গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

 চিয়াসিড আমাদের জন্য মূল্যবান খাদ্য। আমাদের শরীরে যে সকল পুষ্টি আবশ্যক অধিকাংশ পুষ্টি চিয়াসিড এর মধ্য রয়ে্ছে এইজন্য এই বীজ কে বলা হয় সুপার ফুড।আমাদের শারীরিক ওজন কমানোর জন্য এই বীজ প্রচুর ভূমিকা রাখে।শরীরের ক্যালসিয়াম চাহিদা প্রোটিন চাহিদা এবং অত্যাবস্যকিও বিভিন্ন মিনারেল এর চাহিদাগুলো এই বীজ পূরণ করে। গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ব্যাপারে আলোচনা করা হবে।

ভূমিকা

চিয়াসিড মরুভূমিতে উৎপন্ন সালবিয়া ইস্পানি উদ্ভিদের বীজ। এই বীজের আদি জন্মস্থান আমেরিকা এবং সেখানকার প্রাচীন আদিবাসীদের খাদ্যের অন্তর্গত ছিল। এই বীজ সাধারণত চ্যাপ্টা আকৃতি এবং ধূসর বর্ণের।

আর ও পড়ুনঃ সেক্সে রসুনের উপকারিতা কি জানুন

সাধারণত নভেম্বর মাসে এ বীজ বপন করতে হয়। ১০০থেকে ১১০দিনের মধ্যে পরিপূর্ণ বীজ পাওয়া যায়। পরীক্ষামূলকভাবে বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় এ বীজ চাষ করা হচ্ছে। এই পোষ্টে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও চিয়াসিড খাওয়ার উপকারিতা জানবেন।

চিয়া সিড খাওয়ার অপকারিতা

প্রতিটা খাবারের উপকারের পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিক থাকে। চিয়াসিডের কিছু ক্ষতিকারক দিক বর্ণনা করা হলো। কিছু বিজ্ঞানীগণ পরীক্ষায় দেখেছেন চিয়াসিড পোস্টেড ক্যান্সারও স্তন ক্যান্সারের ঝুকি বাড়িয়ে দিতে পারে।

চিয়াসিড বেশি খেলে অনেকের পেটের সমস্যা হতে পারে। কারণ এ বীজে অত্যন্ত বেশি ফাইবার আছে। বেশি ফাইবারের কারণে পেটের সমস্যা হতে পারে। সে জন্য অল্প অল্প পরিমান চিয়া সিড খাওয়া উচিত।

পেটের সমস্যা হওয়া শুরু হলেই সঙ্গে সঙ্গে এ বীজ খাওয়া বন্ধ করা দরকার।।এ বীজ বেশী খেলে ওজন বেশি কমে যেতে পারে যার দ্বারা ওজনের ভারসাম্যহীনতা নষ্ট হতে পারে।

চিয়াসিড দেহের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে ও রক্তচাপ কমায়। অতিরিক্ত চিয়াসিড খাওয়ার ফলে রক্তচাপ বেশি কমে যায় এবং শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। তাই কোন সমস্যা হলে চিয়াসিড খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

চিয়া সিড এর পুষ্টিগুণ

চিয়াসিড সুপার ফুড হিসেবে সবার কাছে পরিচিত। ইহাতে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা ৩, ফ্যাটি অ্যাসিড, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও দ্রবণীয় ও অদ্রবনীয় খাদ্য আস থাকে।চিয়াসিড মুরগির ডিমের চেয়ে ৩গুণ বেশি প্রোটিন আছে।

স্যামন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা ৩ আছে।কমলালেবুর চেয়ে ৭ গুণ বেশি ভিটামিন সি পালং শাকের চেয়ে ৩ গুণ বেশি আয়রন এবং কলার চাইতে ২ গুণ বেশি পটাশিয়াম বিদ্যমান। এই বীজে বিভিন্ন প্রকার অ্যামাইনো এসিড বিদ্যমান।

চিয়া সিড খাওয়ার সঠিক সময়

বিশেষজ্ঞদের মতে আপনি যেকোনো সময় চিয়াসিড খেতে পারেন। তবে এক ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে খেলে ভালো হয়। হজম হওয়া এবং গ্যাস্ট্রিক দূর করতে রাতে একঘন্টা ভিজিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।

আর ও পড়ুনঃ ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম

সকালে খালি পেটে এক ঘণ্টা ভিজিয়ে খেলে শরীরের সমস্ত টক্সিন নষ্ট হয়ে যায়। এক গ্লাস পানিতে দুই চামচ চিয়াসিড এক ঘন্টা ভিজিয়ে পান করুন ভালো উপকার পাবেন।

