ইমাম বুখারী ( রহঃ) এর জীবনী জেনে নিই
ইমাম বুখারী ( রহঃ) রচিত সহীহ বুখারী শরীফ হাদিস গ্রন্থ গুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে। যিনি সংকলন করেন তিনি হলেন মোহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইব্রাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিসবাহ। জন্মগত নাম মোহাম্মদ। আর উপনাম আব্দুল্লাহ। খোরাসানের বোখারা নামক জায়গায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন তাই তাকে ইমাম বুখারী (রহঃ) বলা হয়।
সহীহ বুখারী শরীফ হইতে ইসলামী জীবন ব্যবস্থায় কোরআনের সকল ব্যাখ্যা পেতে পারি। এই জন্য বুখারী শরীফ আয়ত্ত করা আমাদের জন্য অবশ্যই কর্তব্য। আসুন ইমাম বুখারী ( রহঃ) রচিত সহীহ বুখারী শরীফ যে মহীয়সী ব্যক্তি সংকলন করেছেন তার ইমাম বুখারী ( রহঃ) এর জীবনী জেনে নিই।
ভূমিকার
ইমাম বুখারী ( রহঃ) এর জীবনী জেনে নিই। ইমাম বুখারী (রহঃ) ১৯৪ সালের ১৩ ই সাওয়াল মোতাবেক ৮১০ খ্রিস্টাব্দ পারস্যের খোরাসানের বুখারা নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। তারা বাবার নাম মোহাম্মদ ইসমাইল এবং দাদার নাম ইব্রাহিম। ইমাম বুখারীর পিতা ছিলেন একজন পন্ডিত এবং হাদিস বিষয়ে অনেক জ্ঞানী।
আর ও পড়ুনঃ কালোজিরা খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ইমাম বুখারী ( রহঃ) রচিত সহীহ বুখারী শরীফ এর লেখক ইমাম বুখারী (রহঃ)অত্যাধিক ধৈর্য নিয়ম-শৃঙ্খলা ও খুঁটিনাটি বিষয় দেখে হাদিস সংকলন করেছেন। তার সংগ্রহকৃত হাদিস গ্রন্থ কোরআনের পরে স্থান। সমস্ত উম্মতে মোহাম্মদী উনার কাছে চিরঋণী।
ইমাম বুখারীর (রহঃ) শিক্ষা জীবন
ইমাম বুখারী ( রহঃ) এর জীবনী জেনে নিই। ইমাম বুখারী (রহঃ) শিক্ষা ও ধর্মীয় জ্ঞান পিতা এবং মাতা উভয়ের দিক থেকে পেয়েছেন। ইমাম বুখারীর মাতা ছিলেন একজন বিজ্ঞ ও মহিয়ষী মহিলা। ছোটকালে ইমাম বুখারী অসুস্থতার কারণে অন্ধ হয়ে যান। ঊনার মাতা সব সময় তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে আসার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতেন।
এক রাতে তার মাথায় কাছে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম বসে বলেন আল্লাহ তোমার দোয়া কবুল করেছেন তোমার ছেলের চোখ ভালো হয়ে গেছে। সকালে উঠে দেখেন ইমাম বুখারীর চোখ ভালো হয়ে গেছে। ইমাম বুখারী ছোটকালেই পিতা হারা হন। মাতাই ইমাম বুখারীকে লালন পালন করেন।
ইমাম বুখারীর ছোটকাল থেকেই শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের খুব আগ্রহ ছিল। প্রথমে তিনি কোরান পড়া শুরু করেন এবং ছয় বছর বয়সে কোরআন মুখস্ত করেনদশ বছর বয়স থেকেই তিনি হাদিস মুখস্ত শুরু করেন। ১৬ বছর বয়সেই তিনি আব্দুল্লাহ বিন মোবারক ও ওয়াকির পান্ডুলিপি মুখস্ত করেন। ১৬ বছর বয়সে তিনি মাতা এবং ভাইয়ের সঙ্গে হজ করতে যান।
