে বলা যায় সুন্দরবন গোল পাতার জন্য বিখ্যাত। প্রতিবছর সুন্দরবন থেকে ৯৭ টন গোলপাতা পাওয়া যায়। সুন্দরবন থেকে ২২০ টন মধু ও প্রায় ৫০ টন মম সংগ্রহ করা যায়। ১৯৯৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনকে প্রাকৃতিক দৃশ্য ঐতিহ্য ঘোষণা করে। এরপর থেকে সুন্দরবনের পরিচিতি বিশ্ব বুকে আরও বেড়ে গেছে।

 পৃথিবীর মধ্যে সবচাইতে বড় লোনা পানির ম্যানগ্রোভ বন হলো সুন্দরবন। সুন্দরবনে পর্যাপ্ত পরিমাণ সুন্দরী গাছ রয়েছে। আর এই সুন্দরী গাছের কারণেই সুন্দরবন নামকরণ করা হয়। সুন্দরবনের সবচেয়ে বিখ্যাত হল রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সুন্দরবনের বাংলাদেশ ও ভারত অঞ্চল মিলে কয়েক হাজার রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। 

আর এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার গুলো শুধু সুন্দরবনেই দেখা যায়। কোথাও রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখা যায় না। ২০০৪ সালের সর্বশেষ প্রতিবেদনের জরিপে বলা হয় সুন্দরবনে মোট ৪৪০ টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার রয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ রয়েল বেঙ্গল টাইগার ১২১ টি এবং মহিলা রয়েল বেঙ্গল টাইগার ২৯৮ টি আর বাকি ২১ টি বাঘের বাচ্চা রয়েছে।

 এছাড়াও সুন্দরবনে প্রচুর পশু পাখি রয়েছে। পশুদের মধ্যে দ্বিতীয় আকর্ষণীয় পশু হলো চিত্রা হরিণ। যা সুন্দরবন দেখতে পর্যটকগণ গেলে হরিণ গুলো দেখতে পান। এছাড়াও বানর, মেছোবাঘ, কুমির, কচ্ছপ, ডলফিন, শুশুক, বন বিড়াল, শেয়াল, গিরগিটি ইত্যাদি রয়েছে। পশুদের মধ্যে হরিণকেই সব সময় দেখা যায়।

 হরিণের মধ্যে রয়েছে চিত্রা হরিণ মায়া হরিণ বলগা হরিন সহ আরো বিভিন্ন জাতের হরিণ। তবে দুঃখের বিষয় সুন্দরবনের কিছু দুষ্ক্রাকৃতি লোকদের কারণে হরিণ শিকারের ফলে হরিণের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। 

সুন্দরবনে পর্যাপ্ত সুস্বাদু মাছ পাওয়া যায়। সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থানরত লোকেরা এগুলো মাছ শিকার করে জীবিকা অর্জন করেন। পর্যাপ্ত কাকড়া পাওয়া যায়। সুন্দরবনের মাছগুলো হল।

*পারশে।

*বাটা ও ভাঙ্গন।

*খড়শোলা।

*কাইক্কা।

*তপসে।

*গুটিদাতিনা।

*নোনা টেংরা।

*শিলং।

*কাজরি ইত্যাদি।

সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ ছাড়াও কেওড়া, গেওয়া, গরান, ইত্যাদি গাছ রয়েছে। সর্বশেষ ১৯০৩ সালে সুন্দরবন জরিপের মাধ্যমে বলা হয় সুন্দরবনে প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির গাছ ছিল। সুন্দরবনে হাজারো রকমের পশু পাখি রয়েছে। জরিপ অনুযায়ী নিচে বিবরণ দেওয়া হলো।

