সুষম খাদ্য কাকে বলে ও কত প্রকার
প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় সুষম খাদ্য কাকে বলে ও কত প্রকার। শরীরের জীবনি শক্তি পরিচালিত করার জন্য সুষম খাদ্য আবশ্যক। সুসম খাদ্য গ্রহন না করলে শরীর পুষ্টি হিনতায় ভোগে। তাই শরীরের জীবনি শক্তি বৃদ্ধির জন্য সুষম খাবার খাওয়া দরকার।
আজকের পোষ্টে আরো আলোচনা করা হবে তিন বেলার খাবারের তালিকা, সুসাস্থের জন্য খাবার ও বয়স অনুযায়ী খাবারের তালিকা। আসুন এই বিষয় বিস্তারিত জানি।
ভুমিকা
শরীরের বৃদ্ধি ও বিকাসের জন্য খাবার খাওয়া আবশ্যক। আজকে আমাদের বিষয় সুষম খাদ্য কাকে বলে ও কত প্রকার। আমাদের তিনবার খাবার খাওয়ার পরেও ফল,বাদাম সহ সহায়ক খাবার খাওয়া দরকার। সহায়ক খাবারের মাধ্যমে অতিরিক্ত কিছু পুষ্টি উপাদান পেয়ে থাকি। এর সঙ্গে বাজারের ভাজা পোড়া খাবার হতে বিরত থাকি।
আরও পড়ুনঃ ননীবিহীন দুধ খাওয়ার উপকারিতার বিবরন
আমাদের তিন বেলা খাবারের সঙ্গে সুষম খাবারের সব উপাদান থাকা প্রয়োজন। শরীরের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন অত্যাধিক। এই জন্য নিয়মিত প্রতিবারেই সুষম খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন।
সুষম খাদ্য কাকে বলে ও কত প্রকার
আমাদের জীবনী শক্তি বৃদ্ধি ও শরীর কর্মক্ষম রাখার জন্য যাহা গ্রহণ করি তাহাকে খাদ্য বলে। খাদ্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের জীবন সচল হয়। আজকে আমরা জানবো আমাদের দেহের প্রয়োজনে সুষম খাদ্য কাকে বলে ও কত প্রকার। সুসম খাদ্য ৬প্রকার যথাক্রমেঃ
*প্রোটিন জাতীয় খাদ্য।
*শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট খাদ্য।
*স্নেহ বা ফ্যাট জাতীয় খাদ্য।
*ভিটামিন জাতীয় খাদ্য।
*খনিজ লবন জাতীয় খাদ্য।
*পানি।
প্রোটিন জাতীয় খাদ্যঃ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য আবার দুই প্রকার একটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিন অন্যটি প্রাণীজ প্রোটিন। উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের চাইতে প্রাণীজ প্রোটিনে অ্যামাইনো এসিড গুলো বেশি থাকে। আমিষ জাতীয় খাবারের মধ্যে মাছ মাংস ডিম ও বিভিন্ন প্রকার ডাউল।
শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট খাবারঃমানুষের জন্য শর্করা জাতীয় খাবার অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত অক্সিজেন কার্বন ও হাইড্রোজেন মিলে শর্করা জাতীয় খাদ্য হয়। শর্করা জাতীয় খাদ্য আমাদের দেহে প্রচুর ক্যালরির চাহিদা পূরণ করে। জীবনী শক্তি অত্যাধিক বৃদ্ধি করে। শর্করা জাতীয় খাবার হল ভাত রুটি আলু মিষ্টি আলু পাউরুটি কেক সহ বিভিন্ন প্রকার মিষ্টি।
স্নেহ বা ফ্যাট জাতীয় খাদ্যঃসাধারণত আমাদের শরীর সচল করার জন্য ফ্যাট জাতীয় খাবার দরকার হয়। ফ্যাট জাতীয় খাবার বলতে যেগুলো কঠিন অবস্থা থাকে তাকে বলা হয় চর্বি আর তরল অবস্থায় থাকে তখন তাকে বলা হয় তেল।
এটাও দুই প্রকার প্রাণিজ স্নেহ এবং উদ্ভিদ স্নেহ। প্রাণীর স্নেহ গুলো হল চর্বিযুক্ত মাংস ঘি মাখন ডিমের কুসুম পনির। উদ্ভিদ স্নেহ সয়াবিন তেল সরিষার তেল পাম তেল নারিকেল ও সূর্যমুখী তেল ইত্যাদি।
