জেনে নিন গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা

প্রিয় পাঠক গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা বিষয় বর্ননা করা হবে। এছাড়া কামরাঙ্গা আমাদের জন্য অনেক উপকারী। উপকারের সঙ্গে সঙ্গে কামরাঙ্গার অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। আমাদের দেশীয় ফল।এইফল এর দাম অনেক কম। কামরাঙ্গা টক এবং মিষ্টি দুই জাতের হয়।
কামরাঙ্গা অত্যাধিক আস জাতীয় ফল। নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায় ও কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক খুব সহজেই আমরা হাতের নাগালে কামরাঙ্গা ফল সংগ্রহ করতে পারি। কামরাঙ্গা ফল অনেক বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় ফল। এর ফলে আশের পরিমাণ ও বেশি। এছাড়াও ভিটামিন সি জাতীয় ফল। কামরাঙ্গা খাওয়ার ফলে পাকস্থলীতে হজম প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে। নিয়মিত কামরাঙ্গা খাওয়ার জন্য ভিটামিন সি এর ঘাটতি পুরন হয়।
কামরাঙ্গা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দুর হয়। এছাড়াও এ ফলে ম্যাগনেসিয়াম মিনারেলস ও ফসফরাস সমৃদ্ধ। আসুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা। গর্ভবতীদের জন্য নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে ভিটামিন সি চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়া কামরাঙ্গা খেলে ক্যান্সারের মত মরণঘাতি রোগের জীবাণু নষ্ট হয়। কামরাঙ্গা খাওয়ার হলে শরীরে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।

গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা

কামরাঙ্গা সাধারণত টক মিষ্টি জাতীয় লোভনীয় ফল। গর্ভবতী মহিলারা এ ফল অনেক পছন্দ করেন। গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা ও নিয়ম ব্যাপারে আলোকপাত করা হলো।

হজমের সমস্যা দূর করেঃ বেশিরভাগ গর্ভবতী মহিলাদের হজমের সমস্যা হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যতার বৃদ্ধি পায়। গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা হয়। কামরাঙ্গা ফল অনেক স্বাস্থ্যকর ও এন্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় ও আশ জাতীয় ফল। নিয়মিত গর্ভবতীরা এ ফল খেলে হজমের সমস্যা দূর হয় ও কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়। গ্যাসের পরিমাণ কমায়। অনেক ক্ষেত্রে কামরাঙ্গা ডায়রিয়া কমায়। তবে ডাক্তারের পরামর্শ মত কামরাঙ্গা খাওয়া প্রয়োজন।

ভালো কোলেস্টেরল বাড়ায়ঃ নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে খারাপ কোলেস্টেরল এর মাত্রা কমায়। এছাড়াও উচ্চকলেস্টেরল কমায়ে কোলেস্টেরল ভারসাম্য রক্ষা করে।

শিশুর সুস্থ বিকাশ ঘটায়ঃ কামরাঙ্গাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন মিনারেলস ও কার্বোহাইড্রেট আছে। গর্ভবতী মায়ের নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে শিশুর বিকাশে সহায়তা করে। কামরাঙ্গার ভিটামিন সি শিশুর বিকাশ ত্বরান্বিত করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করেঃ কামরাঙ্গাতে প্রোটিন ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি বিদ্যমান। গর্ভবতী মায়েদের সাধারণত প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে কামরাঙ্গায় উপস্থিত ক্যালসিয়াম ভিটামিন সি ও মিনারেল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ও গর্ভস্থ শিশুর হাড় ও পেশির উন্নয়ন ঘটায়। গর্ভবতী মায়েদের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করে শিশুকে বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে রক্ষা করে।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখেঃ গর্ভবতী মহিলাদের রক্তচাপ কমবেশি হয়। কামরাঙ্গায় পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম রয়েছে। গর্ভবতী মায়েরা কামরাঙ্গা খেলে কামরাঙ্গার পটাশিয়াম রক্তনালিকাগুলো প্রসারিত করে। যার কারণে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকার জন্য গর্ভবতী মহিলাদেরকে কামরাঙ্গা খাওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর উৎসঃ কামরাঙ্গায় পর্যাপ্ত পরিমাণএন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গর্ভবতী মহিলাদেরকে হৃদরোগের হাত থেকে রক্ষা করে এবং চেহারায় তারুণ্যতা রক্ষা করে। কামরাঙ্গায় আরো পুষ্টি উপাদান এপিকেটচিন, গেলিক এসিড ও কোয়ারসেটিনের এর উপস্থিত।
যার কারণে গর্ভবতী মহিলাদেরকে আরো স্বাস্থ্যবান করে তোলে। এছাড়াও কোলেস্টেরল কমায় লিভার ক্যান্সার হতে রক্ষা করে। তাই ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত নিয়মিত কামরাঙ্গা খাওয়া প্রয়োজন।

