তালমাখনা কাতিলা গম খাওয়ার নিয়ম

সুপ্রিয় পাঠকগণ আজকের বিষয়  তালমাখনা কাতিলা গম খাওয়ার নিয়ম। এছাড়াও আরো থাকছে কাতিলা গামের উপকারিতা। তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা। এছাড়াও কাতিলা গাম ও তালমাখনা সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য।
কাতিলা গাম ও তালমাখনা উপকারী খাবার যা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। আবার একসঙ্গেও খাওয়া যায়। এগুলো সম্পর্কে জানতে আমাদের এই কনটেন্টটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন।

ভূমিকা

তালমাখনা উদ্ভিদের বীজ। এই উদ্ভিদ সাধারণত নিম্ন ভূমিতে হয়। তালমাখনা বিজে অ্যালকোয়েড, ফাইটোস্টেরল, স্টীগমাস্টেরল, লুপিয়ল, তেল ও এনজাইম বিদ্যমান। ইহা অনেক উপকারী বীজ। এই উদ্ভিদ সাধারণত ৫০ সেন্টিমিটার থেকে এক মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়। অগ্রহায়ণ থেকে পৌষ মাস ফুল ফল ও বীজ পাওয়া যায়।

আর ও পড়ুনঃ  শিমুলের মূল কাঁচা খেলে কি হয়

এছাড়া কাতিলা গাম একপ্রকার উদ্ভিদের শিকড় থেকে উৎপন্ন করা হয়। সাধারণত শিকড় সংগ্রহ করে শুকিয়ে কাতিলা গাম তৈরি করা হয়। যার নিজস্ব কোন স্বাদ ও গন্ধ নাই। আমাদের জন্য অনেক উপকারী। আজকের বিষয়  তালমাখনা কাতিলা গম খাওয়ার নিয়ম

তালমাখনা কাতিলা গম খাওয়ার নিয়ম

প্রিয় পাঠকগণ আপনাদের হয়তো কাতিলাগাম ও তালমাখনা খাওয়ার ব্যাপারে অনেক আগ্রহ আছে। আমরা আলোচনা করব  তালমাখনা কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়ম। এই ক্ষেত্রে আগে তালমাখানা ও কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়ম ভিন্ন ভিন্ন ভাবে জেনে নিই।

তালমাখনা খাওয়ার নিয়মঃ সন্ধ্যা রাতে এক গ্লাস পানিতে চার-পাঁচগ্রাম তালমাখনা বীজ অথবা গুড়া ভিজিয়ে রাখুন। সকালে খালি পেটে উক্ত ভেজানো তালমাখনা খেয়ে নিন। লক্ষ্য রাখতে হবে খাওয়ার ৩০ থেকে ৪০ মিনিট এর মধ্যে কিছু খাবেন না।

তবে পর্যাপ্ত পানি খাবেন। সম্ভব হলে সকালে ৩০ মিনিট হাটাহাটি করবেন। এছাড়াও এক গ্লাস গরম দুধে চার থেকে পাঁচগ্রাম তালমাখানা ভিজিয়ে রাখতে পারেন। সকালে মধু মিশ্রিত করে খেতে পারেন। খাওয়ার ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে কোন কিছু খাবেন না। তবে পর্যাপ্ত পানি খাবেন।

কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়মঃ কাতিলা গাম এক ধরনের গাছের শিকড় শুকিয়ে তৈরি করা হয়। যা অনেক আঠালো জেলির মত। সন্ধ্যা রাতে এক গ্লাস পানিতে ৪-৫ গ্রাম কাতিলা গাম ভিজিয়ে রাখুন।

সকালে দেখবেন সেগুলো জেলির মত হয়ে গেছে। সাথে লেবুর তালমিছরি মধু মিশিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। খাওয়ার পরে পর্যাপ্ত পানি খাবেন। খাওয়ার ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে কোন কিছু খাবেন না।

তালমাখনা কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়মঃ তালমাখনা কাতিলা গাম একসঙ্গে খাওয়ার নিয়ম হচ্ছে তালমাখনা ও কাতিলা গাম ভিন্ন ভিন্ন গ্লাসে ভিজিয়ে রাখবেন। কাতিলা গাম জেলির মত হয়ে যাবে আর তালমাখনা ফুলে উঠবে।

সকালে খালি পেটে তালমাখনা ও কাতিলা গাম মিশ্রণ করে খেয়ে নিবেন। খাওয়ার পরে প্রচুর পানি খাবেন। তবে খাওয়ার ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে কোন কিছু খাবেন না। পারলে হাটাহাটি করবেন।

