জেনে নিন দুম্বার মাংসের উপকারিতা
সুপ্রিয় পাঠকগন আজকে লিখতে বসলাম দুম্বার মাংসের উপকারিতা। প্রকৃতপক্ষে অন্যান্য মাংসের চাইতে দুম্বার মাংস খেতে সুস্বাধু। আরো আলোচনা করা হয়েছে, দুম্বার লালন পালন পদ্ধতি। দুম্বার ও ভেড়ার মধ্যে পার্থক্য। দুম্বার চাষ করার জন্য বাংলাদেশের কোথায় থেকে দুম্বা সংগ্রহ করা যায়।
দুম্বা দেখতে কিরকম ও দুম্বার বৈশিষ্ট্য কি কি। এগুলো বিষয় পুরোপুরি জানতে আমাদের এই আর্টিকেলে পড়তে পারেন। এগুলো জানার মাধ্যমে দুম্বা চাষ করার আগ্রহ আপনাদেরও হতে পারে। যেহেতু দুম্বা চাষ অনেক লাভজনক। মরুর প্রাণীর দুম্বা চাষ করা অনেক আনন্দের।
ভূমিকা
দেশে আমিষের চাহিদা পূরণ হওয়ার মত মাংস উৎপাদন হচ্ছে না। যার কারণে দিন দিন মাংসের দাম বেড়ে যাচ্ছে । গরিব ও মধ্যবিত্ত লোকদের জন্য মাংস খাওয়া যেন সোনার হরিণ হয়ে গেছে। ছাগল ও ভেড়ার চাইতে দুম্বার মাংসের উৎপাদন অনেক বেশি। আমরা যদি দুম্বা চাষ করতে পারি তাহলে অচিরেই মাংসের চাহিদা পূরণ হবে।
আর ও পড়ুনঃ চোখের এলার্জি দূর করার ঘরোয়া উপায়
সাধারণত তিন মাস বয়সের একটি ছাগলের ওজন ১৫ থেকে ১৮ কেজি হয়। অপরপক্ষে তিন মাস বয়সের একটি দুম্বার ওজন ৪০ থেকে ৫০ কেজি হয়। যেহেতু দুম্বার গ্রোথ অনেক বেশি অথচ খাবার খরচ ছাগলের মতই। তাই আমরা দুম্বা চাষের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারি। আজকের বিষয় দুম্বার মাংসের উপকারিতা।
দুম্বার মাংসের উপকারিতা
প্রিয় পাঠক দুম্বার মাংসের উপকারিতা আছে। দুম্বা থেকে প্রচুর পরিমাণে মাংস পাওয়া যায়। দুম্বার মাংস অনেক সুস্বাদু। সাধারণত গরু অথবা মহিষ অথবা উটের চাইতে দুম্বার মাংস অনেক স্বাদ বেশি। এছারা ও দুম্বা মাংসে পুষ্টি উপাদান গুলো একটু বেশি। দুম্বা মাংসের উপকারিতা গুলো আলোচনা করা হলো।
আমিষেরের চাহিদা যোগানঃ দুম্বার গুলো ছাগলের মত হলেও দুম্বার ওজন অনেক বেশি। সাধারণত একটি দুম্বা থেকে ৭০ থেকে ৮০ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। যার কারণে দুম্বা আমিষের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
প্রোটিন উপাদান বেশি থাকেঃ সাধারণত গরু ছাগলের মাংসের চাইতে দুম্বার মাংসে প্রোটিনের উপাদান একটু বেশি থাকে। এইজন্য দুম্বার মাংস খেলে প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়। এছাড়াও পেসি গুলো মজবুত করে।
ভিটামিন ও আয়রনের উৎসঃ দুম্বার মাংস অন্যান্য মাংসের চাইতে ভিটামিন ও আয়রনের পরিমাণ অনেক বেশি। এইজন্য দুম্বার মাংস খেলে বিভিন্ন ভিটামিন থাকার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। দুম্বার মাংসে পর্যাপ্ত আয়রন থাকায় শরীরের রক্ত কণিকায় লোহিত রক্তকণিকা বৃদ্ধি পায়। যার কারণে রক্তশূন্যতা দূর হয়।
ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস সরবরাহঃ অন্যান্য মাংসের চাইতে দুম্বার মাংসে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে। ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের গঠন মজবুত করে। এছাড়া হাড় ও পেসি শক্তিশালী করে। জয়েন্ট ও পেশীর ব্যথা দূর করে।
প্রজনন স্বাস্থ্যঃ দুম্বার মাংসে পর্যাপ্ত পরিমাণ সেলেনিয়াম রয়েছে। সেলোনিয়াম মানুষের প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো করে। এই জন্য দুম্বার মাংস খেলে প্রজনন স্বাস্থ্য ভালো হয়। সর্বোপরি দুম্বা চাষ করলে র্মাংসের যোগান পাওয়া যাবে। যার কারণে মরু দেশের মতো আমাদের দেশেও মাংসের চাহিদা মিটানোর জন্য দুম্বা চাষ করা প্রয়োজন।
দুম্বা পালন পদ্ধতি
আজকের বিষয় দুম্বার মাংসের উপকারিতা। দুম্বা একটি লাভজনক পশু। দুম্বা সাধারন মরু দেশীয় প্রাণী হলেও আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। দুম্বা খাদ্য সাধারণত ছাগল ও ভেড়ার খাদ্যের মতই। তবে বলা হয়ে থাকে ছাগল অথবা ভেড়া অথবা গরু যেগুলো খাবার নষ্ট করে সেগুলো দুম্বা খেয়ে থাকে।
আর ও পড়ুনঃ জেনে নিন ঘামাচি পাউডার কোনটা ভালো
দুম্বার খাওয়ার রুচি অনেক বেশি। দুম্বা পালন করতে হলে ঘাস পাতা ও দানাদার খাবার খাওয়ার মাধ্যমেই লালন পালন করা যায়। সাধারণত একটি দুম্বা এক বছর বয়সেই ডাক আসে। দুম্বা প্রজনন করালে ১৫০ দিনের মধ্যে একটি করে বাচ্চা পাওয়া যায়। আমাদের দেশে অনেক খামারেই দুম্বা পালন হয়ে আসতেছে।
ছাগলের মত দুম্বাতে অনেক বেশি রোগ বালাইয়ের ঝামেলা নাই। এছাড়া দুম্বার গ্রোথ অনেক বেশি। একটি দুম্বা ১৫ থেকে ১৮ মাসে বিক্রির উপযোগী হয়। এই বয়সে সাধারণত দুম্বার ওজন ১২০ থেকে ১৬০ কেজি পর্যন্ত হয়। গরু ছাগলের চাইতে দুম্বা পালন করা অনেক লাভজনক।
দুম্বা দুই দিকে সাশ্রয় হয়। দুম্বা সকল ধরনের ঘাস পাতা ও দানাদার খাবার খায়। অথচ দুম্বার গ্রোথ অনেক বেশি। এছাড়া বাজারে দুম্বার মাংসের চাহিদা অনেক বেশি। বাংলাদেশের বাজারে দুম্বার মাংস ১৭০০ থেকে ২২০০ টাকা পর্যন্ত কেজি বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কুরবানীর সময় দুম্বার অনেক চাহিদা।
ওজন ভেদে কোরবানির সময় একটি দুম্বা ১ লক্ষ টাকা থেকে তিন লক্ষ টাকা পর্যন্ত দাম হয়। এছাড়াও অতিরিক্ত খরচ করে যাহারা দুম্বার খামার করতে পারবেন না তাদের জন্য একটি সুসংবাদ আছে। সেটা হলো কয়েকটি গাড়ল কিনে সঙ্গে দুম্বার পাঠা কিনে খামার করতে পারেন।