ভিটামিন জাতীয় খাবারঃ আমরা জানি ভিটামিন ও ছয় প্রকার ভিটামিন এ ভিটামিন বি ভিটামিন সি ভিটামিন ডি ভিটামিন এ ও ভিটামিন কে।ভিটামিন এ জাতীয় খাবার কলিজা মাসের তেল দুধ ডিম দই ঘি সবু শাকসবজি মিষ্টি কুমড়া গাজর ইত্যাদিতে প্রচুর ভিটামিন এ রয়েছে।
ভিটামিন বি জাতীয় খাদ্য চাল আটা শাক সবজি ডাল চকলেট ছোলা মাশরুম পাকা পিপে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমন পেয়ারা আপেল আমলকি লেবু কমলালেবু আনারস জলপাই ও মিষ্টি আমরা। ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার ডিমের কুসুম মাছের তেল মাখন বাঁধাকপি এবং সূর্যের আলো থেকে আমরা পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাই।
ভিটামিন এ জাতীয় খাবার কলিজা তেল চর্বি ঘি তিলের তেল ইত্যাদি থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ পাই।ভিটামিন কে জাতীয় খাবার। সাধারণত মাছের তেল থেকে আমরা পর্যাপ্ত ভিটামিন কে পেয়ে থাকি তাছাড়া চর্বি মাখন থেকে ভিটামিন কে পাওয়া যায়।
খনিজ লবন জাতীয় খাদ্যঃ সাধারণত বিভিন্ন রকম খনিজ জাতীয় খাদ্য হয়। যেমন লৌহ পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম ফসফরাস সোডিয়াম ইত্যাদি। সর্বশেষ খাবার হল
পানিঃ বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। আমাদের দেহের কোষের প্রোটোপ্লাজম জীবিত রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পানি।
সুস্বাস্থ্যের জন্য সুষম খাদ্য তালিকা
আজকে আমাদের বিষয় সুষম খাদ্য কাকে বলে ও কত প্রকার। সুস্থ থাকা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে অনেক বড় নেয়ামত। সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। প্রতিবার খাবারের সঙ্গে শর্করা, আমিষ, চর্বি, ভিটামিন ও খনিজ লবণ পরিমাণমতো থাকা প্রয়োজন। শুধু সুষম খাবারে উপাদান থাকলে হবে না বরং সারাদিন নিয়ম মত তিনবার খেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি জানুন
ভিটামিন যুক্ত সুষম খাবারঃ সাধারণত আমাদের কিছু খাবার রয়েছে সেগুলো ভিটামিন যুক্ত সুষম খাবার। এগুলো খাবার খেলে সব রকম ভিটামিন পাওয়া যায়।
*পালং শাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে রয়েছে যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
*কমলা লেবুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে যা ত্বক গঠনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
*গাজরে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন কে রয়েছে। গাজর খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরের নার্ভাস সিস্টেম শক্তিশালী করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা রোধ করে।
*মিষ্টি আলুতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন ই রয়েছে। ভিটামিন ই দেহ ও ফুসফুসের টিস্যু গঠনের সাহায্য করে। এছাড়াও সবজি মাছ দুধ লেবু আপেল ডিম টমেটো ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন রয়েছে।
সকালের সুষম খাবারঃ সকালের খাবার পুষ্টি সম্পূর্ণ হওয়া প্রয়োজন। সারারাত ঘুমানোর পরে সকালে পাকস্থলী খালি থাকে। সকালে ভাত খেলে শর্করার চাহিদা পূরণ হয়। ছাড়াও সকালে আরো খাওয়া যেতে পারে রুটি পরোটা খিচুড়ি পাউরুটি ও মুড়ি।
