পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা বিষয় আলোচনা
আদা রাইজোম জাতীয় কান্ড। উদ্ভিদ বীরুৎ জাতীয়। এরা রাইজোম কিন্তু সুগন্ধি ও ঝাঁঝালো সাদযুক্ত। গাছটির উচ্চতা দুই থেকে তিন ফুট হয। গ্রীস ও রোমান গন আদাকে ঠান্ডা লাগা রোগের ওষুধ,হিসেবে,ব্যবহা,করত।অর্থকরীফসলের,মধ্যেখুবইলাভজনক। বাংলাদেশের টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ রংপুর ,গাইবান্ধা ,লালমনিরহাট, পঞ্চগড় ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা গুলোতে ব্যাপক আদা চাষ হয়। এশিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আমাদের দেশ থেকে আদা রপ্তানি হতো। এই পোষ্টে পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা বিষয় আলোচনা করা হবে।
ভূমিকা
আদা অত্যান্ত প্রয়োজনীয় মসলা। আদা ছাড়া মাছ মাংস কোনকিছুই রান্না করা যায় না। মাংসে একটু বেশি আদা ব্যবহার করলে খুব সুস্বাদু হয়। আদা আমাদের বিভিন্ন রোগে সহায়ক ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
আর ও পড়ুনঃ গর্ভাবস্থায় আনারস খেলে কি হয়
যার কারণে আগেকার লোকেরা বলতো আদা হলো আমাদের দাদা। এইজন্য আদার বিভিন্ন ওষুধি গুণ ও পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা বিষয় জানা খুব জরুরী। আসুন আমাদের এই পোস্টে এক এক করে আদা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আদার খাওয়ার নিয়ম
নিয়মিত সকালে আদা পানির সঙ্গে মিশিয়ে গরম করে খেতে পারেন। দেহে যত রোগ আছে সকল রোগে প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রবিদ আদা কেছোট বড় সব ধরনের রোগের ঔষধ হিসেবে মনে করেন।আদা পানির সঙ্গে মিশ্রিত করে সকালে খালি পেটে খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়ে যায় শরীর চাঙ্গা থাকে।
অনেকের পেট ব্যথা হয় পেটে প্রদাহের জন্য জলে অথবা পেট খারাপ করে। এক্ষেত্রে সকালে খালি পেটে আধা পানি খেলে সকল সমস্যা দূর হয়।কিছু আদা কুচি করে দিয়ে পানির সহযোগে ফুটানো লাগবে। ফুটানো পানি কিছুক্ষণ রেখে ঠান্ডা করে প্রতিদিন একগ্লাস করে সকালে খালি পেটে এবং সন্ধ্যায় ভরা পেটে খেতে হবে।
শরীরের খারাপ কলেস্টরেল নষ্ট হয়ে যাবে। হার্ট অ্যাটাকের ভয় থাকবে না হৃদযন্ত্র গুলি শক্তিশালী হবে। সুরের ওজন ও কমে যাবে।সকালে আদা খাওয়ার উপকারিতাসকালে আদা, পানির সঙ্গে ফুটিয়ে ঠান্ডা করে প্রতিদিন খেলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এর পরিমাণ বেড়ে যায়। ফ্রি রেডিকেলস গুলো দূর হয়ে যায় ক্যান্সারের জীবানু বাসা বাঁধতে পারে না।
সকালে আদা দিয়ে পানি খেলে শরীরের হজম শক্তি বেড়ে যায় এবং শরিরের চর্বি গলে ওজন কমে যায়।
সকালে খালি পেটে আধা পানি খেলে শরীরের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ থাকে এবং ডায়াবেটিস রুগিদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক টুকরা আদা পিষে চূর্ণ করে নিন। চার কাপ পানি ফুটানোর আদা দিয়ে দেন।এ পানি সকালে খালি পেটে খান। পেটে হজমের কোন সমস্যা থাকবে না।
লিভারের প্রদাহ হলে অথবা পেট খারাপ হলে সুস্থ হয়ে যাবে। সন্ধ্যায় এক গ্লাস পানি নিয়ে এক টুকরো আদা ভালোভাবে ধুয়ে পিষে নেন।সন্ধ্যায় ওই আদা গ্লাসে দিয়ে রাখুন।।সকালে পানিটুকু খেয়ে নিন। শরীরের যেকোনো বজ্র পদার্থ বাহির হয়ে যাবে। হজমের সমস্যা অথবা পেটে প্রদাহ জনিত পীড়া থাকলে ভালো হয়ে যাবে।পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা বহুগুন।
