প্রতিদিন কয়টি আখরোট খাওয়া উচিত

 আখরোট গাছের বৈজ্ঞানিক নাম Juglans regia। এই গাছে দৈর্ঘ্য ১০ থেকে ৪০ মিটার পর্যন্ত হয়। এর ইংরেজি নাম Walnuts।আখরোট বাদাম যাতীয় এক ধরনের খাবার। এর স্বাদ মোটামুটি বাদামের মত। ইহা ভিটামিন প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ সুপারফুড।প্রতিদিন কয়টি আখরোট খাওয়া উচিত এ বিষয় আলোচনা করা হবে।

আখরোট ফল দেখতে গোলাকার। পাকা ফলের বাইরে খোসা ফেলে দিয়ে ভেতরের শক্ত বীজ পাওয়া যায়। খোলসের ভিতর দুটি বাদাম জাতীয় ফল থাকে যার রং বাদামি। এই তৈলাক্ত ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বীজ যা বাতাসের অক্সিজেন থেকে রক্ষা করে এবং খাওয়ার উপযোগী হয়।

ভূমিকা

প্রতিদিন কয়টি আখরোট খাওয়া উচিত তা জেনে নিন।আখরোট অত্যাধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ বীজ। এই বীজে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। যার কারণে এই বিজ কে সুপারফুট বলা হয়। পুষ্টি উপাদান গুলো যথাক্রমে প্রতি 100 গ্রাম আখরোটে শক্তি ৬৫৪ কি.ক্যালোরি শর্কর ১৩.৭১ শ্বেতসার ০.০৬ চিনি ২.৬১ খাদ্য আঁশ ৬.৭ স্নেহ পদার্থ ৬৫.২১ প্রোটিন ১৫.২৩ ভিটামিন এ ২০ IU থায়ামিন বি১ ০.৩৪১ মিগ্রাম রিবোফ্লাভিন বি২ ০.১৫ মি.গ্রাম।

আরও পড়ুনঃ রুই মাছের উপকারিতা ও অপকারিতার বিবরণ 

নায়াসিন (বি৩) ১.১২৫ মিগ্রাম প্যানটোথেনিক অ্যাসিড বি৫ ০.৫৭০ মিগ্রাম, ভিটামিন বি৬ ০.৫৩৭ মিগ্রাম, ভিটামিন সি ১.৩ মিগ্রাম, ভিটামিন ই ০.৭ মিগ্রাম, ভিটামিন কে ২.৭ μg, ক্যালসিয়াম ৯৮ মিগ্রাম, লৌহ ২.৯১ মিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৫৮ মিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ৩.৪১৪ মিগ্রাম, ফসফরাস ৩৪৬ মিগ্রাম, পটাশিয়াম ৪৪১ মিগ্রাম, সোডিয়াম ২ মিগ্রাম, জিংক ৩.০৯ মিগ্রাম,।

মধু মিশ্রিত আখরোট খাওয়ার নিয়ম 

অনিদ্রা দূর করতে, ত্বকের উচ্চতা বৃদ্ধি করতে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে আখরোট খাওয়া দরকার। নিয়মিত আখরোট খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে যায়। মধু মিশ্রিত আখরোট খেলে শারীরিক দক্ষতা বাড়ে এবং বিভিন্ন ধরনের মাইগ্রেন সমস্যায় মাথাব্যথা দূর করে।

ইহা খেলে জীবনে শক্তি বৃদ্ধি করে এবং রক্তস্বল্পতা দূর করে। আখরোট ও মধু একসঙ্গে পুরুষেরা খেলে তাদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। জৈবিক চাহিদাগুলো বৃদ্ধি পায়। রক্তনালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি হয় এবং রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমায়।

আখরোট মধু একসঙ্গে খেলে মহিলাদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী মহিলাদের মানসিক বিকাশ বৃদ্ধি পায়। মধু মিশ্রিত আখরোট খেলে মহিলাদের দুধের মান বৃদ্ধি পায়। সেই দুধ খেয়ে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

খালি পেটে আখরোট খাওয়ার উপকারিতা  

পুষ্টিবিদগণ বলেছেন আখরোট ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে হবে। ইহাতে হজমের শক্তি বাড়ে। সকালে খালি পেটে দুধ অথবা মধুর সাথে আখরোট খাওয়া ভালো। বিশেষজ্ঞদের মতে একজন পূর্ণবয়স্ক লোকের জন্য পাঁচটি আখরোট খাওয়াই যথেষ্ট। প্রতিদিন পাঁচটির বেশি আখরোট না খাওয়াই ভালো।

পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের মতে নিয়মিত সকালে খালি পেটে আখরোট খেলে হার্ট সুস্থ থাকে। স্নায়ুগত সমস্যা দূর হয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ থাকে। আখরোটে থাকা ওমেগা৩, ফ্যাটি অ্যাসিড,  ভিটামিন ই থাকায় চুল ও ত্বক কে সুস্থ রাখে।

প্রতিদিন কয়টি আখরোট খাওয়া উচিত 

প্রতিদিন আখরোট খাওয়া ভালো।একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষ প্রতিদিন পাঁচটি করে আখরোট খাবেন। তবে কোন সময় পাঁচটির বেশি আখরোট খাবেন না। বেশি আখরোট খেলে উপকারের চাইতে শরীরের ক্ষতি হতে পারে।

 আরও পড়ুনঃ  জিন জাতীর অস্তিত্ব ও রহস্যের ইতিহাস

হারভার স্কুল অফ পাবলিক হেলথ এর বিশেষজ্ঞগণ বলেন মহিলারা অন্তত সপ্তাহে পাঁচ বার ৩০ গ্রাম করে আখরোট খাবেন। মহিলাদের ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে। প্রতিদিন সকালে পাঁচটি করে আখরোট খেলে আখরোটে থাকা বায়োটিন চুল পড়া কমায় এবং চুলের গ্রোথ বৃদ্ধি করে, শরীরের কার্জক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।

গর্ভাবস্থায় আখরোট খাওয়ার উপকারিতা

 গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন কয়টি আখরোট খাওয়া উচিত জানা দরকার আখরোট গর্ভাবস্থায় মহিলাদের রক্তনালী পরিষ্কার করে। ও উচ্চ রক্তচাপ হতে রক্ষা করে। আখরোটে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় গর্ভবতী মহিলাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা শক্তিশালী করে। গর্ভাবস্থায় আখরোট খেলে আখরোটের ভিতরে যে ওমেগা থ্রি থাকে ও ফ্যাক্টরি অ্যাসিড থাকে। 

উক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড গর্ভবতী মহিলাদের ও শিশুদের মস্তিষ্ক ভালো রাখে। শিশুদের বিকাশের জন্য আখরোটে উপস্থিত আলফা লীনোলেনিক ফ্যাটি এসিডের একটি উৎস। দৈনিক চার পাচটি আখরোট খেলে আখরোটের প্রোটিন ও ফাইবার গর্ভবতী মহিলাদের লিপিড প্রোফাইল ভালো রাখে। 

আখরোটে উপস্থিত কপার গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রুনের বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে। প্রতিদিন গর্ভবতী মহিলাদের চার পাচটি আখরোট অথবা ৩০ গ্রাম আখরোট এর বেশি খাওয়া ঠিক না। গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত আখরোট খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। যাদের এলার্জি আছে তাদের বেশি আখরোট খাওয়া ঠিক না।

শিশুদের আখরোট খাওয়ার উপকারিতা

শিশুদেরকে আখরোট খাওয়ানো অনেক উপকারী। তবে শিশুদেরকে শক্ত খাবার খাওয়ানো কষ্টকর। সেজন্য আখরোট গুড়ো করে শিশুদেরকে খাওয়ানো যায়। আখরোট খাওয়াতে হলে শিশুর বয়স কমপক্ষে এক বছর হওয়া দরকার। বেশি কম বয়স হলে আখরোট খাওয়ালে কিছু প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আখরোটে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি আছে। 

যাহার কারণে শিশুরা আখরোট খেলে তাদের বেড়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বৃদ্ধি ভালো হয়। অসংখ্য খনিজ উপাদান আখরোটের ভেতরে বিদ্যমান। শিশুরা আখরোট খেলে তাদের শারীরিক বৃদ্ধি হয়। ক্যালসিয়াম থাকায় শিশুদের হাড় ও পেষি মজবুত হয়। আয়রন ও ম্যাগনেসিয়াম থাকায় শরীরের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের সাহায্য করে। 

শরীরে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় থাকে। আখরোটের ভিতরে ভিটামিন এ, সি, ও কে এমাইনোএসিড থাকায় শিশুদের বিকাশে সরাসরি প্রভাব ফেলে। আখরোটের ভেতরে ম্যাগনেসিয়াম সহ ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড বিদ্যমান। তাই মেধার বিকাস ও বৃদ্ধি ঘটে। সাধারণত বাচ্চাদের একটু ঘুম কম হয়। 