* মাছ= ১২০ প্রজাতি

*পাখি= ২৭০ প্রজাতি।

*স্তন্যপায়ী পশু =৪২ প্রজাতির।

*সরীসৃপ প্রজাতির পশু= ৩৫ প্রজাতির।

*উভচর প্রাণী =৮ প্রজাতির।

পশু পাখির অভয়ারণ্য নামে খ্যাত সুন্দরবন। সুন্দরবন যেহেতু পৃথিবীর বৃহত্তম বনের মধ্যে একটি এখানে পশুপাখি নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে। প্রজনন মাধ্যমে বংশের বিস্তার করার পরিবেশ এখানে রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সুন্দরবনের গাছগুলো কেটে সুন্দরবনের চরম ক্ষতি করতেছে। 

এ ছাড়া কিছু লোক হরিণ ধরে জবাই করার মাধ্যমে হরিণের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। মাংসের দাম বেশী হওয়ায় নির্বিঘ্নে হরিণ শিকার করতেছে। যার কারণে সুন্দরবনের পশু-পাখি ও গাছপালার সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে সুন্দরবনের বহু জায়গা মানুষের দখলে চলে যাচ্ছে।

তবে সুন্দরবনে পশু, পাখি, মাছ ও গাছ ব্যাপারে পরিপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়নি। কারণ আজ পর্যন্ত অবহেলার কারণে সুন্দরবনের সকল অংশের জরিপ করা সম্ভব হয়নি। তবে একটি কথা বললে বলা যায় সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সম্পদ যেমন পর্যাপ্ত রয়েছে। অনুরূপভাবে পর্যটনের জন্য সুন্দরবন থেকে অনেক রাজস্ব জমা হয়। 

সুন্দরবন পর্যটকদের জন্য আরও সাশ্রয়ের ব্যবস্থা করা গেলে পর্যটন খাত থেকে আরও বেশি আয় করা সম্ভব হতো। কিন্তু মাঝখানে কিছু দালাল ও পর্যটন পরিচালনাকারী যানবাহনের কারণে অত্যাধিক বেশি খরচ হওয়ায় পর্যটকগণ অনেক কষ্টে আছেন।আজকের বিষয় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা।

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আস্তে আস্তে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। যার কারণে উপকূল অঞ্চলে বিভিন্ন জমিতে লবণাকতার পরিমাণও বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়াও ঘূর্ণিঝড় এর কারণে ভূপৃষ্ঠের দিকে লবণাক্ত পানি আসার কারণে আবাদি-জমতে লবণাক্ত এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফসল উৎপাদনের উপরে মারাত্মক প্রভাব পড়তেছে। 


এছাড়াও সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে অনেক নদী ও খাল প্রবাহিত হয়ে গেছে। নদী ও খালে লবণাক্ততার পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। কৃষি জমিতে ফসল কম হওয়ায় উপকূলীয় এলাকার লোকজন মাছ ও কাঁকড়া চাষে ঝুকছেন। 

এছাড়াও সুন্দরবনের বসবাসের জায়গা গুলোতে লোক আশ্রয় নেওয়ার কারণেই সুন্দরবনের অনেক গাছ কমে যাচ্ছে। বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রীতি একটি গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় সুন্দরবনের শিবসা পশুর নদ সহ অনেক নদী লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেছে। 

যার কারণে মিঠা পানির মাছগুলোর উপর খারাপ প্রভাব পড়তেছে। আস্তে আস্তে মিঠা পানির মাছ গুলো বিলুপ্ত পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এছাড়াও সুন্দরবনে বসবাসরত লোকজন নদীতে কাকড়া চাষ করার জন্য বাঁধ নির্মাণ করাতে লবনাক্ততার পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। রাতের আঁধারে মাছ চাষিরা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদীতে বাধ দিয়ে বিষ প্রয়োগ করে মাছ ধরতেছে। 

যার কারণে উক্ত নদনদীতে মাছের পরিমাণ একেবারেই কমে যাচ্ছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক পরিবেশ নষ্টকারী কিছু লোকের দ্বারা চুরি করে গাছগুলো কেটে ফেলার কারণেই সুন্দরবন হুমকির মধ্যে পড়েছে। জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ একটি। 

