নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়। আমাদের জানা প্রয়োজন জন্ডিস আসলে কোন রোগ নয়। জন্ডিস রোগের লক্ষণ। জন্ডিস ব্যাপারে আমাদের পুরোপুরি ধারণা থাকা প্রয়োজন। জন্ডিস ব্যাপারে ধারণা না থাকলে অবহেলা করার পরিণাম মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি পড়লে জন্ডিস ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। জন্ডিস নিরাময় ব্যাপারে আমাদের জানা থাকলে খুব সহজেই জন্ডিস থেকে মুক্তি পেতে পারি।
ভূমিকা
জন্ডিস কোন রোগ নয় বরং রোগের লক্ষণ। তারপরেও জন্ডিস হলে আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। এর একটি কারণ যে জন্ডিসের ব্যাপারে আমাদের ধারণা অনেক কম। জন্ডিস একমাত্র পানি বাহিত রোগ। পানি যেহেতু আমাদের আবশ্যকীয় উপাদান। তাই আমরা সবসময় বিশুদ্ধ পানি পান করবো।
আরও পড়ুনঃ পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ
আজকে আমাদের আর্টিকেল নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয় । সাধারণত জন্ডিস হলে আমরা বিভিন্ন গাছ-গাছালি খেয়ে থাকি যার কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তি নাই। তাই আসুন জন্ডিস ব্যাপারে আমরা সার্বিক ধারণা গ্রহণ করি।
বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর উপায়
রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা কমানোর জন্য ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খেতে হবে। ভিটামিন সি খাওয়ার কারণে ভিটামিন সি রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমাতে সহযোগিতা করে। এজন্য পর্যাপ্ত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার খাবেন। যেমন আমলকি, কামরাঙ্গা, পেয়ারা, আপেল, লাল মরিচ, কমলালেবু, স্ট্রবেরি, ইত্যাদি ফল নিয়মিত খাবেন।
শরীরে বিলিরুবিন কমাতে প্রতিদিন পর্যাপ্ত ব্যায়াম করতে হবে। প্রতিদিন ব্যায়াম করার ফলে খুব দ্রুত শরীর থেকে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমে যাবে। সাধারণত অস্বাস্থ্যকর চর্বি থেকে বিরত থাকতে হবে। অপরপক্ষে স্বাস্থ্যকর চর্বি গ্রহণের ফলে শরীরে বিলিরুবিন এর পরিমাণ কমে যায়।
বিলিরুবিন কমাতে এন্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার খান। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ কমায় সঙ্গে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমে। সবুজ শাক, বাদাম, আখরোট, ইত্যাদিতে পর্যাপ্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। যেটা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। প্রচুর পরিমাণ পানি পান করুন। প্রচুর পরিমাণ পানি পান করলে দেহ হাইড্রেট থাকে।
যার কারণে দেহ থেকে টক্সিন বাহিরে হয়ে যায়। এছাড়াও রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমানোর জন্য নতুন পদ্ধতি সফল হয়েছে। এর পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে অধ্যাপক ডাক্তার মামুন আল মাহতাব বলেন এই স্টেম সেল থেরাপিতে প্রথম গ্র্যানুলোসাইট কলোনিষ্টিমুলেটিং ফ্যাক্টর ইনজেকশন ব্যবহার করতে হবে।
এই ইনজেকশনে রক্তে স্টেমসেলগুলো বাড়ানো হয়। অথবা রক্ত থেকে জি সি এস এফ প্রয়োগ করে। বেড়ে যাওয়া স্টেমসেলগুলো ছেকেনেওয়ার মতো করে আলাদা করা হয়। অতঃপর ক্যাথল্যাবে এনজিওগ্রাম এর মাধ্যমে সেলগুলো সরাসরি হেপাটিক আর্টারি দিয়ে লিভারে ইনজেকশন করা হয়।
যে পদ্ধতিতে লিভার ডায়ালাইসিস শুরু হলো তা বিশ্বে প্রথম এবং বাংলাদেশে প্রথম। কিডনি ডায়ালাইসিস এর মত রোগীর রক্ত থেকে ক্ষতিকারক উপাদান ও বিলিরুবিন রক্ত থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়। বিশেষ কলামে ছাকনির ভিতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত করে রক্তের প্লাজমা থেকে বিলিরুবিন আলাদা করা হয়।
