হাতিশুর গাছের উপকারিতা ও অপকারিতার বিবরণ

 হাতিশুর এক বর্ষ জীবি উদ্ভিদ। ইহাকে হাতিশুড়ি, হাতিশুন্ডী, শ্রীহস্তিনী, মহাশুন্ডী নামে চেনা যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Heliotropium indicum ইহা এশীয় মহাদেশীয় গাছ।এ উদ্ভিদটি সাধারণত ১৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এর কাণ্ড রোমোশ ডিম্বাকার। এর মাথায় বাঁকানো সাদা সাদা ফুল হয়। পুষ্পদন্ড বাঁকানো হাতির সুড়ের মত তাই ইহাকে হাতিসুড় বলাহয়।

ভূমিকা

হাতিশুর গাছ বাংলাদেশে সাধারণত চৈত্র থেকে জৈষ্ঠ্য মাস পর্যন্ত বেশি দেখা যায়। ইহা ওষুধি গাছ। এই গাছে ইন্ডিসিন,পাইরোলিজিডিন,অ্যলকালয়েডস,হেলিওট্রিন ইত্যাদি জৈব উপাদান রয়েছে। ইহার শিকড়ে রয়েছে এসট্রাডিওল। এই গাছটি সাধারণত আগাছার সঙ্গে জন্মায়। আর সবাই আগাছার সঙ্গে গাছগুলো নিধন করে ফেলে। 

আরও পড়ুনঃ বাসক পাতার উপকারিতা, ব্যবহার ও ঔষধি গুণ

এই এই গাছগুলোর মাথায় সাদা ফুল ফুটে। এই ফুল গুলো দেখতে হাতির দাঁতের মতো। এই গাছের কান্ড ফাঁপা ও নরম। কান্ডে ছোোট ছোট রোম আছে। উদ্ভিদটির দুর্লভ ওষধী গুনাগুন রয়েছে।এই ওয়েবসাইটে গুনাগুন একের পর এক করে আলোচনা করা হবে। আশা করা যায় উপকৃত হওয়া যাবে।

হাতিশুর গাছ কি কাজে লাগে

ছত্রাক বা ক্ষতিকর পোকার দ্বারা শরীরে কোথাও আক্রান্ত হয়ে চাকা চাকা অথবা দাগ হয় ও ফুলে যায়, এই গাছের পাতা থেতিয়ে লাগিয়ে দিলে ভালো হয়ে যায়। শরীরের কোথাও ফুলে গেলে পাতা থেতিয়ে লাগালে ফোলা ভালো হয়। 

বিষাক্ত পোকায় কামড়ালে এই গাছের পাতার রস লাগালে পোকার বিষাক্ততা দূর হয়। অনেকের টনসিল ফুলে যায় সে ক্ষেত্রে তার নাম বলেএই গাছটি তুলে ফেললে টনসিল ভালো হয় নিজে পরীক্ষিত। অনেকের পায়ে হাতে ও অনেক জায়গায় একজিমা হয়। 

এই গাছের পাতাএবং কান্ড একসঙ্গে পিষে একজিমা হওয়া স্থানের ওপর ব্যবহার করলে ভাল হয়ে যায়। অনেকের দাদ হয় অথবা পাচড়া হয় এখান থেকে রক্ষা পেতে হলে এই গাছ ও পাতা পিষে দাদ অথবা পাচরার উপর প্রলেপ দিয়ে দিয়ে রাখতে হবে।

এভাবে কয়েকদিন রাখলেই দাদ ও পাচড়া ভালো হয়ে যায়।হাতিশুর গা। হঠাৎ কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে অথবা যেকোনো ভাবে হাত পা কেটে গেলে অথবা ছাল উঠে গেলে হাতে শরীর পাতাও কান্ড পিষে সেখানে রস লাগিয়ে দিন। 

ব্যথা দূর হবে তাড়াতাড়ি ঘা ভালো হয়ে যাবে। বাকি হলে অর্থাৎ বগলে ভিতরে অথবা ফুলে গেলে তাকে বাকি বলে। বাঘি নিরাময় করতে হলে হাতে শরীর গাছ ও পাতা পিষে বাঘিতে লাগিয়ে দিলে বাকি ভালো হয়ে যায়।

