স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি
প্রিয় পাঠক আজকের বিষয় জেনে নিই পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি। এ বিষয়ে আজকের পোস্ট আলোচনা করা হবে। পদ্মা সেতুর নামকরণ করা হয়েছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। ইহা পদ্মা নদীর মাওয়া ও জাজিরা পয়েন্টে স্থাপিত সেতু। এছাড়াও পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি আপনাদেরকে ভালো লাগবে
পদ্মা সেতুর টোলের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হবে। এসব পদ্মা সেতু সম্পর্কিত যাবত তথ্য এখানে পাবেন। আশা করি আপনাদেরকে ভালো লাগবে।
ভূমিকা
পদ্মা নদীর উপরে নির্মিত পদ্মা বহুমুখী সেতু। এ সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ রয়েছে। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু। এছাড়া এশিয়ার মধ্যে ষষ্ঠতম সেতু। বিশ্বের মধ্যে ১২২ তম সেতু। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সরাসরি সংযোগ তৈরি হয়েছে। আজকের বিষয় পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি। এ বিষয়ে যাবতীয় আলোচনা করা হবে।
পদ্মা সেতুর প্রথম স্প্যান কবে বসে
পদ্মা বহুমুখী সেতু পদ্মা নদীর উপরে নির্মিত সেতু। পদ্মা নদীর মাওয়া ও জাজিরা পয়েন্টে এ সেতু নির্মাণ করা হয়। পদ্মা বহুমুখী উন্নয়ন সেতু এর প্রথম স্প্যান বসানো হয় ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের উপর। ২০১৭ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর পদ্মা নদীর জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের উপর প্রথম স্প্যান বসানো হয়।
আরও পড়ুনঃবঙ্গবন্ধু- শেখ মুজিবুর রহমান টানেল কোথায় অবস্থিত
স্প্যান বসানোর মাধ্যমে পদ্মা নদীর উপর নির্মিত সেতু দৃশ্যমান হয়। পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। নদীর মোট পিলার সংখ্যা ৪২ টি ও স্প্যান সংখ্যা ৪১ টি। ২০১৭ সাল থেকে ২০২০ সাল এর মধ্যে মোট ৪১ টি স্প্যান বসেছে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প
পদ্মা নদীর উপর দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এর সঙ্গে ঢাকা শহরের যোগাযোগের জন্য দুই যুগেরও বেশি সময় আগে পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিভিন্ন আর্থিক সংকট দুর্নীতি সহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করে পদ্মা বহুমুখী উন্নয়ন সেতু নির্মাণ করা হয়। দাবি ছিল সেতুর সঙ্গে সঙ্গে রেলপথ হওয়ার জন্য।
সেতুটি দ্বিতল বিশিষ্ট করা হয়। প্রথম তলায় রেল লাইন এবং দ্বিতীয় তলায় সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম করা হয়। এক নজরে পদ্মার রেল সংযোগ প্রকল্প। ১৯৯৮ সালে প্রথম পদ্মা সেতু নির্মান প্রক্রিয়া যাচাই-বাছাই শুরু হয়। শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেন।১৯৯৯ সালে মে মাসে পদ্মা সেতুর জন্য প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই শুরু হয়।
২০০৩ সালে মে মাসে জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা জাইকা এর অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্পের যাচাই-বাছাই শুরু হয়। এ যাচাই-বাছাই ২০০৫ সালে শেষ হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২০ই আগস্ট একনেকের সভায় ১০১৬১ কোটি টাকা ব্যায়ে পদ্মা সড়ক সেতু প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
২০১১ সালের ১১ই জানুয়ারি একনেকের সভায় প্রকল্প ব্যয় দ্বিগুণ করে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি সংশোধনী করা হয়। পদ্মা সেতুর সঙ্গে রেল সংযোগ ও যুক্ত করা হয়। ২০১১ সালের প্রথমদিকে বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বে একটি কনসোর্টিয়াম তৈরি করা হয়। সেই কনসোর্টিয়াম ছিল এডিপি, জায়কা, ও আই ডিপি।
