ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে
সুপ্রিয় পাঠকগন ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে এ বিষয় নিয়ে লিখতে বসলাম। আজকের আর্টিকেলে আরো আছে ইলিশ মাছের অপকারিতা। ইলিশ মাছের ডিমের উপকারিতা। ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ। ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য। ইলিশ মাছের উপকারিতা। ইলিশ মাছ আমাদের জাতীয় মাছ। এছাড়াও ইলিশ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ।
আমরা সবাই ইলিশ মাছ অনেক ভালোবাসি। মধ্যবিত্তদের হাতের নাগালে ইলিশ মাছ থাকে না। যেহেতু দাম অনেক বেশি তাই মধ্যবিত্তদের জন্য ইলিশ মাছ ক্রয় করা অনেক কষ্টকর। আজকের এগুলো বিষয় জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন।
ভূমিকা
সুপ্রিয় পাঠকগন ইলিশ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ তেমনি এ মাছের উপকারিতা অনেক বেশি। ইলিশ মাছে ওমেগা৩ ও ফ্যাটি এসিডের মত এন্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এজন্য ইলিশ মাছ খাওয়ার মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুকি কমে, হার্টের স্বাস্থ্য ভালো থাকে, এবং রক্তচাপের ভারসাম্যতা ঠিক থাকে। ইলিশ মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রোটিন থাকে।
আরও পড়ুনঃ ভিটামিন এ এর অভাব জনিত লক্ষণ
ইলিশ মাছ খাওয়ার ফলে ত্বকের কোলাযেন বৃদ্ধি হয় এবং ত্বক মেরামতে সহায়তা করে। ইলিশ মাছে ভিটামিন এ ও খনিজ পদার্থের আধিক্য থাকার জন্য মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং চোখের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। তাই সামর্থ্য অনুযায়ী যতদূর পারা যায় ইলিশ মাছ খাওয়া প্রয়োজন। আজকের বিষয় ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে।
ইলিশ মাছের অপকারিতা
ইলিশ মাছের অনেক উপকারের পাশাপাশি কিছু অপকারিতা রয়েছে। ইলিশ মাছের অপকারিতা গুলো নিম্নরুপ।
*ইলিশ মাছ খেলে অনেকের এলার্জি হয়। যাদের এলার্জি হয় ইলিশ মাছ না খাওয়া ভালো।
*বেশি ইলিশ মাছ খাওয়ার ফলে অনেকের ডায়রিয়া হতে পারে।
*ইলিশ মাছের দাম অনেক বেশি তাই গরিবদের জন্য ইলিশ মাছ খাওয়া দুর্দায়।
ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে
প্রিয় পাঠকগন আপনারা হয়তো জানতে ইচ্ছা করছেন ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে। ইংলিশ অনেক সাধের মাছ হওয়ার পরেও ইলিশ মাছের কোলেস্টেরল একটু বেশি আছে। যাহারা অতিরিক্ত কোলেস্টেরল সমস্যায় ভোগেন।
তাদের ক্ষেত্রে ইলিশ মাছ একটু দেখে কম খাওয়া প্রয়োজন। তারা মাসে ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছ খেতে পারেন। তবে যাদের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। রক্তচাপ এর পরিমাণ অনেক বেশি তাদের জন্য মাসে ৫০ গ্রাম খাওয়া যেতে পারে।
ইলিশ মাছের ডিমের উপকারিতা
ইলিশ মাছের ডিম অনেক উপকারী খাদ্য। ইলিশ মাছের ডিমে অত্যাধিক পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যার কারণে ইলিশ মাছের ডিম খাওয়ার কারণে শরীরের অনেক উপকার হয়। আজকের বিষয় ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে। ডিমের উপকারিতা গুলো বর্ণনা করা হলো।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ ইলিশ মাছের পাশাপাশি মাছ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। মাছের ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন আছে যা শরীর গঠন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রিউম্যাটয়েড আর্থারাইটিস কমায়ঃ গবেষকদের মতে মাছ ও মাছের ডিমের থাকা ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিড রিউম্যাটয়েড আর্থারাইটিস এর লক্ষণ গুলো কমিয়ে আনে।
হাড় মজবুত করেঃ মাছের ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ডি রয়েছে। ভিটামিন ডি-পেশী ও হাড়কে মজবুত করে। দাঁত মজবুত করে এবং ভালো রাখে।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ ইলিশ মাছের ডিমের থাকা EPA,DHA,DPA এক ধরনের ফ্যাটিঅ্যাসিড যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো করে। মেধা বিকাশ ঘটায় ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।
