জেনে নিন মাছের চর্বির উপকারিতা
প্রিয় পাঠক জেনে নিন মাছের চর্বির উপকারিতা। চর্বির কথা শুনলে আমরা ভয় পাই। কারণ অধিকাংশ লোক চর্বির দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্তমানে আমরা অধিকাংশ লোকই চর্বি খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি। তাই জানা দরকার মাছের চর্বি কত ক্ষতিকর। উপকার রয়েছে কিনা। বিশেষ করে আমরা বীজ পুড়িয়ে তৈরিকৃত তৈল খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাসষ্ট্রিক বাসা বেধেছে।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা সবাই গ্যাস্ট্রিকের ওষুধের উপর নির্ভর হয়েছি। তাই আসুন মাছের চর্বি কত উপকার বা অপকার রয়েছে সে বিষয়ে জেনে নিন।
ভূমিকা
আমাদের খাদ্য তালিকায় মাছ নিত্য প্রয়োজনীয় আমিষ জাতীয় খাদ্য। কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি। বিশেষ করে বর্ষাকালে গ্রাম বাংলার মানুষেরা মাছ শিকার করে খায়। জেনে নিন মাছের চর্বির উপকারিতা। মাছের চর্বি মানব দেহে ক্ষতি করে না।
আর ও পড়ুনঃ খালি পেটে পাকা পেপে খাওয়ার উপকারিতা
নিয়মিত মাছের চর্বি খেলে হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। সপ্তাহে কমপক্ষে ৩ দিন চর্বিযুক্ত মাছ খাবারের তালিকায় রাখা দরকার। চর্বিযুক্ত মাছে অনেক পুষ্টিগুণ থাকে। মাছের চর্বিতে ওমেগা৩ ও ফ্যাটি এসিডের ভালো উৎস। মাছের তেল রক্তনালীতে ক্ষতিকর চর্বি জমাট বাঁধতে দেয় না।
জেনে নিন মাছের চর্বির উপকারিতা
মাছের চর্বি অনেকেই খেতে পছন্দ করেন আবার অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না। অনেকে মনে করেন মাছের চর্বি খুব খারাপ। প্রকৃতপক্ষে মাছের চর্বি মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। সপ্তাহে কমপক্ষে তিন দিন চর্বিযুক্ত মাছ তালিকায় রাখলে হৃদরোগের সম্ভাবনা থাকে না। আসুন জেনে নিই মাছের চর্বির উপকারিতা দিক
হৃদরোগের জন্য উপকারীঃ মাছের চর্বি মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর নয়। অপর পক্ষে মাংসের চর্বি মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। মাছের চর্বিতে ওমেগা৩ ও ফ্যাটি এসিড পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যমান। ওমেগা৩ ও ফ্যাটিএসিডের কারণে হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। হৃদরোগ হওয়ার ঝুকি কমায়। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন তথ্য দিয়েছেন যে সপ্তাহে দুই-তিন দিন তেল যুক্ত মাছ খাবার তালিকায় রাখতে হবে।
রক্তনালীতে চর্বি জমতে দেয় নাঃ চর্বিযুক্ত মাছ খেলে রক্ত নালিতে রক্ত জমাট বাধতে পারে না। মাছের চর্বিতে ওমেগা৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিড পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে। যা রক্তনালিতে জমাট বাধার রক্ত ভেঙ্গে দেয়। যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এছাড়াও ক্ষতিকর চর্বি রক্তনালিতে জমা হতে পারে না।
ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ চর্বিযুক্ত মাছ খেলে ক্যান্সার হওয়ার ঝুকি কমায়। মাছের চর্বিতে ওমেগা৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। এছাড়া সেলেনিয়াম ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস বিদ্যমান। মাছের চর্বিতে ওমেগা৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকাই ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করে। ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। মাছের তেলে অবস্থিত সেলিনিয়াম ম্যাঙ্গানিজ ও ফসফরাস দাঁত পেশি ও হাড়ের গঠন মজবুত করে।
