জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়

প্রিয় পাঠক জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয় এই ট্রপিকের উপর আলোচনা করা হবে। আরো আলোচনা করা হবে জাফরানের উপকারিতা। গর্ভবতী নারীদের জাফরান ব্যবহার করলে কি উপকারিতা বা অপকারিতা আছে সে ব্যাপারেও আলোচনা করা হবে। জাফরান হল অনেক মূল্যবান ও রাজকীয় মসলা।
জাফরান রং হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া কবিরাজি বিভিন্ন কাজে জাফরানের ব্যবহার রয়েছে। আসুন জাফরান ব্যবহার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাদি এই কনটেন্ট থেকে জেনে নিই।

ভূমিকা

জাফরান অতি মূল্যবান মসলা ও খাদ্য। সাধারণত জাফরান ফুলের গর্ভমন্ড যাবতীয় কাজে ব্যবহার করা হয়। জাফরানের উৎপত্তি ইরান। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য এশিয়া ও আফ্রিকা অঞ্চলে জাফরান চাষ হয়। ভারত বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে এখনো জাফরান চাষ করা সম্ভব হয়নি। জাফরান মূল্যবান মসলা হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এছাড়া জাফরান দ্বারা তৈরি তেল চুল ও ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য জাফরান জাদুকরি উপকারী ভূমিকা পালন করে। জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়। এ বিষয়ে যাবতীয় আলোচনা করা হবে। জাফরান সম্পর্কে জানতে আমাদের এই কনটেন্ট টি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ভালো করে পড়বেন।

জাফরান এর উপকারিতা

জাফরান অতি পরিচিত মূল্যবান মসলা। আয়ুর্বেদি চিকিৎসা সহ অন্যান্য চিকিৎসায় জাফরানের অত্যাধিক ব্যবহার রয়েছে। জাফরানের ভিটামিন মিনারেলস সহ প্রায় ১২০টি পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। জাফরানের উপকারিতা দিকগুলো বর্ণনা করা হলো।

স্বাস্থ্য উন্নত করেঃ প্রিয় পাঠক আপনি যদি রোগা হন নিয়মিত জাফরান খান। নিয়মিত জাফরান খাওয়ার কারণে সব সময় লেগে থাকা রোগ দূর হয়ে যায়। শরীরের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান শরীরের বিভিন্ন সমস্যা দূর করে এবং শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে।

মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখেঃ জাফরানের বিভিন্ন রকম হরমোন রয়েছে যাহা শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে। জাফরানে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো করে ও প্রখর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।

অবসাদ দূর করেঃ অবসাদ দূর করার জন্য আমরা বিভিন্ন টোটকা ব্যবহার করি। এক্ষেত্রে আপনি নিয়মিত জাফরান যদি খান মস্তিষ্কের নিউরন সচল হবে। যার কারণে অবসাদ দূর হবে এবং দুশ্চিন্তা থাকবে না।
রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করেঃ কোন সমস্যা ছাড়াই রক্তচলাচল সম্পূর্ণ করে। সেই জন্য উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। জাফরানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম থাকে যা শরীরের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি করে।

রক্তস্বল্পতা নিরাময়ঃ জাফরান মসলাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রন আছে। যার কারণে জাফরান খেলে শরীরের আয়রনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এজন্য শরীরের রক্তস্বল্পতা দূর হয়।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করেঃ নিয়মিত জাফরান খেলে শরীরে থাকা ক্যান্সারের কোষ গুলো ধ্বংস করে। পোস্টেড ও কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধে জাফরানের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।

নিদ্রাহীনতা দূর করেঃ জাফরানে পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। যা শরীরের মেলেনিন হরমোন বৃদ্ধি করে। যার কারণে ভালো ঘুম হয়।

হার্ট সুস্থ রাখেঃ জাফরান শরীরের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ রাখে। জাফরানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম থাকায় রক্তনালিকাগুলো প্রশস্ত করে। যার কারণে রক্তচাপ কমে। রক্ত চলাচল করার জন্য হৃদপিণ্ড সুস্থ থাকে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ থাকেঃ নিয়মিত জাফরান খেলে রক্তের ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি পায় ও খারাপ কোলেস্টেরল ধ্বংস হয়। যার দ্বারা শরীর সুস্থ থাকে।