চক্ষু ভালো রাখেঃ ইলিশ মাছের ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ রয়েছে। যা চোখের কার্যকারিতা উন্নত করে। শিশুদের চোখের গঠন উন্নত করে। দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
অ্যানিমিয়া দূর করেঃ ইলিশ মাছের ডিমের পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ ও আয়রন রয়েছে। ভিটামিন এ শরীরের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। আয়রন রক্তের লোহিত কণিকাগুলো বৃদ্ধি করে রক্তস্বল্পতা দূর করে। যার কারণে অ্যানিমিয়া হওয়ার সুযোগ থাকে না।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ ইলিশ মাছের ডিমে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ এবং আয়রন রয়েছে। এছাড়াও ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। যার কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে না। এছাড়া ইলিশ মাছের ডিমের ভিটামিন ডি রয়েছে যা হার্টকে স্বাস্থ্যবান রাখে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করেঃ ইলিশ মাছের ডিমের পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ ওমেগা ৩ ও ফ্যাটিএসিড রয়েছে। যা শরীরের রক্ত সঞ্চালনকে বৃদ্ধি করে। রক্তনালিকাতে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। যার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে।
তাই নিয়মিত ইলিশ মাছের ডিম খেয়ে এগুলো সমস্যা হতে দূরে থাকি। আজকের বিষয় ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে।
ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ
ইলিশ মাছ পুষ্টিগুণে ভরপুর। ১০০ গ্রাম ইলিশ মাছে প্রায় ৩১০ ক্যালরি শক্তি রয়েছে। প্রোটিন ২২গ্রাম ভ্যাট ১৯.৫ গ্রাম। এছাড়াও মাছের তেলে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বিদ্যমান। ইলিশ মাছ খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, আর্থারাইটিস, সহ বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়।
এছাড়া মস্তিষ্কের গঠন ভালো রাখে। মানবদেহে প্রতিদিনের দরকারি ২৭ ভাগ ভিটামিন সি ইলিশ মাছ থেকে পাওয়া যায়। এছাড়া ২ ভাগ আয়রন ২০৪ ভাগ ক্যালসিয়াম ইলিশ মাছ থেকে পাওয়া যায়। ইলিশ মাছে অধিক পরিমাণ ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা হার্টের ট্রাইগ্লিসারাইড এর পরিমাণ কমিয়ে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে।
ইলিশ মাছ খাওয়ার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায় ও ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। ইলিশ মাছে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা চোখের অঙ্গানু গুলো স্বাস্থ্যকর রাখে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে। ইলিশ মাছের ভিটামিন এ ভিটামিন ডি ও ভিটামিন ই বিদ্যমান।
যাহা রাতকানা রোগ হতে বাচায় এবং শিশুদের রিকেট রোগ থেকে মুক্তি দেয়। ইলিশ মাছে ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ও আয়রন আছে। যাহা হাড় পেশি গঠনে সহায়তা করে।
এছাড়াও মানসিক চাপ ও মানসিক উদ্বেগ হতে রক্ষা করে। ইলিশ মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ প্রোটিন রয়েছে যা ত্বকের কোলাজের বৃদ্ধি করে ত্বক সুস্থ কমল ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে। আজকের বিষয় ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে।
ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য
ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাছ। বাংলাদেশের জাতীয় মাছের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ইলিশ মাছ খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। বাংলাদেশের সকল লোক ইলিশ খেতে খুব পছন্দ করে।
এক্ষেত্রে একটু অসুবিধা আছে যেমন ইলিশ মাছের মত অন্যান্য মাছ রয়েছে। যেমন সার্ডিন মাছ ইলিশের মতই। এইজন্য ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট গুলো আলোচনা করা হলো।
*ইলিশ মাছের দেহ চ্যাপ্টা ও পুরু।
*ইলিশ মাছের মাথার উপরিতল পুরু এবং ত্বকে ঢাকা।
*ধাতব রুপালী আকারে ইলিশ মাছের আইস দিয়ে গঠিত।
