মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) এর জিবনী

 মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) এর জিবনী বিষয়ে আজকের আর্টিকেল লেখা শুরু করলাম। বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ দার্শনিক মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) ছিলেন আমাদের জন্য অনুকরণীয়। তিনি তাঁর সারাটা জীবন ইসলামের খেদমত করে গেছেন। 

তাঁর মূল উদ্দেশ্য আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দিন কায়েম করা। দেশে আল্লাহর আইন অনুযায়ী দেশ চলবে।তার এই উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়ন করতে যেয়ে বহুঘাত ও প্রতিঘাত সহ্য করতে হয়েছে। তবুও তিনি আল্লাহর আইন ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) নির্দেশিত পথ থেকে এক চূলও বিচ্যুত হন নি।

ভূমিকা

দার্শনিক শাইখ মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯০৩ সালে জন্মলাভ করেন। তার জন্মস্থান আওরঙ্গবাদ মহারাষ্ট্র হায়দ্রাবাদ ব্রিটিশ ভারত। তার পিতার নাম সাইয়েদ আহমদ হাসান।
তার পিতা ছিলেন একজন আইনজীবি। তিনি বংশীয় দিক দিয়ে হযরত হুসাইন (রাঃ) এর ৩৬ তম উত্তর পুরুষ। তার ২৩ তম পুর্ব পুরুষ খাজাকুতুব উদ্দিন মওদুদ চিশতি। মাতার নাম রুকাইয়া বেগম।

মাওলানা মওদুদীর (রহঃ)শিক্ষা জীবন

 মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) শৈশবে গৃহশিক্ষক মাওলানা নিয়াজির কাছে আরবি ব্যাকরণ, বালাগাত ও মায়ানি ইত্যাদি শিক্ষালাভ করেন। ১৯১৬ সালে ১১ বছর বয়সে তিনি আল্লামা শিবলী নোমানীর প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসা ফওকানিয়া মাদ্রাসায় রুশ দিয়া শ্রেণীতে ভর্তি হন।সেখান থেকে তিনি এসএসসি লেভেলের মৌলভী পাস করেন।

এরপর তিনি হায়দ্রাবাদের দারুল উলুমে ভর্তি হন। সেখানে ৬ মাস পড়ার পরে পিতার মৃত্যুতে উপার্জনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত ঘটে। ১৯২০ সালে পিতার মৃত্যুর পরে তিনি ভূপাল থেকে দিল্লী চলে যান। 

তিনি সেখানে সাংবাদিক পেশায় যোগ দেন এবং পাশাপাশি জ্ঞান অর্জনেরও চেষ্টা করেন।এ সময় তিনি সমাজবিজ্ঞান, দর্শনইতিহাস , পড়ার জন্য ইংরেজি ও জার্মান ভাষা শিখেন। তিনি বিভিন্ন খ্যাতনামা আলেমদের কাছে শিক্ষা লাভ করেন এবং সেখান থেকে সনদ লাভ করেন। 

দিল্লির দারুল উলুম ফতেপুর এর শিক্ষক মাওলানা শরিফউল্লাহ খানের তত্ত্বাবধানে১৯২৬ সালের ১২ ই জানুয়ারি আদাবিয়া ওয়াবালাগাত, উলুমে আকলিয়া , আরাবিয়া ওয়াফরুইয়া সনদ অর্জন করেন। 

একই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক মাওলানা আশফাকুর রহমান কান্দলভী এর কাছে আরবি সাহিত্য, হাদিস শাস্ত্র, ও ফিকা শাস্ত্র সনদ লাভ করেন। ১৯২৮ সালে জামে তিরমিজি ও মুয়াত্তায়ে মালেক সমাপ্তির করে সনদ পান।