অধ্যাপক ডাক্তার মামুন আল মাহতাব বলেন উন্নত বিশ্বের মার্স ডায়ালাইসিস মেশিনে প্রচুর এলবুমিন ব্যবহার করে ডায়ালাইসিস করা হয়। সেখানে এই নতুন পদ্ধতিতে এলবুমিন ব্যবহার না করেই বিলিরুবিন কমানো সম্ভব হয়েছে।
বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
সাধারণত বিলিরুবিনের পরিমাণ .৫ মিলিগ্রাম /ডেসি লিটার থেকে ৩ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার পর্যন্ত হলে কোন সমস্যা নাই। তবে বিলিরুবিনের পরিমাণ ৩ মিলিগ্রাম/ডেসি লিটার এর বেশি হলে জন্ডিসের লক্ষণগুলো প্রকাশ পাবে। জন্ডিসের লক্ষণ পেলে যত্ন সহকারে জন্ডিসের চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়
প্রিয় গ্রাহক আজকে আমাদের কনটেন্ট নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়। বিলি রুবিন হলুদ রঙের একটি পদার্থ যাহা রক্তের লোহিত কণিকাকে ভেঙ্গে দেয়। যাহার কারণে রক্তে প্রভাব পড়ে। রক্তে বিলিরুবিনের প্রভাব পড়লে শরীর সাধারণত হলুদ ফ্যাকাসে হয়। তখনআমরা জানবো যে জন্ডিস হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ কোন খাতে হয়
বিলিরুবিন সাধারণত রক্ত থেকে শরীরের মাধ্যমে লিভারে যায়। নবজাতক শিশুদের মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ জন্ডিসে আক্রান্ত হয়। যেগুলো বাচ্চা নির্দিষ্ট সময়ের আগে ভূমিষ্ঠ হয়। অথবা ভূমিষ্ঠ হওয়ার সময় ওজন কম হয়। সেগুলো বাচ্চাদের শতকরা ৭০ থেকে ৮০ ভাগ জন্মের পরপরই জন্ডিস হয়।
সাধারণত মা ও নবজাতক শিশুর রক্তের গ্রুপ ভিন্ন হলে বেশিরভাগ সময় জন্ডিস হয়। শিশু মায়ের দুধ বেশি না পেলেও জন্ডিস আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। মাদের রক্তে সংক্রমণের সমস্যা থাকলে বাচ্চাদের জন্ডিস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
জন্ডিস হলে নবজাতকের রক্তশূন্যতা দেখা দেয় লিভার ও প্লীহা বড় হয়ে যায়। হলুদ ও ফেকাসা হয়ে যায়। রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ খুব বেশি বেড়ে গেলে বাচ্চা মারাও যেতে পারে। সাধারণত নবজাতকের রক্তে বিলি রুবিনের মাত্রা ৫মি.গ্ৰা./ডেসিলিটারের নিচে থাকলে কোন সমস্যা হয় না।
তবে বিলিরুবিনের পরিমাণ ৫মি.গ্ৰা./ডেসিলিটার এর অধিক হলে জন্ডিস বলে মনে করা হয়। বাচ্চাদের রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ ১৪মিগ্ৰম/ডেসি লিটারের বেশি হলে ভয়ের কারণ আছে। তবে ১৪মিগ্ৰা/ডেসি লিটার এর কম হলে। শারীরিক যত্নের মাধ্যমে আস্তে আস্তে বাচ্চা সুস্থ হয়ে যায়।
বিলিরুবিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে নবজাতক কে একটু বেশি বেশি মায়ের দুধ খাওয়ানো প্রয়োজন। বেশি দুধ খাওয়ার ফলে ঘন ঘন পায়খানা হয়। পায়খানার সঙ্গে বিলিরুবিন বের হয়ে যায়। আসুন নবজাতককে যত্নের মাধ্যমে জন্ডিসের হাত থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করি।
লিভার জন্ডিসের লক্ষণ
লিভার জন্ডিস সাধারণ জন্ডিসের মতোই। লক্ষণ গুলো একই রকম প্রকাশ পায়। সাধারণত বিলিরুবিনের পরিমাণ দেহে বেশি হলে রক্তের সঙ্গে শরীরের মাধ্যমে লিভারে আক্রান্ত হয়। তখনই লিভার জন্ডিস বলা হয়। জন্ডিস হলে সাধারণত চোখ ও শরীরহলুদ হয়। প্রস্রাবও হলুদ হয়। জন্ডিসের আক্রান্ত হওয়ায় কারণে খাদ্য গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়।
বমি বমি ভাব অথবা অনেক সময় বমিও হতে পারে। শরীর অস্বাভাবিক দুর্বল জ্বর পেট ব্যথা ও শরীরের চুলকানি ও ফ্যাকাসের সাদাটে পায়খানা হয়। রক্ত কমিও হতে পারে অথবা কালো পায়খানা হতে পারে। এছাড়া আরো জানতে পারবেন নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়।