মস্তিষ্কের জন্য উপকারীঃ তেল যুক্ত মাছ মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। মাছের তেলে ফ্যাটি অ্যাসিড ওমেগা৩ থাকার জন্য মস্তিষ্কের নার্ভ সিস্টেম উন্নত করে। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়াও মস্তিষ্কের নতুন কোষ গুলো বৃদ্ধি করে।
ত্বক ও চুলের জন্যঃ মাছের তেল খেলে তেলে ওমেগা৩ ও ফ্যাটিএসিড থাকায় ত্বক সুন্দর থাকে। ত্বকের আর্দ্রতা কম হয় চুল লম্বা ও ঝরঝরে হয়। এছাড়া ত্বকে মৃত কোষ গুলো অপসারণ হয়ে নতুন কোষ বৃদ্ধি পায়। যার কারণে ত্বক মোলায়েম ও নরম হয়।
ডিপ্রেশনের উপশমঃ মাছের চর্বি খেলে শরীরের বিষন্নতা দূর হয়। গর্ভাবস্থায় মহিলারা বিষন্নতায় ভুগেন। চর্বিযুক্ত মাছ খেলে এর সমস্যা দূর হয়।
স্বাস্থ্যবান স্পার্মের জন্যঃ একটি গবেষণায় দেখা গেছে পুরুষেরা চর্বিযুক্ত মাছের সঙ্গে ফল ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবান খাবার খান। তাহলে পুরুষদের শুক্রানু সুস্থ,স্বাস্থ্যবান ও সক্রিয় থাকে। এছাড়া গর্ভবতী গন শরীর চর্বিযুক্ত মাছ খেলে প্রি ম্যাচিওর সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা কমায়। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে একজন মানুষ সপ্তাহে ৩৫০ গ্রাম থেকে ৪০০ গ্রাম মাছ খাওয়ার প্রয়োজন।
তেল ঘি বাদাম জাতীয় খাবার
তেল পলি আনস্যাচুরেটেড ভরপুর। এই তেল শরীরে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এই জন্য এই তেল খুব সামান্য ব্যবহার করাই ভালো। তবে এ তেলের মধ্যে জলপাই তেল বা অলিভ অয়েল সবচাইতে ভালো। তবে উচ্চ তাপমাত্রায় জলপাই তেল না দিয়ে ঘি অথবা মাখন ব্যবহার করাই ভালো। ঘি ও মাখন উপকারি। যার কারণে ঘি অথবা মাখন দিয়ে রান্না খেলে গ্যাসের সমস্যা থাকেনা।
আর ও পড়ুনঃ মধু ও কালোজিরা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা
সাধারণত দুধের সর থেকে মাখন তৈরি করার পরে মাখনকে ফুটিয়ে ঘি তৈরি করা হয়। ঘি হলো ভালো চর্বি। দুধের সর তুলে ঘি তৈরি করলে দুধের ফ্যাট কমে যায়। মাখন এর তুলনায় ঘি অনেক কম হয়। সাধারণত রান্নাবান্নায় ঘি ব্যবহার করলে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো হয়। স্মৃতিশক্তি উন্নত হয়। ঘি এ বিউটেরিক অ্যাসিড আছে যার কারনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
বাদাম একটি মুখরোচক ও সুস্বাদু খাবার। বাদামে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। বাদামের মধ্যে চিনা বাদাম কাজুবাদাম কাঠবাদাম পেস্তা বাদাম অনেক উপকারী। তবে বাদাম উপকারী তেল এর উৎস। ফ্যাট ভিটামিন ই মিনারেলস ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম ও ফসফরাস ম্যাগনেসিয়াম কপার সেলিনিয়াম ইত্যাদি বিদ্যমান। বাদাম খাওয়ার ফলে হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো থাকে চোখ ভালো করে হজম প্রক্রিয়া ভালো করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ক্যান্সার প্রতিরোধের সাহায্য করে। বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন ৩০গ্রাম বাদাম খেতে পারেন।
তেল জাতীয় খাবার খেলে কি হয়
আমরা প্রায় অনেকেই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগি। প্রকৃতপক্ষে গ্যাস্ট্রিক হয় অনিয়মিত খাবারে ভাজা পোড়া বেশি এর কারণে। তাছাড়া বীজ পুড়িয়ে যেগুলো তেল তৈরি করা হয় যেমন সোয়াবিন রাইস ব্র্যান্ড সূর্যমুখী তেল ইত্যাদি খাওয়ার ফলেও গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অনেক বেশি হয়। সাধারণত ভাজাপোড়ায় যে তেল ব্যবহার হয়।
সেই তেল থেকে পরের দিনে আবার ভাজাপোড়া করা হয় যা গ্যাস্টিক হওয়ার মূল কারণ। এইজন্য তৈলাক্ত খাবার আমাদের জন্য বাদ দিতে হবে। তেলে ভাজা অথবা তেল যুক্ত ভাজি খাবার খাওয়ার ফলে শরীরে অস্বস্তি তৈরি হয়। এগুলো খাবার কারণে পেট জালা বুক জ্বালা পেট চাপ ধরে থাকা বুক ব্যথা এরকম বহু গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি হয়।