শ্বাস প্রশ্বাস সমস্যাঃ জাফরান খেলে সর্দি-কাশি সমস্যা দূর করে ও এজমা দূর করে। যার কারণে শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা দূর হয়।

মাসিকের ব্যথা উপশম হয়ঃ যাদের মাসিকের ব্যথা হয় জাফরান খেলে ব্যথা ভালো হয়ে যায়।

চোখের ছানি দূর হয়ঃ নিয়মিত জাফরান খেলে জাফরানে পটাশিয়াম থাকার জন্য মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো হয়। চোখের বিভিন্ন অঙ্গানু ভালো রাখে। যার কারনে চোখের সানি সমস্যা দূর হয়।

হজম প্রক্রিয়ার বৃদ্ধিঃ নিয়মিত জাফরান খেলে পাকস্থলীর হজম শক্তি বৃদ্ধি হয়। পাকস্থলীতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয়ে উপকারী ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি পায়। যার কারণে গ্যাস্ট্রিক আলসার হয় না। 

কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়ঃ এছাড়াও আরো অনেক উপকার রয়েছে। আমরা জাফরান খাওয়ার মাধ্যমে উপকারগুলো গ্রহণ করতে পারি। নিয়মিত জাফরান খেলে কোষ্ঠ কাঠিন্যতা দুর করে।

গর্ভাবস্থায় জাফরান এর উপকারিতা

গর্ভবতীদের জন্য জাফরান এর উপকারিতা অপরিসীম। জাফরান খেলে গর্ভবতীদের শারীরিক পুষ্টি পূরণ হবে। আসুন গর্ভবতীদের জন্য জাফরানের উপকারিতা জেনে নিই।

রক্তচাপনিয়ন্ত্রণ রাখেঃ জাফরানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম আছে। পটাশিয়ামের কারণে রক্তের নালীগুলো প্রসারিত হয়। যার কারণে উচ্চ রক্তচাপ কমে যায়। পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে।।
হার্ট ভালো রাখে নিয়মিত জাফরান খেলে হৃদযন্ত্রের উপর চাপ কমে। যার কারণে হার্ট ভালো থাকে।

ব্যথা কমাযঃ জাফরানে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম রয়েছে এছাড়াও পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে। গর্ভাবস্থায় মায়েদের শরীর ও জয়েন্টে ব্যথা হয়। জাফরান খাওয়ার কারণে জয়েন্টে ও পেশীতে ব্যথা কমে যায়।

ভালো ঘুমের সহায়কঃ গর্ভবতী মায়েদের ঘুম কম হয়। জাফরানে পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম আছে। পটাশিয়াম শরীরে মিলেনিয়াম হরমোন বৃদ্ধি করে। মিলেনিয়াম হরমোনের কারণে ঘুম হয়। যার কারণে জাফরান খেলে গর্ভবতী মায়েদের ঘুম ভালো হয়।

তবে অতিরিক্ত পরিমাণ জাফরান খাওয়া যাবে না। প্রতিদিন.৫-১ গ্রাম জাফরান খাওয়া যেতে পারে। তবে আপনার শরীরে যদি কোন সমস্যা থাকে তাহলে জাফরান খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়

জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয় এই বিষয়টি পুরোপুরি জানা দরকার। নিয়মিত জাফরান খেলে ত্বকের ক্ষতিকর পদার্থ দূর করে ত্বক নরম ও সফট করে।তবে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির জন্য জাফরানের নাইট ক্রিম তৈরি করলে এবং সেটা ব্যবহার করলে অনেক বেশি উপকার পাওয়া যায়। 
নাইট ক্রিম তৈরি পদ্ধতি।দুই চামচ এলোভেরা জেল ২০টির মত জাফরান এক চামচ বাদাম তেল ২টি ভিটামিন ই ক্যাপসুল ও এক চামচ গোলাপ জল নিন। জাফরান গুলি টিস্যু পেপারের মধ্যে নিয়ে মুখ বন্ধ করে রাখুন। এরপরে এক মিনিট খালি তাওয়ায় গরম করুন। 