মাওলানা মওদুদীর (রহঃ) সাংবাদিকতা

মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) ১৯১৮ সালে ১৫ বছর বয়সে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি প্রথমে বড় ভাই আবুল খায়ের মওদুদী এর প্রকাশিত মদিনার সঙ্গে দুই মাস কাজ করেন। ১৯২০ সালে ১৭ বছর বয়সে সাপ্তাহিক তাজ এর সম্পাদক নিযুক্ত হন। পরবর্তীতে এ পত্রিকা দৈনিকে পত্রিকায় রূপান্তরিত হয়।

ব্রিটিশ বিরোধী সংবাদ পরিবেশিত হওয়ায় এ পত্রিকার মালিক তাজ উদ্দিন সরকার কর্তৃক মামলায় পড়েন। মাওলানা মওদুদী আবার জব্বলপুর থেকে দিল্লি চলে আসেন। ১৯২২ সালে দিল্লি তে জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা আহমদ সাঈদ ও মুফতি কেফায়েত উল্লাহর অনুরোধ মুসলিম পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯২৩ সালে মুসলিম পত্রিকা বন্ধ হয়ে যায়।১৯২৪ সালে পুনরায় আল জমিয়েতর নামে আবার প্রকাশনা শুরু হয়। পুনরায় আল জমিয়তের সম্পাদক হন। ১৯২৮ সালে জমিয়ত পত্রিকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জাতীয়তার প্রশ্নে মতবিরোধ হলে তিনি পদত্যাগ করেন।

১৯৩২ সালে চার বছর পরে মাসিক তরজমা আল কোরআন প্রকাশের মাধ্যমে তিনি আবার সাংবাদিকতায় জড়িয়ে পড়েন। তরজমা আল কোরআন পত্রিকা এখনো নিয়মিত প্রকাশিত হয়।

মওদুদী (রহঃ) এর দাম্পত্য জীবন

১৯৩৭ সালের ১৫ ই মার্চ দিল্লির শরীফ পরিবারে সাঈদ নাসির উদ্দিন শামসীর কন্যা মাহমুদা বেগমের সাথে বিয়ে সম্পন্ন হয়। মাহমুদা বেগম ইংলিশে অনেক পারদর্শী ছিলেন। ছোটবেলায় তিনি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে লেখাপড়া করেন। তাদের বিয়ের দেনমোহর ধার্য করা হয় ২০০০ টাকা।
মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) এর চার ছেলে ও তিন মেয়ে। মাওলানা মওদুদী (রহঃ) এর ছেলেগুলো যথাক্রমে ১/ উমর ফারুক মওদুদী ২/ প্রখ্যাত ব্রেইন স্পেশালিষ্ট আমেরিকা প্রবাসী ডাঃ আহমদ ফারুক মওদুদী ৩/মুহাম্মদ ফারুক মওদুদী।৪/ হুসাইন ফারুক মওদুদী।

মাওলানা মওদুদীর (রহঃ)সংক্ষিপ্ত জীবনী

বিংশ শতাব্দীতে ইসলামী আন্দোলনের বিপ্লবী ইসলামী চিন্তাবিদ মাওলানা সাইদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের অগ্রপথীক। তিনি জ্ঞান অর্জন, কঠোর শ্রম, প্রজ্ঞাময় লেখনি ও প্রজ্ঞাময় বক্তব্য এর মাধ্যমে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করে গেছেন।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবী (রাঃ) এর পথে থেকে সর্বাবস্থায় কোরআনের তাফসীর ও হাদিস সম্পর্কে গবেষণা করে গেছেন। বিশ্ব বিখ্যাত তাফহীমুল কুরআন এর লেখক তিঁনি। তিঁনি তাঁর গোটা জীবন রাসুল (সাঃ) ও সাহাবী (রাঃ) এর অনুকরণীয় করে চলেছেন।

হাসিমুখে তিঁনি কারাবরণ ,অজস্র মানুষের কটুক্তি, অমূলক অভিযোগ অপবাদ এগুলোর দিকে নজর না দিয়ে সব সময় দ্বীনের প্রচার করে গেছেন। বারবার তাকে যেতে হয়েছে কারাগারে ও ফাঁসির মঞ্চে পর্যন্ত। তিনি মুসলিম উম্মাহর জন্য যা করে গেছেন তার লেখনি পড়লে সেটা বোঝা যায়। 

