পা ফুলে গেলে কোন ডাক্তার দেখাবো

প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় পা ফুলে গেলে কোন ডাক্তার দেখাবো। পা ফুলা আমাদের কমন সমস্যা। দূরের কোথাও ভ্রমণের জন্য গেলে বাস অথবা ট্রেনে বসে থাকার কারণেও পা ফুলে যায়। অনেক সময় বেশিক্ষণ ধরে অফিস আদালতে কাজ করতে হয়। অফিস আদালতে কাজ করার সময় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার জন্য পা ফুলে যায়।
বিশেষ করে যেগুলো লোকজন একটু স্থুলো যাদের পা ফুলা কমন সমস্যা। পা ফুলার সমস্যা হলে খুব তাড়াতাড়ি চিকিৎসা করার দরকার।

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক সাধারণত পা ফোলা সমস্যাকে বলা হয় ইডিমা। ইডিমা হওয়া বিভিন্ন আত্মঘাতী রোগের পূর্ব লক্ষণ। সাধারণত হার্ট অকার্যকর হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ পা ফুলে যাওয়া। কিডনি অকার্যকর হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ পা ফুলে  যাওয়া। লিভার অকার্যকর হওয়ার কারণে পা ফুলতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির অভাবের কারনে পা ফুলতে পারে।
এগুলো কারণে পা ফুললে সাধারণত শ্বাসকষ্ট, মুখ ফুলা, পেট ফোলা, জন্ডিস ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পেতে পারে। এছাড়া স্থুলো মানুষের ক্ষেত্রে এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে থাকলে পা ফুলে যায়। পা ফোলা দূর করার জন্য কিছু ব্যায়ামসহ ঘরোয়া কিছু পদ্ধতি পালন করা প্রয়োজন। আজকের বিষয় পা ফুলে গেলে কোন ডাক্তার দেখাবো।

পায়ের গিরা ফুলে যাওয়ার কারণ

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস একটি বাত রোগ যা পায়ের গিরা ফোলা ও ব্যথা সৃষ্টি করে। এই রোগ সচরাচর ২৫ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে হয়। এ রোগ হওয়ার কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে জন্মগতভাবে অনেকের এই রোগ হয়। সঠিক চিকিৎসা না করলে এই রোগটা বেড়ে যায়। এছাড়া শরীরের নিজস্ব প্রতিরোধ ক্ষমতা না থাকলে অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত কাজ করলে এ রোগের সূত্রপাত হয়।

শরীরের এমিউন সিস্টেম দুর্বল হলে যেখানে সমস্যা হয় তার আশেপাশের কোষকে নতুন করে আক্রান্ত করে। যার কারণে জয়েন্টের পাতলা আবরণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রবাহের কারণে জয়েন্ট এর অতিরিক্ত রস নিঃসরণ করার ফলে জয়েন্ট ফুলে যায়। বিনা চিকিৎসায় এভাবে থাকলে পায়ের গিরা বিকলাঙ্গ হয়ে যেতে পারে।

পা ফুলে গেলে কোন ডাক্তার দেখাবো

সাধারণত বিভিন্ন কারণে পা ফুলে যায়। পা ফুলার কারণ অনুযায়ী ডাক্তারকে দেখাতে হবে। পা ফুলার সঙ্গে হার্টের অকার্যতা কিডনির অকার্যতা লিভারের অকার্যতা ও থাইরয়েড হরমোনের অভাব অথবা পুষ্টির অভাবে পা ফুলে যেতে পারে। এছাড়া পা ফুলার সঙ্গে যেগুলো লক্ষণ যেমন শ্বাসকষ্ট মুখফুলা পেট ফুলা জন্ডিস প্রস্রাব কম হওয়া।

