ডাবের পানি সংরক্ষণের বিষয় আলোচনা
প্রচন্ড গরমে ডাবের পানি আমাদের ক্লান্তি দূর করে ও পানির তৃষ্ণা মিটায়। ডাবের পানি ত্বকের পরিচর্যায় ব্যবহৃত হয়। নিরক্ষীয় এলাকায় ডাবের পানি খুব উত্তম পানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। পূর্ব এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলোতে ডাবের পানি খুব জনপ্রিয়।এগুলো এলাকায় টাটকা ডাবের পানি ক্যানে ভরে অথবা বোতলে করে বিক্রি করা হয়।আমাদের দেশেও ডাবের পানির চাহিদা সর্বত্রই। তীব্র গরমের সময়ে ডাবের পানি খেলে আমাদের শরীরে কি উপকার বা অপকার হয় আসুন জেনে নিই। এছাড়া আজকের বিষয় ডাবের পানি সংরক্ষণের বিষয় আলোচনা।
ভূমিকা
ডাবের পানি ডাবের ভিতরের রস। ভিতরে রস গুলো কমে যেয়ে শাঁস তৈরি হয়ে নারকেলে পরিণত হয়। মাটির গুনাগুলো অনুযায়ী ডাবের স্বাদ কমবেশি হয়। ভারতের ডাব মিষ্টি হয় ব্রাজিলের ডাব পানসে হয় বাংলাদেশের ডাব মিষ্টি হয় এবং সামুদ্রিক এলাকায় ডাব নোনতা হয়। স্বাভাবিক ভাবে ডাব পাওয়া না গেলে ডাবের পানি সংরক্ষণের বিষয় আলোচনা করা দরকার।
আর ও পড়ুনঃ মেট্রোরেলের ভাড়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ
কলার পরেই পটাশিয়ামের উৎস ডাবের পানি। ১০০ গ্রাম ডাবের পানিতে উপাদান আছে যথাক্রমে পানি ৯৫.৫ নাইট্রোজেন ০.০৫ ফসফরিকঅ্যাসিড ০,৫৬ পটাশিয়াম ০.২৫ ক্যালসিয়াম ০.৬৯ ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড০.৫৯ লৌহ ০.৫ চিনি ২.০৮ আছে।
ডাবের পানির অপকারিতা
ডাবের পানি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। কারণ ডাবের পানি পান করলে রক্তের শর্করা মাত্রা বেড়ে যায়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে তাদের জন্য বেশি ডাবের পানি পান না করাই ভালো কারণ ডাবের পানিতে প্রচুর সোডিয়াম থাকে।
ডাবের পানি বেশী পান করলে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন আবহাওয়া পরিবর্তনে জ্বর কাশি হলে ডাবের পানি না পান করায় ভালো। কারণ ডাবের পানি অসুস্থতা আরও বাড়িয়ে দিবে।
ডাবের পানিতে পটাশিয়াম থাকে যার কারণে কিডনি রোগীদের জন্য পান না করাই ভালো। ডাবের পানি বেশি পান করলে অনেকের ডাইরিয়া হতে পারে। যাদের অ্যালার্জি আছে ডাবের পানি পান করার কারণে এলার্জি বেড়ে যেতে পারে। অত্যাধিক রোদ থেকে এসে ডাবের পানি না পান করায় ভালো। আজকের কন্টেন্ট ডাবের পানি সংরক্ষণের বিষয় আলোচনা।
ডাবের পানি সংরক্ষণের বিষয় আলোচনা
আজকের কন্টেন্ট ডাবের পানি সংরক্ষণের বিষয় আলোচনা। ডাবের পানি সংরক্ষণ করে সেটা ব্যবহার করা ভালো। বিদেশে ডাবের পানি সংরক্ষণ করে সেগুলো ব্যবহার করার ব্যবস্থা আছে। ডাবের পানি সংরক্ষণ করতে চাইলে একটি বিকারে ডাবের পানি নেওয়ার পরে 99 থেকে ১০০০ সেন্টিগ্রেট তাপমাত্রায় ওয়াটার বাতে এই বিকারের পানি ১০মিনিট রাখতে হবে।
অতঃপর সেই পানির সঙ্গে ১০০ পিপিএম পটাশিয়াম মেটাবাই সালফাইট ও ০.০৫ভাগ কার্বোক্সিমিথাইল সেলুলোজ যোগ করতে হবে। বিকারের পানি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় শুষ্ক যায়গায় সংরক্ষণ করতে হবে। এভাবে ৬ থেকে ৮ মাস রাখা যায়।
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
ডাবের পানি খাওয়ার নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নেই। তবে নিজের শরীরের উপর বুঝেশুনেই পানি পান করা দরকার। সাধারণত কচি ডাব খাওয়া ভালো। কারণ ডাবের বয়স বাড়ার সঙ্গে চিনি পরিমাণ বেড়ে যায়। ডাবের পানির সঙ্গে চিনি গুড় অথবা লবন ইত্যাদি মিশিয়ে না খাওয়া ভালো।
আর ও পড়ুনঃ জেনে নিই সুষম খাদ্য কাকে বলে