তালমাখনা খাওয়ার অপকারিতা

সঠিক নিয়মে তালমাখনা খেলে অনেক উপকারিতা পাওয়া যায়। তারপরেও কিছু অপকারিতার দিক রয়েছে। যা আলোচনা করা হলো।

আর ও পড়ুনঃ  তেতুল খেলে কি বীর্য পাতলা হয়

*তালমাখনা হরমোন ও যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়। যার কারণে অতিরিক্ত খেলে উপকারের চাইতে ক্ষতি বেশি হয়।

*বেশি তালমাখনা খেলে হজম শক্তি কমে যায়। এছাড়া গ্যাস্ট্রিক হতে পারে। বদ হজমের মত সমস্যাও হতে পারে।

*তালমাখনা ভিজিয়ে রেখে খেতে হবে। না ভিজিয়ে খেলে পেটের সমস্যা হবে।

*অনেকে চিবিয়ে তালমাখনা খান। চিবিয়ে তালমাখনা খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যতা হতে পারে।

তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা

তালমাখনা আমাদের জন্য অনেক উপকারী। তালমাখনা খাওয়ার উপকারিতা গুলো আলোচনা করা হলো।

শারীরিক শক্তির উৎপাদনঃ নিয়মিত তালমাখনা খাওয়ায় শারীরিক দুর্বলতা দূরহয়। এক্ষেত্রে সন্ধ্যা রাতে তালমাখনা ভিজিয়ে রাখবেন সকালে খালি পেটে খেয়ে নিবেন।

কিডনি সমস্যাঃ নিয়মিত তালমাখনা খেলে কিডনির কার্যকারিতা বেড়ে যায়। বিভিন্ন  গবেষণাগারে দেখা গিয়েছে নিয়মিত তালমাখনা খাওয়ার ফলে কিডনির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কিডনির জটিলতা সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা দূর করে।

কোষ্ঠকাঠিন্যঃ যাদের দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যতায় ভুগছেন। এমনকি জটিল আকার ধারণ করেছে। বহু চিকিৎসা করেও ভালো ফল পাচ্ছেন না। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকাল বিকাল তালমাখনা খেতে পারেন। আপনার কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়ে যাবে। এভাবে পাঁচ থেকে ছয় দিন খেলেই ফলাফল পেয়ে যাবেন

বদহজম সমস্যাঃ নিয়মিত তালমাখনা খেলে পাকস্থলী পরিষ্কার করে। ক্ষুদ্রান্ত গুলো শক্তিশালী করে। যার কারণে গ্যাস্ট্রিক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এছাড়াও কোন কিছু খাওয়ার ফলে বদহজম তৈরি হয় না।

হরমোন সমস্যাঃ নিয়মিত তালমাখানা খেলে শরীরের হরমোনের ভারসাম্যতা থাকে।

ওজন কমায়ঃ নিয়মিত তালমাখনা কেলে শরীরের ওজন কমে। তালমাখনায় প্রচুর পরিমাণ ফাইট্রোস্টেরল আছে। যা শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল অপসারণ করে ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে। যার কারনে শরীরের ওজন কমে।

প্রসাবের জ্বালা যন্ত্রণাঃ নিয়মিত তালমাখনা ও আখের রস একসঙ্গে খেলে পেশাবের জ্বালা যন্ত্রণা থাকে না। ৫ থেকে ৬ দিন এভাবে খেলেই ফলাফল পাওয়া যায়।

ক্যান্সারের ঝুকি কমায়ঃ তালমাখনায় স্টিগমাস্টেরল উপাদান রয়েছে যা শরীর থেকে ক্যান্সারের জীবাণু ধ্বংস করে। এছাড়াও ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারও দূর করে।

হৃদরোগের ঝুকি কমায়ঃ তালমাখনায় ফাইটোস্টেরল উপাদান আছে যা রক্তের শর্করা পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ রাখে। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। যার কারণে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে।

যৌন শক্তি বৃদ্ধিঃ সাধারণত বেশিরভাগই যৌন শক্তি বৃদ্ধির জন্য এ বিজ ব্যবহার হয়। নিয়মিত তালমাখনা খেলে শরীরের দুর্বলতা কেটে যায়। পুরুষের টেস্টোস্টেরল হরমোন বৃদ্ধি করে। যার কারনে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের যৌনশক্তি বৃদ্ধি হয়।

