শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড় কি কি কাজে লাগে

সুপ্রিয় পাঠকগণ শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড় কি কি কাজে লাগে বিষয়ে লিখতে বসলাম। এছাড়া আরো আলোচনা করা হয়েছে শ্বেত আকন্দ গাছের ভেষজ গুণাবলী। শ্বেত আকন্দ গাছ বাড়িতে লাগালে কি হয়। এখন শ্বেত আকন্দ গাছের ঔষধি গুণাবলী। শ্বেত আকন্দ গাছের ব্যবহার। শ্বেত আকন্দ গাছ একটি উপকারী উদ্ভিদ।
এই গাছের প্রচুর ওষুধি গুণাবলী রয়েছে। এছাড়াও হিন্দু ধর্মীয় লোকদের জন্য এ গাছকে পবিত্র গাছ মনে করা হয়। শ্বেত আকন্দ গাছের উপকারিতা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

ভূমিকা

শ্বেত আকন্দ গাছ উপকারী ও ঔষধি গাছ। এই গাছটি সাধারণত ৩ থেকে ৪ মিটার উচ্চতা সম্পন্ন হয়। এই গাছের ফুলগুলো সাদা। এ গাছটি বাংলাদেশের রাস্তার আনাচে-কানাচে অবহেলায় পড়ে থাকে। এছাড়াও ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারত, চীন, পাকিস্তান ও নেপালে এ গাছগুলো পাওয়া যায়।
এ গাছের পাতা ফুল ও শিকড় সবই বিভিন্ন ওষুধী কাজে ব্যবহার হয়। যার কারনে বাড়ির পাশে একটি শ্বেত আকন্দ গাছ লাগিয়ে রাখা অনেক ভালো। আজকের বিষয় শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড় কি কি কাজে লাগে।

শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড় কি কি কাজে লাগে

প্রিয় পাঠকগণ আসুন জেনে নিই শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড় কি কি কাজে লাগে। শ্বেত আকন্দের গাছের শিকড় আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড়ের উপকারিতা গুলো বর্ণনা করা হলো।

কোষের বৃদ্ধি রোধঃ অনেক সময় দেহের অনেক কোষ বৃদ্ধি হয়ে শরীরে উঁচু উঁচু হয়ে থাকে। শ্বেত আকন্দের শিকড় বেটে এগুলো কোষের উপর লাগিয়ে দিলে কোষের বৃদ্ধি রোদ হয়।

গোদ রোগ ভালো করেঃ অনেকের গোদ রোগ হয়ে পা ফুলে যায়। এই ক্ষেত্রে শ্বেত আকন্দের শিকড় ও সাল একসঙ্গে পেস্ট করে নিতে হবে। এই পেস্ট সমস্ত গোদ রোগের জায়গাগুলো প্রলেপ দিতে হবে। এভাবে কয়েক দিন ব্যবহার করলে নিরাময় হয়ে যাবে।

হাঁপানি নিরাময়ঃ শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড় শুকিয়ে চূর্ণ করে নিতে হবে। অতঃপর শিকড়ের এই চূর্ণ সঙ্গে আকন্দ গাছের আঠা মিশ্রিত করতে হবে। আকন্দ গাছের শিকড় ও আঠা মিশ্রিত করার পরে বিড়ির মতো করে বানিয়ে খেয়ে ধোঁয়া গ্রহণ করতে হবে। তাহলে হাঁপানি ও শ্বাসকষ্ট ভালো হয়ে যাবে।

দংশন জনিত চোখ লাল হলেঃ ৬০ গ্রাম শ্বেত আকন্দের ছাল ৩০০ গ্রাম পানিতে মিশ্রিত করে ৪ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। চার ঘন্টা পরে উক্ত পানি ছেকে নিয়ে ফোটা ফোটা করে চোখে দিলে দংশনজনিত চোখ লাল অথবা চোখে এলার্জি হলে তা ভালো হয়ে যায়।

হজমশক্তি বৃদ্ধিঃ খাওয়ার পরে প্রতিদিন সামান্য করে আকন্দ পাতার মূল চূর্ণ খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়। পাকস্থলীর বিভিন্ন অঙ্গাণুগুলো শক্তিশালী হয়। যার কারনে কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়।