এইজন্য বিশ্ববাসীর কাছে বাংলাদেশের ক্ষতিপূরণ চাওয়ার জন্য জোর ভূমিকা রাখতে হবে। পরিবেশ বিনাসকারী লোকদের দ্বারা যেন বনের গাছ না কাটা হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। এছাড়াও নদ-নদী ও খালে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার কারীদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। 

সুন্দরবনের আশেপাশে পরিবেশ দূষণকারী শিল্প কল কারখানা দূরে সরিয়ে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে সুন্দরবন আল্লাহর দান এরকম বন মানুষের দ্বারা করা সম্ভব নয়।

সুন্দরবন সম্পর্কে প্রশ্ন

সুন্দরবন সম্পর্কিত সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্নগুলো আলোচনা করা হলো।। এগুলো প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে আপনারা বিভিন্ন পরীক্ষা অথবা বিসিএস পরীক্ষার সহ প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করতে পারবেন। প্রশ্নোত্তর গুলো নিম্নরূপ।

*সুন্দরবন নামকরণের কারণ কি?

উঃ সুন্দরী বৃক্ষের উপস্থিতির কারণে।

*পৃথিবীর বৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন কোনটি?

উঃ সুন্দরবন।

*পৃথিবীর সবচাইতে বড় টাইডাল বন কোথায়?

উঃ বাংলাদেশ সুন্দরবন বাংলাদেশ।

*সুন্দরবনের মোট আয়তন কত?

উঃ দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার।

*বাংলাদেশের অবস্থিত সুন্দরবনের আয়তন কত?

উঃ ৬০১৭ বর্গ কিলোমিটার।

*সুন্দরবনের বাঘ গণনার পদ্ধতি কি?

উঃ পাগমারক।

*সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য কে ঘোষণা করে?

উঃ ইউনেস্কো।

*সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করা হয় কোন সালে?

উঃ ১৯৯৭ সালের ৬ ডিসেম্বর।

*সুন্দরবন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় কততম?

উঃ ৫২২ তম।

*সুন্দরবন দিবস কত তারিখ?

উঃ ১৪ ই ফেব্রুয়ারি।

*সুন্দরবনে অবস্থিত পয়েন্ট গুলো কি কি?

উঃ হিরণ পয়েন্ট জাফর পয়েন্ট টাইগার পয়েন্ট।

*সুন্দরবনকে আর কি নামে ডাকা হয়?

উঃ গরান বন বাদা বন।

*বাংলাদেশের জাতীয় বনের নাম কি?

উঃ সুন্দরবন।

*সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ কি?

উঃ সুন্দরী গাছ।

*সুন্দরবন বাংলাদেশের কয়টি জেলায় অবস্থিত?

উঃ পাঁচটি জেলা যথাক্রমে খুলনা বাগেরহাট সাতক্ষীরা পটুয়াখালী ও বরগুনা।

*সুন্দরবন বাংলাদেশে কত অংশ পড়েছে?

উঃ শতকরা ৬৬ ভাগ।

*সুন্দরবনের কত প্রকার হরিণ দেখা যায়?

উঃ দুই প্রকার চিত্রা হরিণ ও মায়া হরিণ।

*সুন্দরবন কোন নদীর তীরে অবস্থিত?

উঃ শিবসা নদী।

*সুন্দরবনের পশ্চিমে কোন নদী অবস্থিত?

উঃ রায়মঙ্গল নদী।

*সুন্দরবনের পূর্বে কোন নদী অবস্থিত?

উঃ বলেশ্বর নদী।

*সুন্দরবনকে ভারত বাংলাদেশ ভাগ করেছে কোন নদী?

উঃ হাড়িয়া ভাঙ্গা নদী।

*সুন্দরবনের মধু সংগ্রহকারীদের কে কি বলা হয়?

উঃ মৌয়ালী।

*সুন্দরবনে গোলপাতা সংগ্রহকারীদের কে কি বলে? 