সাধারণত তেহারি. মোরগ পোলা ও বিরিয়ানির মত তৈলাক্ত খাবার নিয়মিত খাওয়ার জন্য পাকস্থলীর সমস্যা ও গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা বেশি তৈরি হয়। এছাড়া বেগুনি আলুর চপ পেঁয়াজু সিঙ্গারা ইত্যাদি অস্বাস্থ্যকর খাবার আমরা নিয়ত খেয়ে আসছি। তাই সুস্থ থাকার জন্য তেলে ভাজাপোড়া খাবার একটু কমিয়ে দেওয়াই ভালো। আজকে আমাদের পোস্ট জেনে নিন মাছের চর্বির উপকারিতা।
চর্বি জাতীয় খাবার কি কি
চর্বি আমাদের শরীরের জন্য অত্যাধিক প্রয়োজন। তবে সেই ক্ষেত্রে ভালো জাতীয় চর্বি খাওয়া প্রয়োজন। চর্বির মূল উৎস হলো বিভিন্ন ধরনের খাবার। চর্বি আবার চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১) স্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। এই সকল খাবার শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ হতে পারে। এ খাবারগুলো হল লাল মাংস চিংড়ি কলিজা ইত্যাদি।
২) মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটঃ এই চর্বি গুলো স্বাস্থ্যকর চর্বি। এগুলো ঠান্ডা হলে শক্ত হয় এবং কক্ষ তাপমাত্রায় তরল হয়। এগুলোতে কার্বন বন্ধন থাকে।
৩)পলি আনস্যিচুরেটেড ফ্যাটঃ পলি আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট হল ভালো ফ্যাট। এগুলো শরীরের অনেক উপকার করে। এগুলো সাধারণত প্রাণিজ উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এ খাবার গুলো হল যেমন মাছ উদ্ভিজ্জ তেল বাদাম ও বিভিন্ন ধরনের বীজ।
ট্রান্স ফ্যাটঃ এগুলো চর্বি রূপান্তরিত হয়ে কৃত্রিম খাবার তৈরি করা হয়। এগুলোর মধ্যে ফ্যাটি এসিড লিপিড তেল প্রাণিজ চর্বি উদ্ভিজ্জ চর্বি। চর্বি আমাদের দেহের জন্য অত্যাধিক উপকারী। শরীরের কর্মক্ষমতা তৈরির জন্য চর্বি অপরিহার্য। অপরদিকে আমাদের সবচাইতে ক্ষতিকর পদার্থ চর্বি।
এজন্য লক্ষ্য রাখতে হবে সব সময় যেন আমরা ভালো চর্বি গ্রহণ করি। খারাপ চর্বি হতে দূরে থাকি। এ ছাড়া শরীরের অতিরিক্ত চর্বি বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বার্ণ করতে হবে। এজন্য আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে বীজ পোড়ানো তেল যেন আমরা না খাই। যেমন সোয়াবিন পাম রাইস ব্র্যান্ড সূর্যমুখী তেল ইত্যাদি।
যেগুলো অত্যধিক হিটে উৎপন্ন করা হয়। অপরদিকে সরিষার তেল নারিকেলের তেল অলিভওয়েলের তেল ঘি মাখন ইত্যাদি খাবার হিসেবে যেন ব্যবহার করতে পারি। আজকে আমাদের পোস্ট জেনে নিন মাছের চর্বির উপকারিতা।
চর্বি জাতীয় মাছ কি কি
প্রিয় পাঠক আপনারা আগেই জেনেছেন মাছের চর্বি আমাদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। মাছের চর্বিতে ওমেগা৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও পর্যাপ্ত ভিটামিন কে বিদ্যমান। মাছের মধ্যে সমুদ্রের মাছগুলো হল রূপচাদা লাইটা ভেটকি লাক্ষা ইলিশ ইত্যাদি।
আর ও পড়ুনঃ জেনে নিই স্বপ্নের পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু
আর সাধু পানির চর্বিযুক্ত মাছ হল পাঙ্গাস চীতল ভেটকি ও ইলিশ ইত্যাদি। আমাদের খাবার তালিকায় চর্বিযুক্ত মাছ রাখলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। আসুন নিয়মিত চর্বিযুক্ত মাছ খায়। আমাদের আজকের পোস্ট জেনে নিন মাছের চর্বির উপকারিতা।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় মাছের চর্বির উপকারিতা। প্রকৃত পক্ষে মাছের চর্বিতে ওমেগা৩ ও ফ্যাটিঅ্যাসিড থাকে। এই জন্য চর্বি যুক্ত মাছ আমাদের খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে। প্রিয় গ্রাহক আসুন ক্ষতিকর চর্বি বাদ দিয়ে ভাল চর্বি গ্রহন করি। চর্বির উপকারিতা জানতে আমাদের এ পোষ্ট ভিজিট করবেন। ভাল লাগলে লাইক,কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url