জেনে নিই গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
প্রিয় পাঠক আসুন জেনে নিই গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা। টমেটো লাল রংয়ের একটি উপকারী ফল। এর ফলে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। আজকের এ পোস্টে আরো উল্লেখ করা হবে টমেটো খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। টমেটো খাওয়ার সঠিক সময়। টমেটো খাওয়ার নিয়ম। এগুলো জানতে আমাদের এই পোস্টগুলো অবলোকন করবেন।
ভূমিকা
টমেটো খুব সুস্বাদু ও পুষ্টিগণ সম্পন্ন ফল। এর উৎপত্তি স্থল পশ্চিম দক্ষিণ আমেরিকা ও মধ্য আমেরিকা। আমাদের দেশে প্রচুর টমেটো উৎপন্ন হয়। টমেটো আমরা সালাত ও সবজি হিসেবে খেতে পারি। আজকে আমাদের বিষয় গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা।
আরও পড়ুনঃ খালি পেটে পাকা পেপে খাওয়ার উপকারিতা
আসুন আমরা আস্তে আস্তে টমেটো সম্পর্কে জেনে নিই। টমেটো শীতকালীন সবজি। যার কারণে শীতকালে আমরা প্রচুর টমেটো পাই। বর্তমানে শীতকালের টমেটোর সঙ্গে সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন টমেটো বাজারে আসছে। এখন দেশে সারা বছরই টমেটো পাওয়া যায়।
সকালে খালি পেটে টমেটো খেলে কি হয়
সকালে কোন কিছু না খেয়ে খালি পেটে টমেটো খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। সকালে খালি পেটে শিশুদেরকে টমেটো খাওয়ালে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশ ঘটে। প্রতিদিন খালি পেটে একগ্লাস টমেটো রস খেলে শরীরের ওজন কমে। সকালে প্রতিদিন এক গ্লাস টমেটো রস খেলে বাত রোগের উপশম হয়।
সকালে খালি পেটে টমেটো খাওয়ার ফলে টমেটোতে ভিটামিন কে, হাড় কে মজবুত করে। প্রতিদিন খালি পেটে সকালে টমেটোর স্যুপ খেলে এটি রক্তে TNF ও লাইকোপেন বাড়িয়ে দেয়। লাইকোপিনের অভাবে হাড়ের সমস্যা হয়। আলফা মাত্রা ৩৪% কমিয়ে দেয়। টমেটোতে পর্যাপ্ত লাইকোপিন থাকে যা খেলে হাড় ও পেশি মজবুত হয়।
জেনে নিই গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা অনেক। একটি মাঝারি আকারের টমেটোতে প্রায় ৪০% ভিটামিন সি থাকে। গর্ভাবস্থায় নিয়মিত টমেটো খেলে ভিটামিন সি এর অভাব পূরণ হয়।
*টমেটোতে পর্যাপ্ত ফায়বার রয়েছে। যার কারণে গর্ভাবস্থায় টমেটো খেলে হজমে সহায়তা করে। পাকস্থলীতে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি হয়। হজমের সময় পেশির সংকোচন প্রসারণ মোলায়েম করে। গর্ভাবস্থায় টমেটো খেলে গর্ভবতীদের ক্যালরি চাহিদা পূরণ হয়। টমেটোতে প্রচুর পটাশিয়াম রয়েছে।
*যার কারণে গর্ভবতীরা টমেটো খেলে শরীরের রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে। উচ্চ রক্তচাপ দূর করে। ভাস্কুলার এর স্বাস্থ্য ভালো রাখে। টমেটোতে পর্যাপ্ত এন্টি অক্সিডেন্ট ও লাইকোপিন বিদ্যমান। যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী জীবাণুর বিরুদ্ধে কার্যকর। টমেটো খেলে ফলিক এসিডের চাহিদা পূরণ করে।
নিয়মিত টমেটো খেলে গর্ভবতী মায়েদের ভিটামিন ই এর চাহিদা পূরণ হয়। গর্ভবতী গন টমেটোর রস পান করলে জীবনী শক্তির বৃদ্ধি পায়। শরীরের ক্লান্তি ও অবসাদ দূর হয়।
টমেটো খাওয়ার নিয়ম
