জেনে নিই বাঙালির ঈদ উৎসব

প্রিয় পাঠক ২০২৪ সাল ঈদুল ফিতরের পক্ষ থেকে আপনাকে সাদর সম্ভাষণ। ঈদ মোবারক। এক মাস সিয়াম সাধনার পরে এক অনাবিল আনন্দ নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হবে বাঙালির ঈদ উৎসব ঈদুল ফিতর। ১১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতরের অনুষ্ঠিত হবে।
ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে মুসলমানদের মধ্যে সালাম ও কোলাকুলির মাধ্যমে ভাতৃত্ব বন্ধন সৃষ্টি হবে। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম পালনের পরে সাদকাতুল ফিতর আদায় করা হয়ে গেলে নামাজের জন্য ঈদগা মাঠে উপস্থিত হতে হবে।

ভূমিকা

দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পরে বাঙালির ঈদ উৎসব ঈদুল ফিতর উপস্থিত। রমজানকে সামনে রেখে গোটা বছরের ব্যবসায়ীদের হিসাব করে যাকাত দেওয়া হয়। এ যাকাত দেওয়ার মাধ্যমে ধনী এবং গরিব সমানভাবে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে। আগামী ৯ই এপ্রিল ২০২৪ ২৮ ই চৈত্র ১৪৩০ ১লা ছাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী বৃহস্পতিবার ঈদুল ফিতর অনুষ্ঠিত হবে।

ঈদুল ফিতরে আমরা সবাই ঈমানের সহিত ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় সহ সালাম ও কোলাকুলি করব। যার মাধ্যমে বিগত এক বছর সকল হিংসা বিদ্বেষ রাগ ক্ষোভ দূর হবে। এই ঈদ থেকে যেন আমরা পরস্পর হিংসা কলহ থেকে দূরে থাকতে পারি। মহান আল্লাহর কাছে এই আবেদন করি।

ইদুল ফিতরের নামাজের নিয়ম 

ঈদের নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদা। ইমাম সাহেব নামাজে দাঁড়িয়ে প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরিমা বাদে ৭ তাকবীর ও দ্বিতীয় রাকাতে ৫ তাকবীর মোট ১২ তাকবীরে দুই রাকাত ঈদের নামাজ পড়াবেন। এক্ষেত্রে প্রথম রাকাতে ৭ তাকবীর দেওয়ার পরে সুরা ফাতেহা ও অন্য একটি সূরা অথবা সূরার একটি অংশ পাঠ করে রুকু সেজদা সম্পন্ন করবেন।

দ্বিতীয় রাকাতে পুনরায় দাঁড়িয়ে ৫ তাকবীর সম্পূর্ণ করার পরে ইমাম সাহেব সুরা ফাতেহা পড়বেন। অতঃপর যেকোনো একটি সূরা অথবা সুরার অংশ পাঠ করে রুকু সেজদা সম্পন্ন করবেন। অতঃপর শেষ বৈঠকে বসে দোয়ার পরে সালাম ফিরবেন। সালাম ফিরার শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে খুতবা প্রদান করবেন।

অপরদিকে হানাফী মাযহাবের নিয়ম অনুযায়ী ইমাম সাহেব তাকবিরে তাহরিমার পরে তিনটি তাকবীর দিবেন। আর বাকি প্রথম রাকাত নামাজের রুকু সেজদা করবেন। পুনরায় দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব সুরা ফাতিহাপাঠ করবেন।

ও অন্য একটি সূরা অথবা সুরার অংশ বিশেষ পাঠ করার পরে তিনটি তাকবীর দিয়ে রুকু সেজদা সম্পন্ন করবেন। শেষ বৈঠকের পরে সালাম ফিরবেন। সালাম শেষে ইমাম সাহেব মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে দিক-নির্দেশনা বক্তব্য প্রদান করবেন। ২০২৪ ইদুল ফিতরের শুভেচ্ছা গ্রহন করুন।

ঈদুল ফিতর অর্থ কি

ঈদুল ফিতর এর অর্থ রোজা অথবা উপবাস ভাঙ্গার আনন্দ। যদি কোন লোক না খেয়ে থাকে তাহলে খাবার দিলে খুব খুশি হয়। এক মাস সিয়াম পালন করে পুনরায় সকাল বিকাল দুপুর খেলে অন্যরকম আনন্দ লাগে। কথায় আছে কষ্টের পরে ভোগ হলো পুরো ভোগ। মুসলমানদের দুটি উৎসবের মধ্যে ঈদুল ফিতরের একটি উৎসব।