এ অবস্থাতে ২-৩ বার প্রজনন করালে দুম্বা পাওয়া যায়। দুম্বার বিভিন্ন জাত আছে। যেমন টার্কি দুম্বা তুর্কি দুম্বা আউসি দুম্বা ও রেড মাস দুম্বা। সাধারণত ছাগল বা অন্যান্য খামারের সঙ্গে দুম্বার খামারও গড়ে তোলার দরকার।
একদিক থেকে পর্যাপ্ত মাংস পাবো অপরদিকে খাবার খরচ অনেক কম হবে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে অনেক দুম্বা খামার গড়ে উঠেছে। খামার গুলোর মালিকদের মন্তব্য ছাগল বা অন্যান্য খামারে চাইতে দুম্বার খামার অনেক লাভজনক।
দুম্বা ও ভেড়ার পার্থক্য
আজকের বিষয় দুম্বার মাংসের উপকারিতা। দুম্বা ও ভেড়া দেখতে একই রকম। কিন্তু দুটি পশুর মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। ভেড়া সাধারণত ছোট আকৃতির হয়ে থাকে। একটি ভেড়া থেকে 10 থেকে 20 কেজি মাংস পাওয়া যেতে পারে। এছাড়া ভেড়ার মাংস বাজারে চাহিদা কম।
সাধারণত ভেড়ার মাংস খাসির মাংস হিসেবে বিক্রি করা হয়। অপরপক্ষে দুম্বা অনেক বেশি মাংস থাকে। সাধারণ তো একটি দুম্বা তে ৭০ থেকে ১০০ কিমি পর্যন্ত মাংস হয়। এছাড়াও দুম্বার পিছনে অনেক মাংস বড় হয়ে থাকে।
দুম্বার গ্রোথ অনেক বেশি। সাধারণত দুই তিন মাসেই একটি দুম্বা ৩০ থেকে ৪০ কেজি পর্যন্ত ওজন হতে পারে। অথচ ভেড়া এক বছরে ২৫ থেকে ৩০ কেজি ওজন হয়। এইজন্য অত্যাধিক মাংস পাওয়ার জন্য দুম্বা চাষ করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে দুম্বা কোথায় পাওয়া যায়
বর্তমান বাংলাদেশ দুম্বাচাষ শুরু হয়েছে। আমরা এখন বাংলাদেশ থেকেই দুম্বা সংগ্রহ করতে পারব। এক্ষেত্রে দুম্বার সংগ্রহের জন্য প্রথমেই নারায়ণগঞ্জের আমিষ এগ্রো ফার্মে যোগাযোগ করতে পারেন। নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় দুম্বার খামার অবস্থিত।
এখান থেকে খুব কম দামে দুম্বা ও দুম্বার বাচ্চা সংগ্রহকরতে পারবেন। মোবাইল নাম্বার ০১৭৪৯-১৯২৪৮৫ এছাড়াও দুম্বার সংগ্রহ করতে পারবেন ওরিক্স এগ্ৰো ফার্ম উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টর। মোবাইল নাম্বার ০১৯১৩২০১০৩০-০১৩১৩৩৫৫২৫৭ ।
দুম্বা সংগ্রহ করতে পারবেন রাজশাহী বিভাগের নাটোর জেলায় অবস্থিত গুরুদাসপুর থানা। গুরুদাসপুর থানার খামার পাতুরিয়া গ্রামে মোঃ আব্দুল হান্নান এর কাছ থেকে দুম্বার সংগ্রহ করতে পারবেন। এখান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির দুম্বা পাবেন। এখান থেকে অরজিনাল দুম্বা পাওয়া যাবে।
খামারির মোবাইল নাম্বার ০১৭২১০৯৯১৭৩ । আরো দুম্বক সংগ্রহ করতে পারবেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বাইজিদ থানার অন্তর্ভুক্ত তিন নাম্বার ওয়ার্ড হাজিপুর গ্রাম অবস্থিত এগুলো ফার্ম। এই ফার্ম থেকে আপনি বিশ্বস্ততার সাথে দুম্বা সংগ্রহ করতে পারবেন। ফার্মের দুম্বা গুলো।অনেক ভালো।