ওজন কমাতে চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

বিভিন্ন ধরনের চাকরি করার ক্ষেত্রে আমরা অনেক অলস হয়ে গিয়েছি। যার কারণে শরীরের পরিশ্রম অত্যাধিক কমে গেছে। অপরদিকে রসনা বিলাস ও ভালো খাওয়ার নিয়ম টা বেড়ে গেছে। একদিকে ভালো খাবার বেড়ে গেছে অন্যদিকে কাইক পরিশ্রম কমে গেছে।

এ অবস্থায় আমরা অধিকাংশ মোটা হয়ে যাচ্ছি। তাছাড়া বিভিন্ন রকম খাদ্যে ভেজাল থাকার জন্য শরীরে খারাপ কলেষ্টরেল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার কারণে ওজনটা অনেক বেড়ে যাচ্ছে। আমদের ব্যায়াম এর পাশাপাশি চিয়াসিড কে ডায়েটে রাখা দরকার। এছাড়া গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার দরকার।

চিয়াসিড এর ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের মেটাবলিজম কে আরো শক্তিশালী করে। আর ও তাড়াতাড়ি আমাদের অতিরিক্ত ওজন কমে যাবে। চিয়াসিডের কোন স্বাদ নাই তাই সালাত অথবা ভিজিয়ে যেকোনোভাবে খাওয়া যায়।

এই বীজ ভিজিয়ে এক ঘন্টা পরে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস পানিতে দুই চামচ চিয়াসিড ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে খেতে হবে।অনুরূপভাবে সকালে একগ্লাস পানিতে দুই চামচ চিয়াসিড ১ ঘন্টা ভিজিয়ে খেতে হবে।

ইহা পুডিং, জুস ইত্যাদির সাথে মিশিয়ে ও খাওয়া যায়। রান্না করার সবজি অথবা সালাতের উপর ছিটিয়ে দিয়েও খাওয়া যায়। অনেকে টক দইয়ের সঙ্গেও চিয়াসিড খান।যাহারা সকাল এবং বিকাল ব্যায়াম করেন। সকালে ব্যায়াম করার এক ঘন্টা পরে চিয়াসিড খাওয়া ভালো।

অনুরুপ বিকালের ব্যায়াম করার এক ঘন্টা পর চিয়াসিড খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়। দুধের সঙ্গে চিয়াসিড খাওয়া ভালো। এক্ষেত্রে এক গ্লাস দুধের সাথে ২ চামচ চিয়াসিড ভিজিয়ে রেখে খেলে অত্যাধিক ওজন কমে যায়।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম

চিয়াসিড ওমেগা ৩ ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান থাকায় ইহা শিশুদের বিকাশ ঘটে। ওমেগা ৩. ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় গর্ভবতী মায়ের শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। যে সকল গর্ভবতী মহিলারা সামুদ্রিক মাছ খেতে পারেন না চিয়াসিড খেলে ওমেগা ৩ ও অন্যান্য পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়ে যায়।

এ বীজে পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম থাকায় গর্ভবতী মেয়েদের শিশুদের হাড়ের বিকাশ ঘটে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওমেগা ৩ ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম, ও জিংক থাকায় গর্ভবতী মহিলাদের পুষ্টিহীনতা দূর হয় এবং প্রসবের ঝুঁকি থাকে না। গর্ভবতী মহিলাদের ভ্রুনের গঠন তাড়াতাড়ি বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়।

গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম মেনে চলা দরকার।গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়। এ বীজে পর্যাপ্ত ফাইবার থাকায় গর্ভবতী মহিলাদের কোষ্ঠকাঠিন্য হতে রক্ষা পাওয়া যায়। প্রসবের পরে মহিলারা চিয়াসিড খেলে পর্যাপ্ত পুষ্টি গ্রহণের কারণে মায়ের দুধের মান বৃদ্ধি হয়।

দুধের মধ্যে পুষ্টি গুন বৃদ্ধি পায়। গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত চিয়াসিড খেলে গর্ভে থাকা ভ্রুনের তাড়াতাড়ি বিকাশ ঘটে। গর্ভবতী মায়েরা নিয়মিত চিয়াসিড খান তাহলে পুষ্টিগুণের কারণে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। এ ছাড়া নিরাপদ ভাবে প্রসব সম্পন্ন হয়।

শিশুদের চিয়াসিড খাওয়ার উপকারিতা

বয়স্কদের মতো শিশুদের ও চিয়াসিড খাওয়া অনেক উপকারী। শিশুদের দেহের ক্ষতিকর বজ্র পদার্থ অপসারণ করে শরীরকে রোগ প্রতিরোধী করে তোলে। শিশুদের কে নিয়মিত চিয়াসিড খাওয়ালে তাদের মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে।