অথবা প্রস্রাব না হওয়া গলার স্বরের পরিবর্তন এগুলোর মধ্যে কোন লক্ষণ আছে সেটা দেখার বিষয়। সাধারণত ট্রেন বাসে অথবা বাসায় বসে থাকার জন্য বেশি পা ঝুলিয়ে রাখলে লোকটি যদি স্থূল হয় তাহলে পা ফুলে যেতে পারে। অন্যদিকে পা ফুলার সঙ্গে হার্টের অকার্যকারিতার লক্ষণ পাওয়া যায় তাহলে হৃদ রোগ বিশেষজ্ঞ গন কে দেখাতে হবে।

হাত পা ফুলে যাওয়ার সঙ্গে কিডনি রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে ইউরোলজি ও কিডনি বিশেষজ্ঞগণদেরকে দেখাতে হবে। এছাড়া পা ফুলার সঙ্গে লিভারের অকার্যকারিতার লক্ষণ পাওয়া গেলে গ্যাস্ট্রোলজি বিশেষজ্ঞগণকে দেখাতে হবে।

আর এগুলো কোন লক্ষণ পাওয়া না গেলে প্রাকৃতিকভাবে পা ফোলা দূর করার নিয়ম পালন করলেই পা ফুলা ভাল হয়ে যাবে। পা ফুলা দূর করার জন্য ব্যায়াম করা যেতে পারে। প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় পা ফুলে গেলে কোন ডাক্তার দেখাবো।

পা ফোলা কমানোর ঘরোয়া উপায়

প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় পা ফুলে গেলে কোন ডাক্তার দেখাবো। হার্ট কিডনি লিভার ইত্যাদির সমস্যার কারণে পা ফুলে যেতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির অভাবে পা ফুলে যেতে পারে। পুষ্টিহীনতার কারণেও পা ফুলে যেতে পারে। যেভাবেই পা ফুলে যাক খুব তাড়াতাড়ি তার চিকিৎসা করা দরকার। ঘরোয়া কিছু চিকিৎসার মাধ্যমে পা ফুলা রোগ দমন করা যায়।

তেল রসুনের মাধ্যমেঃ একটি পাত্রে চার চামচ অলিভ অয়েল তেল ও ৪ কোয়া রসুন গরম করে নিন। রসুন সহ অলিভ অয়েল তেল পায়ের ফোলা জায়গায় ভালো করে মেসেজ করুন। কয়েকদিন এভাবে করলেই পা ফোলা ভালো হয়ে যাবে।

আলু মিশ্রিত পানিতে পা রাখুনঃ একটি পাত্রে গরম পানি নিতে হবে। উক্ত পানি ভালো করে ফুটাতে হবে। ফুটানো পানিতে কয়েক টুকরো আলু দিয়ে রেখে দিন। পানির তাপমাত্রা কমে কুসুম কুসুম গরম হলে ফোলা পা উক্ত পানিতে ডুবিয়ে রাখুন। ১৫ থেকে ২০ মিনিট পরে পা তুলে নিবেন। পায়ের ব্যথা কমে যাবে ও পোলাও কমে যাবে।

আদা তেল মেসেজের মাধ্যমেঃ একটি আদার কিছু অংশ পেস্ট করুন। অতঃপর সরিষার তেল আদা পেস্ট দিয়ে ফুটিয়ে গরম করুন। কিছুক্ষণ রেখে দেওয়ার পরে কুসুম কুসুম গরম হলে ব্যথা ও ফোলার জায়গায় ভালো করে মেসেজ করুন। ভালো করে মেসেজ করলে ফোলা ও ব্যথা কমে যাবে।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগারের মাধ্যমেঃ একটি বালতিতে গরম পানি নিন বালতির পানিতে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে নিন। অ্যাপেল সিটার ভিনেগার মিশ্রিত পানিতে একটি তোয়ালে ভিজিয়ে ব্যথাও ফুলা জায়গায় লাগিয়ে রাখুন। এভাবে কয়েকদিন করলে ব্যথা ও পা ফোলা ভালো হয়ে যাবে।