শ্বেত আকন্দ গাছের ভেষজ গুনারলী

বর্তমান লোকেরা ভেষজ বিভিন্ন উপকারী গাছের দিকে ঝুকতেছে। কারণ ভেষজ গাছ দিয়ে চিকিৎসা করার মাধ্যমে শারীরিক কোনো ক্ষতি হয় না। এছাড়াও ভেষজ গাছ দিয়ে চিকিৎসা করার মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি রোগ নির্মূল হয়ে যায়। শ্বেত আকন্দ গাছের বৈচিত্র্যময় কিছু ভেষজ গুণাবলী রয়েছে।
আর এই গুণাবলীর কারণেই আস্তে আস্তে শ্বেত আকন্দ গাছ জনপ্রিয় হয়ে উঠতেছে। শ্বেত আকন্দ গাছ হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছে অনেক মূল্যবান। শ্বেত আকন্দ গাছ বর্তমানে বিজ্ঞানীরা অনেক পরীক্ষা করে বিভিন্ন গুণাগুনে সন্ধান পেয়েছেন।

অনেকে শ্বেত আকন্দ গাছ ব্যাপারে গবেষণা করে দেখেছেন এই গাছে ফ্ল্যাভোনয়েড ও ট্যানিনের মত যৌগ আছে। যার দ্বারা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করা যায় এবং রক্তনালিকা থেকে প্রদাহ দূর করা যায়। যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ হতে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়াও কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য ভালো রাখে।

কাশি হাঁপানি ব্রংকাইটিস ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে শ্বেত আকন্দ গাছ বহু ভূমিকা রাখে। এই গাছে আন্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান থাকায় শ্বাসনালির প্রদাহ কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই গাছে সেরোটোনিন ও ট্রিপটোফেন থাকায় মেজাজের ভারসাম্য হীনতা দূর করে।

মেজাজ উন্নত ও মন ভালো রাখে। এইজন্য সাদা আকন্দ গাছ আপনার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত যাবতীয় কাজে সহযোগিতা করে। যার কারণে বাড়িতে একটি শ্বেত আকন্দ গাছ লাগিয়ে রাখা অনেক ভালো। শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড় কি কাজে লাগে।

শ্বেত আকন্দ গাছ বাড়িতে লাগালে কি হয়

হিন্দু ধর্মের রীতি অনুযায়ী শ্বেত আকন্দ গাছকে পবিত্র গাছ মনে করা হয়। তাদের বিশ্বাস শ্বেত আকন্দ গাছের ফুল দিয়ে ভগবানে শিবের পূজা করলে মানুষের জীবনের সুখ ও সমৃদ্ধি বয়ে নিয়ে আসে।

তাদের মতে কোন ব্যক্তির বাড়িতে অভাব অনটন বেশি থাকে তাহলে শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড় কালো কাপড় দিয়ে বেঁধে বাড়িতে রাখলে ওই বাড়িতে প্রচুর টাকা-পয়সা এবং সুখ শান্তি বিরাজ করবে।

যদি কোন শিশুর খারাপ অবস্থা বা রোগাক্রান্ত হলে রবি পশু যোগের দিনে ১১ টি শ্বেত আকন্দ ফুলের মালা তৈরি করে উক্ত শিশুর পাশে রাখলে শিশু স্বাস্থ্যবান এবং ভাগ্যবান হয়ে যাবে।

 শ্বেত আকন্দ গাছে গনেশের বাসা মনে করা হয়। এছাড়া শ্বেত আকন্দ শিবের অত্যন্ত প্রিয়। শ্বেত আকন্দ গাছ বাড়ির উত্তর-পূর্ব কোণে রাখলে সে বাড়ি সর্বদা উন্নতিতে ভর্তি হয়ে যায়।

আর আমাদের কথা হলো বাড়ির পাশে শ্বেত আকন্দ গাছ লাগালে যে কোন সমস্যায় শ্বেত আকন্দ গাছ থেকে পাতা অথবা শিকড় তাড়াতাড়ি সংগ্রহ করতে পারি। এছাড়াও বাড়িতে শ্বেত আকন্দ গাছ থাকলে সেই বাড়িতে সাপের উপদ্রব থাকে না। যার কারণে বাড়ির পাশে একটি শ্বেত আকন্দ গাছ লাগিয়ে রাখার প্রয়োজন।

শ্বেত আকন্দ গাছের ঔষধি গুনাবলী

শ্বেত আকন্দ গাছ এক ধরনের ওষুধি গাছ। শ্বেত আকন্দ গাছে প্রচুর ওষুধি গুনাগুন রয়েছে। শ্বেত আকন্দ গাছে এন্টি ইনফ্ল্যামেটরি, ফ্ল্যাভোনয়েড, ট্যানিনের মতো যৌগ আছে। শ্বেত আকন্দ গাছের ঔষধি ব্যবহারগুলো বর্ণনা করা হলো।