কামরাঙ্গার ক্ষতিকর দিক

অনেক উপকারী ফল। বিশেষ করে গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। এরপরেও কামরাঙ্গা খাওয়ার কিছু অপকারিতা রয়েছে। যারা পর্যাপ্ত পরিমাণ কামরাঙ্গা প্রতিদিন খান। খাওয়ার জন্য দেহে অক্সালিক এসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। অক্সালিক এসিড বেশি থাকার জন্য নেফ্রোপ্যাথি হয়ে কিডনি বিকল হতে পারে।

যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের কামরাঙ্গা খেলে কিডনি বিকল হয়ে যেতে পারে। যাদের ক্রনিক কিডনি ডিজিস অথবা ক্রনিক কিডনি ফেইলর আছে তারা কামরাঙ্গা খেলে অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে অথবা মৃত্যুবরণ করতে পারে। আর কামরাঙ্গার ক্যারাম্বক্সিন নামক উপাদান এ সমস্যার জন্য দায়ী। তবে যাদের কিডনি সংক্রান্ত কোনো সমস্যা নাই তারা নিয়মিত কামরাঙ্গা খেতে পারেন।

কামরাঙ্গার উপকারিতা

কামরাঙ্গা একটি সুস্বাদু ও সহজলভ্য ফল। এর ফলে ভিটামিন মিনারেল ও প্রোটিন বিদ্যমান। এর ফলে বহু ওষুধি গুনাগুন রয়েছে। নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে আমরা অনেক উপকার পেতে পারি।
ওজন কমানোঃ যাদের অনেক ওজন নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে ওজন কমে। কামরাঙ্গাতে ফাইবারের পরিমাণ অনেক বেশি ও ক্যালরির পরিমাণ অনেক কম। যার কারনে নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে শরীরের ওজন কমে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ কামরাঙ্গায় বিটাক্যারোটিনবিদ্যমান যাহা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। এইজন্য কামরাঙ্গা খেলে শরীরের ক্যান্সারের জীবাণু প্রতিরোধ করে। নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

ডায়াবেটিস দূর করেঃ কামরাঙ্গা পাতার নির্যাস করে উক্ত-নির্যাস খেলে গ্লূকোজের স্তর উন্নত করে। যার কারণে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

হৃদরোগের ঝুকি কমায়ঃ কামরাঙ্গায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন বি৯ বিদ্যমান। শরীরের হৃদ রোগের ঝুকি কমানোর জন্য ভিটামিন বি৯ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যার কারনে নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়া স্ট্রোক হওয়ার ঝুকি কামায়।

কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষাঃ আমাদের সকল কোষের কোলেস্টেরল রয়েছে। শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের জন্য হার্টের ঝুঁকি বাড়ে। নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে কামরাঙ্গায় এন্টি অক্সিডেন্ট ও ফাইবার থাকায় ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় এবং খারাপ কোলেস্টেরল অপসারণ হয়। দেহে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা হয়।

শ্বাস প্রশ্বাস ভালো রাখেঃ কারো শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা থাকলে। অথবা অ্যাজমা জাতীয় কোন সমস্যা থাকলে নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে সেটা দূর হয়। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আয়রন জিঙ্ক ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়ামের মত উপাদান বিদ্যমান। এ উপাদানগুলো সর্দি-কাশি ও অ্যাজমা দূর করে শ্বাস-প্রশ্বাস ভালো রাখে।