হাতিশুর গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম

ভালো ফলাফল পেতে সকালে খালি পেটে প্রথমে ২৫০ গ্রাম পানি খাবেন। অতঃপর ২ ইঞ্চি পরিমাণ হাতিশুর গাছের শিকড় নিবেন। তার সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেয়ে নিবেন। তবে সোপা ফেলে দিবেন। তাহলে সকল যৌনরোগ ভালো হয়ে যাবে। 

মনে রাখবেন শিকড় খাওয়ার পরে এক ঘণ্টার মধ্যে কোন কিছু খাবেন না। খালি পেটে শিকড়ের রস চিবিয়ে খেলেও চলবে। হাতিশুর গাছের শিকড় নিয়ে পানির সঙ্গে মিশিয়ে ফোটানোর পরে কাত করে নিতে হবে। জ্বর এবং সর্দির জন্য এই কাত ১চামচ করে সকাল-বিকাল খেলে ভালো হয়ে যাবে।

হাতিশুর গাছের শিকড় খেলে কি হয়

হাতিশুর গাছের শিকড় খেলে আমাদের কি উপকার হয় সে ব্যাপারে জানবো। এই গাছের শিকড় অনেক রোগ প্রতিরোধের সহায়তা করে। দাঁতের মাড়িতে ফোলা থাকলে এ গাছের শিকড় চিবিয়ে খেলে ফোলা ভালো হয়।

যাদের যৌনদুর্বলতা আছে সকালে খালি পেটে পানের সঙ্গে মধু ও এক ইঞ্চি পরিমাণ শিকড়ের রস একসঙ্গে খালি পেটে খাবেন এবং রাত্রে খাবেন। আপনার যৌন দুর্বলতা দূর হয়ে যাবে। আপনার সঙ্গিনী আপনার কাছ থেকে মাফ চাবে।

হাতিশুর গাছের উপকারিতা

হাতিশুর গাছের পাতার রস রেড়ির তেলের সাথে মিশিয়ে রাখলে বিষাক্ত পোকার কামড়ে ব্যবহার করলে ভালো হয়। টাইফয়েড জ্বরে পাতার রস ছেকে খেলে ভালো হয়। কোথাও একজিমা, দাদ, ছোয়াইসিস হলে এই পাতা থেতিয়ে লাগিয়ে দিন ভাল হয়ে যাবে।

আরও পড়ুনঃ কাচা কলার উপকারিতা ও অপকারিতার বিবরণ

আঘাত জনিত ফলায় এ পাতার রস ব্যবহার করলে ফোলা কমে যায়। ব্রণ হলে অথবা ব্রণের দাগ থাকলে এই গাছের কচি অংশ থেকে গোসলের এক ঘণ্টা আগে ব্যবহার করলে ব্রণ অথবা ব্রণের দাগ দূর হয়ে যায়। অনেকের গায়ে ঘা অথবা পচড়া রোগ থাকে।

এই গাছের পাতার রস ব্যবহার করলে ঘা ভালো হয়ে যায়। দাঁতের ব্যাথা অথবা মাড়ি ফোলা রোগের জন্য এই গাছের পাতা থেতিয়ে লাগিয়ে দিন ভালো হয়ে যাবে। যাদের ঘনঘন সর্দি হয় অথবা কাশি হয় এ গাছের পাতা ও কান্ড থেকে রস করে নিতে হবে।

প্রত্যয় সকাল বিকাল দুই চামচ করে রস খেতে হবে আশা করা যায় ভালো হয়ে যাবে। হাতিশুর গাছ সূর্য আলোর সাথে সালোকসংশ্লেষণ এর মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে অক্সিজেনের পরিবেশ মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমাণ কমিয়ে দেয়।

হাতিশুর গাছ বায়ুমন্ডলের ক্ষতিকর কার্বন মনোক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সিসা ইত্যাদি গ্যাস গুলো শোষণ করে বায়ুমন্ডলে ক্ষতিকর গ্যাসের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। হাতিশুর গাছ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। হাতিশুর বায়ুমণ্ডল থেকে জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে। 

প্রচ্ছেদন করার মাধ্যমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বৃদ্ধি হয়।হাতিশুর গাছ নরম তাই এগুলো তাড়াতাড়ি পচে জমির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পায়। হাতিশুরের পাতা ফুল ফল শিকড় সবগুলি ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরিপূর্ণ হাতিশুর গাছের নিচে বিভিন্ন পাখি আবাসস্থল হিসেবে ব্যবহার করে।