এরপরে কাগজ থেকে জাফরান বের করে নিন। উপরোক্ত জুসের মধ্যে দিয়ে দিন। তাহলে নাইট ক্রিম তৈরি হয়ে যাবে।নাইট ক্রিম মুখে অথবা চোখের নিচে কালো দাগে ব্যবহার করলে মুখমন্ডল উজ্জ্বল ও মুলায়েম হবে। এই নাইট ক্রিম ডার্ক সার্কেল কমাতে সাহায্য করে। 

ব্রণ বা সূর্যের আলোক রশ্মির কারণে ত্বক অনেক সময় কালো বা বিভিন্ন দাগ হয়। ক্রিম ব্যবহারের কারণে দাগগুলো দূর হয়ে ত্বক উজ্জ্বল হয়।এই নাইট ক্রিমে এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা ত্বকে ব্রণ হওয়া থেকে বিরত রাখে। নিয়মিত ত্বকে ব্যবহারের ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে। 

শরীরের চামড়া অনেক সময় ভাজ পড়ে। এই ক্রিম ব্যবহারের ফলে ত্বক গুলো টানটান ও উজ্জ্বল হয়। তাই আসুন আমরা নিয়ম মেনে জাফরান ব্যবহার করি।

জাফরান দুধের উপকারিতা

পুষ্টিবিদ শিখা আগরওয়াল এর মতে দুধ কিসমিস ও জাফরান মিশ্রিত করে খেলে শারীরিক অনেক উপকার পাওয়া যায়। দুধ কিসমিস ও জাফরান একসঙ্গে মিশিয়ে খেলে শারীরিক শক্তি অনেক বেশি বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে পুরুষদের যৌন শক্তি বৃদ্ধি পায়। পুরুষদের শুক্রানুর পরিমাণ বৃদ্ধি করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

জাফরান ব্যবহারের নিয়ম

জাফরান এর ব্যবহারের দিক অনেক। জাফরান একদিকে খাবারের সৌন্দর্য বর্ধন করে। অন্যদিকে মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার আয়ুর্বেদী ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জাফরান খাওয়ার উত্তম সময় হল রাতের বেলা। রাতে ঘুমানোর পূর্বে দুধের সাথে মধু ও কিসমিস মিশিয়ে তাতে জাফরান দিয়ে খেতে পারেন।

আর ও পড়ুনঃ পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ

এছাড়া বিভিন্ন বাদাম দুধ ও জাফরান একসঙ্গে খেতে পারেন। চন্দন কাঠ দুধ ও জাফরান একসঙ্গে মিশ্রিত করে ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন। এছাড়া মধু ও জাফরান ফেসপ্যাক তৈরি করতে পারেন।

 ফেসপ্যাক গুলো ত্বকে ব্যবহার করলে ত্বকগুলো মোলায়েম ও নরম হবে। এছাড়া সন্দেশ আইসক্রিম বা মিষ্টি এর সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য জাফরান ব্যবহার করতে পারেন।বিভিন্ন রান্নাই জাফরান রং ও স্বাদ বৃদ্ধি করে। রান্না সুগন্ধি যুক্ত করে।

 জাফরান মিশ্রিত করে জাফরান তেল তৈরি করে চুলের বিভিন্ন ভাবে ব্যবহার হয়। বিভিন্ন কবিরাজগণ তাবিজ লেখার জন্য জাফরানের কালি ব্যবহার করেন। বিভিন্ন আয়ুর্বে দ চিকিৎসকগণ বিভিন্ন চিকিৎসায় জাফরান ব্যবহার করেন।

লেখক এর মন্তব্য

প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়। জাফরান নিয়মিত খেলে ত্বকের কোষ গুলো মেরামত হয়। ত্বকের মৃত কোষগুলো অপসারিত হয়ে নতুন কোষ তৈরি হয়। ত্বক মোলায়েম ও স্বাস্থ্যবান হয়। এছাড়াও জাফরানের উপকারিতা আলোচনা করা হয়েছে। জাফরান আমাদের জন্য অনেক উপকারী মসলা।

এইজন্য জাফরান সম্পর্কে যাবতীয় তথ্যাদি জানা প্রয়োজন। আর এই তথ্য জানার জন্য আমাদের এই কন্টেন্ট প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ুন। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। ভালো লাগলে বন্ধুদের মাঝে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url