মাওলানা মওদুদী (রহঃ) সাংবাদিকতা করার পরে র ইসলামিয়া কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। তবে তিনি কোন অবশেষে ১৯৩৯ সালে ৭ই সেপ্টেম্বর লাহোর ইসলামিয়া কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। তবে তিনি কোন বেতন নেননি। ১৯৪০ সালে চাকরি ছেড়ে দেন।

মাওলানা মওদুদীর (রহঃ) সালভিত্তিক কর্মকাণ্ড

১৯০৩ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ভারতের হায়দ্রাবাদের আড়ঙ্গবাদ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯০৬ থেকে ১৯১৩ সাল পর্যন্ত গৃহ শিক্ষকের কাছে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯১৪ সালে ১১ বছর বয়সে মৌলভী পরীক্ষায় পাশ করেন‌। ১৯১৮ সালে খিলাফত আন্দোলনে যোগ দেন।১৯২০ সালে জব্বলপুরে দৈনিক তাজ পত্রিকার সম্পাদক হন। 

১৯২১ সালে দিল্লি গমন করে হাদিস ও তাফসীর অধ্যায়ন করেন১৯২২ সালে জমিয়তে ওলামায়ে ইসলাম এর মুসলিম পত্রিকার সম্পাদক হন। ১৯২৩ সালে পত্রিকা বন্ধ হয়ে গেলে ভূপালে গমন করেন।১৯২৪ সালে হামদর্দ ও আলজনিত পত্রিকার সম্পাদক হন। ১৯২৭ সালে আল জিহাদুল ইসলাম গ্রন্থ রচনা করেন।

 ১৯৩০ সালে হায়দ্রাবাদে প্রত্যাবর্তন করেন এবং ইসলাম পরিচিতি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৯৩১ সালের বই লেখনিতে আত্মনিয়োগ করেন।১৯৩২ সালে হায়দ্রাবাদ থেকে মাসিক তরজুমানুল কুরআন প্রকাশ করেন। ১৯৩৮ সালে কবি আল্লামা ইকবালের পরামর্শে দারুল ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন। 

১৯৪১ সালে ২৬ আগস্ট ৭৫ জন লোক নিয়ে জামাত ইসলামের প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪২ সালে জামায়াতের কেন্দ্রীয় অফিস লাহোর থেকে দারুল ইসলাম এর স্থানান্তর করেন। ১৯৪৩ সালে তাফহিমুল কুরআন লেখার কাজ শুরু করেন। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ হওয়ার পরে জামাত ইসলাম দুইটা ভাগে ভাগ হয়ে যায়।

১৯৪৮ সালের ৬ মার্চ ইসলামী শাসন ব্যবস্থার জন্য চার দফা দাবি পেশ করেন। ১৯৪৮ সালের ১২ ই অক্টোবর মাওলানা সহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৪৯ সালে ৬ থেকে ৮ ই মে জামাতের প্রথম নিখিল পাকিস্তান সম্মেলন শুরু হয়।১৯৫০ সালে মাওলানা সারাদেশে জনসভায় বক্তব্য দান করেন।

১৯৬২ সালের রাবেতা ইসলামী প্রতিষ্ঠা ও আজীবন সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৩ সালে লাহোরের সম্মেলনে বক্তব্যকালে মাওলানা মওদুদী কে গুলি করা হয় সেখানে ২জন সাহাদৎ বরণ করেন।

১৯৬৪ সালে জামাতকে নিষিদ্ধ করা হয় মাওলানা সহ অনেক লোকজনকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৬৪ সালে ১৯শে জানুয়ারি জামাতের সকল রেকর্ড পত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। ১৯৭০ সালে ১৮ই জানুয়ারি মাওলানা আর ঢাকা পল্টন সমাবেশে হামলা এবং দুজন ছাত্র নিহত। ৭০ সালে ১৮-২৮ জুন মাওলানা ঢাকার দশম সফর এবং এটাই শেষ সফর।

