ফুসফুসে পানি জমার ঘরোয়া চিকিৎসা

সুপ্রিয় পাঠকগণ ফুসফুসে পানি জমার ঘরোয়া চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। এছাড়া আরো থাকছে ফুসফুসে পানি জমা হওয়ার লক্ষণ। ফুসফুসের পানি জমা হলে করণীয়।
ফুসফুসে পানি জমা হওয়ার কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বিষয়গুলো জানতে আমাদের সাথে থাকুন।

ভূমিকা

ফুসফুসে পানি জমার ঘরোয়া চিকিৎসা বিষয়ে আলোচনা করা হবে। প্রায় শোনা যায় ফুসফুসে পানি জমেছে। ফুসফুসের পাতলা আবরণী যে আবরণ দ্বারা ফুসফুসকে ধরে রাখে সে আবরণীতে পানি জমে। এ রোগ কে প্লূরাল ইনফিউশন বলে। বিভিন্নভাবে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। ফুসফুসে পানি জমার রোগ অত্যন্ত মারাত্মক।

সাধারণত যক্ষা নিউমোনিয়া ও ক্যান্সার এর সমস্যার কারণে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। এছাড়াও যক্ষা অথবা হরমোন জনিত সমস্যা, হৃদরোগের কারণ, কিডনির বিকল হলে ও পুষ্টির অভাবে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। যেভাবে পানি জমুক চিকিৎসার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত।

ফুসফুসে পানি জমার ঘরোয়া চিকিৎসা

ফুসফুসে পানি জমার ঘরোয়া চিকিৎসা তা দূর করা সম্ভব। আসুন জেনে নিই ঘরোয়া উপায় গুলো।

স্টিম থেরাপিঃ এই প্রক্রিয়ায় গরম পানির ভাপ নেওয়া হয়। সাধারণত গরম পানি করার পরে গরম পানির বাষ্প নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে গ্রহণ করার প্রক্রিয়াটা হলো স্টিম থেরাপি। ১৬ জন পুরুষের মধ্যে স্টিল থেরাপি দেওয়ার মাধ্যমে সবারই ফুসফুসের মান বৃদ্ধি হয়েছে। এ প্রক্রিয়ার টি হলো একটি পাত্রে গরম পানি নিতে হবে।

মাথায় একটু তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। তবে লক্ষ রাখতে হবে মুখমন্ডলে যেন পানি তাপ বেশি না লাগে। তবে পাত্র থেকে ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি দূরে মুখমন্ডল রাখুন। অতঃপর নিঃশ্বাসের মাধ্যমে পাত্র থেকে বাষ্প গ্রহণ করতে হবে।

বাষ্প গ্রহণের সময় চক্ষু বন্ধ করতে হবে। এ অবস্থায় দুই থেকে পাঁচ মিনিট বাষ্প নিতে হবে। তবে ১০-১৫ মিনিট এর বেশি এটা করা যাবে না। এ প্রক্রিয়া করার মাধ্যমে ফুসফুসের জিল্লি থেকে পানি কমা শুরু হবে।

নিয়ন্ত্রিত কাশিঃ নিয়ন্ত্রিত কাশি পদ্ধতির মাধ্যমে ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা বের হয়ে বাতাসের সাথে মিশে যাবে। ফুসফুসের মধ্যে শ্লেষ্মা আটকে গেলে প্রাকৃতিক উপায়ে বাহির করার পদ্ধতি হলো কাশি। এ পদ্ধতিতে দুই হাত ভাঁজ করে পেটের উপর রাখতে হবে।

অতঃপর ধীরে ধীরে নাক দিয়ে নিশ্বাস নিতে হবে। এরপরে পেটে হাত দিয়ে ভাজ করে দেওয়া অবস্থায় একটু সামনের দিকে ঝুঁকে নিঃশ্বাস ছাড়তে হবে। নিঃশ্বাস ছাড়ার সময় ৩-৪ বার কাশি দিতে হবে। পুনরায় নাক দিয়ে আস্তে আস্তে নিঃশ্বাসের নিতে হবে।

ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা বের করাঃ এই পদ্ধতি খাওয়ার একঘন্টা পরে করতে হবে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় টস্টূরাল ড্রেইনেজ। এ পদ্ধতিতে বিভিন্ন ভঙ্গিতে শুয়ে গ্রাভিটির সাহায্যে ফুসফুস থেকে শ্লেষ্মা বাহির করা হয়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শ্বাস-প্রশ্বাসের উন্নতি হয় ও ফুসফুস কে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা যায়।
পদ্ধতি
বিছানায় শুয়েঃ এ প্রক্রিয়ার চিত হয়ে শুয়ে পড়তে হবে এবং কোমরের নিচে বালিশ দিতে হবে। এ অবস্থায় ধীরে ধীরে নাক দিয়ে শ্বাস নিন মুখ দিয়ে প্রশ্বাস ছাড়ুন। লক্ষ রাখতে হবে নিঃশ্বাসের চেয়ে প্রশ্বাসের সময় যেন দ্বিগুণ লাগে। এটি তিন থেকে পাঁচ মিনিট করতে হবে।