সপ্তাহে কমপক্ষে তিন চারটি ডাব খাওয়া উচিত। পুষ্টিবিদ কোয়েল মল্লিকের মতে প্রতিদিন ২০০ মিলিলিটার ডাবের পানি খাওয়া যাবে ।এর বেশি খাওয়া ঠিক না। ডাবের পানি সরাসরি না খেয়ে বিভিন্ন খাবারের সঙ্গে খাওয়া যায়। সাধারণত চুমুক দিয়ে ডাবের পানি খেলে অনেক বেশি শারীরিক উপকার পাওয়া যায়।
ডাব কেটে পানি খাওয়া ও সঙ্গে শ্বাস খেলে অনেক মজা পাওয়া যায় এবং শরীরে ইলেকট্রোলাইট সহ অনেক পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। সাধারণ পানির চাইতে ডাবের পানি সুস্বাদু তাই পানির পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়। ডাবের পানি চোখ মুখ ও হাতের চামড়ায় ব্যাবহার করা যায়।
চামড়া ও মুখ ডাব দিয়ে ধুইলে চামড়ায় বয়সের ছাপ কমে যায়। সকালে বিভিন্ন ধরনের জুস দ্বারা নাস্তা করার সময় জুসের সঙ্গে ডাবের পানি মিশিয়ে খাওয়া যায়। কমলা, লেবু, আনারস, পেয়ারা, তরমুজ, ইত্যাদির জুস তৈরির সময় ডাবের পানি ব্যবহার করলে জুস খেয়ে মজা পাওয়া যায়।
এছাড়া শরীর ঠান্ডা রাখে। সেমায় বা ফিরনী রান্নার ক্ষেত্রে পানির পরিবর্তে ডাবের পানি দেওয়া যায়। গরমের সময় অনেকে বরফ তৈরি করে। বরফ তৈরির সময় ডাবের পানি দিয়ে বরফ তৈরি করা যায়। ডাবের পানি না পেলে ডাবের পানি সংরক্ষণের প্রয়োজন।
কোন ফলের অংশ ডাবের পানির সঙ্গে ফ্রিজে রেখে পরে খেলে মজা পাওয়া যায়। শরীর আর্দ্র থাকে ও পুষ্টি চাহিদা মিটে। মাংস রান্না, সালাত অথবা বিভিন্ন ড্রেসিং এর ক্ষেত্রেও ডাবের পানি ব্যবহার করা যায়।
ডাবের পানি কি ফ্রিজে রাখা যায়
ডাবের পানি সংরক্ষণের জন্য ফ্রিজে রেখে পান করা যায়।। ডাবের পানি ২৪ ঘন্টার মধ্যে খেয়ে ফেলতে হবে। ডাবের পানিতে যে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও এন্টি ফাঙ্গাস থাকে। ফ্রিজে রাখলে সেগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং ডাবের পানিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া জায়গা করে নেয়। সেজন্য ডাবের পানি ফ্রিজে না রেখে পান করা ভালো।
ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা
ডাবের পানির উপকারিতা বলে শেষ করা যাবে না। এ পানির বহু উপকার রয়েছে। নিয়মিত ডাবের পানি পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় শরীরে পানির ভারসাম্য থাকে। এ পানি প্রতিদিন পান করলে ইউরিনারি সমস্যা দূর হয় এবং কিডনি রোগ প্রতিরোধ করে।
নিয়মিত এ পানি পান করলে খসখসে চামড়া গুলো তৈলাক্ত হয়। ডাবের পানি পান করলে, ব্রণ অথবা রোদে পোড়া দাগ দূর হয়, শরীরে বয়সের ছাপ কমে যায়। দাঁতের মাড়ির বিভিন্ন রোগ এবং ঠান্ডা লাগা প্রতিরোধ, শারিরিক ক্ষমতা বাড়ায়, বুকের জ্বালাপোড়া হতে রক্ষা পাওয়া যায়, ও শরীরের ক্লান্তি দূর হয়।
ডায়রিয়া হলে স্যালাইন না পাওয়া গেলে পরিবর্তে ডাবের পানি খাওয়া যায়। পুষ্টিবিদ ফাতেমা আক্তার বলেন ডাবে পানিতে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও অন্যান্য মিনারেলস আছে তাই ডায়রিয়া অথবা বমন হলে ডাব খাওয়ালে শরীরের ভারসাম্য ফিরে আসে।
মাউন্ট সিনা স্কুল অবমেডিসিনের একদল গবেষক জানিয়েছেন ডাবের পানিতে ইলেক্ট্রোলাইট থাকায় ইহা ত্বকভালো রাখে। ২০১৭ সালে একটি প্রাথমিক গবেষণায় জানা গেছে যে ডাবের পানিতে এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকে ও এন্টি অক্সিজেন থাকে তাই ডাবের পানি ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে ও ত্বকের কালো দাগকে দূর করে।