কিটমেটো সবাই পছন্দ করে। কেউ সবজি হিসেবে খায় আবার কেউ ফল হিসেবে খায়।টমেটো দুইভাবেই খাওয়া যায়। আমরা সালাদ হিসেবে প্রত্যহ টমেটো খাই। সালাদ হিসেবে টমেটো সবাই ভালবাসে। এছাড়াও তরকারিতে টমেটো ব্যবহার করা যায়। কাচা এবং পাকা দুই টমেটো তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়।
টমেটো রস করে প্রতিদিন সকালে এক গ্লাস করে রস খেতে পারেন। টমেটো সস হিসেবে খাওয়া যায়। টমেটো সস অনেক স্বাদের। অনেকে আপেলের মতো করে চিবিয়ে ও টমেটো খান। অনেক বাচ্চারাও এ পদ্ধতিতে টমেটো খায়। বর্তমানে কমার্শিয়াল ভাবে টমেটোর সস বাজারজাত হচ্ছে।
একটা প্লেটে কয়েকটি টমেটো কিউব আকৃতি করে কাটুন। কেটে নেওয়া টমেটোতে লবণ মরিচ ও তেল দিয়ে মেখে নিন। অতঃপর বাসায় টিভি দেখতে অথবা গল্প করতে করতে টমেটো খেয়ে নিন। দেখবেন তৃপ্তি সহকারে টমেটো খাওয়া হয়ে গেছে। পুষ্টি তো দেহে পাবেন। টমেটো খেতে লাগলে আস্তে আস্তে অনেকক্ষণ ধরে মুখে রেখে খাবেন।
তাহলে টমেটো এর অতুলনীয় স্বাদ পেয়ে যাবেন। এছাড়া টমেটো জুস করেও খাওয়া যায়। টমেটোর জুস বাজারে পাওয়া যায়। আসুন যেভাবে খাওয়া হোক না কেন আমরা টমেটো থেকে উপকার গ্রহণ করি।
কাচা টমেটোর উপকারিতা কি
পাকা টমেটোর পাশাপাশি কাচা টমেটো অনেকেই পছন্দ করেন। আজকের পোস্ট গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা। এর সঙ্গে সঙ্গে কাচা টমেটোর উপকারিতা ও জেনে নিই। কাচা টমেটোতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।দাত ও ত্বকের যত্নে ভূমিকা রাখে। কাচা টমেটোতে কিউমেরিক ও ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড আছে।
আরও পড়ুনঃ জাফরান খেলে কি ত্বক ফর্সা হয়
তাই কাচা টমেটো খেলে ক্যান্সার মুক্ত থাকতে সহায়তা করে। পোস্টেড ক্যান্সার ও পাকস্থলী ক্যান্সার কাচা টমেটো খাওয়ার ফলে কমে যায়। কাচা টমেটোতে থাকা লাইকোপিন এন্টিঅক্সিডেন্ট হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
কাচা টমেটো পটাশিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় কলেষ্টোরেল এর মাত্রা ঠিক থাকে। রক্তচাপ ও স্বাভাবিক থাকে। যারা ধূমপান ছাড়তে পারেন না। কাচা টমেটো খেলে ধূমপানের আসক্তি কমে যায়।
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা কি
টমেটো সবার প্রিয় ফল। এর ফলে ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফায়বার ও বিভিন্ন রকম মিনারেলস বিদ্যমান। টমেটোতে পর্যাপ্ত পটাশিয়াম থাকায় টমেটো খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের ষ্ট্রেসহরমোন কমায়। শরীরের শক্তি বাড়ে এবং শরীর সুস্থ থাকে। নিয়মিত টমেটো খেলে রক্তশূন্যতা দূর হয়।
রক্ত এর কণিকাগুলো বৃদ্ধি পায় রক্ত পরিষ্কার করে। ভালো হজমে সহায়তা করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। টমেটোতে লাইকোপিন থাকায় শরীরের ত্বক এর গঠন ভালো করে। ত্বক মোলায়েম ও সতেজ করে। ত্বক থেকে বয়সের ছাপ কমায়। টমেটোতে পর্যাপ্ত ভিটামিন কে ও ক্যালসিয়াম থাকে। এইজন্য টমেটো খেলে হাড় ও পেশি মজবুত হয়।
হাড় ও পেশির সমস্যা থাকলে তা ভালো হয়। টমেটোতে ভিটামিন এ ও ভিটামিন সি আছে। যাহার কারণে ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিক্যাল থেকে শরীর মুক্তি পায়। টমেটোতে পর্যাপ্ত ভিটামিনএ, ভিটামিন বি ও পটাশিয়াম আছে। যাহার কারণে শরীরের কোলেস্টরেল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। রক্তে ক্রোমিয়াম নামক উপাদান থাকায় রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে।
