তেতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয়

সুপ্রিয় পাঠকগণ আজকের বিষয় তেতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয়। পাকা তেতুলের উপকার, তেতুল খেলে কি ক্ষতি হয়, ওজন কমাতে তেতুলের খাওয়ার নিয়ম। খালি পেটে তেতুল খেলে কি হয়। এগুলো বিষয় জানতে আমাদের সঙ্গে থাকুন। তেতুল আমাদের জন্য অনেক উপকারী ফল।
তেতুলে বহুবিধ উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ রয়েছে। তাই তেঁতুল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে আমাদের এই কন্টেন্টটি ভালো করে পড়ুন।

ভূমিকা

তেতুল বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ। এ উদ্ভিদ অনেক বড় হয়। সাধারণত ২৪ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এছাড়াও তেতুল গাছ অনেক জায়গা দখল করে নিয়ে থাকে। সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের পাকা তেতুল ফল পাওয়া যায়। পাকা তেঁতুল টক ও মিষ্টি হয়।

এছাড়াও থাইল্যান্ড এর মিষ্টি তেতুল পাওয়া যায়। তেতুলে উচ্চমাত্রার এসিড শর্করা ভিটামিন বি সহ আরো অনেক উপাদান রয়েছে। আজকের বিষয় তেতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয়। আসুন এগুলো ব্যাপারে ভালো করে জেনে নিন।

তেতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয়

হয়তো আপনাদের জানার ইচ্ছা তেঁতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয়। আসুন বিস্তারিত এ ব্যাপারে জেনে নিই। তেঁতুল খেলে বীর্য পাতলা হয় এ কথা ঠিক নয়। কারণ নিয়মিত পরিমান মত তেঁতুল খাওয়ার কারণে যৌন শক্তি বৃদ্ধি হয়।

তেতুল ভিটামিন সি ভিটামিন বি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যা শরীরের যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। এছাড়া তেতুলের বীজ খাওয়ার ফলে শুক্রাণু সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। শুক্রাণু মরার হার দূর করে।

এছাড়াও পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্যই তেতুল বীজ খাওয়ার মাধ্যমে যৌনশক্তি বৃদ্ধি হয়। এই জন্য বলা যায় তেতুল খেলে বীর্য পাতলা হয় না। বরং বীর্য ঘন হয় ও শুক্রাণু সংখ্যা বৃদ্ধি হয়।

পাকা তেতুলের উপকারিতা

তেতুল অত্যাধিক পুষ্টি গুন সম্পন্ন ফল। এর ফলে পর্যাপ্ত পুষ্টিগুণ ও ওষুধি গুণ রয়েছে। পাকা তেঁতুল খেলে শরীরের প্রচুর উপকারিতা আছে। উপকারিতা গুলো নিচে বর্ণনা করা হলো।

উন্নত হজম শক্তিঃ তেতুলের টারটারিক অ্যাসিড ম্যালিক অ্যাসিড ও পটাশিয়াম বিদ্যমান। এই কারণে তেঁতুল খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। পেট ব্যথা ও কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়। তেতুল পাতা ডায়রিয়া সারাতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও তেঁতুল গাছের ছাল ও পাতা পেট ব্যথা দুর করতে ব্যবহৃত হয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেঃ তেঁতুল বীজ রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হয়। তেতুলে উপস্থিত আলফা এমাইলেজ এনজাইমের কারণে রক্তের শর্করার মাত্রার নিয়ন্ত্রণ থাকে। তেতুল ও তেতুল বীজ খাওয়ার মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ থাকে।

স্থুলতা কমায়ঃ তেঁতুলে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফাইবার আছে কিন্তু ফ্যাট নাই। গবেষণাগারে দেখা গেছে প্রতিদিন তেঁতুলের শরবত খেলে শরীরের ওজন কমে। তেতুলে উপস্থিত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড শরীরের ক্ষুধা কমায়।

আলসার রোধ করেঃ সাধারণত পেপটিক আলসার ও গ্যাস্ট্রিক আলসার ক্ষুদ্রান্ত গুলিতে হয়। গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত তেতুল বীজ খেলে পেপটিক আলসার ও গ্যাস্ট্রিক আলসার নিরাময় হয়। তেতুলে উপস্থিত পলি ফেনলিক উপাদান আলসার সারিয়ে তোলে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়ঃ তেতুলে উপস্থিত ফ্ল্যাভোরনয়েড রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমায়। রক্তের ট্রাই গ্লিসারাইড জমতে দেয় না। এছাড়া তেতুলে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম বিদ্যমান। পটাশিয়াম রক্তনালী কে প্রশস্ত করে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয় না এবং হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে না।

ক্যান্সার রোধ করেঃ তেতুলে পর্যাপ্ত পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। যা শরীরে ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করে ও কিডনি ফেইলর থেকে রক্ষা করে।