যাদের ছুলি ও মেছতা রয়েছে তাদের জন্য আকন্দের আটা ভালো ভূমিকা রাখে। পাঁচ ছয় ফোঁটা শ্বেত আকন্দের আটার সঙ্গে তিন গ্রাম হলুদের গুঁড়া মিশিয়ে গোসলের এক ঘণ্টা আগে ছুলি ও মেছতার জায়গাগুলোতে ব্যবহার করতে হবে। এক ঘন্টা পরে ধুয়ে ফেলতে হবে।

১৬ ফোটা শ্বেত আকন্দের আঠা এবং সমপরিমাণ হলুদের সঙ্গে মিশিয়ে একটি মোমের মত তৈরি করুন। যেগুলো জায়গায় চুলকানি হয়েছে রাতে ঘুমানোর আগে চুলকানির জায়গা গুলোতে ব্যবহার করুন। আশা করা যায় ভালো হয়ে যাবে।

আঘাত জনিত অথবা কোন কারনে কারো কোন অঙ্গের অংশ ফুলে গেলে শ্বেত আকন্দ গাছের পাতা দিয়ে ফুলার যায়গা আবৃত করে রেখে কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি ফোলা কমে যাবে।

শরীরের কোথাও যদি বিছা কামড় দেয় তাহলে বিছার হুল গুলো বাহির করতে হবে। অতঃপর উক্ত স্থানে শ্বেত আকন্দের আঠা লাগিয়ে দিলে বিছা কামড়ানোর জালা ভালো হয়ে যাবে।

যাদের কানে অত্যাধিক যন্ত্রণা হয় আকন্দ পাতার সাহায্যে সে যন্ত্রনা দূর করা যায়। এই ক্ষেত্রে নিয়ম শ্বেত আকন্দ পাতায় গাওয়া ঘি মেখে একটু তাপ দিতে হবে। অতঃপর তাপের কারণে যে গাওয়া ঘি ফোটা হয়ে পড়বে তা কানের মধ্যে ব্যবহার করলে কানের যন্ত্রনা ভাল হবে।

এই গাছের প্রচুর ওষুধি গুণাবলী রয়েছে। এছাড়াও হিন্দু ধর্মীয় লোকদের জন্য এ গাছকে পবিত্র গাছ মনে করা হয়। শ্বেত আকন্দ গাছের উপকারিতা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানার জন্য আমাদের সঙ্গেই থাকুন।

শ্বেত আকন্দ গাছের ব্যবহার

আজকের বিষয় শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড় কি কি কাজে লাগে। সাদা আকন্দ গাছের প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। এই গাছ শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য বহু ভূমিকা রাখে। একদিকে এ গাছ ওষুধি গুনে গুণান্বিত। অপরদিকে এই গাছ হিন্দু ধর্মীয় লোকজনের কাছে অত্যন্ত পবিত্র। যার কারনে দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য এই গাছ আমাদের রুটিনে রাখা প্রয়োজন।

*শ্বেত আকন্দ গাছ এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা আমাদের শরীরের কোষ কে সুস্থ সবল রাখে। এছাড়া স্বাস্থ্যের উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।
*এই গাছ ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই সমৃদ্ধ। এই জন্য এই গাছ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় ভালো ভূমিকা রাখে।
*শ্বেত আকন্দক গাছে প্রদাহ বিরোধী উপাদান রয়েছে। যার কারনে শ্বেত আকন্দ গাছ ব্যবহারে হাঁপানি সর্দি কাশি ব্রংকাইটিস ইত্যাদি প্রতিরোধ করে। এছাড়া শরীরের প্রদাহ কমায়।
*এই গাছ আর্থারাইটিস রোগের সমস্যা সমাধান করে।
*শ্বেত আকন্দ গাছ বাসার পাশে থাকলে যে কোন সময়ই এই উপকারগুলো কাজে লাগাতে পারবো। আসুন বাড়ির পাশে একটি শ্বেত আকন্দ গাছ লাগিয়ে রাখি।

লেখক এর মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠকগন আজকের বিষয় শ্বেত আকন্দ গাছের শিকড় কি কি কাজে লাগে। আকন্দ গাছ অত্যন্ত উপকারী। এই গাছে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। এছাড়াও বাসায় শ্বেত আকন্দ গাছ থাকলে সাপের উপদ্রব থেকে বাঁচা যায়। বিভিন্ন গুনাগুন ও ওষুধ গ্রহণ করার জন্য বাড়ির পাশে একটি শ্আবেতকন্দ গাছ লাগিয়ে রাখা অনেক ভালো।

আজকের কনটেন্টে শ্বেত আকন্দ গাছের ব্যবহার ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো তথ্য ব্যাপারে জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়ুন। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url