১৯৭০ পাকিস্তানের প্রথম জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে যা জামায়াতের আমাদেরঃঃ অংশগ্রহণ। ১৯৭২ সালে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর তাফহীমুল কুরআন রচনা সমাপ্ত। এ সালেই অসুস্থতার কারণে তিনি জামাত ইসলামীর আমিরের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।

মাওলানা মওদুদী (রহঃ) সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীদের বক্তব্য

কাতারের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার বিশ্ব ওলামা পরিষদের প্রধান আল্লামা ইউসুফ আলকারাদাবি বলেছেন ৩০ শে সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ সালে বিশ্ব একজন অসাধারণ ইসলামিক চিন্তাবিদকে হারালো। উনার মত লোক পৃথিবীতে কম ই আসে। যিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামির প্রতিষ্ঠাতা।
যার বই ও তাফসীর পড়ে মুসলিম যুবক এবং বিভিন্ন ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা অনেক উপকৃত হয়েছেন। তিনি বলেন মাওলানা মওদুদী ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। যুগের চাহিদা মোতাবেক তার লেখনী দারা যুবকদেরকে সত্য পথ দেখিয়েছেন।

বাতিলের বিরুদ্ধে তিনি সবসময় আপসহীন ছিলেন।সাইদ কুতুব সবসময় তাকে শ্রেষ্ঠ মুসলিম উম্মাহ হিসেবে ঘোষণা করতেন।। মোহাম্মদ আল হাসান ওয়ালাদ আদদুদো বলেন মাওলানা কে প্রশ্ন করা হয়েছিল একজন মুসলিম দায়ীর কি যোগ্যতা থাকা দরকার।

তিনি উত্তরে বলেছিলেন তাকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। কারণ বিশ্বের অধিকাংশ জ্ঞানগর্ভ কথা ইংরেজিতে প্রকাশ হয়েছ। আরবদের লেখা বিভিন্ন প্রবন্ধতেও গুরুত্বপূর্ণ পদে মহিলাদের অংশগ্রহণ ব্যাপারে মাওলানা মওদুদীর বইয়ের রেফারেন্স নেওয়া হয়।

মিশরে আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে মাওলানা মওদুদীর বিভিন্ন বইয়ের রেফারেন্স নেওয়া হয় এবং তাকে বড় মাপের ইসলামী স্কলার বলে গন্য করা হয়। ইসলামের জন্য বিশাল অবদান রাখার জন্য সৌদি সরকার তাকে বাদশা ফয়সাল পুরস্কারে ভূষিত করেন।

সাহাবীদের সম্পর্কে মাওলানা মওদুদীর (রহঃ)কয়েকটি উক্তি

সংস্কার সংশোধন এবং তাকওয়া ও পরহেজগারির দিক দিয়ে সাহাবীগণ ছিলেন সুউচ্চ। সাধারণ মানুষদের মানুষেরা সে পর্যায়ে ওঠা মুশকিল। সাহাবীদের সাথে হিংসা বিদ্বেষ পোষণ করা আমার দৃষ্টিতে সং ইসলাম ও রাসুল সাঃ এর সঙ্গে দুশমনী করার সমতুল্য।

সাহাবীদের নিন্দা করা অথবা তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা জায়েজ নেই। যে ব্যক্তি সাহাবায়ে কেরামদেরকে মন্দ বলে তারা কেবল ফাঁসি কি নয় তাদের ঈমানী সন্দেহযুক্ত। রাসুল সালাম যে লোকদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন ইতি হাতে তারা ছিলেন অতুলনীয় সৌভাগ্যবান এবং তাদের মধ্যে একজন ছিলেন হযরত ওমর (রাঃ)।

