তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারই যুব সমাজের অবক্ষয়
তথ্য প্রযুক্তি উন্নত শিখরে পৌছে যাওয়ায় আমরা সকল কাজে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাবহার করছি । ইন্টার্নেট আমাদের কাছে সহজ প্রাপ্য হয়েছে । আমরা শিক্ষা, চিকিৎসা অথবা যে কোন প্রয়োজনীয় হালনাগাদ তথ্য ইন্টার্নেট এর মাধ্যমে পেয়ে থাকি ।সারা বিশ্বে বর্তমানে প্রায় শতকরা ৬৬ জন লোক ইন্টার্নেট ব্যবহার করে । আমাদের দেশে প্রায় শতকরা ৩৯ জন লোক ইন্টার্নেট ব্যাবহার করে । ইন্টার্নেট ব্যবহার কারিদের মধ্যে মোবাইল ব্যাবহার কারি বেশি বিশ্বের ইন্টার্নেট সংযোগহীন দেশের মধ্যে বাংলাদেশ চতুর্থ ।আমরা আলোচনা করব তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারই যুব সমাজের অবক্ষয়।
ভুমিকা
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঘোষণা অনুযায়ী ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের নাগরিক যুব সমাজ ধরা হয় । সমাজে সকল ভালো কাজগুলো যুবসমাজের দ্বারা সংঘটিত হয় । সমাজে কথা আছে বয়স্করা ইতিহাস লেখে, আর যুবকেরা ইতিহাস তৈরী করে ।যুবকদের দায়িত্বশীল,আত্মবিশ্বাসী, মননশীল ও মানবিক গুণাবলি অর্জনে অতিউৎসাহী হতে হবে ।
আরও পড়ুনঃ ফ্লাইওভার ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের পার্থক্য নির্নয়
উনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৩ শতাংশ শিশু-কিশোর সোশ্যাল মিডিয়ায় হয়রানির শিকার হয়। এর মধ্যে একাধিকবার হয়রানির শিকার হয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ শিক্ষার্থী এবং এসব কারণে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। ৮১ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত সময় দেয় ।
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহার পাঠ্যভ্যাস নষ্ট
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারই যুব সমাজের অবক্ষয় হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনার আগ্রহ হারাচ্ছে । ডিজিটাল টেকনোলজি ব্যবহারের কারণে শিক্ষার্থী গন পড়াশোনার ইচ্ছা নষ্ট হচ্ছে । ইন্টারনেটের কারণে ছাত্রদের মাঝে নিঃসঙ্গতা একাকীত্বের অনুভূতির আশংকা যেন বাড়ছে
যুক্তরাজ্যের সোয়ানসি বিশ্ববিদ্যালয় এর গবেষক ফিড রিড বলেছেন শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের ব্যবহারে নেশাগ্রস্থ হয়ে যাচ্ছে । যার কারণে তাদের একাডেমিক পারফরম্যান্স খুব দুর্বল হচ্ছে ।কানাডার মেক মাস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয় যারা অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের মানসিক সমস্যা বাড়তে থাকে ।
গবেষক কলেজ শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের সঙ্গে মানসিক সমস্যার সম্পর্কে বুঝতে দুটি স্কেল ব্যবহার করেন প্রথমটি ইন্টারনেট অ্যাডিকশন টেস্ট । ১৯৯৮ সাল থেকে এ স্কেলের ব্যবহার চলে আসছে । দ্বিতীয়টি নতুন স্কেল, যা ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরন বুঝতে তৈরি করা হয়েছিল।এ গবেষণার প্রধান গবেষক মাইকেল ভ্যান আমেরিনজেন বলেন।
গত ২ দশকে ইন্টারনেটে পরিবর্তন আসছে আগের চেয়ে অনেক বেশি । লোকজন এখন অনলাইনে কাজ করেন এবং অনেকজন সোশ্যাল মিডিয়াও সময় কাটাচ্ছেন ।তবে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন থাকতে হবে । হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলে ঘুমহীনতার কারণ অনুসন্ধান করে দেখা গেছে।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা ১৮৫৭ তরুণের মধ্যে সবারই ফেসবুক ও টুইটার একাউন্ট রয়েছে ।মাদকাসক্তি খুনখারাবি পর্নোগ্রাফি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড মোবাইল ফোন, গা ও ফেসবুকে ব্যবহার হয় বলে ধারণা করা হয়েছে । এজন্য তরুণদেরকে মেধাবিকাশ এবং লেখাপড়ায় উৎসাহিত করে এ পথ থেকে ফিরিয়ে আনা দরকার ।
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারই যুব সমাজের অবক্ষয় এর কুফল
তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহার করে খুন নারী ও শিশু নির্যাতন, ছিনতাই আর ও চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত । মোবাইল, ইন্টার্নেট, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদি যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যাবহারের ফলে এ অপরাধ সংগঠিত হয় ।২০২০সালে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশনের পরিসংখ্যানে জানা যায় ১৮ বছর বয়সের ছেলে মেয়েদের মধ্যে ৭ ভাগ।