উঃ বাওয়ালী।

এগুলো প্রশ্ন জানার মাধ্যমে আমরা সুন্দরবনের কিছু তথ্য জানতে পারি। তাছাড়া প্রয়োজন মুহূর্তে এগুলো প্রশ্ন আমাদের কাজে লাগতে পারে। আজকের বিষয় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা।

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর তালিকা

বিশ্বের মধ্যে সবচাইতে বড় লোনা পানির ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। সুন্দরবনের সব জায়গায় ঘুরে ঘুরে বেড়ানো সম্ভব নয়। তবে সুন্দরবনকে উপভোগ করার জন্য নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় ঘুরে বেড়ানো সম্ভব।

কটকাঃ সুন্দরবনের দর্শনীয় জায়গার মধ্যে কটকা অন্যতম। মংলা সমুদ্র বন্দর হইতে ৯০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত।

করমজলঃ যদি অল্প সময়ের মধ্যে সুন্দরবন দেখতে চান তাহলে করম জল যেতে হবে। মংলা সমুদ্র বন্দর হতে নৌকায় করম জল যাওয়া যায়। করম জলে কুমির প্রজনন কেন্দ্র রয়েছে।

কচি খালিঃ মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে 100 কিলো মিটার দূরে কচিখালি অবস্থিত। কচি খালির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গা সৈকতের নিরিবিলি জায়গা।

সুপতিঃ এটি একটি অভয়ারণ্য এলাকা। এই নদীতে দুর্লভ প্রজাতির ইরাবতী ডলফিনের দেখা মিলে। এছাড়াও খালের দুই পাশে সারি সারি গোলপাতার বন পর্যটকদের কে আকর্ষিত করে।

হাড়বাড়িয়াঃ মংলা থেকে 20 কিলোমিটার দূরে হারবাড়িয়া নামক স্থান অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোমুগ্ধকর।

নীলকমল, হিরণ পয়েন্টঃ মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নীলকমল বা হিরণ পয়েন্ট। এটি সুন্দরবনের দক্ষিণাঞ্চলের একটি পয়েন্ট। এখানে সবচেয়ে বেশি হরিণ দেখা যায়। ভাগ্য ভালো হলে অনেক সময় বাঘও দেখা যায়।

দুবলার চরঃ সুন্দরবনের সর্ব দক্ষিণে সমুদ্রের তীরে দুবলার চর অবস্থিত। এই দ্বীপে মৎস্য আহরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এর ব্যবস্থা আছে। অক্টোবর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে অস্থায়ী ঘরবাড়ি নির্মাণ করে মাছ আহরণ করা হয় এবং প্রক্রিয়াজাত করা হয়।

মান্দার বাড়িয়াঃ সুন্দরবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মান্দারবাড়িয়া অবস্থিত। এখান থেকে ছোট ছোট ক্ষুদ্র জীব থেকে শুরু করে বাঘ হরিণ বন্য শুকুর ইত্যাদি দেখা যায়।

সাধারণত নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সুন্দরবন ভ্রমণ করার অন্যতম সময়। এসময় সমুদ্র উত্তাল কম থাকে যার কারণে সুন্দরবন ঘুরে আসা সম্ভব হয়। আজকের বিষয় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা।

সুন্দরবন ভ্রমণের দিক নির্দেশনা

প্রিয় পাঠকগণ আপনাদের হাতে সময় থাকলে ৩-৪ দিনের জন্য সুন্দরবন ঘুরে আসতে পারেন। নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সুন্দরবন ঘুরে দেখার উপযুক্ত সময়। এ সময় আবহাওয়ার পরিবেশ ভালো থাকে ও সমুদ্র উত্তাল থাকে না। সুন্দরবন ঘুরে আসতে যদি চান তাহলে আপনাকে খুলনা অথবা মংলা থেকে শীপ ভাড়া করতে হবে। 