মাওলানা মওদুদীর মতবাদ

মাওলানা মওদুদী মনে করতেন ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ছাড়া ইসলামী রাষ্ট্র চলতে পারে না। আল্লাহর আইন বিধি-বিধান রাষ্ট্রে না থাকলে সেটা ইসলামী রাষ্ট্র হয় না। আর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতিষ্ঠা না করলে পরকালে নাজাত পাওয়া যাবে না।তিনি পুঁজিবাদী কমিউনিজম এর বিপরীত স্বতন্ত্র ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা তৈরি করার রূপরেখা দিয়েছেন।

তিনি স্পষ্ট ভাবে বলেছেন ইসলাম গণতন্ত্র ও উদারবাদ নয় ইসলাম কেবল ইসলামিক। মাওলানা মওদুদী বিশ্বাস করতেন ইসলাম আধুনিকায়ন মানে কিন্তু পাশ্চাত্যবাদকে সমর্থন করে না।তিনি বলেছেন ইসলাম প্রথমে গেলেন নাম তারপরে কর্মের নাম। 

অর্থাৎ ইসলামিক জ্ঞান অর্জনের পরে তার কর্ম দিয়ে সমাজের সকল কাজ ও আইন ইসলামী মতাদর্শে চলতে হবে।মাওলানা মওদু দিয়ে মনে করতেন ইসলামী জেহাদ এর অর্থ হলো অন ইসলামিক সমাজ ব্যবস্থা পরিবর্তন করে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করা।

মাওঃ মওদুদী,(রহঃ) নারীদেরকে রাষ্ট্রপ্রধান বা আইন প্রণেতা হিসেবে অনুমতি দেননি বরং বিরোধিতা করেছেন। তিনি মনে করেন নারীরা সংসার সন্তান সন্ততি সন্তান পরিচালনা ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত থাকা দরকার নারী রাষ্ট্রপ্রধান আল কুরআনের বহির্ভূত কাজ।

মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় মাওলানা মওদুদী (রহঃ)।

সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে আমন্ত্রণে ১৯৬১ সালে ডিসেম্বর মাসে সৌদি যান। মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) কে সৌদি বাদশা মদিনায় একটা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার জন্য পরিকল্পনা করতে বলেন। ১৯৬১ সালের একুশে ডিসেম্বর একটি এই খসড়া পরিকল্পনা করেন।

মাওলানা মওদুদী সাথে চৌধুরী গোলাম মোহাম্মদ ও খলিল আহমদ হামিদি কে নিয়ে বাদশা সঙ্গে দেখা করেন।পরিকল্পনার শুরুতেই তিনি বলেন এটি এমন একটি ইসলামীবিশ্ববিদ্যালয় হবে যেখানে তৈরিকৃত আলেমরা সারা পৃথিবীতে সকল সমস্যার সমাধান করবে।

বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনটি স্তরে ভাগ করেন এবং তিনটি স্তরের নয় বছরের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হবে। প্রথম স্তর চার বছরের। এখানে শিক্ষার্থীরা কুরআন হাদিস ফিকাহ ইসলামী ইতিহাস ও সমাজ বিজ্ঞান অধ্যয়ন করবে। দ্বিতীয় স্তর তিন বছরের। এখানে থাকবে পাঁচটি ফ্যাকাল্টি।তৃতীয় স্তর দুই বছরের। 

এর স্তরে কোন স্কলার পূর্বের দুই স্তরের যেকোনো একটি বিষয়ে গবেষণা করতে পারবে। পরিক্রবণটি বাদশার খুব পছন্দ হয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য মাওলানা মওদুদী সাথে শায়েখ মোহাম্মদ আকবর শায়খ আব্দুল লতিফ শায়েখ মোহাম্মদ আলী আল হারাকান কে অনুরোধ করেন। 

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়ে যায়। ১৯৬২ সালে মাওলানা নিজ দেশে ফিরে আসেন। পরবর্তীতে আবারো বাংলা মধুদিকে সৌদি বাদশা আমন্ত্রণ করেন। তিনি পুনরায় ১৯৬২ সালে মে মাসে মদিনা মনোয়ারায় উপস্থিত হন। প্রথমে মদিনা ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর নিযুক্ততা হয় শায়েখ মোহাম্মদ আলী আরাকান কে।