সেখানে তিনি থেকে যান এবং হাদীস বিশারদ গনের কাছ থেকে বিভিন্ন হাদিস অনুসন্ধানের চেষ্টা করেন। প্রথমে তিনি কাজাআস সাহাবা ওয়াততাবীয়ীন গ্রন্থ রচনা করেন। হাদিস সংগ্রহের জন্য মিশর ইরাক সিরিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের আরো অনেক দেশ সফর করেন। সফর শেষে একই বছরে তিনি দেশে ফিরে আসেন।
ইমাম বুখারী এর প্রখর স্মরণশক্তি
ইমাম বুখারী ( রহঃ) এর জীবনী জেনে নিই। ছোটকাল থেকেই ইমাম বুখারী অত্যন্ত প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন। ইমাম বুখারীর প্রায় ছয় লক্ষের মত হাদিস মুখস্ত ছিল। এতেই বোঝা যায় তার স্মরণশক্তির প্রখরতা। ইমাম বুখারী কোন কিতাব একবার পড়লেই মুখস্ত হয়ে যেত। শিক্ষক গণ যখন হাদিস শিক্ষা দিতেন সবাই নোট করে নিত।কিন্তু ইমাম বুখারীর সব মুখস্ত হয়ে যেত।
তিনি প্রায় এক হাজারেরও বেশি মুহাদ্দিসদের কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করেন। হাদিসের পান্ডুলিপি তৈরির জন্য তিনি দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করেন। যখন তিনি বসরার মহাদ্দিসদের কাছ থেকে হাদিসে জ্ঞান অর্জন করতেন সবাই পান্ডুলিপি লিখে রাখত।ইমাম বুখারী সেগুলো মুখস্ত রাখতেন। স্মরণশক্তি বেশি থাকে সেগুলো লিখে রাখা লাগতো না।
সহপাঠীরা ইমাম বুখারীকে প্রশ্ন করলেন আপনি তো পান্ডুলি লেখেন না আমাদেরকে পড়ে হাদিসগুলো শুনান। ইমাম বুখারী তাদের এই পান্ডুলিপি গুলো সব মুখস্ত শুনালেন।সেই দিন থেকে সকল সহকারী ছাত্রগণ ইমাম বুখারীকে সম্মানের দৃষ্টিতে দেখতো। মহাদ্দিস ইবনে খুযাইমা (রহঃ) বলেন পৃথিবীতে ইমাম বুখারীর চাইতে অভিজ্ঞ এবং হাদিসের হাফেজ আর রজন্ম গ্রহণ করেননি।
হাদিস সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ
সংগ্রহের জন্য ইমাম বুখারী প্রচুর কষ্ট করেছেন এবং বিভিন্ন যায়গায় সফর করেছেন। হাদিস সংগ্রহের জন্য খোরাসান ছাড়াও মক্কা, মদিনা, ইরাক, সিরিয়া, মিশর, সহ মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন। সেই সময় সমগ্র মুসলিম রাজ্যে ইমাম বুখারীর (রহঃ)মেধা ও শিক্ষার কথা ছড়িয়ে পড়ে।
আর ও পড়ুনঃকারাগারে আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী
ইমাম বুখারী বাগদাদে গমন করলে তাদের মধ্য ৪০০ মহাদ্দিস হাদিস এর সনদ মতন পরিবর্তন করে ১০০ টি হাদিস সবার কাছে দশটি করে উপস্থাপন করা হলো। ইমাম বুখারীর (রহঃ) হাদিস গুলো দেখে মূল সনদ মতন বলে দিলেন। এই মেধা দেখে বাগদাদের মহাদ্দিসগন ইমাম বুখারী ( রহঃ) রচিত সহীহ বুখারী শরীফ এর লেখক ইমাম বুখারীকে শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস বলে স্বীকৃতি দিলেন।
