মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ কোন খাতে হয়

আজকের পোষ্টের বিষয় মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ কোন খাতে হয়। মাছ শীতল রক্ত বিশিষ্ট মেরুদন্ডী প্রাণী। যা শ্বাস-প্রশ্বাস কার্য পরিচালনা করে ফুলকার সাহায্যে। বাংলাদেশে মাছ আমিষের চাহিদার প্রধান উৎস। কথায় আছে মাছে ভাতে বাঙালি।
মাছ খাবারের তালিকায় আমাদের নিত্য প্রতিদিনের সাথী। মাছ ভালোবাসে না এমন লোক পাওয়া মুশকিল। সাধারণত প্রাকৃতিকভাবে সাগর ও মহাসাগর নদ-নদী হইতে মাছ পাওয়া যায়। খাল বিলেও প্রচুর মাছ হয়। তবে আমাদের দেশে চাষকৃত মাছ খুব উৎকৃষ্ট মানের।

ভূমিকা

আমাদের দেহে মাছ উল্লেখযোগ্য আমিষের স্থান করে নিয়েছে। মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ কোন খাতে হয় এটা আমাদের জানা খুব প্রয়োজন। মাছ চাষ করতে গেলে এ ব্যাপারে আগে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
পৃথিবীতে ৩০ থেকে ৪০ হাজার প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও ২৬০ প্রজাতির সাধু জলের মাছ পাওয়া যায়। মাছ চাষের বিভিন্ন দিক নিয়ে আজকের এই পোস্টে আলোচনা করা হবে। আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।

শতক প্রতি মাছ ছাড়ার নিয়ম

শতকে কয়টি মাছ ছাড়া হবে সে বিষয় নির্ভর করে পোনা মাছ অথবা বড় মাছ এর ক্ষেত্রে। এছাড়া আরো নির্ভর করে পুকুরে পানির গভীরতার উপর। তাছাড়া কার্প মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে একরকম অথবা কার্পফ্যটেনিং এর ক্ষেত্রে আরেক রকম ভাবে মাছ ছাড়া যায়।একেক জন একেক ভাবে মাছ ছেড়ে চাষ করে।

মিশ্র চাষের ক্ষেত্রে প্রতি শতাংশে তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ২৫০ টি ও কার্প জাতীয় মাছ ১৫ থেকে ৩০ টি পোনা মজুদ করা যায়। আমরা কার্প মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে এক শতক পুকুরে ৩০ কেজি মাছ উৎপাদন করতে পারি। এই ক্ষেত্রে তিন কেজি ওজনের মাছ বাজারজাত করলে ১০ টি মাছ সেট করতে হবে। আবার ২ কেজি করে ওজন বাজারজাত করতে হলে ১৫ টি মাছ সেট করতে হবে।

আবার এক কেজি মাছ বাজারজাত করতে হলে ৩০ পিস মাছ সেট করতে হবে। আবার যদি শিং মাছ  করি তাহলে প্রতি শতকে ৪০ কেজি উৎপাদন করা যাবে। এজন্য কেজিতে ১৫ টি মাছ বাজারজাত করি তাহলে ছয় শত পিস মাছ সেট করা যাবে। পাঙ্গাস মাছ চাষ করতে হলে শতকে চল্লিশ কেজি মাছ পাওয়া যাবে।

এক্ষেত্রে ২ কেজি হিসাবে বাজার জাত করতে চাইলে ২০ টি মাছ সেট করা যাবে। ১ কেজি মাছ বাজারজাত করতে হলে ৪০ টি মাছ সেট করা যাবে। এভাবে সকল মাছের হিসেবটা মিলাতে হবে। এককথায় কার্প জাতীয় মাছ এক শতকের ৩০ কেজি পেতে পারি। শিং জাতীয় মাছ অথবা পাঙ্গাস মাছ প্রতি শতকে ৪০ কেজি উৎপাদন পেতে পারি।

তেলাপিয়া মাছ চাষে লাভ কেমন

তেলাপোয়া মাছ চাষ লাভজনক। কারণ এ মাছ ছোট ছোট পুকুর গুলোতেই করা যায়। যে সকল পুকুরে সাধারণত তিন চার ফিট পানি সেগুলো পুকুরে মাছ চাষ করা যায়। তবে তেলাপিয়া মাছের খাবারের দাম অনেক বেশি। যেহেতু ২৫ থেকে ২৮ ভাগ প্রোটিন লাগে তেলাপিয়া মাছে। এজন্য বর্তমানে তেলাপিয়া মাছের সাথে শিং ও মাগুর মাছ চাষ করা হচ্ছে।