একমাস সিয়াম সাধনা ও সদরাতুল ফিতরা আদায়ের পর বাঙালির ঈদ উৎসব ঈদুল ফিতর আমাদের জন্য বড়ই আনন্দের। এই দিনে আমরা দুঃখ রাগ আনন্দ ও ক্রোধ পরস্পর ভাগ করে নিই। ঈদুল ফিতরে আমরা নিজেরা যেমন নতুন কাপড় নতুন খাবার ও ভালো খাবারে ব্যস্ত হয়ে যায়।

আমাদের অধীনস্থ কর্মচারীদের কেও ভালো কাপড়-চোপড় ভালো পোশাক পরিধান ও ভালো খাওয়ার পরিবেশ করে দিই। রোজার সময় রোজা রাখা অবস্থায় আমাদের অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি হয়ে থাকে। ত্রুটি বিচ্যুতির কাফফারা সাদকাতুল ফিতর দেওয়া হয়। সাধারণত বাড়ির সকল সদস্যের সদকাতুল ফিতরা আদায় করা হয়।

আমরা ব্যস্ততার কারণে বিভিন্ন জন বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থান করি। আনন্দের বিষয় হল ঈদুল ফিতরে আমরা সবাই জন্মভূমিতে ফিরে আসি। যাহার কারণে আমাদের সবার মাঝে মিলন মেলা তৈরি হয়। তাই আসুন ২০২৪ সালের ঈদুল ফিতর আমাদের ভাতৃত্ববোধ আরো বেড়ে যাক। আমরা যেমন ৩০ টি সিয়াম পালন করেছি।

সিয়াম পালন অবস্থায় অন্যায় কাজ করতে অনেক ভয় পেয়েছি। সামনে যেন সিয়াম সাধনার শিক্ষা থেকে সকল অন্যায় ও অপকর্মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে পারি। আমরা যেন সকল জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের সঙ্গে সঙ্গবদ্ধ থাকতে পারি। ২০২৪ সালের ঈদ মোবারক

ঈদুল ফিতরের ইতিহাস

এক মাস সিয়াম সাধনার পরে ঈদুল ফিতরের আনন্দ উদযাপন করতে যাচ্ছি। আগামী ১১ই মার্চ বৃহস্পতিবার বাঙালির ঈদ উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হবে ইনশাল্লাহ। ঈদের আগের রাতকে বলা হয় লাইলাতুল জায়জা। অর্থাৎ পুরস্কার রজনী। এছাড়া উক্ত রাত কে চান রাত বলা হয়। পহেলা ছাওয়াল ঈদ উদযাপন শরীয়তের বিধান।

এই দিনে রোজা রাখা হারাম। মহানবী হযরত মুহাম্মদ মক্কা থেকে মদিনায় হিজরতের পরে ঈদ পালন করা হয়।মুসলমানরা ঈদের নামাজ পড়েন হিজরির দ্বিতীয় বছর ৬২৪ সালে মার্চ মাসে কোন এক দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ছোট বড় সবাকে নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতেন। বিশেষ করে তিনি ঈদের সময় গরিবদের বেশি খোঁজ খবর নিতেন।

হযরত আনাস থেকে বর্ণিত নবী করিম মদিনায় সাহাবীদেরকে আনন্দ করতে দেখলেন। তিনি সাহাবীদেরকে বললেন তোমরা কিসের আনন্দ করো। সাহাবীগণ বললেন অন্ধকার যুগ থেকে আমরাই আনন্দ করে আসতেছি। দুইদিন আমরা খেলাধুলা ইত্যাদিতে ব্যস্ততা কাটাই।

নবী করীম সা বললেন এই দুই দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদের দুইদিন আনন্দের জন্য নির্ধারিত করে দিয়েছেন। একটি ঈদুল ফিতর অন্যটি ঈদুল আযহা। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের মতে ১২০৪ সালে বঙ্গদেশ মুসলিমদের হাতে আসেতখন থেকে ঈদ উদযাপন ভালোভাবে শুরু হয়। পূর্বেও কিছু ঈদ উদযাপন হত।

রাসূল সাঃসকালে গোসল করে সুগন্ধি মেখে উত্তম পোশাক পরিধানকরে বাহির হতেন। বাহির হওয়ার সময় তিনি খেজুর অথবা মিষ্টি জাতীয় খাবার খেতেন। ঈদগায়ে যাতায়াতের জন্য দুটি রাস্তা ব্যবহার করতেন। ঈদের নামাজ শেষে মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে সমাজ ব্যবস্থা পরিচালনার ব্যাপারে খুতবা দিতেন।