ইমাম বুখারীর ওস্তাদ ও ছাত্রগণ
ইমাম বুখারী এর উস্তাদগণ হলেন আবু ওয়ালিদ বিন আব্দুল্লাহ, ইসমাইল বিন সালাম, হারুন বিন আল আশায়ের, মক্কী ইবনে ইব্রাহিম বলখী, ইয়াহ ইয়া ইবনে শিবর, মোহাম্মদ মুসা ,মোহাম্মদ ইবনে ঈসা, মোহাম্মাদ বিন সাবিত।ইমাম বুখারীর উল্লেখযোগ্য ছাত্র ছিলেন ইমাম মুসলিম, ইমাম তিরমিযী, ইমাম নাসায়ী, আবু হাতেম রাজি, আবুযুররা, ইয়াহ ইয়াইবনে মোহাম্মদ।
ইমাম বুখারীর ইবাদত বন্দেগী
হাদিস সংগ্রহ সংকলনের জন্য ব্যস্ত থাকার পরেও ইমাম বুখারী সর্বদাই ইবাদত বন্দেগীতে ব্যস্ত থাকতেন। রমজান মাসে তিনি প্রতিদিন একবার করে কোরআন খতম দিতেন। তিনি রমজান মাসে তিন তারাবিতে কোরআন খতম দিতেন।ইমাম হাতিম (রহঃ) মতে প্রতিদিন তিনি ১৩ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। ইমাম বুখারী কোরআনের এবং সুন্নাহর বাহিরে কোন কাজ করতেন না।
অত্যন্ত দানশীল ছিলেন । তিনি অনেক সম্পদের অধিকারী ছিলেন।তিনি সামান্য আহার করতেন এবং নিজে সামান্য খরচ করেন।উৎপাদিত সব সম্পতি হাদিস শিক্ষা সহ লোকদের মাঝে সব বিতরণ করে দেন। তিনি সবসময় দিনার ও দিরহাম সঙ্গে রাখতেন। হাদিস শিক্ষার কাজে যেখানে যা দরকার হতো সব দান করে দিতেন। তিনি একজন বড় মাপের দানবীর ছিলেন।
ইমাম বুখারী ( রহঃ) রচিত সহীহ বুখারী শরীফ সংকলন
ইমাম বুখারী ( রহঃ) এর জীবনী জেনে নিই। ইমাম বুখারী (রহঃ)অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর হাদিস গুলো সংগ্রহ করতেন। যাদের কাছ থেকে হাদিস সংগ্রহ করতেন তাদের সকল গুণাবলী গুলো লক্ষ করতেন। হাদিস সংকলনের ক্ষেত্রে রাবী তার উপরের রাবী থেকে ভালোভাবে শুনেছে কিনা অথবা দেখা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতেন।
রাবীর আখলাক চরিত্র দৃষ্টির প্রখরতা এর দিকেও নজর দিতেন। যে রাবীর এর কাছ থেকে হাদিস গ্রহণ করতেন সেই রাবীর গ্রহণযোগ্যতা কেমন সেটাও জেনে নিতেন। হাদিস সংগ্রহের ক্ষেত্রে রাবীদের ন্যায় পরায়ণতা লেনদেন সত্যবাদিতা স্মরণ শক্তি কেমন এই সকল বিষয়ে গুরুত্ব দিতেন।
হাদিস সংগ্রহের ক্ষেত্রে রাবীদের ধারাবাহিকতা দেখতেন আরও দেখতেন মাঝখানে কোন রাবী বাদ পড়েছে কিনা। ইমাম বুখারী হাদিস লেখার ক্ষেত্রে গোসল করে দুই রাকাত নামাজ পড়ে হাদিস লিখতে বসতেন। তিনি খুব ধীরস্থির ভাবে হাদিস সংগ্রহ করতেন। এই প্রখর স্বরন শক্তির বিনিময়ে ইমাম বুখারী ( রহঃ) রচিত সহীহ বুখারী শরীফ সংকলন।
ইমাম বুখারীর গ্রন্থাবলী