ধনেপাতা ব্যবহারঃ একটি পাত্রে সামান্য ধনেপাতার পেস্ট নিন। তার সঙ্গে এক কাপ পানি নিয়ে পেস্ট মেখে ফেলুন। এই পেস্ট ব্যথা ও ফুলা জায়গায় মেসেজ করুন। কয়েকদিন করলেই ফোলা ও ব্যথা কমে যাবে।

বেকিং পাউডারের মাধ্যমেঃ কিছু পরিমাণ আদা ও বেকিং সোডা মিশ্রিত করে পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট ফুলা ও ব্যথার জাগাই মালিশ করুন। ১০থেকে ১৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। ব্যথা ও ফোলা উপশম হবে।

বরফ ব্যবহারঃ খোলা জায়গায় যদি যন্ত্রণা হয় তাহলে কয়েক টুকরা বরফ একটা কাপড়ে বেঁধে নিন। কাপড়ে বাঁধা বড় টুকরো গুলো ফুলা ও ব্যথার জায়গায় আস্তে আস্তে লাগান। ব্যথা ও ফুলা নিরাময় হবে।

নারিকেল তেলের মাধ্যমেঃ দুই চামচ নারকেল তেল ও চার চামচ হলুদের গুঁড়া একসঙ্গে মিশ্রিত করে পেস্ট করুন। ফুলা ও ব্যথার জায়গায় আস্তে আস্তে লাগান। কয়েকদিনে পেস্ট ব্যবহার করলে ব্যথা ও  ‍ফুলা কমে যাবে।

বাইরের খাবার এড়িয়ে যাওয়াঃ বাইরের বিভিন্ন রকম ভাজাপোড়া অথবা জাঙ্ক ফুড খাবেন না। এছাড়া ফ্রিজে খাবার খুব বেশি খাবেন না।

খাবার তালিকায় রাখুনঃ সাধারণত ফাইবার জাতীয় খাবার খাবার তালিকায় রাখুন। যেমন আপেল, নাশপাতি, কলা, গাজর, বিট, ব্রকলি, মুগ ডাল, মটর ডাল, ছোলা, বার্লি, চিয়া বীজ ইত্যাদি খান।

চিনি নুন বাদ দিনঃ আপনি যদি নিয়মিত বিট খান তাহলে আপনার শরীর ফুলবে না এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ থাকবে। কোথাও বেশিক্ষণ পা ঝুলিয়ে রাখবেন না। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি খাবেন। অতিরিক্ত চিনি ও লবণ এড়িয়ে চলবেন। এছাড়াও নিয়মিত ব্যায়াম করবেন।

ব্যায়ামের নিয়ম হলো একটি ওয়ালের কাছে পা জাগিয়ে দিন। মেঝেতে শুয়ে পড়ুন। বডির সঙ্গে পা সমান্তরাল হিসেবে থাকবে। এভাবে ১ মিনিট করে ব্যায়াম করবেন। একসঙ্গে এভাবে পাঁচবার ব্যায়াম করবেন। ব্যায়ামের ফলে পায়ের রক্ত গুলো শিরার মাধ্যমে হৃদপিন্ডের প্রবেশ করবে। যার কারণে পা ফুলা ভালো হয়ে যাবে।

পা ফুলে যাওয়ার কারণ

প্রিয় পাঠক আপনারা হাঁটতে যেয়ে দেখছেন জুতায় পা ঢুকছেনা। আপনার পা ফুলে গেছে। সাধারণত পা ফুলে যাওয়ার বিষয়টা দেখতে হবে এক পা ফুলে গেছে না দুই পা ফুলে গেছে। যদি দুই পা ফুলে যায় তাহলে হয়তো বিভিন্ন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ অ্যামলোডিপাইন,অ্যাসপিরিন,আইবুপ্রফেন ইত্যাদি ওষুধ খাওয়ার জন্য।
অন্তঃসত্ত্বা নারীদের শেষ তিন মাসে ইডিমা বা পা ফোলা খুব স্বাভাবিক বিষয়। যদি পায়ের শিরায় একমুখী ভাল্ব দুর্বল হয়ে যায় অথবা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাহলে রক্ত জমে পায়ের শিরা গুলি ফোলা ভাব তৈরি করে। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে অথবা স্থূল মানুষের এই সমস্যা বেশি হয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইডিমা বা পা ফোলা রোগ বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।