এক্ষেত্রে আপনাদের লোক সংখ্যা কম হলে প্যাকেজে যেতে হবে। মোটামুটি ভালো মানের প্যাকেজ ৬ হাজার টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা এর মধ্যেই যেতে পারবেন। বিলাসবহুল ভ্রমণ করতে চাইলে ১৫ হাজার টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকায় এর মত খরচ হবে। সুন্দরবনের প্যাকেজ যথাক্রমে ২ রাত ৩ দিন ও ৩ রাত ৪ দিন হয়ে থাকে।

 ৩০ থেকে ৪০ জন হন তাহলে নিজেরাই শীপ ভাড়া করে ঘুরে আসতে পারবেন। তাহলে আপনাদের খরচ অনেকটা কমে যাবে। ভ্রমনের ক্ষেত্রে আপনারা শীপে থাকতে পারেন অথবা বিভিন্ন পয়েন্টে ভালো ভালো হোটেল আছে সেখানেও থাকতে পারেন।

 আপনারা যদি কম খরচে সুন্দরবন দেখতে চান। একদিনের মধ্যেই ঘুরে আসতে চান তাহলে করমজল অথবা হারবাড়িয়া যেতে পারেন। এই ক্ষেত্রে মংলা নদী বন্দরে ভালো মানের ট্রলার পাওয়া যায়। ট্রলারের মাধ্যমে একদিনেই ঘুরে আসতে পারবেন।

 আপনারা যদি করমজলে যান তাহলে ট্রলার ভাড়া ১হাজার টাকা থেকে ১হাজার৫শত টাকা লাগবে। আর যদি হারবাড়িয়া যান তাহলে ট্রলার খরচ ৩ হাজার ৫ শত টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা লাগতে পারে। নিয়মিত যেগুলো কোম্পানি সুন্দরবনের ভ্রমণ প্যাকেজ পরিচালনা করেন তাদের নাম ঠিকানা।

দি গাইড ট্যুরস লিমিটেড ফোন ০১৭১১৫৪০৪৩১

ডিঙ্গি ও ভেলা ভেসেল বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেড ফোন নাম্বার ০১৫৫২৫৫৫৫৫০

সিলভার ওয়েব ফোন নাম্বার ০১৭১৩৪৫৩১৩৭

খুলনার বাদাবণ ও টি আলী ভেসেল পরিচালক রূপান্তর ইকো ট্যুরিজম লিমিটেড ফোন নাম্বার ০১৭১১৮২৯৪১৪

রয়েল গন্ডোলা ভেসেলের রয়্যাল টুর মোবাইল নাম্বার ০১৭১১২৯৫৭৩৮

সুন্দরবন ওয়ান্ডার্স এন্ড অ্যাডভেঞ্চার্স লিমিটেড ফোন নাম্বার ০১৭১১৪৩৯৫৫৭

সাতক্ষীরার তিনটি ভেসেল পরিচালনাকারী বর্ষা ট্যুরিজম মোবাইল নাম্বার ০১৭১৫২৫১৯৬৩

আপনি যদি সুন্দরবন ভ্রমণ করতে চান আগে সময় মতো এগুলো ট্যুরিজমের সঙ্গে কথা বলে ভ্রমণের দিন ঠিক রাখতে পারেন। তবে মনে রাখবেন অত্যন্ত দর দান করতে হবে। আজকের বিষয় সুন্দরবনের জীবন বৈচিত্র্য রক্ষা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা।

লেখক এর মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠকগণ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও বাংলাদেশের বাস্তবতা সম্পর্কে আজকের আর্টিকেল লেখা হয়েছে। এছাড়াও সুন্দরবনের আয়তন সহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র তুলে ধরা হয়েছে। সুন্দরবনের ভ্রমণের জায়গা গুলো ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে।

 এছাড়াও সুন্দরবন যাওয়ার উপায় এবং টুরস পরিচালনাকারী কোম্পানীগণের নাম ও মোবাইল নাম্বার দেওয়া হয়েছে। আর্টিকেলটি আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url