জন্ডিস এর প্রতিকার
আজকের কনটেন্ট নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়। প্রকৃতপক্ষে জন্ডিস হলে রক্তে বিলিরুবিনের পরিমাণ কমপক্ষে তিন মিলি গ্রাম/ডেসিলিটার এর বেশি হলে জন্ডিসের লক্ষণ গুলো প্রকাশ পাবে। জন্ডিস হলে যত্ন। সহকারে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
আখের রসঃ জন্ডিস হলে আখের রস অত্যন্ত উপকারী। দিনে চার-পাচবার আখের রস খাবেন। আখের রস খেলে খুব তাড়াতাড়ি জন্ডিস সেরে যাবে। আখের রস যদি না পান তাহলে গুড়ের শরবত খেতে পারেন।
ঘোল খাওয়ার মাধ্যমেঃ জন্ডিস হলে সকাল বিকাল একগ্লাস করে ঘোল খাওয়া ভালো। ঘোলে সামান্য গুল মরিচের গুড়া মিশিয়ে খেলে গুনাগুন আরো তাড়াতাড়ি পাওয়া যায়। কয়েকদিন ঘোলের সঙ্গে মরিচের গুড়া মিশিয়ে খেলে জন্ডিস নির্মূল হয়ে যায়।
পেয়াজের মাধ্যমে চিকিৎসাঃ জন্ডিস নিরাময়ে পেয়াজে খুব ভালো কাজ করে। পেয়াজ কেটে লেবুর রস দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। এক থেকে দু ঘণ্টা পরে পেয়াজের সঙ্গে গোলমরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে রোগীকে খাইয়ে দেন। এভাবে দিনে দুইবার খেলে তাড়াতাড়ি জন্ডিস ভালো হয়ে যাবে।
ফল খাওয়ার মাধ্যমে জন্ডিস নিরাময়ঃ ফলের মধ্যে তরমুজ ও খরমুজ খাওয়ার মাধ্যমে জন্ডিস নিরাময় হয়। নিয়মিত কয়েকদিন ধরে তরমুজ ও খরমুজ বেশি করে খেলে জন্ডিস নিরাময় হয়। এজন্য নিয়মিত কয়েকদিন তরমুজ ও খরমুজ খাবেন।
লেবুর রস খাওয়ার মাধ্যমে জন্ডিস নিরাময়ঃ লিভারের কোষের সুরক্ষা বৃদ্ধি করার জন্য দিনে ৩-৪ বার লেবুর রস খান। লেবুর রস কয়েকদিন খেলেই জন্ডিস নিরাময় হয়ে যাবে।
মুলা পাতা দিয়ে জন্ডিস নিরাময়ঃ মুলাপাতা জন্ডিস নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মুলাপাতা ভালো করে পিষে রস করে নিতে হবে। অতঃপর সে রসগুলো খেয়ে নিতে হবে। কয়েকদিন মুলা পাতার রস খেলে জন্ডিস ভালো হয়ে যাবে। মুলা পাতার রস খেলে পেট পরিষ্কার হয় ও ক্ষুধা বেড়ে যায়। যার কারণে জন্ডিস ভালো হয়ে যায়।
টমেটোর রস খাওয়ার মাধ্যমেঃ সুন্দর করে পাকা টমেটো ব্লেন্ড করে ছাকনি দিয়ে রসবাহির করে নিয়ে লবণ ও গোলমরিচের গুড়া দিয়ে খেয়ে নিতে হবে। টমেটো রসে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে যা পেট ও লিভার পরিষ্কার করে। খুধা বৃদ্ধি করে ও জন্ডিস নিরাময় হয়।
শারীরিক চিকিৎসাঃ প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করুন। গায়ে সরিষার তেল দিয়ে কিছুক্ষণ রোদে বসে থাকুন। প্রোটিন ভিটামিন সি, ভিটামিন ই,ও ভিটামিন বি জাতীয় খাবার খান। নিয়মিত ব্যায়াম এবং এই ভিটামিন জাতীয় খাবার খেলে তাড়াতাড়ি জন্ডিস ভালো হয়ে যাবে।
আরও পড়ুনঃ আমলকির উপকারী পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ
এছাড়া সবসময় পরিষ্কার থাকবেন। জ্বর পেট ব্যথা অথবা বমি বমি ভাব হলে এগুলোর ওষুধ খেয়ে নিবেন। আশা করা যায় সুস্থ জীবন ফিরে পাবেন। জন্ডিস হলে সাধারণত চর্বি জাতীয় খাবার বর্জন করাই ভালো।
জন্ডিস রোগীর খাবার তালিকা
লেখকের মন্তব্য
সাধারণত নবজাতক শিশু বেশিরভাগ জন্ডিসের আক্রান্ত হয়। এজন্য আমাদের পোস্ট নবজাতকের বিলিরুবিনের মাত্রা কত হলে জন্ডিস হয়। জন্ডিসের লক্ষণ এবং নিরাময়ে সচেতন হওয়ার ব্যাপারে লক্ষ্য রাখবেন। আজকের আর্টিকেল গুগল ও বিভিন্ন স্বাস্থ্য সাময়িকী থেকে তথ্য সংগ্রহ করে লেখা হয়েছে।
আজকের বিষয় ভাল ভাবে জানতে এই আর্টিকেল ভিজিট করুন। আশা করি আমাদের এই কনটেন্ট ভালো লাগবে এবং উপকৃত হবেন। ভালো লাগলে নিজেকে সার্থক মনে করব। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url