২০১১ সালের ২৮ এপ্রিল বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১২ সালে ৩০ শে জুন দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করতে সরকার সহযোগিতার না করলে ঋণ টি বাতিল করে দেওয়া হয়। ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০১৬ সালের পদ্মা সেতুর উপর রেললাইন স্থাপনের জন্য ৩৪৯৮৯ কোটি টাকা প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের জুন মাসে। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে সরকারি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ চীনের এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে ২৬৭ কোটি ডলার বা ২১ হাজার ৩৬ কোটি টাকার চুক্তি করে।
২০১৮ সালের ২২ শে মে প্রকল্পটির ব্যায় ৪২৫৭ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৩৯ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা একনেকে সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। ওই সংশোধনীতে মেয়াদ আরো দুই বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। কোভিদ মহামারীতে কাজের অগ্রগতিতে বাধা হলে দুই বছর মেয়াদ বাড়িয়ে সময়সীমা নির্ধারণ করা ২০২৪ সাল পর্যন্ত।
২০২২ সালের ২৫ শে জুন পদ্মা সেতুর মধ্যে যান চলাচল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পের ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৮৩ শতাংশ মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশের ৯৭.৫ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ৮০ শতাংশ বাস্তবায়ন হয় অর্থাৎ সার্বিকভাবে ৮৭ শতাংশে অগ্ৰগতি হয়।
২০২৩ সালের ১০ই অক্টোবর ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার পথের রেললাইন চলাচল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরো আলোচনা করা হবে পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি।
পদ্মা সেতুর টোল তালিকা
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে পদ্মা সেতুর টোল নির্ধারণ করা হয়েছে। নির্ধারিত টোল হল মোটরসাইকেল ১০০ টাকা, কার জিপ ৭৫০ টাকা। পিকআপ ভ্যান ১ হাজার২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১ হাজার ৩০০ টাকা, ছোট বাস (৩১ আসনের কম) ১ হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসনের বেশি) ২ হাজার টাকা। বড় বাস ৩ এক্সেল ২ হাজার ৪০০ টাকা টোল নির্ধারণ করাহয়েছে।
এছাড়া ছোট ট্রাক ৫ টন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৫ টন হতে ৮ টন পর্যন্ত ১ হাজার ১ ০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক ৮ টন হতে ১১ টন পর্যন্ত২ হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাক ৩ এক্সএল পর্যন্ত ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার ৪ এক্সেল পর্যন্ত ৬ হাজার টাকা এর সঙ্গে প্রতি এক্সেল ১ হাজার ৫০০টাকা করে যোগ করে টোল দিতে হবে।
পদ্মা সেতু নদী শাসন কত কিলোমিটার
পদ্মা সেতুর মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে নদীর শাসনের কাজ চলছে। পদ্মা সেতু উক্ত এলাকার সৌন্দর্য অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে। মাওয়া এবং জাজিরা পয়েন্টে নদীর শাসনের কারণে ভ্রমণ পিপাসুদের মধ্যে নতুন গন্তব্য হয়ে উঠেছে। দুই পাশে নদী শাসনের প্রক্রিয়া শেষের পথে। মাওয়া প্রান্তে ১.৬ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ আমাশয়ে বেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
অপরদিকে জাজিরা প্রান্তে ১২.৪ কিলোমিটার নদী শাসন এর কাজ হয়েছে। নদী শাসনের জন্য চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ১১০ কোটি মার্কিন ডলারের মাধ্যমে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। অন্যান্য জায়গার চাইতে পদ্মা সেতুতে নদী শাসনে অনেক বেশি খরচ হয়ে গেছে।
