চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
চিনা বাদাম বীরুত জাতীয় উদ্ভিদ। ইহা লেগাম গোত্রের অন্তর্ভুক্ত যাহার বৈঞ্জানিক নাম Arachis hypogea। ইহার উৎপত্তিস্থল দক্ষিন আমেরিকা, মধ্য আমেরিকা, ও মেক্সিকো। বর্তমান ভারতীয় উপমহাদেশ, চীন, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও মধ্যআফ্রিকা সহ আরও অনেক দেশে চিনা বাদাম চাষ হয়। চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানা প্রয়োজন।চিনাবাদামের ফল গুলো মাটির নিচে হয়। ফল থেকে বীজ সংগ্রহ করে আমরা খাওয়ার জন্য ব্যবহার করি। চিনা বাদাম একটি সহজলভ্য উপকারী খাবার। চিনা বাদাম খেলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো থাকে । রক্তচাপ, কোলেস্টরেল, ও পরিপাকতন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। প্রতিদিন একমুঠ চিনা বাদাম খেলে শরীর ভালো থাকে।
ভূমিকা
চিনা বাদাম অনেক সুস্বাদু পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খাবার। ইহাতে প্রোটিন সোডিয়াম আয়রন ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম ফাইবার ভিটামিন এ, ভিটামিন বি ও পটাশিয়াম রয়েছে। চিনা বাদামে অলিকোসা নল রয়েছে যা খারাপ কোলেস্টরেলের মাত্রা কমায়।
আরও পড়ুনঃ ডায়াবেটিস চিরতরে নিরাময় এর প্রাকৃতিক উপায়
ইহাতে এন্টি অক্সিডেন্ট প্রপার্টিজ রয়েছে যা ক্যান্সারের ঝুকি কমায়। এখানে চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা বর্ননা করা হলো।
চিনাবাদামের পুষ্টি উপাদান
প্রতি ১০০গ্রাম চিনা বাদামে আছে শক্তি ৫৭০ কি.ক্যলরি, শর্করা ২১ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ৯ গ্রাম,স্নেহ পদার্থ ৪৮ গ্রাম,প্রোটিন ২৫ গ্রাম, থায়ামিন (বি১) ০.৬ মিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন বি২ ০.৩মিগ্রাম, নায়াসিন বি৩ ১২.৯ মিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড বি৫ ১.৮ মিগ্রাম।
ভিটামিন বি৬ ০.৩ মিগ্রাম, ফোলেট বি৯ ২৪৬ মাইক্রোগ্রাম. ভিটামিন ই ৬.৬ মিগ্রাম, ক্যালাসয়াম ৬২ মিগ্রাম, লৌহ ২ মিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১৮৪ মিগ্রাম, ফসফরাস ৩৩৬ মিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৩২ মিগ্রাম, জিংক ৩.মি গ্ৰাম।
চিনাবাদাম খাওয়ার নিয়ম
চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা আছে। চিনা বাদাম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে খেয়ে নিন। এর ফলে পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। পানিতে চিনাবাদাম ভিজিয়ে রাখলে এর ভিতর উপস্থিত এন্টি অক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েডের ভালো কাজ করে। খাবারের মাঝে যদি ক্ষুদা লাগে দুইটা বাদাম খেয়ে নিন।
তাহলে খাবারের চাহিদা কমে যাবে এর উপকারিতা ও পাবেন। বিকালে নাস্তার পরিবর্তে বাদাম খেয়ে নিতে পারেন। জিনারা ডায়েট করেন তিনারা দুপুর অথবা বিকেলে বাদাম খেয়ে নিতে পারেন। তাহলে শরীরের ভারসাম্য ঠিক থাকবে খুদা কমে যাবে ।
খালি পেটে চিনাবাদাম খাওয়ার উপকারিতা
চিনা বাদাম স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। খালি পেটে চিনাবাদাম খেলে বিভিন্ন ধরনের উপকার হয়। খালি পেটে চিনাবাদাম খেলে পেট ভালো থাকে এবং পেটের হজমশক্তি বৃদ্ধি হয়। খালি পেটে বাদাম খেলে ক্ষুধার চাহিদা কমে যায়। যার কারণে শরীরের ওজন কমে যায়।
আরও পড়ুনঃ ননীবিহীন দুধ খাওয়ার উপকারিতার বিবরন
খালি পেটে চিনাবাদাম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় এবং শরীরের শক্তি বৃদ্ধি পায় ও ত্বক সুন্দর থাকে । খালি পেটে চিনাবাদাম খেলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল নষ্ট হয়ে যায় ও ভাল কোলেষ্টরেল বৃদ্ধি পায়। শরীরের রক্তশূন্যতা দূর হয় ।
গর্ভাবস্থায় চিনাবাদাম খাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় চিনাবাদাম খেলে এর মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম ভিটামিন ই ও বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন শরীর গ্রহণ করে এবং অনেক সুস্থ থাকে মহিলারা। চিনা বাদাম গর্ভবতী মহিলাদের অতিরিক্ত ক্যালোরি চাহিদা পূরণ করে। এ অবস্থায় চিনা বাদাম খেলে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