ক্ষত সারিয়ে তুলেঃ তেতুলের গাছের পাতা ও ছাল এন্টিসেপটিক ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল হিসেবে কাজ করে। শরীরের কোথাও ক্ষত হয়ে গেলে তেতুল গাছের পাতা ও ছাল পেস্ট করে লাগিয়ে দিলে ক্ষত ভালো হয়ে যায়।

ত্বক উন্নত করেঃ তেতুল শরীরের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মি এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এছাড়া ত্বকের মরা কোষগুলো অপসারণ করে নতুন কোষ তৈরি করে। যার কারণে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়।

সর্দি কাশি সারাতেঃ তেতুলে এন্টিহিস্টামিন উপাদান রয়েছে যা সর্দি-কাশি সারাতে ভূমিকা রাখে। তেতুলে উপস্থিত ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। যার কারণে সর্দি-কাশির জীবাণু ধ্বংস হয়। শরীরে এলার্জি বাসা বাঁধতে পারে না।

লিভার সুরক্ষিত রাখেঃ তেঁতুল খাওয়ার ফলে লিভারের কার্যকারিতা বেড়ে যায়। পরীক্ষায় দেখা গেছে নিয়মিত তেতুল পাতা খেলে ড্যামেজ লিভার ভালো হয়। এছাড়া তেতুল খাওয়ার মাধ্যমে ফ্যাটি লিভার হতে মুক্তি পাওয়া যায়।

শরীরের ব্যথা কমায়ঃ তেতুলে এন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান আছে যা ফ্রি রেডিক্যাল এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করে। এছাড়াও তেঁতুলে টারটারিক অ্যাসিড আছে। যা গলা ব্যথা জয়েন্টের ব্যথা ও পেশির ব্যথা দূর করে।

ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ করেঃ তেতুলে এন্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদান আছে। যার কারণে ম্যালেরিয়া ঘটিত জ্বর অথবা ব্যাকটেরিয়া কর্তৃক সমস্যা দূর করে। আফ্রিকায় ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় তেতুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

চক্ষু চিকিৎসায়ঃ প্রাচীনকাল থেকেই চোখের সমস্যায় তেতুল ব্যবহার হয়ে আসছে। তেঁতুল চোখের ড্রপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

চুলের যত্নেঃ চুলের যত্নে তেঁতুল অত্যন্ত কার্যকর। তেতুলের রস মাথার ত্বকে ব্যবহার করলে ফলিকলের বৃদ্ধি ঘটে। এছাড়া তেতুলে উপস্থিত ভিটামিন সি চুলের পুষ্টি বৃদ্ধি করে ও চুল সিল্কিকরে।

অতএব আমরা নিয়মিত পরিমাণমতো তেতুল খেয়ে শরীরের পুষ্টি উপাদান বৃদ্ধি করব। আজকের বিষয় তেতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয়।

তেতুল খেলে কি ক্ষতি হয়

তেঁতুল খাওয়ার প্রচুর পুষ্টি গুনাগুন রয়েছে। তারপরেও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে।

*বেশি তেঁতুল খেলে রক্তচাপ কমে।

*যাদের অ্যালার্জি আছে বেশি তেঁতুল খেলে এলার্জি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং ফুসকুড়ি, চুলকানি, ঘা, অজ্ঞান হওয়া, বমি বমি ভাব ও শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার মত সমস্যা হয়।

*বেশি তেঁতুল খেলে শরীরের রক্তপাত হয়।

*বেশি তেঁতুল খেলে রক্তের শর্করার পরিমাণ বেশি কমে যায়।

*বেশি তেঁতুল খেলে শরীরের ওজন বেশি কমে যায়।

*টারটারিক এসিডের কারণে তেতুল খেলে দাঁত নষ্ট হয়।

তাই নিয়মিত পরিমাণ তেতুল খেয়ে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা দরকার। আজকের বিষয় তেতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয়।

ওজন কমাতে তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম

তেতুল এর শরবত খেলে শরীরের ওজন কমে। এই ক্ষেত্রে তেতুল ও পুদিনা পাতা দিয়ে তৈরি শরবত বেশী উপযোগী। আসুন জেনে নিই শরবত তৈরি প্রক্রিয়া।

উপকরণঃ তেতুলের কাথ এক চামচ, চিনি আধা চা চামচ, বিট লবণ সামান্য, আট দশটি পুদিনা পাতা, সামান্য জিরাগুড়া, পানি পরিমাণ মতো, কয়েক টুকরা বরফ।

প্রণালীঃ পাকা তেতুল ভালো করে ধুয়ে নিয়ে পানিতে ভিজাতে হবে ১০ মিনিট। এরপরে হাত দিয়ে চটকিয়ে তেঁতুলের কাথ তৈরি করে নিতে হবে। পুদিনা পাতা ভালো করে ধুয়ে সঙ্গে বিট লবণ চিনি মিশিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে।

এরপরে আরেকটু পানি যোগ করে আরেকবার ব্লেন্ড করতে হবে। অতঃপর গ্লাসে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে। প্রতিদিন এভাবে এক গ্লাস করে শরবত খেলে শরীরের ওজন কমে যাবে।