পরবর্তীতে বাদশা মূল পরিকল্পনাকারী মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) কে ভাইস চ্যান্সেলরের দায়িত্ব দেন। তিনি আমৃত্যু ওই পদে বহাল ছিলেন। ১৯৬২ সালের মে মাসেই বিশ্ব বিখ্যাত সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান রাবেতা আলম প্রতিষ্ঠা করেন।

মাওলানা মওদুদীর (রহঃ)বই সমূহ

মাওলানা মওদুদী রচিত তাফহীমুল কুরআন এক যুগান্তরকারী তাফসীর। যে তাফসীর আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করার আলোকে লেখা হয়েছে। তরজমায়ে কোরআন, তাফহীমুলকুরআন বিষয় নির্দেশিকা, কোরআনের মর্ম কথা, কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা গ্ৰন্থের লেখক।

হাদিস শাস্ত্রের মধ্যে সুন্নাতে রাসুল সাঃ এর আইনগত মর্যাদা, কোরআনের মহত্ত্ব ও মর্যাদা,বই এর লেখক। ইসলামী জীবন দর্শন সম্পর্কে ৩০টির উর্ধ্বে বইয়ের লেখক। আইন রাজনীতি ও রাষ্ট্রীয় অবস্থা এ বিষয়ে ১৪টির উপর বই এর লেখক। ইসলামী আন্দোলন ও সংগঠন এ বিষয়ে প্রায় ১৯ টির মত ব ইয়ের লেখক।

অর্থনীতি ও ব্যাংক ব্যবস্থা এ বিষয়ে ৮ বই লিখেছেন। দাম্পত্য জীবন ও নারী এ বিষয়ে ৪টি বইয়ের লেখক। তাসকিয়ায়ে নফস এ বিষয়ে ৪ টি বইয়ের লেখক। সিরাত সম্পর্কে ৪টি বইয়ের লেখক। অন্যান্য আরো ১০-১২ টি বইয়ের লেখক। তাফহীমুল কোরআন সহ অন্যান্ন বই সমুহ পেতে ডাউন লোড করুন।

মাওলানা মওদুদীর (রহঃ)মৃত্যু

মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) ২২ শে সেপ্টেম্বর ১৯৭৯ সাল ও ১লা জিলক্বদ ১৩৯৯ হিজরি উত্তর আমিরিকার বাফেলোতে চিকিৎসা অবস্থায় মারা যান। ২২ই সেপ্টেম্বর পবিত্র হারামাইন শরিফে গায়েবানা জানাযা অনুষ্টিত হয়।

২৬শে সেপ্টেম্বর পাকিস্থানের লাহোরের সর্ববৃহত গাদ্দাফী ষ্টেডিয়ামে ১০ থেকে ১২ লক্ষ মুসল্লী নিয়ে জানাজা করা হয়। কাবার প্রধান ইমাম ও খতিব মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন সুবায়েল (রহঃ) এ জানাজায় অংশ গ্রহন করেন। জানাজায় ইমামতি করেন প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শাইখ ইউসুফ আলকারযাভি (রহঃ)।

লেখকের মন্তব্য

মাওলানা সাইয়েদ আবুল আলা মওদুদী (রহঃ) ছিলেন একজন আপোষহীন ইসলামী আন্দোলনের অগ্র সৈনিক। তিঁনি তাঁর লেখনীতে ইসলামি রাষ্ট্র ব্যাবস্থার মুলনীতি তুলে ধরেছেন।

আমাদের তার লেখা তাফহিমুল কোরআন সহ অন্যান্ন বই গুলো পড়া প্রয়োজন। আশা করি আমাদের এই পোষ্ট গুলো থেকে অনেক তথ্য পাবেন। আশা করি পোষ্ট গুলো ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট, ও শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url