পাস ফিরে সুয়েঃ পাস ফিরে শুয়ে পড়ুন হাত মাথা নিচে রাখুন। কোমরের নিচে বালিশ দিয়ে কোমর উঁচু করুন। নাক দিয়ে ধীরে ধীরে বিশ্বাস নিন মুখ দিয়ে  প্রশ্বাস ছাড়ুন। লক্ষ্য রাখতে হবে নিঃশ্বাসের চেয়ে প্রশ্বাসের সময় যেন দ্বিগুণ লাগে।

ব্যায়াম করার মাধ্যমেঃ নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ত্বক জনিত সমস্যা ও হৃদপিন্ডের বিভিন্ন ঝুঁকির হাত থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে হাড়ের জোড়া, পেশির স্বাস্থ্য ও শ্বাস-প্রশ্বাস উন্নত করে।

নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ব্লাড সার্কুলার ভালো হয় ও পেশিতে অক্সিজেনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড শরীর থেকে বাহির করার প্রক্রিয়া ভালো থাকে এবং অক্সিজেন গ্রহণ করার ক্ষমতা ভালো থাকে।

ফুসফুসে রোগাক্রান্ত ব্যক্তিগন নিয়ম মেনে ব্যায়াম করতে পারেন। যার মাধ্যমে ফুসফুসের মান উন্নত হয়। তাই নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে ফুসফুস থেকে পানি বাহির করা সম্ভব হয়।

গ্রিনটি খাওয়াঃ গ্রিনটি তে পর্যাপ্ত এন্টি অক্সিডেন্ট আছে যা ফুসফুসের প্রদাহ কমায়। দক্ষিণ কোরিয়ার ১০০০ মানুষের উপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যারা নিয়মিত দুইবার গ্রিন টি খান তাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা অন্যদের চাইতে অনেক ভালো। তাই নিয়মিত দুইবার গ্রিন টি খেলে ফুসফুসের সমস্যা আস্তে আস্তে উন্নতির দিকে যায়।

প্রদাহ বিরোধী খাবারঃ গবেষণায় দেখা গেছে চেরি ফল খেলে ফুসফুসের প্রদাহ কমে। এছাড়াও অনেক খাদ্য আছে যেগুলো খাওয়ার মাধ্যমে ফুসফুসের প্রদাহ কমে এবং আস্তে আস্তে পানির পরিমাণ কমে যায়।

*হলুদ খাওয়া।

*সবুজ শাকসবজি খাওয়া।

*চেরি ফল খাওয়া।

*ব্লবেরি ফল খাওয়া।

*জলপাই ফল খাওয়া।

*আখরোট খাওয়া।

*মুশুরের ডাল খাওয়া।

ফুসফুসে পানি জমার লক্ষণ

আজকের বিষয় ফুসফুসে পানি জমার ঘরোয়া চিকিৎসা। সাধারণত আমরা অনেক রকম ব্যস্ততায় থাকি। হঠাৎ করে বুক ব্যথা কাশি অথবা মাথা ব্যথা হলে আমরা তত লক্ষ্য করি না। হয়তো একটু ব্যথার ওষুধ খেয়ে নিলাম এটাই হলো শেষ। অথচ এগুলো লক্ষণের কারণে ফুসফুসে পানি জমা হতে পারে এটা চিন্তাও করি না। আসুন জেনে নিয়ে ফুসফুসে পানি জমা হওয়ার লক্ষণগুলো।

পর্যাপ্ত শ্বাসকষ্টঃ ফুসফুসের কোন সমস্যা হলে অত্যাধিক শ্বাসকষ্ট হয়। সাধারণত ফুসফুসে পানি জমলেও শ্বাসকষ্ট অনেক বেশি হয়।

বুকে ব্যথা হওয়াঃ নিঃশ্বাস অথবা কাশির সময় বুকে ব্যথা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। কাশির সঙ্গে বুকে ব্যথা হলে ফুসফুসে পানি আসার লক্ষণ।

*ফুসফুসে বেশি পানি জমলে হৃদ স্পন্দন বেড়ে যেতে পারে।

*ফুসফুসের পানি জমলে রোগীর চিত হয়ে থাকতে ভালোবাসে। উপর অথবা পার্শকাত হয়ে শুলে কষ্ট হয়।

*ফুসফুসে পানি জমলে বুকে ব্যথা হতে পারে। ব্যাথার স্থানে চাপ দিয়ে ধরলে রোগীর স্বস্তি বোধ করে।