ইমাম বুখারী (রহঃ) সংকলিত বইগুলো আলহাদিস ও সুন্নাত, দাওরায় হাদিস, বিদেশি ভাষার ধর্মীয় বই অনুবাদ ও তাফসীর, আরবি উর্দু ইসলামী আমল, আমলের সহায়িকা, ইসলামী বিধিবিধান ও মাসালা মাসায়েল।ইমাম বুখারী ( রহঃ) রচিত সহীহ বুখারী শরীফ। সহীহ বুখারী এক অনবদ্য হাদীস গ্রন্থ।
কুরআনের পরেই তার এই হাদিস গ্রন্থকে স্থান দেওয়া হয়। ইমাম বুখারী যখন হাদিস গ্রন্থ লিখতেন গোসল করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তেন এবং তিনি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে রাসুলের রওজা মোবারকের পাশে বসে হাদিস লিখতেন।
ইমাম বুখারীর (রহঃ) কঠিন পরীক্ষা
ইমাম বুখারী ( রহঃ) এর জীবনী জেনে নিই। ইমাম বুখারীর (রহঃ) তৎকালীন আমিরের সঙ্গে মতবিরোধ দেখা দেয়। ইমাম বুখারীর (রহঃ) শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্ব গোটা পৃথিবী ছড়িয়ে পড়ে। তখন বুখারার আমির প্রস্তাব দেন আমিরের সন্তানকে পড়াতে ইমাম বুখারীর প্রতিদিন রাজ দরবারে আসতে হবে।মসজিদের সাধারণ ছেলেদের সঙ্গে আমিরের ছেলের হাদিস পড়া ঠিক মনে করেননি।
আর ও পড়ুনঃ হজ্জ ও উমরাহ সফরে সহজ গাইড
ইমাম বুখারী মসজিদের ছেলেপেলে দেরকে রেখে রাজ দরবারে যেয়ে হাদিস শিক্ষা দান ভালো মনে করেননি। তাই তিনি আমিরের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেন।আমির ক্ষিপ্ত হয়ে ইমাম বুখারীকে বুখারা থেকে বের করে দিলেন এবং কিছু আলেমদেরকে তার বিরুদ্ধে কুৎসা করা করতে বললেন। ইমাম বুখারী বাহির হয়ে যাওয়ার সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন।
হে আল্লাহ আমাকে যেভাবে লাঞ্চিত করলো আমিরকে তুমি সেভাবে লাঞ্চিত করো। মাত্র এক মাসের মধ্যেই আমীর খালিদ বিন আহমদের বিরুদ্ধে জনগণ বিদ্রোহ ঘোষণা করলো। আমির ক্ষমতাচ্যুত হল। কিছুদিনের মধ্যে জেলে থাকা অবস্থায় তার মৃত্যু হল।
ইমাম বুখারীর মৃত্যু
সমরখন্দের খরতঙ্গ ৬২বছর বয়সে ২৫৬ হিজরী ঈদুল ফিতরের রাত্রে ইন্তেকাল করেন। ঈদের দিন জোহরের নামাজের পরে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয। অসিয়ত মোতাবেক তিনটি সাদা কাপড়ে তাকে দাফন করানো হয়।কথিত আছে তার কবর থেকে মিসকের চেয়েও সুন্দর সুঘ্রান বের হতো। লোকজন দলে দলে মাটি নিতে আসতো। পরবর্তীতে কবরটিকে কাটা তার দিয়ে ঘিরে রাখা হয়।
লেখক এর মন্তব্য
ইমাম বুখারী ( রহঃ) এর জীবনী জেনে নিই। আমরা ইমাম বুখারী (রহঃ) এর কাছে চির ঋণী। তিনি অত্যন্ত পরিশ্রম ও প্রখরতা মেধা দিয়ে ইমাম বুখারী ( রহঃ) রচিত সহীহ বুখারী শরীফ সংকলন করেছেন। আমরা অনলাইনে সার্চ দিয়ে বুখারী শরীফের সব কয়টি খন্ডই পেতে পারি।
আসুন আমরা সবাই বুখারী শরীফ পড়ে নিজে উপকৃত হই এবং অন্যকে সহযোগিতা করি। আশা করি আমার এই প্রবন্ধটি ভালো লাগবে। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url