তিনার খুতবা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিক নির্দেশনা ছিল। ঈদে সবাইকে শুভেচ্ছা জানাতেন। গরিব অসহায়দের খোঁজখবর নিতেন। আমরাও যেন অনুরূপ কাজ করতে পারি এটাই আশা করি

জেনে নিই বাঙালির ঈদ উৎসব

বাঙালির ঈদ উৎসব অত্যন্ত জাঁকজমক ভাবে পালন হয়। রোজার শেষে ঈদের আনন্দটা মুখের ভাষায় বলে শেষ করা যাবে না। বাঙ্গালীদের মধ্যে ঈদের উৎসব শুরু হয় ১২০৪ সালের আগে থেকে। তবে পুরোপুরি দেখার মত উৎসব চালু হয়েছে ১২০৪ সালের পর থেকে। ১৬০৮ সালে ঢাকা শহর প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে।

মোগল শাসক ও ঢাকার নবাব বংশের শাসকগণ অত্যান্ত জাঁকজমক ভাবে ঢাকায় ঈদ উদযাপন করতেন। তখনো গ্রামে অত্যন্ত জাঁকজমক ভাবে ঈদ উৎসব পালন হতো না। ১৯৩৭ সালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক বাংলার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তার হাতে থাকার কারণে তার নেতৃত্বে শহর গ্রাম সব জায়গায় ভালো হবে ঈদ উদযাপন শুরু হয়।

আস্তে আস্তে যত দিন বাড়ে ঈদ উদযাপনের মাত্রা আরো বেশি বেড়ে যায়। বর্তমানে ধনী গরিব প্রত্যেক পরিবারেই অবস্থান অনুযায়ী ঈদ উদযাপন শুরু হয়। বাঙালিরা ঈদ উদযাপনে পিঠা পায়েস পুলি ইত্যাদির মেলার আয়োজন করে। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে দেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

অপরদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে অবস্থানরত সকলে নিজ জন্মস্থানে মিলিত হওয়ার কারণে পাড়ায় মহল্লায় ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান হয়। সবদিক বিবেচনা করে ঈদ উদযাপন যেন আমাদের মনকে নব উদ্যমের দোলা দেয়। আগামী ২০২৪ সালের ঈদ উদযাপন বাঙালির ঘরে ঘরে ইসলামের মর্মবাণী পৌঁছে যাক। সবাই ইসলামী অনুশাসনের পতাকা তলে আবদ্ধ হই। এই কামনা করাই আমাদের কর্তব্য। আসুন ২০২৪ ইং সাল ঈদ মোবারক।

লেখক এর মন্তব্য

প্রিয় পাঠক পুরাতন দুঃখ কষ্ট ভুলে ,২০২৪ সালের ১১ ই এপ্রিল বাঙালির ঈদ উৎসব ঈদুল ফিতর উদযাপন হতে যাচ্ছে। উক্ত দিনে ঈদ উদযাপনের জন্য। সবাই নতুন জামা কাপড় রংবেরঙের পোলাও কোরমা সহ বিভিন্ন রকম খাবারাদি তৈরি করার প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। ঈদের দিন আমরা যেন প্রতিবেশী গরীব অসহায় মানুষের খবর নিতে পারি।

নিজের তৈরি খাবার থেকে খাবার যেন তাদেরকে দিতে পারি। আমরা ঈদের দিন পেয়ে বিভিন্ন ইসলাম বিরোধী কার্যক্রমে যেন লিপ্ত না হয়। বিশেষ করে গান বাজনা না করি। গাড়ি নিয়ে ঢাক ঢোলক বাজিয়ে ঘোরাঘুরি না করি। ইসলামের পরিভাষায় ঈদ উদযাপন অর্থ আমরা যেন পরবর্তীতে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে পারি।

তাই ২০২৪ সালের ১১ই এপ্রিল ১৪৩০ সালের ২৮ই চৈত্র ১৪৪৫ সালের পহেলা ছাওয়াল ঈদ উদযাপন যেন শালীনভাবে হয় এটাই আমাদের কাম্য। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আমার এই ওয়েবসাইট ভিজিট করার আমন্ত্রণ রইল। কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানাবেন। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন। ঈদ মোবারক।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url