যেমন হার্ট অকার্যকর, কিডনি অকার্যকর, লিভার অকার্যকর থাইরয়েড হরমোনের অভাব, অপুষ্টি ইত্যাদি সমস্যার কারণে পা ফুলতে পারে। এগুলো রোগের সমস্যা হলে নতুন কিছু লক্ষণ প্রকাশ পাবে। যেমন শ্বাসকষ্ট, মুখ ফুলা, পেট ফুলা, জন্ডিস, প্রস্রাব কম হওয়া, প্রস্রাব না হওয়া, গলার স্বরের পরিবর্তন, ইত্যাদির লক্ষণ প্রকাশ পাবে।

দীর্ঘক্ষন ধরে উড়োজাহাজে বসা, ট্রেন বা বাসে লম্বা ভ্রমণ, কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকার জন্য পা ফুলে। যেভাবেই পা ফুলে যায় না কেন খুব তাড়াতাড়ি তার চিকিৎসা করা দরকার। প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় পা ফুলে গেলে কোন ডাক্তার দেখাবো।

পা ফোলা কমানোর ব্যায়াম

সাধারণত কাজের জন্য অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। অথবা ব্যবসা-বাণিজ্য অথবা কম্পিউটার ব্যবহারের কারণে পা ঝুলিয়ে রেখে বসতে হয়। ঝুলিয়ে রেখে বসার কারণে পা ফুলে যায়। পা ফুলে যাওয়া খুব খারাপ লক্ষণ। কিছু ব্যায়ামের মাধ্যমে পা ভালো করা যায়। প্রথমে দেয়ালের দিকে পা করে সোজা হয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ুন। পা ধীরে ধীরে দেয়ালের ওপর তুলুন। 
পা দুটি দেয়ালের উপর এমন ভাবে রাখবেন যে আপনার পা দুটি দেওয়ালের বিপরীতে সমান্তরাল ভাবে থাকে। কোমর থাকবে মেজে ও দেওয়ালের সংযোগস্থলে। এ অবস্থায় এক মিনিট থাকুন। পরে বিশ্রাম নিন। এভাবে পাঁচ বার করুন। এই ব্যায়ামটি করলে সাধারণত পা থেকে মাথা পর্যন্ত রক্ত সঞ্চালন হবে।

এই ব্যায়াম করার ফলে অনেকের পায়ের রক্ত জমাট বাঁধে সেটাও দূর হয়ে যাবে। অতিরিক্ত চাপ কিছুটা কমে। নিয়মিত এই ব্যায়াম করতে পারলে বসে থাকলে যে হাত-পা ফুলে যায় সেটা দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও একনাগার বেশিক্ষণ বসে না থেকে মাঝে মাঝে হাঁটাহাঁটি করা ভালো।

লেখকের মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় পা ফুলে গেলে কোন ডাক্তার দেখাবো। পা ফুলার কারন গুলো কি। পা ফুলে গেলে কিভাবে ঘরোয়া পদ্ধতিতে নিরাময় করা যাবে। পায়ের গোড়ালি কেন ফুলে। এগুলো বিষয় অনেক স্পর্শকাতর। এজন্য পা ফোলার যাবতীয় তথ্য আমাদের সবার জানা দরকার।

পা ফুলার যাবতীয় তথ্য জানার জন্য আমাদের এই কন্টেন্ট শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়বেন। আশা করা যায় এই কনটেন্ট এর মাধ্যমে আপনারা উপকার লাভ করবেন। আপনাদের উপকার হলে নিজেকে সার্থক মনে করব। গুলো ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url