আজকের বিষয় তালমাখনা কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়ম। আমরা নিয়মিত তালমাখনা খেয়ে ভেষজ উপকারিতা গ্রহণ করব।

কাতিলা গাম খাওয়ার উপকারিতা

কাতিলা গাম আমাদের জন্য অনেক উপকারী। কাতিলা গাম খাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে যেগুলো সমস্যা দূর হয় তা নিম্নরুপ।

শরীর ও পেট ঠান্ডা রাখেঃ বর্তমান দেশে অনেক তাপমাত্রা বিদ্যমান। এই তাপমাত্রায় নিয়মিত সকাল বিকাল কাতিলা গাম খেলে পেট ও শরীর ঠান্ডা থাকে। গরমের ক্লান্তি দূর করে। হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এই ক্ষেত্রে সন্ধ্যায় তিন থেকে চার গ্রাম কাতিলা গাম ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।

আর ও পড়ুনঃ  ফুসফুসে পানি জমার ঘরোয়া চিকিৎসা

পুনরায় সকালে তিন থেকে চার গ্রাম কাতিলা গাম ভিজিয়ে রাখতে হবে। রাতে সেটা খেতে হবে। এভাবে খেলে শরীর ও পেট ঠান্ডা থাকবে। কোন কাজ করতে গেলে ক্লান্তি হবে না।

কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূরঃ নিয়মিত কাতিলা গাম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়। কাতিলা গাম পর্যাপ্ত ফাইবার সম্বলিত খাবার। যার কারণে কাতিলা গাম খেলে পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়। গ্যাস্ট্রিকের মতো সমস্যা থাকে না। কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়। এক্ষেত্রে তিন থেকে চার দিন খেলেই ফলাফল বোঝা যাবে।

ত্বক ও চুলের যত্নেঃ কাতিলা গামে এন্টি এজিং ও আন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান আছে। যা তকের গভীরে পৌছে মৃত কোষ অপসারণ করে নতুন কোষ তৈরি করে। যার কারণে ত্বক মোলায়েম ও উজ্জ্বল হয়। এছাড়াও চুলে ব্যবহারের ফলে চুলে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম পাই এবং চুল পড়া কমায়।

যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতেঃ নিয়মিত কাতিলা গাম খাওয়ার ফলে পুরুষ ও মহিলা উভয়ের যৌনশক্তি বৃদ্ধি হয়। পুরুষের বীর্য পাতলা হলে তা ঘন হয়। বীর্যে শুক্রানু পরিমাণ বৃদ্ধি হয় এবং উর্বর হয়। এছাড়াও পুরুষ ও মহিলাদের যৌন কামনা বৃদ্ধি হয়।

কাতিলা গাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যৌন চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।কাতিলা গাম যৌন রোগের জন্য ম্যাজিক এর মত কাজ করে। এক্ষেত্রে ১৫ দিন খেলেই ফলাফল বোঝা যাবে।

টক্সিন দূর করেঃ শরীরে বিভিন্ন বিষাক্ত পদার্থ জমা হয়ে বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে। নিয়মিত কাতিলা গাম খেলে শরীরের মেটাবলিজম শক্তি বেড়ে যায়। যার কারণে শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ও টক্সিন বাহির হয়ে যায়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়।

হাত-পায়ের জ্বালা দূর করেঃ সাধারণত ক্যালসিয়ামের অভাবে হাত পা জ্বালা যন্ত্রণা করে। কাতিলা গামে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম আছে। যার কারনে নিয়মিত কাতিলা গাম খেলে হাত পায়ের জ্বালা দূর হয়।

জয়েন্টের ব্যথা কমেঃ কাতিলা গামে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম আছে। যার কারণে হাড় ও পেশির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। জয়েন্টে ব্যথা হয় না। এছাড়াও পেশি ও হাড়ের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। িআজকের বিষয়  তালমাখনা কাতিলা গম খাওয়ার নিয়ম।

লেখক এর মন্তব্য

সুপ্রিয় পাঠকগন তালমাখনা কাতিলা গাম খাওয়ার নিয়মসম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়া তালমাখনার উপকারিতা ও কাতিলা গমের উপকারিতা আলোচনা করা হয়েছে।

বিশেষ করে তালমাখনা ও কাতিলা গাম খাওয়ার ফলে শরীরের দুর্বলতা কেটে যায়। যৌন শক্তিসহ শরীরের যাবতীয় শক্তি বৃদ্ধি হয়। তাই আসুন আমরা নিয়মিত প্রয়োজন অনুসারে এগুলো ওষুধি খাবার খাই।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url