*ইলিশ মাছের দীর্ঘ সর্বাধিক ৬০ সেন্টিমিটার হতে পারে। এছাড়াও একটি ইলিশ মাছের সর্বোচ্চ ওজন ২ কেজি থেকে আড়াই কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
*স্ত্রী মাছ তাড়াতাড়ি বড় হয়। এছাড়াও পুরুষ মাছের চাইতে স্ত্রী মাছের আকার বড় হয়।
*ইলিশ মাছগুলো সমুদ্র থেকে নদীর মিঠা পানিতে ডিম ছাড়ার জন্য আসে।
তাই আসুন ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য দেখে সার্ডিন মাছ থেকে আলাদা করে ইলিশ মাছ ক্রয় করি।
ইলিশ মাছের উপকারিতা
ইলিশ মাছ অনেক উপকারী মাছ। ইলিশ মাছের পুষ্টি উপাদানে ভরপুর। এছাড়া ইলিশ মাছে প্রোটিনের পরিমাণ একটু বেশি। জেনে নিন ইলিশ মাছের উপকারিতা গুলো।
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিঃ ইলিশ মাছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড বিদ্যমান। গবেষণায় দেখা গেছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড নিউরোনাল, রেটিনা ও ইমুউন ফাংশান সহ ভ্রুনের সঠিক বিকাশ ঘটায়। এছাড়াও ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিড রক্ত সঞ্চালন ভালো করে।
হৃদরোগের ঝুকি কমায়ঃ ইলিশ মাছে প্রচুর পরিমাণ ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি এসিড থাকায় রক্তের কোলেস্টেরলের পরিমাণ কম থাকে। ইলিশ মাছ খাওয়ার জন্য হৃদরোগের ঝুকি কমে।
ত্বকের যত্নেঃ ত্বকের সৌন্দর্য রক্ষায় ইলিশ মাছের ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সহায়তা করে। ইলিশ মাছের প্রোটিন ত্বকে কোলাজেন বৃদ্ধি করে। যার কারণে ত্বক টানটান ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল হয়।
চক্ষু ভালো রাখেঃ ইলিশ মাছের ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিড চোখের স্বাস্থ্যকর রাখে। বয়স হয়ে গেলেও ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিডের জন্য চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে না।
খনিজ উপাদানে ভরপুরঃ ইলিশ মাছে পর্যাপ্ত খনিজ উপাদান রয়েছে যেগুলো হল আয়োডিন, সেলেনিয়াম, জিংক, পটাশিয়াম। আয়োডিন থাইরয়েড গ্রন্থিকে ভালো রাখে।
সেলেনিয়াম উৎসেচক ক্ষরণে সাহায্য করে যা ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দূর করে। এছাড়াও সোডিয়াম পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রন শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হাড়ের পুষ্টি ও পেশি মজবুত করে।
ভিটামিনের সমাহারঃ ইলিশ মাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ ভিটামিন ডি ও ভিটামিন ই রয়েছে। এইজন্য ইলিশ মাছ খেলে ভিটামিন এ এর জন্য রাতকানা রোগ হতে বাঁচা যায়। ভিটামিন ডি থাকায় শিশুরা ইলিশ মাছ খেলে রিকেট রোগ হতে রক্ষা পায়।
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষাঃ ইলিশ মাছ খাওয়ার ফলে ইলিশ মাছে উপস্থিত ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করে। মস্তিষ্কের যেহেতু ৬০ ভাগ ফ্যাট দিয়ে গঠিত। ওমেগা থ্রি ও ফ্যাটি অ্যাসিড মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি করে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে।
বাত ব্যথা দূরঃ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডের সঙ্গে অস্টিওআরথ্রাইটিসের জোগ আছে। তাই নিয়মিত ইলিশ মাছ খেলে বাতের ব্যথা গাট ফুলে যন্ত্রণার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
ফুসফুসের জন্য ভালোঃ বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় ইলিশ মাছ ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ইলিশ মাছ ও সামুদ্রিক মাছ যাহারা নিয়মিত খান তাদের ফুসফুল ভালো থাকে।
লেখক এর মন্তব্য
সুপ্রিয় পাঠকগণ ইলিশ মাছে কি কোলেস্টেরল আছে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আজকের আর্টিকেলে আরো আছে ইলিশ মাছের উপকারিতা। ইলিশ মাছের ডিমের উপকারিতা। ইলিশ মাছের পুষ্টিগুণ। ইলিশ মাছের বৈশিষ্ট্য। ইলিশ মাছের উপকারিতা।
এগুলো বিষয় অত্যান্ত সূক্ষ্মভাবে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে আলোচনা করা হয়েছে। এগুলো বিষয় জানতে আমাদের এই আর্টিকেলটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url