এছাড়াও আমিষ ভিটামিন ও খনিজ লবণের জন্য ডিম ডাল মাছ অথবা মাংস এবং পর্যাপ্ত সবজি খেতে হবে। সকালের খাবার সকাল আটটার মধ্যে খেয়ে নেওয়া ভালো।
দুপুরের সুষম খাবারঃ দুপুরের খাবার দুপুর দুইটার মধ্যে খেয়ে নেওয়া ভালো। দুপুরের খাবারে ভাত অথবা রুটি সঙ্গে ডাল, ডিম, মাছ, অথবা মাংস এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ সবজি খেতে হবে। এগুলো খাবারের মাধ্যমে সুষম খাবারের সব উপাদান পাওয়া যাবে।
রাতের সুষম খাবারঃ রাতের খাবার রাত ৮ টার মধ্যেই খেয়ে নিতে হবে। রাতের খাবারের এক কাপ ভাত অথবা রুটি, ডাল, ডিম, ১টুকরো মাছ অথবা মাংস সঙ্গে পর্যাপ্ত সবজি খেতে পারেন। এগুলো খাবারের মধ্যে সুষম খাবারের সব উপাদান পাওয়া যাবে।
সুষম খাদ্য খেলে কি হয়
আজকের বিষয় আজকে আমাদের বিষয় সুষম খাদ্য কাকে বলে ও কত প্রকার। শরীরের পুষ্টি গ্রহণ ও শরীর কর্মক্ষম রাখার জন্য খাদ্যের সব গুলি উপাদান যে খাদ্যের মধ্যে উপস্থিত সেই খাদ্যকে সুষম খাদ্য বলা হয়। সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীরের পুষ্টি উপাদান এর কোন ঘাটতি হয় না। এই জন্য আমাদেরকে সবসময় সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম
সুষম খাদ্য এর মধ্যে শর্করা জাতীয় খাদ্য খেলে শরীরের বিপাক ক্রিয়া ভালো হয়। রক্তের উপাদান গুলো ঠিক থাকে। দ্বিতীয় সুষম খাদ্য হলো আমিষ জাতীয় খাদ্য। আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহণে শরীরের ক্ষতিকর জীবাণু প্রতিরোধ করে। এন্টি বডি তৈরি করে। সুষম খাদ্যের মধ্যে তৃতীয় নম্বর হলো ফ্যাট বা চর্বি।
চর্বি জাতীয় খাবার খাওয়ার ফলে দেহের তাপমাত্রা ঠিক থাকে। সুষম খাদ্যের চতুর্থ নম্বর হল ভিটামিন জাতীয় খাবার। ভিটামিন জাতীয় খাবারের মাধ্যমে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। হজমে সহায়তা করে। সুষম খাদ্যের পঞ্চম ধাপটি হল খনিজ লবণ। খনিজ লবণ খাওয়ার মাধ্যমে স্নায়ু উদ্দীপনা ও পেশি সংকোচন ও প্রসারণ করে।
এ জাতীয় খাবার খেলে হাড় ও পেশি মজবুত হয়। এছাড়া দাঁত ও হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো হয়। সুষম খাদ্যের ষষ্ঠ ধাপ হল পানি। বলা হয় পানির অপর নাম জীবন। তাই প্রতিদিন আমাদেরকে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। পানি পানের মধ্য দিয়ে শরীরের প্রোটোপ্লাজম গুলো জীবনী শক্তি ফিরে পায়।
বয়স অনুযায়ী সুষম খাদ্য তালিকা
৫মাস বয়সের শিশুর প্রতি বেলার সুষম খাদ্য তালিকাঃ
প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষদের দৈনিক সুষম খাদ্যের তালিকাঃ
প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের দৈনিক সুষম খাদ্যের তালিকাঃ
লেখকের মন্তব্য
আজকে আজকে আমাদের বিষয় সুষম খাদ্য কাকে বলে ও কত প্রকার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের খাদ্য খাওয়ার সময় খাদ্যের উপাদান সম্পর্কে ধারনা রাখতে হবে। খাবারের মধ্যে কোন উপাদান কম থাকলে সেটা পুরন করতে হবে। আসুন খাবারের উপাদান গুলি জেনে সে অনুযায়ী খাবার খাই। আশাকরি আজকের পোষ্ট ভাল লাগবে।ভাল লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url