খালি পেটে আদা খাওয়ার উপকারিতা
সকালে আদা পানি খেলে শরীরের টক্সিন গুলো বাহির হয়ে যায়। খারাপ কোলেস্টরেল নষ্ট হয়ে যায় ও ভালো কলেষ্টরেল বৃদ্ধি পায়। সকালে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে আদা খেলে যৌন রোগ ভালো হয়ে যায়। ও এক্ষেত্রে এক টুকরা আধা পিষে নিবেন।
আর ও পড়ুনঃ মিষ্টি কুমড়ায় কোন ভিটামিন থাকে
অথবা পিষা আদার সঙ্গে এক চামচ মধু নিয়ে মিশ্রিত করে সকালে খালি পেটে খেয়ে নিবেন। এভাবে যদি একমাস খেতে পারেন অতিরিক্ত ওজন থাকলে সেগুলো কমে যাবে। হৃদরোগের সমস্যা থাকবে না। শরীর উৎফুল্ল দেখাযবে ও মানসিক চাপ গুলো কমে যাবে।
রাতে আদা খেলে কি হয়
যাদের সর্দি কাশি অথবা হাঁপানি আছে পানিতে কিছু আদার টুকরা নিয়ে গরম করে প্রত্যেক দিন রাতে খেয়ে নিন সর্দি, কাশি ও হাঁপানি ভালো হয়ে যাবে। শ্বাসকষ্ট হয় এ অবস্থাতে চিকন চিকন দু তিন টুকরা আদা মুখে দিয়ে থাকবেন।গলার সমস্যা ভালো হয়ে যাবে
হাঁপানিও ভালো হয়ে যাবে। আদা শুকিয়ে চুর্ন করে রাখবেন। চুর্ন আদা এক চামচ এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে প্রতিদিন রাতে খেয়ে নেবেন। বুঝতে পারবেন শরীরের ইউনিটি শক্তি বেড়ে যাবে। হজম শক্তি বেড়ে যাবে। কিডনির যদি কোন সমস্যা থাকে সেটাও সুস্থ হয়ে যাবে।
আঘাত জনিত যদি কোন ফোলা থাকে সরিষার তেলের সঙ্গে আদা বাটা মিশ্রিত করে রাতে ফোলা জায়গায় লাগিয়ে দিবেন ৪-৫ দিন লাগালে ভালো হয়ে যাবে। দাঁতের মাড়িতে অত্যন্ত যন্ত্রণা রাতে একটু আদা পিষে নিয়ে মাড়িতে লাগিয়ে দিন দেখবেন যন্ত্রণা ভালো হয়ে গেছে।
পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা
পুরুষদের অনেকেরই শুক্রাণুতে সংখ্যা অনেক কম। যার কারণে বাচ্চা হওয়ার বাধা সৃষ্টি হয়। এই ক্ষেত্রে ঐ সকল পুরুষগণ এক টুকরো পিষা আদা নিয়ে এক গ্লাস পানিতে দেওয়ার পরে এক চামচ মধু দিয়ে সকাল সন্ধ্যা খেয়ে নিবেন এভাবে এক মাস খেলেই শুক্রাণুর সংখ্যা বেড়ে যাবে।
এছাড়া অনেক পুরুষেরা যৌন দুর্বলতাই ভোগেন। এক টুকরা আদার সঙ্গে তিন কোয়া রসুন পেস্ট করে নিয়ে এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খেয়ে নিবেন এভাবে সকাল সন্ধ্যা খেতে হবে। এক মাসের মধ্যেই অনেক আরোগ্য হবেন।
অনেক সময় মুখের গন্ধ থাকে। দুই টুকরা আধা মুখে রেখে দিন দেখবেন গন্ধ দূর হয়ে যাবে। অনেক সময় পুরুষ লোকদের পেশাবের জ্বালাপোড়া করে। কয়েকদিন আদা পানি খেয়ে নিন প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া থাকবে না। পুরুষ লোকেরা সাধারণত মাঠে কাজ করেন।
সকালে এক গ্লাস আদা পানি খেয়ে নিন মাঠে কাজ করার সময় ক্লান্তি থাকবে না। ঠান্ডায় যদি বাহিরে অথবা অফিসে যাওয়া লাগে তাহলে দুই টুকরা আদা মুখে দিয়ে বাহির হবেন। ঠান্ডা জনিত সমস্যা হবে না। এক কথায় পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা অনেক রয়েছে।
আদা খাওয়ার উপকারিতা
পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা অনেক। এছাড়া রান্নাবান্না কাজে খুব উৎকৃষ্ট মসলা হিসেবে আদা ব্যবহৃত হয়। মাংস রান্না করতে আদার খুব প্রয়োজন। তবে মাংস রান্না করার সময় একবার আদা পিষা দেওয়ার পরে মাংস সিদ্ধ হয়ে গেলে পুনরায় এক চামচ আদা বাটা দিন মাংস অনেক বেশি স্বাদ হবে।
মাছ রান্না করতে আদার প্রয়োজন হয়।