প্রদাহ বিরোধী উপাদান বিদ্যমানঃ কামরাঙ্গায় ভিটামিন সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। যাহা শরীরের টক্সিন অপসারণ করে ও শরীরের প্রদাহ কমায়। কামরাঙ্গা খেলে শরীরের ত্বকের উন্নতি ঘটে।

সর্দি কাশি দূর করেঃ কারো সর্দি অথবা কাশি হলে কামরাঙ্গা পুড়িয়ে খেলে সর্দি-কাশি ভালো হয়। এছাড়া কামরাঙ্গা ভর্তা করে খেলে বাত ব্যথা উপশম হয়। খাদ্যের অরুচি থাকলে রুচি ফিরে আসে।

হজম শক্তি বৃদ্ধি করেঃ কামরাঙ্গায় ফাইবার ও এন্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে পাকস্থলীর খারাপ ব্যাকটেরিয়া দূর করে ভালো ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। যার কারণে হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়। কোষ্ঠকাঠিন্যতার দূর হয়।

ইমিউনিটি সিস্টেম বাড়ায়ঃ ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মানবদেহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি না হলে শরীর বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগে। কামরাঙ্গায় এন্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইবার, ভিটামিন, প্রোটিন ও মিনারেল বিদ্যমান। যার কারণে নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।

ত্বক ভালো রাখেঃ কামরাঙ্গায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি ফোলেট ও প্যান্থনটেনিক অ্যাসিড যাহা ত্বক মেরামতে সহায়তা করে। ভিটামিন সি ত্বকের গভীরে পৌছে ত্বকের মৃত কোষ কে দূর করে নতুন কোষ তৈরি করে। নিয়মিত কামরাঙ্গা খাওয়ার ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসে। ত্বক নরম ও স্বাস্থ্যবান হয়।

কৃমি থেকে মুক্তিঃ সাধারণত শরীরে কৃমির কারণে বমন বমন ভাব খাবারের অরুচি পেট ফোলা ইত্যাদি সমস্যা হতে পারে। নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে কামরাঙ্গার এন্টিঅক্সিডেন্টের কারণে কৃমি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। অতএব আমরা প্রত্যহ নিয়মিত পরিমাণ কামরাঙ্গা খেয়ে শরীরের পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধি করব।

কামরাঙ্গায় কোন ভিটামিন থাকে

প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা। কামরাঙ্গা অত্যাধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ ফল। কামরাঙ্গা সুস্বাদু এবং মুখরোচক ফল। এ ফল অত্যন্ত সহজলভ্য ও সুস্বাদু। কামরাঙ্গায় পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি রয়েছে। 

এছাড়াও পটাশিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম এর মত উপাদানও রয়েছে। যার কারণে আমরা নিয়মিত কামরাঙ্গা খেলে শরীরে এগুলো উপাদানের চাহিদা পূরণ হয়।

কামরাঙ্গা পাতার উপকারিতা

কামরাঙ্গা পাতার বহু ওষুধী গুণ রয়েছে। পাতা ও ডগা গুড়া করে খেলে জল বসন্ত ও কৃমি রোগ দূর হয়। কামরাঙ্গার পাতা ও কচি ডগা এর রস ট‌্যানিনঅ্যাসিড যা রক্ত জমাট বাঁধায় সহায়তা করে।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় গর্ভাবস্থায় কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা। এছাড়াও কামরাঙ্গা খাওয়ার উপকারিতা অপকারিতা সহ কামরাঙ্গা সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য আজকের বিষয়ে বিদ্যমান। কামরাঙ্গা অনেক উপকারী ও ওষুধিগুণ সম্পন্ন ফল। এ ফল খেতেও অনেক সুস্বাদু। কামরাঙ্গায় ভিটামিন এ ও সি সহ মিনারেলস প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেট বিদ্যমান।

আমাদের দেশে টক ও মিষ্টি দুই প্রকার কামরাঙ্গা পাওয়া যায়। তাই আসুন কামরাঙ্গা ব্যাপারে জানার জন্য আমাদের এ কনটেন্টে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। ভালো লাগলে নিজেকে সার্থক মনে করব।






এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url