চিনা বাদাম খাওয়ার ফলে গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় আয়রন গুলো পূরণ হয়। অনেক পুষ্টিবিদগণ বলেছেন গর্ভাবস্থায় চিনাবাদাম খেলে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য পুষ্টি ভালো থাকে। যে সকল গর্ভবতী মহিলাদের এলার্জি আছে তাদের বাদাম থেকে দূরে থাকাই ভালো ।
ভাজা চিনাবাদাম খাওয়ার উপকারিতা
ভাজা চিনাবাদাম খাওয়ার ফলে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে এবং মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি পায়। আমেরিকার এন্ড রস ইউনিভার্সিটির গবেষক পরীক্ষা করে দেখেছেন যে ছাত্র-ছাত্রীরা নিয়মিত ভাজা বাদাম খেলে তাদের মস্তিষ্কের শক্তি বৃদ্ধি পায়। ইহাতে আন্টি অক্সিডেন্ট থাকায় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা
চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা রয়েছে। চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতাচিনা বাদামে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিনএ ও ডি স্বাস্থ্যকর ফ্যাট ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান আছে। পুষ্টিবিদগণ বলেন চিনা বাদাম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে এবং মস্তিষ্কের শক্তি ও বাড়ে।
নিয়মিত চিনা বাদাম খেলে অধিক কোলেস্টরেল, উচ্চ রক্তচাপ শরীরের ওজন বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।রাতে ১০ থেকে ১৫ টি বাদাম পানিতে ভিজিয়ে সকালে প্রতিদিন খেলে বাদামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ডায়াবেটিস নির্মূলে সহযোগিতা করে।WebMd অনুসারে একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে নিয়মিত চিনা বাদাম খেলে দীর্ঘ আয়ু হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে চিনা বাদাম একটি লো গ্লাইসেমিক খাবার যা খেলে রক্তে শর্করা তাড়াতাড়ি বাড়েনা।চিনা বাদামের মধ্যে ভিটামিন ই, প্রোটিন, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ও ফাইবার থাকায় চিনাবাদাম খেলে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা হয়। প্রতিদিন ৪০ গ্রাম চিনাবাদাম খেলে শরীরের হাড় ভালো থাকে। প্রতিদিন বাদাম খেলে পিত্তথলির পাথর হওয়া থেকে রক্ষা করে।
গবেষণায় দেখা গেছে বাদামে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ফাইটো কেমিক্যাল এর প্রভাবে শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু আক্রান্ত করতে পারেনা।চিনাবাদামে ভিটামিন ই ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ থাকায় যৌন সমস্যা দূর করে এবং শুক্রানুর সংখ্যা ও গুণগত মান বৃদ্ধি করে। চিনা বাদাম থেকে প্রচুর ভোজ্য তেল উৎপন্ন হয়। এই তেল রান্নাবান্না ও বিভিন্ন প্রসাধনিতে ব্যবহার হয়।
জয়েন্টে যদি ব্যথা হয় বাদাম তেল মালিশ করলে ব্যাথাগুলো দূর হয়।বাদামের মধ্যে ভিটামিন এ ও ই আছে। যেটা ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। খুকশি দূর করতে চিনা বাদামের তেল ব্যবহার করতে পারেন। নিয়মিত বাদাম তেল মাথায় ব্যবহার করলে নতুন চুল গজায় এবং চুলের পুষ্টিমান ভালো থাকে।
চিনা বাদাম খাওয়ার অপকারিতা
সম্প্রীতি একটি প্রতিবেদনে বলা হয় বেশি চিনা বাদাম খেলে আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, ও ক্যালসিয়ামের মত খনিজ পদার্থ শোষণে বাধা দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বাদাম খেলে হজমের সমস্যা হয়। ত্বকের সমস্যা হয়, এবং শ্বাসকষ্ট হতে পারে। চিকিৎসকদের মতে চিনাবাদাম খালি পেটে খাওয়া উচিত নয়।
আরও পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি জানুন
যদি খেতে চান তাহলে ভিজিয়ে খাওয়াই ভালো। বাদাম ভালোভাবে সংরক্ষণ করতে না পারলে তাড়াতাড়ি ছত্রাকে আক্রমণ করে এবং সেই বাদাম খেলে শরীরে ফুডপয়জন হয়। এইজন্য নিয়মিত নির্দিষ্ট মাত্রায় আমাদের বাদাম খাওয়া উচিত। এছাড়াও আরো অনেক অপকার আছে। তাই নিয়ম মেনে প্রত্যহ আমাদের চিনাবাদাম খাওয়া উচিত।
লেখকের মন্তব্য
চিনা বাদাম অত্যন্ত পুষ্টিকর খাবার। চিনাবাদাম কে গরিবের সুপার ফুড বলা হয়। চিনাবাদাম সহজলভ্য ও দাম কম। আমরা সবাই চিনাবাদাম খেতে পারি। অতএব আমরা সবাই প্রত্যহ নিয়ম অনুযায়ী চিনাবাদাম খেয়ে শরীরের ভারসাম্য রক্ষা ও পুষ্টি চাহিদা পূরন করব।
এই পোষ্টে চিনা বাদাম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা জানতে পারবেন। আশা করি আমার পোষ্টগুলো ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে,লাইক,কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url