গর্ভবতীদের জন্য ডাবের পানিতে সোডিয়াম পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম উপস্থিত থাকার শরীরে ইলেকট্রোলাইট এর ভারসাম রক্ষা হয়। পটাশিয়াম ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে ডাবের পানি ভ্রুনের বৃদ্ধি তরান্বিত করে।
গর্ভবতীদের এ পানি পান করায় শরীরের স্বস্তি ফিরে আসে এবং ওজন বাড়ে না। যাদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি আছে ডাবের পানি নিয়মিত পান করলে ঘাটতি দূর হয়। গরমের সময় ডিহাইড্রেশন হলে ডাবের পানি পানে সুস্থতা ফিরে আসে।।
পুষ্টিবিদ কোয়েল পাল চৌধুরী বলেন ডাবে পটাশিয়াম সোডিয়াম ভিটামিন বি ১ ভিটামিন সি রয়েছে যার কারণে গরমের সময় ডাবের পানি খেলে মানুষের শরীরে ভারসাম্য বজায় থাকে। ডাবের পানি পান করলে দেহে অক্সিজেনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ও রক্তের সকল কণিকার ভারসাম্য থাকে। ডাবের পানির সঙ্গে ডাবের কচি অংশ থাকে তা খেলে পেটে কৃমি দূর হয়। ডাবের পরিত্যাক্ত অংশ জালানি হিসেবে ব্যাবহিত হয়।পানি ব্যাতিত ডাবের নরম অংশ ছাগলের খাদ্য হিসেবে ব্যাবহার হয়।ডাবের পানি সংরক্ষণের ব্যাবস্থা করে পরবর্তী ব্যাবহার করা যায়। আজকের কন্টেন্ট ডাবের পানি সংরক্ষণের বিষয় আলোচনা।
শিশুদের জন্য ডাবের পানি
ডাবের পানিতে মোনোলৌরিন নামক উপাদান থাকায় শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া ডাবের পানিতে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সোডিয়াম, প্রোটিন, ভিটামিন সি ও পটাশিয়াম থাকায় শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূর করে ও শরীরের বিভিন্ন সংক্রামক রোগ দূর করে।
আর ও পড়ুনঃ জেনে নিই বিড়াল খাবার না খেলে করণীয়
শিশুদেরকে ছয় মাস পর থেকেই ডাবের পানি খাওয়ানো যায়। যখন কঠিন খাবার বা অন্য খাবার খাবে তার সঙ্গে ডাবের পানি খেতে পারবে। শিশুদের ডাবের পানি খাওয়ার ফলে শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে ও গ্যাস্ট্রিক দূর হবে। ঠান্ডা ও ঠান্ডা জাতীয় সমস্যা হতে রক্ষা করবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য, পেট ফাঁপা, পেট ব্যাথা ইত্যাদি যে কোন পেটের অসুখ দূর করবে। ডাবের যে নরম শ্বাসের অংশ থাকে সেটা খেলে পেটে কৃমি দূর হয়। শিশুদের মূত্রনালীর বিভিন্ন সংক্রামক থেকে এমনকি কিডনিপাথর পর্যন্ত নষ্ট করতে পারে।
গরমের কারণে শিশুদের ডিহাইড্রেশন হলে ডাবের পানি খাওয়ার পরে শিশু সুস্থ হয়। বদহজম অথবা ডায়রিয়া হলে ডাবের পানি খাওয়ার ফলে শরীরের লবণ পানির ভারসাম্য রক্ষা হয়। এই জন্য শিশুদেরকে পরিমাণ মতো ডাবের পানি খাওয়ানো উচিত।
তবে শিশুদেরকে একবারে ডাবের পানি অনেক পান করাবেন না। আস্তে আস্তে ডাবের পানি পান করাবেন। শিশুদেরকে শীতকালে ডাবের পানি খাওয়াবেন না ও গরমের সময় কচি ডাবের পানি খাওয়াবেন। শিশুদের এলার্জি থাকলে ডাবের পানি সাবধানে খাওয়াবেন। শিশুদের কে খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়াবেননা।
লেখকের মন্তব্য
প্রিয় পাঠক আজকের কন্টেন্ট ডাবের পানি সংরক্ষণের বিষয় আলোচনা।ডাবের পানি পান করা আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে যারা ডায়েট করেন তাদের মাথা ঘোরা ও দুর্বলতা ভাব থাকবে না ।
আশা করি ডাবের পানির গুনা গুণ, ডাবের পানি সংরক্ষণের বিষয় ব্যাপারে আমাদের এই পোস্টগুলো থেকে ভালোভাবে জানবেন। কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করবেন। পোস্টগুলো ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন। সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করে শেষ করছি ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url