পদ্মা সেতু নির্মাণে নদীর শাসনের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির নাম গাইড ব্যান্ড ফলিং অ্যাপ্রোন। এ কৌশলে পাড় খনন করে ঢাল তৈরি করা হয় এবং সেখানে পাথর ও জিও ব্যাগ দেওয়া হয়। যার ফলে উক্ত জায়গার মাটি ভেঙ্গে গেলেও পাথর ও জিও ব্যাগের কারণে পাড় ভেঙে যাবে না।
স্বপ্নের পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি
পদ্মা নদীর উপরে নির্মিত পদ্মা বহুমুখী সেতু। পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি।এ সেতু মুন্সিগঞ্জের মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরিয়তপুরের জাজিরা পয়েন্ট পর্যন্ত। এ সেতু তৈরি করতে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের ৪১ টি স্প্যান ও ৪২ টি পিলার বসানো হয়েছে। এ সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার। প্রস্তু ১৮.১০ মিটার। দেশের সবচাইতে বড় সেতু এটি।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু কয়টি জেলাকে সংযুক্ত করে
পদ্মা সেতু তৈরির ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে দিয়েছে। দক্ষিণ পশ্চিমা অঞ্চলের একুশটি জেলার মানুষ খুব সহজে কম সময়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবে। এই ২১ টি জেলার লোক ঢাকা শহরে যেতে লাগলে অনেক সময় ধরে ফেরী পারাপার করা লাগতো।
এই সকল এলাকার সকল কৃষি দ্রব্য সহজে ঢাকা শহরে নিয়ে যেতে পারবে। দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের ২১ টি জেলা হচ্ছে খুলনা বিভাগের খুলনা বাগেরহাট যশোর সাতক্ষীরা নড়াইল কুষ্টিয়া মেহেরপুর চুয়াডাঙ্গা ঝিনাইদহ ও মাগুরা বরিশাল বিভাগের বরিশাল পিরোজপুর ভোলা।
পটুয়াখালী বরগুনা ও ঝালকাঠি এবং ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ ফরিদপুর মাদারীপুর শরীয়তপুর। গত ২০১৭ সালের ২৯ শে সেপ্টেম্বর পদ্মা নদীর প্রথম স্পেন বসানো হয়। সেতুর মোট ৪১ টি স্পেন বসানো হয় ও ৪২ টি পিলার বসানো হয়। আরো আলোচনা করা হবে পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি।
পদ্মা সেতু উদ্বোধনের খরচ
২০২২ সালের ২৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। পদ্মা সেতু উদ্বোধন খুব জমকালো ভাবে হয়। ৪, জেলার ডিসিদের নামে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এই চার জেলার ডিসিকে অর্থ ছাড় দেওয়ার জন্য প্রকল্প পরিচালক কে নির্দেশ দেওয়া হয়। সেতু বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ আবুল হাসান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়।
আরও পড়ুনঃ ঠান্ডায় মাথা ব্যথা হলে করণীয়
পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উদযাপন উপলক্ষে তিন থেকে সাত দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই আয়োজন এর জন্য ঢাকা জেলা প্রশাসক মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ও শরীয়তপুর জেলা প্রশাসকের নিকট থেকে চাহিদা পত্র পাওয়া গেছে। চাহিদা অনুযায়ী ঢাকা জেলার জন্য ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা। মুন্সিগঞ্জ জেলার জন্য ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।
মাদারীপুর জেলার জন্য ১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। শরিয়তপুর জেলার জন্য ৫০ লাখ টাকা টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। আমাদের খুব কষ্ট হয় যে দেশ এত ঋণগ্রস্ত তাদের জন্য এত অপচয় করা। দেশ পরিচালনায় যারা আছেন তাদের বিবেচনা বোধ থাকলে উদ্বোধনের জন্য এত টাকা খরচ করত না। এইজন্য বাংলাদেশে সৎ লোকের শাসনের প্রয়োজন।
লেখক এর মন্তব্য
আজকের বিষয় ছিল জেনে নিই পদ্মা সেতুর পিলার কয়টি। আজকের পোস্টে পিলার স্প্যান সহ পদ্মা সেতুর যাবতীয় তথ্যাদি আলোচনা করা হলো। আরো আলোচনা করা হলো সেতুর যাবতীয় তথ্য এবং পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী খরচ। আশা করি আপনাদের ভাল লাগবে। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url