দুম্বা চাষ করতে এখান থেকে দুম্বার সংগ্রহ করলে দুম্বা চাষ ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য আপনাকে প্রদান করবেন। আপনি খামার দেখে দুম্বার সংগ্রহ করতে পারবেন। খামারির মোবাইল নাম্বার ০১৭১৩১৬২৮০৪। আরো দুম্বা সংগ্রহ করতে পারবেন কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব থানার অধীনে চানপুর গ্রামে দুম্বা চাষী শামীম আহমেদ এর কাছ থেকে।
এখানকার দুম্বা অনেক উন্নত ভালো জাতের। বিশ্বস্থতার সাথে এখান থেকে দুম্বার সংগ্রহ করতে পারবেন। খামারে যে আপনি দুম্বা পছন্দ করতে পারেন। দুম্বা পছন্দ করে দরদাম ঠিক হলে আপনার বাসায় খামারি নিজে তোমরা পৌছে দিবেন। খামারির মোবাইল নাম্বার ০১৭১০৭৫৭৬০১ ।
এছাড়া আরো পাবেন বরিশাল জেলার লোহারপুল এলাকায় শহীদ জিয়া সড়কে মোহাম্মদ রিয়াজুল কবির বাদল এর ফার্মে দুম্বা সংগ্রহ করতে পারবেন। আপনি ফার্মের যেয়ে পছন্দ করে দুম্বার দরদাম করতে পারেন। পছন্দ করে অনেক বিশ্বস্ততার সাথে এখান থেকে দুম্বায় কিনতে পারেন। মোবাইল নাম্বার ০১৬৩৮৭৭৭৭৭ ।
দুম্বা দেখতে কেমন
দুম্বা গৃহপালিত পশু। দুম্বা দেখতে সাধারণত গাড়ল অথবা ভেড়ার মত। দুম্বার অনেক জাত রয়েছে। জাতগুলো হল তুর্কি দুম্বা টার্কি দুম্বা আওসি দুম্বা রেড মাস দুম্বা। জাত ভেদে দুম্বাদের একটু পার্থক্য থাকে। মোটামুটি গাড়লের মতই দেখতে। দুম্বার পিছনে অনেক বড় মাংসপিন্ডলি তৈরি হয়।
যেখান থেকে মাংস কেটে খেলে পুনরায় আবার সে মাংস তৈরি হয়ে যায়। এছাড়া দুম্বা থেকে আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণ মাংস পাই। একটি দুম্বার ওজন সাধারণত ১০০ কেজি থেকে ১৭০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে। দুম্বার মাংসের কালারও অনেক টকটকে লাল। এছাড়া দুম্বারের মাংস খেতেও অনেক সাধ।
দুম্বা সাধারণত ছাগল ভেড়াদের মতই খাবার খায়। এদের প্রধান খাদ্য ঘাস লতা পাতা ও দানাদার খাদ্য। দুম্বা প্রতিপালন করে আমরা অনেক লাভবান হতে পারি। তাই আসুন আমরা ঘরে ঘরে দুম্বা পালন শুরু করে দিই।
লেখক এর মন্তব্য
সুপ্রিয় পাঠকগন আজকে এই আর্টিকেল থেকে জানতে পারবেন দুম্বার মাংসের উপকারিতা। বাংলাদেশের কোথায় কোথায় দুম্বা পাওয়া যায়। এছাড়াও দুম্বার সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য।
দুম্বার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জানতে আমাদের এই আর্টিকেল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে দুম্বার যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url