এইজন্য ডায়াবেটিস রোগীরা নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন। টমেটোতে পর্যাপ্ত ফাইবার থাকাই হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। পাকস্থলীতে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বৃদ্ধি করে। কোষ্ঠকাঠিন্যতাও দূর করে। টমেটোতে লাইকোপিন ও এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। টমেটোতে পটাশিয়াম ও ভিটামিন কে থাকায় রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না যা হার্টের জন্য ভালো।
টমেটো খেলে কি গ্যাস হয়
টমেটোতে সাইট্রিক ও ম্যালিক এসিড থাকে যা গ্যাস নিরাময়ের সহযোগিতা করে। তবে বেশি টমেটো খেলে আবার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। টমেটোতে প্রচুর ফায়বার আছে যার কারণে হজম তাড়াতাড়ি হয়। অপর দিকে টমেটোতে রয়েছে ম্যালিক ও সাইট্রিক এসিড।
পাকস্থলীতে এসিড অম্ল এর প্রবাহ বৃদ্ধি করে। যাহার কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যায়। তবে যাদের এসিডিটি আছে তাদের জন্য বেশি টমেটো খাওয়া ঠিক না। আজকের আলোচ্য বিষয় গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
টমেটো খাওয়ার অপকারিতা
টমেটো একটি উপকারী ফল। গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা অনেক। তারপরেও কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। টমেটোতে রয়েছে ম্যালিক ও সাইট্রিক এসিড। পাকস্থলীতে এসিড অম্ল এর প্রবাহ বৃদ্ধি করে। যাহার কারণে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যায়। টমেটো বেশি খাওয়া ঠিক না। যাহারা পেটের অসুস্থতায় ভোগেন।
আরও পড়ুনঃ জেনে নিই সুষম খাদ্য কাকে বলে
তাদের জন্য অতিরিক্ত টমেটো না খাওয়ায় ভালো। টমেটোতে হিস্টামিন নামে এক ধরনের উপাদান আছে। তাই অতিরিক্ত টমেটো খেলে হিষ্টামিন এর কারণে এলার্জি হতে পারে। মুখ জিহ্বা ও মুখের ফুলা ভাব, হাচি গলা জ্বালা ইত্যাদি হতে পারে। টমেটোতে ক্যালসিয়াম অক্সালেট বিদ্যমান। বেশি টমেটো খেলে শরীরে ক্যালসিয়াম অক্সালেট জমা হয়ে কিডনিতে পাথর হতে পারে।
বেশি টমেটো খেলে গেটে বাত হতে পারে। টমেটোতে সোলানিন অ্যালকোয়েড থাকে। ইহা ক্যালসিয়াম তৈরিতে বাধা দেওয়ার কারনে গেটে বাত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বেশি টমেটো খেলে টমেটোতে থাকা লাইকোপেন শরীরে জমা হয়ে লাইকোপিনোডারমিয়া নামে এক ধরনের সমস্যা দেখা দেয়।
যার কারণে ত্বকের রং বদলায় ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করে। যাহার কারণে প্রতিদিন ৭৫ মিলিগ্রাম এর বেশি লাইকোপেন খাওয়া ঠিক না। টমেটোতে সালমোনেলা নামক ব্যাকটেরিয়া থাকায় বেশি টমেটো খেলে ডায়রিয়া হতে পারে।
লেখকের ভূমিকা
আজকের আলোচ্য বিষয় গর্ভাবস্থায় টমেটো খাওয়ার উপকারিতা। এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হলো। এছাড়াও টমেটোর উপকারিতা ও অপকারিতা বিষয়ে আলোচনা করা হলো। টমেটো খাওয়ার নিয়ম ও আলোচনা করা হয়েছে। টমেটোর বিভিন্ন গুনাগুন জানতে আমাদের এই পোস্ট ভিজিট করুন। আশা করি ভালো লাগবে। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url