খালি পেটে তেঁতুল খেলে কি হয়

সকালে খালি পেটে তেঁতুল খেলে তেতুলের পুষ্টি উপাদানের কারণে অনেক উপকার পাওয়া যায়। যাদের ব্লাড প্রেসারের সমস্যা আছে খালি পেটে তেঁতুলের শরবত খেলে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ থাকে। খালি পেটে তেঁতুল খেলে তেতুলের বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে।

যা শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে। আপনি ওজনে অনেক চিন্তিত খালি পেটে তেঁতুলের শরবত খান আপনার ওজন তাড়াতাড়ি কমে যাবে। এছাড়া খালি পেটে তেঁতুল খেলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল কমে যায়।

এছাড়া খালি পেটে তেতুল খেলে ক্যান্সারের সমস্যা ও লিভার ফেইলোর এর সমস্যা দূর হয়। তাই আসুন নিয়মিত খালি পেটে তেঁতুল খেয়ে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করি।

তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম

পানির মধ্যে তেতুল দিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন অতঃপর হাত দিয়ে ভালো করে ব্লেন্ড করুন। সেখান থেকে বিচি ও খোসা বাদ দিয়ে কাথ করে রাখুন। শরবত বা বিভিন্নভাবে খাওয়ার জন্য এই কাথ ব্যবহার করুন।

কিছু পরিমান তেতুল নিন তেতুলের সঙ্গে মরিচের গুঁড়া জিরা গুড়া লবণ ও সরিষার তেল দিয়ে চাটনি করে নিন অথবা আস্তে আস্তে খান। এছাড়া তেতুল ভিজিয়ে রেখে জুস করতে পারেন অতঃপর খেতে পারেন।

তেতুলের শরবত বানিয়ে খেতে পারেন। তেতুলের বিভিন্ন রকম আচার তৈরি করতে পারেন। টমেটোর সস তৈরি করতে তেতুল ব্যবহার করতে পারেন। শোল মাছ রান্না করতে তরকারিতে তেতুল ব্যবহার করতে পারেন।

তেঁতুল দিয়ে চা বানিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও আরো অনেক নিয়ম আছে। যে নিয়ম পালন করি না কেন নিয়মিত পরিমাণমতো তেঁতুল খেয়ে পুষ্টিগুণ গ্রহণ করুন।

তেঁতুলের বীজ খেলে কি হয়

তেঁতুল বীজে পর্যাপ্ত উপকারিতা রয়েছে। তেতুল বীজের উপকারিতা গুলো আলোচনা করা হলো।

*বাংলাদেশের পাটকল ও কাপড় মিলে সুতার রং করার কাজে তেঁতুলের বীজ ব্যবহার করা হয়। রং করার কাজে তেঁতুলের বীজ ব্যবহার করলে রং টেকসই হয়।

*মশার কয়েল তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে তেঁতুল বীজ ব্যবহার হয়।

*চিকিৎসা ক্ষেত্রে এলোপ্যাথিক হোমিও আয়ুর্বেদিক ও ইউনানী চিকিৎসায় তেতুল বীজ ব্যবহার হয়।

*চোখের চিকিৎসায় ড্রপ তৈরিতে তেতুল বীজ ব্যবহৃত হয়।

*তেতুল বীজ খাওয়ার মাধ্যমে পাকস্থলীর সমস্যা লিভার ও গলব্লাডারের সক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

*বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা চিকিৎসায় তেতুল বীজের শরবত ব্যবহার হয়ে থাকে।

*তেতুল বীজ পানিতে ফুটিয়ে এক ধরনের আঠা তৈরি করা হয় যা ছবি আঁকতে ব্যবহার করা হয়।

*তেঁতুল বীজে ওমেগা ৩ ওমেগা৬ ফ্যাটি অ্যাসিড আছে। যা মস্তিষ্ক শক্তিশালী করে এবং মেধা বৃদ্ধি করে।

*তেতুল বীজ ভেজানো পানি খেলে মূত্রনালীর সমস্যা দূর হয়। এই ক্ষেত্রে এই পানি তিন দিন খেতে হবে।

*তেঁতুল বীজে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি আছে যা শুক্রাণু উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে তেতুল বীজ শুক্রাণু মৃত্যু হতে রক্ষা করে পুরুষের শুক্রানুর বৃদ্ধি করে।
তাই আসুন আমরা তেতুল বীজ ফেলে না দিয়ে উপকার গুলি কাজে লাগাই। 

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠকগন আজকে আলোচনা করা হয়েছে তেতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয়। তেতুলের উপকারিতা ও ক্ষতিকর দিকগুলো। তেঁতুল খাওয়ার নিয়ম আলোচনা করা হয়েছে।


তেতুল সম্পর্কে যাবতীয় কিছু জানতে আমাদের এই কন্টেন্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আশা করি এখান থেকে সব জানতে পারবেন। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url