আখরোটে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় শিশুরা আখরোট খেলে অনিদ্রা দূর হয়। ঘুমের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়। সাধারণত শিশুরা কম খাওয়ার জন্য পুষ্টিহীনতায় ভোগে। এক্ষেত্রে আখরোট খাওয়ার কারণে বাচ্চাদের ওজন বৃদ্ধি হয়। এছাড়া সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হয়।

আখরোট খাওয়ার উপকারিতা 

আখরোটে এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় শরীরে ক্যান্সারের সেলের বৃদ্ধি ধ্বংস করে। ওমেগা৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় হতাশা ও মানসিক চাপ কমায়। নিয়মিত আখরোট খেলে শরীরের গঠন ভালো থাকে। আখরোটে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, আয়রন, কপার, ও জিংক থাকায় শরীরের ওজন কমায়। 

আরও পড়ুনঃ দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি

প্রতিদিন কয়টি আখরোট খাওয়া উচিত এ বিষয় জানা দরকার। চার-পাঁচটি করে আখরোট খেলে কার্ডিও ভাস্কুলার সিস্টেম ভালো থাকে। খারাপ কোলেষ্টরেল কমিয়ে ভালো কোলেস্টরেল বৃদ্ধি করে। শরীরের হাড়কে মজবুত রাখতে নিয়মিত আখরোট খান। আখরোটে থাকা ফ্যাটি এসিড হার্ডের দুর্বলতা থেকে রক্ষা করে। আখরোটে উপস্থিত মেলাতনিন অনিদ্রা দূর করে। 

আখরোটে ওমেগা৩ থাকায় স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। আখরোট দিয়ে ড্রাইফুড তৈরি করে খাওয়া হয়। আখরোট গুড়ো করে কফির সাথে অথবা কেকের সাথে মিশ্রিত করে খাওয়া হয়। পায়েসের স্বাদ বৃদ্ধির জন্য আখরোট গুড়ো করে দেওয়া হয়। নিয়মিত আখরোট মধু দিয়ে খেলে যৌন স্বাস্থ্য উন্নত হয়। 

বীর্যের শুক্রানুর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। আখরোটের খোসা দিয়ে খুব সুস্বাদু চা বানিয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া আখরোটের খোসা দিয়ে সার বানিয়ে গাছে ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত আখরোট খেলে শ্বাসকষ্ট, আর্থারাইটিস, ত্বকের সমস্যা, একজিমা র মতো রোগ প্রতিরোধ করে।

আখরোট খাওয়ার অপকারিতা 

প্রতিদিন কয়টি আখরোট খাওয়া উচিত জানবেন। কারন আখরোট অতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। বেশি আখরোট খেলে শরীরের পুষ্টির ভারসাম্য রাখা যায় না।    যাদের এলার্জি আছে তাদের এলার্জি ও লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। কালো আখরোট খেলে  শরীরের আয়রন চুষে নেই ফলে আয়রন ঘাটতি হয়। 

বেশি আখরোট খেলে অনেক সময় শরীরে ফুসকুড়ি ও ফোলা ভাব হয়। বেশি পরিমাণ আখরোট খেলে হজমের সমস্যা হয়। যাদের এলার্জি আছে তারা বেশি আখরোট খেলে তাদের গালে অথবা জিভাতে অথবা ফুসফুসে জ্বালা যন্ত্রণা হতে পারে। এছাড়া শ্বাস নিতেও কষ্ট হয় ও মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

লেখকের মন্তব্য

আখরোট একটি উপকারী বীজ। এই বীজ খাওয়া আমাদের জন্য খুবই জরুরী। আখরোট কে সুপার ফুটবল বলা হয়। আখরোট আমরা বিভিন্নভাবে খেতে পারি। মধু দিয়ে আখরোট খাওয়া যায়। পানিতে ভিজিয়ে ও খাওয়া যায়। প্রতিদিন কয়টি আখরোট খাওয়া উচিত এ বিষয় জানা দরকার।

আমাদের দেহের পুষ্টি চাহিদা মিটানোর জন্য প্রতিদিন নিয়মিত পরিমাণ আখরোট খাব। আশা করি আমার এই পোস্টগুলো আপনাদেরকে ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।    

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url