হাতিশুর গাছের অপকারিতা

এখন আমরা হাতিশুর গাছের অপকারিতা ব্যাপারে জানবো। হাতিশুর পাতার রস অনেক গন্ধ। রস সেবনে ডায়রিয়া অথবা বমন হতে পারে। এজন্য সাবধানে সেবন করা দরকার। কৃষি জমিতে এই গাছ থাকলে ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। ফসলের জমিতে গাছ থাকলে তুলে ফেলা দরকার।

হাতিশুর গাছে পাইরোলিজিডিন অ্যালকোোলয়েড বিষ থাকে। এই বিষের প্রভাবে মাওনবদেহে টিউমার হতে পারে। হাতিশুরের পাতা পাতার রস অথবা শিকরের রস বেশি খেলে শরীর খারাপ করতে পারে। অত্যাধিক হাতিশুর ব্যবহার করলে শরীরের রক্তচাপ কমবেশি হতে পারে।

যৌন চিকিৎসায় হাতিসুর গাছ

সাধারণত যৌন চিকিৎসায় অনেকে বিভিন্ন ওষুধ খেয়ে থাকেন। ওষুধগুলি খেলে পরবর্তীতে অনেক ক্ষতি হতে পারে। তার কারণে চিকিৎসকন ওষুধ খেতে নিষেধ করেছেন। এক্ষেত্রে আপনি হাতিশুরার গাছের সহযোগিতা নিতে পারেন। বড় দেখে পান নিতে হবে। পানে আধা চামচ মধু নিতে হবে।

অতঃপর হাতিশুরা গাছের গাছ বড় হলে তার শিকড় ১ ইঞ্চি আর চিকন শিকড় হলে ২ ইঞ্চি শিকড় পানের সঙ্গে মিশিয়ে নিতে হবে এবং পান একসঙ্গে খেয়ে নিতে হবে। এভাবে ১৫ দিন খেলে যৌন সমস্যা দূর হয়ে যাবে।

এছাড়া প্রতিদিন খালি পেটে সকালে এক ইঞ্চি হাতিশুরের গাছের শিকড় নিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিবেন।এভাবে ১৫ দিন খেলে যৌন সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আসুন প্রাকৃতিক গাছ খেয়ে নিজেদের সুস্থ রাখি।

হাতিশুর গাছ কোথায় পাওয়া যায়

হাতিশুর গাছ দেখতে হাতির শুয়োরের মতো তাই হাতি সুর বলা হয়। আমাদের দেশে বন্যপ্রাণীদের মধ্যে হাতি যেমন অত্যন্ত শক্তিশালী। সব প্রাণী হাতিকে দেখলে ভয় পাই। আমাদের গাছের মধ্যে হাতিশুর গাছ অত্যন্ত শক্তিশালী গাছ। কারণ এই গাছে ভিটামিন মিনারেলস প্রোটিন সহ অত্যন্ত শক্তিশালী ওষুধি গুণ রয়েছে।

আর ও পড়ুনঃ পুরুষদের জন্য খেজুরের উপকারিতার বিবরন

এই গাছের আদি নিবাস এশিয়া মহাদেশ। এশিয়া মহাদেশের সবকটি দেশেই কমবেশী এই গাছ পাওয়া যায়। ভারতে এ গাছ পর্যাপ্ত পাওয়া যায়। তারা এ গাছকে খুব গুরুত্ব প্রদান করে। ভারতে ওষুধ হিসেবে গাছের চাহিদা অনেক বেশি।

তাছাড়া নেপাল এমনকি এশিয়া মহাদেশের প্রত্যেকটা দেশে এই গাছ পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সাধারণত রাস্তার ধারে পাওয়া যায়। এছাড়াও পতিত জমি, ও পুকুড় পাড়ে দেখা যায়। ফসলের জমিতেও দেখা যায়। এই গাছ গুলো সাধারণত অযত্নেই বেয়ে ওঠে।

লেখকের মন্তব্য

আমরা হাতিশুর গাছের উপকারিতার দিক ও অপকারিতা দিক সম্পর্কে আলোকপাত করলাম। আশা করি এই পোস্ট থেকে হাতিশুরর গাছের চমৎকার যে উপকারিতা তা গ্রহণ করবেন। কোন কিছু জানার দরকার হলে কমেন্ট করবেন। আশা করি পোস্টটি ভালো লাগবে। ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url