মাছের একটা আসটে গন্ধ আছে এজন্য মাছ রান্না করতে পরিমাণ মতো আদা ব্যবহার করা প্রয়োজন। কবিরাজি ওষুধ তৈরিতে আদার ব্যবহার অপরিসীম। আয়ুর্বেদী চিকিৎসায় আদা খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।আয়ুর্বেদগন এক ধরনের মদক তৈরি করেন যাতে অনেক বেশি আদা প্রয়োজন হয়। চায়ের সঙ্গে আদা ব্যবহার বহু যুগ ধরে চলে আসছে।
প্রতিদিন এক গ্লাসে পেস্ট আদা মিশিয়ে সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খান।কিডনির সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে। আদায় প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট আছে এছাড়া ভিটামিন এ ও সি আছে তাই আদা রক্ত পরিষ্কার করে। চর্ম রোগ দূর করে ও চুল সুস্থ রাখে। গবেষণায় জানা যায় যে।
প্রতিদিন আধা পানি খেলে আদার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অন্যান্য উপাদান মস্তিষ্কের কোষ কে সজীব করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। ব্যায়াম অথবা অত্যধিক পরিশ্রম করার পরে এক গ্লাস আদা পানি খেলে শরীর অনেক শক্তিশালী হয় এবং শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।
আদা খাওয়ার অপকারিতা
বেশি পরিমাণ আদা খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে যাহারা উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খান তাদের বেশি আদা খেলে হৃদযন্ত্রের ঝুঁকি বেড়ে যায়। গর্ভবতী মায়েদের জন্য ১৫০০ মিলিগ্রামের বেশি আদা খেলে গর্ভপাতের ঝুঁকি বেড়ে যায়।আদাতে এন্টি প্লাটিলেট উপাদান থাকায় বেশি আদা খেলে রক্তপাতের ঝুঁকি থাকে।
আর ও পড়ুনঃ পেট ঠান্ডা রাখার ঘরোয়া উপায়
বেশি আদা খেলে অনেক সময় হজমের সমস্যা হতে পারে অথবা শরীরের বিভিন্ন অংশ ফুলে যেতে পারে। বেশি আদা খেলে পেটে অস্বস্তি হতে পারে অথবা মুখ জ্বালাপোড়া করতে পারে। যারা নিয়মিত ওষুধ খান তাদের আদা কম খাওয়া ভালো।
বস্তায় আদা চাষ পদ্ধতি
বর্তমান দেশে আদার দাম অনেক বেশি বেড়ে গেছে। আমাদের জন্য পর্যাপ্ত আদা খাওয়া কষ্টকর। সে জন্য আপাতত চাহিদা মিটানোর জন্য বস্তায় আদা চাষ করা যায়। চাষ করতে নতুন করে কোন জমির প্রয়োজন হয় না।বাড়ির ধারে অথবা ছাদের উপরে বস্তায় আদা চাষ করা যায়। বস্তার জন্য প্রথম মাটি তৈরি করে নিতে হবে। বস্তাতে বেলে দো-আষ মাটি হলে ভালো হয়।
মাটির সঙ্গে কিছু ছাই কিছু কম্পষ্ট সার মিশিয়ে নিতে হবে।মাটি মেশানোর পরে প্রতিটা বস্তায় মাটি দিয়ে দিতে হবে। বস্তায় মাটি ভরার সময় ঝাকিয়ে নিতে হবে যাতে মাটিগুলো গেজে যায়। মাটির সঙ্গে কিছু ছত্রাকনাশক ও কিছু কীটনাশক ব্যবহার করলে পোকামাকড়ের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।একটি বস্তায় তিন তিন টুকরা আদা লাগিয়ে দিতে হবে।
২০-২৫ দিনের মধ্যে আদার গাছ বাহির হয়ে যাবে। আদার গাছ বাইর হয়ে গেলে গোঁড়া থেকে আদা গুলো তুলে নিয়ে খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে।ভালো জত্ন করলে খুব ভালো ফলন পাওয়া যায়। জুন জুলাই মাসে আদা গুলো সংগ্রহ করে নেওয়া যেতে পারে। তবে আদা চাষ করলে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়েও কিছু বাহিরে বিক্রয় করা যাবে।
লেখক এর মন্তব্য
আদা যেহেতু অনেক উপকারী কান্ড। আমরা আমাদের সাধ্যমত আদার উপকারী গুরুত্ব গুলো কাজে লাগিয়ে আমরা পারিবারিক দিক দিয়ে উন্নত হব। আপনারা পুরুষদের জন্য আদার উপকারিতা বিষয়ে যাবতীয় তথ্য এই পোস্টগুলোতে পাবেন। কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানাবেন। ভালো লাগলে
লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url