সুবিধা আছে যে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই মাছ বাজারজাত করা যায়। মৎস্য গবেষণাগারের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডঃ এ এইচ এম কোহিনুর বলেন প্রতি শতকে পাঁচ থেকে ছয় গ্রাম ওজনের ২০০ থেকে ২৫০ টি পোনা মজুদ করা যায় । চার পাঁচ মাসের মধ্যেই ২৫০ থেকে ৩০০ গ্রাম ওজনের মাছ হয়।

তেলাপিয়া মাছ ধরতে হলে পুকুর শুকাতে হয়। যেহেতু কম সময়ে এবং ছোট পুকুরে মাছ চাষ করা যায়। ক্ষুদ্র চাষীরাই এই মাছ চাষ করতে পারে। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ মাছ চাষ করে আয় করা সম্ভব। এছাড়া জানতে হবে মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ কোন খাতে হয়।

শীতে কোন মাছ চাষে লাভ বেশি

মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। আমাদের দেশে রুই কাতলা মৃগেল সহ কার্প মাছ বেশি চাষ করা হয়। তাছাড়া উপযুক্ত তাপমাত্রায় মাছ অনেক বেশি বড় হয়। তবে কার্প জাতীয় মাছ বিশেষ করে রুই কাতলা মৃগেল ১৪-১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে সহ্য করতে পারে না। এইজন্য শীতকালে একটু মাছের পরিবর্তন করা দরকার।

শীতের মৌসুমে সিলভার কার্প ব্রিগ্রেড কার্প, রুপালি রুই, মিনার কার্প, গ্রাস কার্প বেশি উৎপন্ন হয়। এগুলো মাছ সাধারণত চার-পাঁচ ডিগ্রি তাপমাত্রাতেও খাবার খেয়ে দ্রুত বাড়ে। রুই কাতলা মাছের চাইতে এগুলো মাছের স্বাদ একটু কম। এরপরেও এগুলো মাছ যেহেতু শীতকালে চাষ করা যায়। আমাদেরকে একটু পরিবর্তন করে শীতকালে এগুলো মাছ চাষ করা লাভজনক।

মাছ চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি

মাছের ভালো উৎপাদনের জন্য ভালোভাবে পুকুর প্রস্তুত করতে হবে। প্রথমে পুকুরের পাড় গুলো মেরামত করে অবাঞ্চিত মাছ দূর করার জন্য রটেনন ব্যবহার করতে হবে। এরপরে প্রতি শতকে ২০০ গ্রাম করে চুন ব্যবহার করতে হবে। পুরাতন পুকুর হইলে কিছু কাদার পরিমাণ কমানো যায়।

চুন ব্যবহারের ফলে পানির ঘোলাত্ত্ব দূর হয়। পানির এমোনিয়া দুর হয়। অতঃপর পুকুরে সার ও খৈল ব্যবহার করতে হবে। পুকুরের পানিতে পোকা হলে পোকা মারার জন্য ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। পুকুরের পানিতে প্রতি শতকে ৫০ গ্রাম চিটাগুর ব্যবহার করতে হবে।

এরপরে পুকুর প্রস্তুত হয়ে যাবে। এই প্রস্তুত পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার জন্য উপযুক্ত। পোনা ছাড়ার পূর্বে লক্ষ্য রাখতে হবে পানিতে পর্যাপ্ত খাবার হয়েছে কিনা। পুকুরে পোনা সেট করার পরে দুইদিন খাবার বন্ধ রাখতে হবে। অতঃপর পুকুরের খাবার দিতে হবে।

মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ কোন খাতে হয়

মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ কোন খাতে হয় এ বিষয় বর্ননা করা হলো। মাছ চাষ একটি লাভজনক ব্যবসা। মাছ চাষ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ মাছ আমাদের আমিষের সবচেয়ে বড় উৎস। তবে বর্তমান মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ পুকুরের লিজ বাবদ হয়ে গেছে। লিজ অত্যন্ত বেড়ে গেছে। যেমন প্রতি বিঘা পুকুরের লিজ খরচ এক বছরের জন্য ৭৫ থেকে ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
বর্তমানে এক বিঘা পুকুর থেকে ৭০০ থেকে ৮০০ কেজি মাছ উৎপাদন করা যায়। যে মাছের মূল্য ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা থেকে 2 লক্ষ টাকা। ৮০০ কেজি মাছ উৎপাদনে ১৬০০ কেজি খাবারের প্রয়োজন হয়। উক্ত খাবারের দাম প্রায় ৮০ হাজার টাকা। যে খরচে মাছ বিক্রয় করে খুব বেশি লাভ করা মুশকিল হয়ে গেছে।

এছাড়া আরো অনেক সমস্যা আছে। অনেক ফিডের মান খারাপ। প্রোটিনের অবস্থাও কম। যার কারণে ভবিষ্যতে মাছ চাষ হুমকির মধ্যে পড়ে যেতে পারে। মাছ চাষ উন্নত করার জন্য সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। আমরা আশা করব এ ব্যবসাতে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