আর ও পড়ুনঃ কাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা এর বিবরন

এই বীজে প্রচুর ক্যালসিয়াম থাকায় নিয়মিত এ বীজ খেলে শিশুদের হাড়ের গঠন মজবুত হয়। নিয়মিত এ বীজ খাওয়ার ফলে শিশুদের গ্যাসের সমস্যা দূর করে ও শিশুদের ঘুম ভালো করে।

এ বীজে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, প্রোটিন, ও ক্যালসিয়াম থাকায় শিশুদের ত্বক, চুল অনেক সুন্দর রাখে এবং শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূর করে। শিশুদেরকে নিয়মিত চিয়াসিড খাওয়ানো হলে তাদের হার্ট ভালো থাকে এবং হৃদরোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

নিয়মিত চিয়াসিড খাওয়ার ফলে বাচ্চাদের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। চিয়াসিড খাওয়ার সময় বাচ্চাদের গলায় আটকে যেতে পারে। সাবধানে চিয়াসিড খাওয়ানো দরকার। চিয়াসিড খাওয়ার ফলে শিশুদের পেটের সমস্যা হতে পারে। পেটের সমস্যা হলে চিয়াসিড খাওয়া বন্ধ করতে হবে।

শিশুদের চিয়াসিড খাওয়ার নিয়ম

শিশুদেরকে চিয়াসিড খাওয়ানোর সময় সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। এটি গলায় আটকে যেতে পারে। সেই জন্য পানিতে ভিজিয়ে পাতলা করে খাওয়ানো দরকার। বাচ্চাদের খাবারের সাথেও চিয়াসিড মিসিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে।

বাচ্চাদেরকে দুধ খাওয়ানোর সঙ্গে চিয়াসিড খাওয়ানো যায়। এক বছরের নিচে শিশুদেরকে চিয়াসিড না খাওয়ানোই ভালো। সাধারণত প্রতিদিন আধা চামচ থেকে এক চামচ পর্যন্ত শিশুদের কে খাওয়ানো যেতে পারে।

চিয়াসিড গুঁড়ো করে মিষ্টি বা তরল বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে বাচ্চাদেরকে খাওয়ানো যেতে পারে। ইহা এমন একটি উপকারী বীজ যা সব বয়সের ছেলেমেয়েদেরকে খাওয়ানো যায়। শিশুদের সাথে গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার প্রয়োজন।

চিয়াসিড এর উপকারিতা

চিয়াসিডে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে তাই ইহা রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। এই বীজে ওমেগা ৩ আছে তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে, ক্ষতিকর কোলেস্টেরল দূর করে ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে ইহাতে মুরগির ডিমের তিনগুণ বেশি প্রোটিন আছে এবং দুধের চাইতে পাঁচ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম আছে।

যার কারণে শরীরের পুষ্টি চাহিদা মিটে এবং শরীরের হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। এই বীজ রক্তের শর্করা ঠিক রাখে এবং ডায়াবেটিস এর ঝুঁকি কমায়। এই বীজ শরীরে বিভিন্ন বজ্র পদার্থ বাহির করে এবং পেটের গ্যাস থেকে রক্ষা করে, ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে।

চিয়াসিডে আঁশ থাকায় মলাশয় পরিষ্কার রাখে এবং কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। ইহা অনিদ্রাকে দূর করে । চিয়াসিডে ওমেগা ৩ ও ফ্যাটি অ্যাসিড থাকায় ক্যান্সারের জীবাণু প্রতিরোধ করে। অত্যাধিক ক্যালসিয়াম থাকাই হাটু ও জয়েন্টের ব্যথা নিরাময় করে।

লেখকের মন্তব্য

শরীরকে পুষ্টিহ হীনতা এবং অতিরিক্ত মেদ দূর করা ও খারাপ কোলেষ্ট্ররেল দুর করে ভাল কোলেষ্ট্ররেল বৃদ্ধি করার জন্য চিয়াসিড খাওয়া আমাদের অত্যাবশ্যক। এছড়া গর্ভাবস্থায় চিয়া সিড খাওয়ার দরকার। তাই আসুন আমরা সবাই মিলে চিয়াসিড খাই।

চিয়াসিড সম্পর্কে জানার জন্য আমার পোস্টগুলো আপনাদের সহযোগিতা করবে। আশা করি পোস্টগুলো ভালো লেগেছে। কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্টে জানাবেন। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন। সবার মঙ্গল কামনা করে এখানে শেষ করছি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url