*কাশির সঙ্গে শ্লেষ্মা যুক্ত কফ বাহির হয়।

*ওজন কমে যায়।

*জ্বর আসতে পারে

*বুক ভারি হয়ে গেছে এমন মনে হয়।

*শরীর ঝাকালে গড় গড় শব্দ হয়।

*রোগী অত্যাধিক ঘেমে যায়।

*অত্যাধিক অস্থিরতা দেখা দেয়।

*চামড়া ফেকাশে হয়ে যায়।

*পা ফুলে যায়।

এগুলো সমস্যা হলে অতি দ্রুত ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।

ফুসফুসে পানি জমার কারণ

আজকের বিষয় ফুসফুসে পানি জমার ঘরোয়া চিকিৎসা। বিভিন্ন কারণে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। তবে ফুসফুসে পানির জমা অত্যন্ত মারাত্মক সমস্যা। কি কারনে ফুসফুসে পানি জমে সে বিষয় দেখে নেওয়া যাক।

নিউমোনিয়ার কারনেঃ সাধারণত নিউমোনিয়া এমন একটি রোগ যে রোগের শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হয়। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা হওয়া অবস্থায় কিছু পানি ফুসফুসে আটকে যেতে পারে। আস্তে আস্তে পানি বৃদ্ধি হয়ে পুঁজে রূপান্তরিত হয়ে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। অতি গুরুতর সমস্যা।

ক্যান্সার এর কারণেঃ সাধারণত যদি ক্যান্সারের কারণে ফুসফুসে পানি জমা হয় তাহলে তিন ধরনের ক্যান্সার হতে পারে। ফুসফুস ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার ও গলিত টনসিলের ক্যান্সার। যে ক্যান্সার হোক না কেন তাহা খুব মারাত্বক।

টিউমারের কারণে হতে পারেঃ সাধারণত টিউমারের কারণে ফুসফুসে পানি জমা হতে পারে। যদি টিউমারের কারণে ফুসফুসে পানি জমা হয় তাহলে খুব তাড়াতাড়ি সেটা অপসারণ করতে হবে। তা না হলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

অন্যান্য কারনঃ বিভিন্ন কারণে ফুসফুসে পানি জমতে পারে যেমন লিভারের সমস্যার কারণে বুকে পানি ঢুকতে পারে। হৃদপিন্ডের সমস্যার কারণে বুকে পানি জমতে পারে। যকৃতের সমস্যার কারণে ফুসফুসে পানি জমতে পারে। যেভাবেই পানি যমুক সেটা অপসারণ করে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

ফুসফুসে পানি জমলে কি খেতে হবে

স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খাওয়ার মাধ্যমে ফুসফুস ভালো থাকে। সাধারণত যেগুলো খাবার খেলে ফুসফুস ভালো থাকে ও ফুসফুসের প্রদাহ কমায় তা আলোচনা করা হলো।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবারঃ প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে বেশি পরিমাণ ভিটামিন সি খেলে ফুসফুসের সংক্রামন দূর করে। এছাড়াও ঠান্ডা লাগা এবং নিউমোনিয়া হওয়া ভিটামিন সি দূর করে।

ভিটামিন সি জাতীয় খাবার কমলা, পেয়ারা, বিট, আমলকি, বাতাবি লেবু, ইত্যাদি ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের উৎস। এগুলো খাবার খেলে ফুসফুসের সংক্রমণ হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

ক্যারোটিন জাতীয় খাবারঃ ফুসফুস ক্যান্সার প্রতিরোধ লিউটেইন ও জিজানথিনের সংমিশ্রণ। পেঁপে ও মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণ বিটা ত্রিপটোজানথিন আছে। প্রতিদিন এগুলো শাক সবজি খেলে উক্ত উপাদানের জন্য ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করে। আরো কিছু খাবার আছে যা খাওয়া প্রয়োজন।

*চেরি খাওয়া।

*হলুদ খাওয়া।

*পেঁপে খাওয়া।

*সবুজ শাক সব্জি খাওয়া।

*বেলপেপার খাওয়া।

*কাল বিন খাওয়া।

*জলপাই খাওয়া।

*ব্লবেরিখাওয়া।

*মসুর ডাল খাওয়া।

*আখরোট খাওয়া।

*কুমড়া খাওয়া।

*সালমান খাওয়া।

*বাদামী আলু খাওয়া।

*বাঁধাকপি খাওয়া।

*পেয়ারা খাওয়া।

সাধারণত ফুসফুসে পানি জমলে এগুলো খাবার খেলে সাময়িক উপকার পাওয়া যায়।

লেখক এর মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠকগণ ফুসফুসে পানি জমার ঘরোয়া চিকিৎসা ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। ফুসফুসে পানি জমার কারণ ও ফুসফুসে পানি জমলে কি কি খাবার খেতে হবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

এগুলো বিষয়ে জানতে আমার এই কনটেন্ট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। কনটেন্টি ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url