মিশ্র মাছ চাষ পদ্ধতি

মিশ্র চাষ পদ্ধতি বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন পাঙ্গাস মাছের সঙ্গে শিং মাগুরের মিশ্র চাষ। কার্প জাতীয় মাছের সঙ্গে পাবদা গুলশা এর মিশ্র চাষ। তেলাপিয়ার সঙ্গে শিং মাগুর মাছের মিশ্র চাষ। তবে এখানে কার্প মাছের সঙ্গে মিশ্র চাষ আলোচনা করা হলো। কার্প মাছের সঙ্গে মিশ্র চাষ হিসেবে গুলশা ও পাবদা দিলে ভালো হয়।

প্রথমে কার্প ফ্যটেনিং সেট করতে হবে। প্রতি শতকে ৩০ কেজি কার্প মাছ পাওয়া যাবে। এদিকে ৩০ কেজি পাবদা ও গুলশা মাছ পাওয়া যাবে। যদি ২ কেজি করে কার্প মাছ বাজারজাত করা হয় তাহলে প্রতি শতকে কার্প মাছ সেট করতে হবে ১৫ পিস। 

অপরদিকে আমরা যদি পাবদা গুলশা কেজিতে ২০ টি বাজারজাত করি তাহলে মাছ সেটের প্রয়োজন হবে। প্রতি শতকে গুলশা ও পাবদা ৬০০ পিচ। এ মাছগুলো নির্দিষ্ট সময় পালন করে বাজারজাত করা যাবে। খাবার হিসেবে কার্প মাছের জন‌্য কার্প ফিড। পাবদা গুলশার জন্য ৩০% প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে।

 এই উৎপাদন অনেক লাভজনকঠে আসে। অপরদিকে পাবদা গুলশা বাজারজাত করে মুনাফা হিসেবে থেকে যায়। অতএব আমাদেরকে মিশ্র চাষের দিকে ঝুঁকে পড়তে হবে। মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ কোন খাতে হয় এ বিষয় জানা দরকার।

আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ

মাছ চাষ অনেক প্রতিবন্ধকতা পরিবেশের কারণে আধুনিক মাছ চাষ পদ্ধতি তে মাছ চাষ করতে হবে। এক্ষেত্রে পুকুরে অধিক অক্সিজেন দ্রবীভূত করার জন্য অ্যারেটর মেশিন সেট করা যায়। এরেটর মেশিনের মাধ্যমে মাছ চাষ করলে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ মাছ চাষ করা যায়।

 যেখানে আমরা একশতক জলকর থেকে ত্রিশ কেজি মাছ পেতে পারি। অপরপক্ষে আধুনিক মাছ চাষে প্রতিশতক পুকুর থেকে ৪৫ থেকে ৫০ কেজি পর্যন্ত মাছ আহরণ করা যায়। যেহেতু খাজনা অনেক বেড়ে গেছে। এজন্য আধুনিকভাবে মাছ চাষ করলে মাছ চাষীগন অনেক লাভবান হবে। আরও জানুনঃ জেনে নিনএলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে কাকে বলে 
প্রাকৃতিক আবহাওয়ার কারণে অনেক সময় মাছ ভেসে নষ্ট হয়ে যায়। সুবিধার দিক হলো আধুনিক মাছ চাষে এর ব্যবহার করার কারণে পুকুরে অক্সিজেন ঘাটতে হয় না।সাধারণ পুকুরের চাইতে মাছের বৃদ্ধি প্রায় দেড় গুণ হয়। আমরা সবাই আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করি। 

আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষ করার জন্য বায়োফ্লক করে মাছ চাষ করা হয়। এক্ষেত্রে অ্যামোনিয়া দুর করার জন্য প্রতি শতকে ৫০ গ্রাম চিটাগুর ব্যবহার করা হয়। যার ফলে পুকুরে অ্যামোনিয়া সংক্রান্ত কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।

লেখকের মন্তব্য

মাছ চাষে অর্ধেকের বেশি খরচ কোন খাতে হয় এ বিষয়ে এ পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে জমির খাজনার দাম অনেক বেশি হওয়ায় মাছ চাষীদের মাছ চাষ করা দুরূহ ব্যাপার হয়েছে। এজন্য একটু সাবধানে মাছ চাষ করতে হবে। মাছ চাষ করার ক্ষেত্রে সব সময় খরচ কম করার চেষ্টা করতে হবে।

আসুন আমরা সবাই মাছ চাষ করে দেশের প্রোটিন চাহিদা পূরণ করি। সাথে সাথে সম্ভাবনাময় মাছ বাহিরে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করি। মাছ চাষের ব্যাপারে আমাদের এই পোস্ট আশা করি আপনাদের উপকার করবে। পোস্টগুলো ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url