১৯ থেকে ২৫ বছর ছেলে মেয়েদের মধ্যে ৩৬ ভাগ, ২৬ থেকে ৩৫ বছর ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে ৩৬ ভাগ, ৩৬ থেকে ৫৫ বছর বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে ২০ ভাগ, ৫৫ থেকে বেশি বয়সী নারী ও পুরুষের মধ্যে ৩ ভাগ তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ।আস্তে আস্তে আমাদের মাঝে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নতুন নতুন উন্নয়ন হচ্ছে ।
আমাদের তথ্যপ্রযুক্তি কিছু অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং কিছু অনৈতিক পদস্খলন ব্যক্তিদের হাতে থেকে বিভিন্ন রকম সামাজিক বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে ।শহরের ছেলে মেয়েদের মধ্যে ৬০ ভাগ ছেলে মেয়েই বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি অনলাইন গেমস ও টিকটক এর মত অ্যাপস ব্যবহার করছে । ফলে এগুলোতে তারা আসক্ত হয়ে পড়তেছে ।
বর্তমান দেশে ২৬০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের ৫০ ভাগ ব্যবহিত হচ্ছে টিকটক, লাইকি, ফ্রিফায়ার, পাবজী, অনলা্ইন গেমস ও পর্নোগ্রাফি দেখার জন্য যা খুব দুঃখ জনক ।তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে বিভিন্ন জেলায় কিশোর গ্যাং গড়ে উঠেছে তার মধ্যে মধ্য ঢাকায় ৫০ থেকে ৬০ টি খুলনাতে ত টি যশোরে ১৫ টি।
ফেনীতে ১০ টি রাজশাহীতে ৮১ টি চট্টগ্রামে ১৬ টি কিশোর গ্যং সক্রিয় আছে যারা বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত । ইন্টার্নেট ব্যবহার করে বিভিন্নভাবে বিবাহিত ছেলে মেয়েদের মধ্যে পরকিয়া শুরু হয় যার মাধ্যমে বহু সংসার ভেঙ্গে যাচ্ছে ।
তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অবৈধ হ্যাকিং এর মাধ্যমে বহু লোকের ওয়েবসাইটস সহ বিভিন্ন বস্তু হ্যাকিং করে ক্ষতি করতেছে । পরিশেষে বলা যায় তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারই যুব সমাজের অবক্ষয়। তথ্যপ্রযুক্তি অপব্যবহারের ফলে এমন কোন পর্যায়ে নাই যার ক্ষতি করা যায় না ।
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারই যুব সমাজের অবক্ষয়
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে আমরা আস্তে আস্তে এক একটি করে সভ্যতার দ্বারপ্রান্ত প্রবেশ করতেছি । তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা শিক্ষা সাংস্কৃতি এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ এর অনেক শিক্ষা পেয়ে যাচ্ছি । তবে তথ্যপ্রযুক্তি এর অপব্যবহারের কারণে আমাদের যুব সমাজের ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ।
আরও পড়ুনঃ জেনেনিই জাম্বুরা খাওয়ার উপকারিতার বিবরণ
কথা ছিল শিক্ষার্থীগণ নৈতিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে শিক্ষার লাভ করবে । শিক্ষা লাভ শেষে তারা দেশ ও জাতির সেবা করবে । অথচ শিক্ষা লাভের পরিবর্তে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার ঘটিয়ে চুরি ছিনতাই ধর্ষণ এবং খুনের মতো জঘন্য কাজের লিপ্ত রয়েছে ।
মোবাইল তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার করে বিশ্বের অনলাইনে মাধ্যমে চুরিকরা অর্থ ৬৮ শতাংশ ই সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি ও ফেরত পাওয়া যায়নি । তথ্যপ্রযুক্তি অপব্যবহারের ফলে মানুষ একাকীত্ব হয়ে যাচ্ছে । পাশাপাশি বিশ্বে প্রতিদিন তথ্যপ্রযুক্তিতে আক্রান্ত হয়ে ৭০০ মানুষ আত্মহত্যা করতেছে
বর্তমান প্রজন্ম ফেসবুক মোবাইল ইন্টারনেট এর দিকে ধাবিত হচ্ছে । স্কুল কলেজ ও ইউনিভার্সিটির ছেলে পেলে এক সর্বনাশা আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মধ্যে পড়েছে । মোটকথা আমাদের যুব সমাজ সুষ্ঠু সামাজিক বিকাশ নৈতিকতা শিক্ষা গ্রহণের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা উচিত ছিল কিন্তু তার অপব্যবহারের ফলে যুবসমাজের নৈতিকতা হ্রাস পাচ্ছে ।
মোবাইল ফোন যুব সমাজ ধ্বংসের মূল কারণ
যোগাযোগের মূল মাধ্যম হলো মোবাইল মোবাইলে শুধু কথা বলা তাই নয় বরং মোবাইলের মাধ্যমে ইন্টারনেট সেটিং অডিও ভিডিও সহ সকল প্রকার সুবিধা আছে । মোবাইল ব্যবহার এর ক্ষেত্রে বেশিরভাগ দেখা গেছে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ।
পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে অভিভাক গন ছেলে মেয়েদের হাতে দামি মোবাইল ফোন তুলে দিচ্ছেন । মোবাইলে কথা বলার পাশাপাশি বিভিন্ন ছেলেমেয়েরা ভিডিও হট ভিডিও বিভিন্ন পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি দেখে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকে ধাবিত হচ্ছে ।
যাহার মাধ্যমে পড়াশোনার ক্ষতি এবং উন্নতি প্রযুক্তির দিকে ধাবিত হওয়ার বড় বাধা সৃষ্টি করছে । খুব অল্প বয়সে ছেলেমেয়েরা ব্লু ফিল্ম ও নগ্ন ভিডিও দেখে প্রতিনিয়ত অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়েছে । দেশের সকল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীরা মোবাইলের মাধ্যমে অনৈতিকতায় ঝুঁকে পড়তেছে ।
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের সুফল
তথ্য প্রযুক্তি আমাদের সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনীতিক এবং ধর্মীয় উন্নয়নে অপরিহার্য । খারাপ দিকের চাইতে অনেক বেশি ভালো দিক রয়েছে । উন্নত বিশ্বে ইন্টারনেটের গতি বিধি লক্ষ্য রাখার জন্য বেশ কিছু প্রযুক্তি বা এপ্স রয়েছে । শিশুদের ইন্টার্নেট ব্যবহার নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে কাজ করে যে সংস্থা সেটা হল চাইল্ড লাইন ও এনএসপি সিসি ।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিই গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
এ যাতব সংস্থাগুলো শিশু কিশোরদের জন্য নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার করার বিষয় নিয়ে গবেষণা করতেছে । তথ্যপ্রযুক্তির আরো এক ধাপ হল এখন ছেলে মেয়ে আর কোন চিঠি লেখে না মোবাইলের মাধ্যমে সকল খবর আদান প্রদান করতে পারে । যার কারণে অভিভাবকগণ ছেলে মেয়েদেরকে বাহিরে পড়াতে দিয়ে নিশ্চিন্তে বসবাস করতে পারেন ।
ছাত্রদের জন্য কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপ খুব গুরুত্বপূর্ণ । কারণ তাদের লেখাপড়ার সকল বিষয় অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে পারে । ব্যবসায়ীদের কাছে তথ্য প্রযুক্তি অনেক আশীর্বাদ। কারণ ঘরে বসে থেকে ব্যবসার যাবতীয় খোঁজখবর গ্রহণ এবং ক্রয় বিক্রয় গুলো মোবাইলে মাধ্যমে করতে পার ।
বিভিন্ন দোকানপাট অথবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সিসি ক্যামেরা বসিয়ে দূর থেকে সেগুলো তদারকি করতে পারে । তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসে থেকে নতুন নতুন আবিষ্কারের তথ্যগুলো পাওয়া যেতে পারে। দেশের সকল অপরাধ জগতকে তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সনাক্ত করে অপরাধীদেরকে দমন করার সহযোগিতা করে ।
এছাড়া সাধারন মানুষগুলো মোবাইলের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করতে পারে । সুস্থ ধারার সাংস্কৃতি সুস্থ বিনোদন ও মানবিক মূল্যায়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যাদি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া যায়।
কোরআন ও হাদিসের আপডেট তথ্য ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ অতি তাড়াতাড়ি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া যায় । এ ছাড়াও আমাদের সার্বিক চলার পথে সকল ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি সহযোগিতা করে যেটা বলে শেষ করা যাবে না
লেখকের মন্তব্য
তথ্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারই যুব সমাজের অবক্ষয়। সন্তানদেরকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যাবহারের ডিভাইজ গুলো দেওয়ার আগে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে । শিশুদেরকে মোবাইল দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে । স্কুল কলেজ পড়ুয়া সন্তানদেরকে স্মাট ফোন দেওয়া যাবেনা
শিশুদেরকে ছোট থেকে ধর্মীয় নিয়ম শৃংখলার মধ্যে রাখতে হবে । তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে সরকারী ভাবে নিয়ম কানন থাকা দরকার । আমাদের এই পোষ্ট গুলো আশা করি ভাল লেগেছে । ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, ও শেয়ার করবেন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url