দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি

আজকের বিষয় দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি। ঘি ভারতীয় উপমহাদেশের তৈরি একপ্রকার পরিচিত মাখন। খাবারের রান্না স্বাদ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য উপমহাদেশে ঘি প্রচুর ব্যবহার হয়। মাখন কে জাল দিয়ে পানি উড়ে দিয়ে ঘি তৈরি করা হয়। ঘি ও মাখন এর মধ্যে মূল পার্থক্য হল সাধারণ তাপমাত্রায় ঘিরাখাযায়। মাখন সাধারণত ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে হয়। মাখনকে জাল দিয়ে ঘি তৈরির প্রক্রিয়ার উপর নির্ভর করে ঘি কত ভালো অথবা খারাপ। তাছাড়া সুগন্ধ এবং স্বাদ জাল দেওয়ার উপরই নির্ভরশীল। গরুর দুধ থেকে সরের মাধ্যমে যে ঘি পাওয়া যায় সেটাই হল সর্বোচ্চ ঘি।

ভূমিকা

আজকের বিষয় দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি। ভারতীয় মহাদেশের সর্বত্রই রান্নায় ঘি এর ব্যবহার বহুদিন থেকে প্রচলিত। বাংলাদেশেও পোলাও বিরিয়ানি তৈরি করতে সাধারণত ঘি এর প্রয়োজন হয়। নানারকম ভর্তা ভাজি তৈরিতে ঘি এর প্রচুর ব্যবহার রয়েছে।

আরও জানুনঃ পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ 

পাঞ্জাবের রেস্তোরা গুলোতে ঐতিহ্যবাহী খাবারে ঘি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে সয়াবিন তেল সহ অন্যান্য তেলের চাইতে ঘিয়ের গুণাগুণ ভালো। অতএব তেলের পরিবর্তে ঘি দিয়ে রান্না করা যায়।

দুধ থেকে মাখন তৈরির পদ্ধতি

কাঁচা দুধ একটি পাত্রে করে ফ্রিজে রাখতে হবে। ২৪ ঘন্টা রাখার পরে দুধ টি বাহির করে নিতে হবে। অতঃপর একটা চামচ দিয়ে উপরে স্তর যে ক্রিম থাকে সেটা আস্তে আস্তে তুলে আলাদা করে নিতে হবে। ক্রিমটি একটা পাত্রে নিয়ে মিক্স করুন। পরবর্তীতে আবার ফ্রিজে রাখুন। ফ্রিজ থেকে বাহির করে নিয়ে ক্রিমগুলো পানিতে ধুয়ে নিন।

অতঃপর ধুয়ে নেওয়ার পরে সেটা মাখন হয়ে যাবে। অতঃপর মাখন যে কোন আকৃতিতে তৈরি করে ফ্রিজে রাখুন। অন্য পদ্ধতিতেও মাখন তৈরি করা যায়। এক্ষেত্রে বাড়িতে দুধ জাল দিয়ে দু-তিন দিন সর অথবা মালাই তুলে রাখতে হবে। ডিপ ফ্রিজে রাখলে ৭-৮ দিনও উক্ত সর রাখা যায়। অতঃপর স্বরগুলো একসঙ্গে নিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে।

ব্লেন্ড করা সরে হাফ কাপ পানি দিতে হবে। ব্লেন্ড হয়ে গেলে সেখান থেকে মাখনটি আলাদা করতে হবে। এখন শক্ত করার জন্য বরফ বা ঠান্ডা পানিতে দিয়ে দিতে হবে। অথবা সেখান থেকে হাত দিয়ে মুষ্টি তৈরি করে ফ্রিজে রাখতে হবে ব্যবহারের জন্য। হয়ে গেল মাখন এখান থেকে খাওয়ার জন্যব্যবহার করা যাবে।

দুধ থেকে ঘি বানানোর পদ্ধতি

প্রথমে পাঁচ কেজি দুধ নিতে হবে। দুধ আস্তে আস্তে জাল দিয়ে আস্তে আস্তে সর তুলে জড়ো করতে হবে। নরমাল ফ্রিজে দুই দিন পর্যন্ত সর জড়ো করা যায়। ডিপ ফ্রিজে ৬ থেকে ৭ দিন সর জড় করা যায়।জড়ো করা সর শিলপাটাই ভালো করে পিশতে হবে।

ব্লেন্ডও করা যেতে পারে। শিলপাটায় পিশলে বেশি ভালো হয়। অতঃপর আড়াই তিন লিটার পানি নিয়ে পানির ভিতরে ব্লেন্ড করা সর দিতে হবে। সেখান থেকে মাখন গুলো ছেকে নিতে হবে। ছাকার সময় লক্ষ রাখতে হবে যেন কোন পানি না থাকে।

বাটারগুলো একটি কড়াইয়ে আস্তে আস্তে জাল দিতে হবে। দেখা যাবে এক ধরনের পোড়া স্তরহয়েছে। হয়ে যাবে ঘি। পরে ঠান্ডা করে ঘি গুলো একটা বয়োমে রাখতে হবে। হয়ে গেল ঘি।এটা হল অরজিনাল ঘি এবং খেতে অনেক মজা।

বোতল দিয়ে মাখন তৈরি

প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে মাখন তৈরি করতে হলে প্লাস্টিকের বোতল আর দুধ নিতে হবে। প্রথমে এক কেজির দুধ দিতে হবে এবং হালকা দুধটা গরম করে নিতে হবে। গরম দুধ টি ঠান্ডা করে নিতে হবে। এক লিটার দুধ নিলে ২ লিটারের একটা বোতল নিতে হবে। ঠান্ডা দুধ একটি বোতলে নিতে হবে। বোতলটি দুধসহ ১৫ থেকে ২০ মিনিট খুব জোরে জোরে ঝাকিয়ে নিতে হবে।

অতঃপর বোতল থেকে একটা পাত্রে দুধগুলো ঢেলে নিতে হবে। দুধগুলো একটা সুতির কাপড় ছেঁকে নিতে হবে। ছেকে নিলে মাখন আলাদা হয়ে যাবে। আর নিচে ননী বিহীন দূধ থাকবে। ননি বিহিন দুধগুলো খাওয়ার জন্য ব্যবহার করা যাবে। মাখন গুলো একটি পাত্রে রেখে ফ্রিজে রেখে খেতে হবে। হয়ে গেল সুস্বাদু মাখন।

১ কেজি ঘি তৈরি করতে কতটুকু দুধ লাগে

১ কেজি ঘি তৈরি করতে সাধারণত ৩০-৩৫ কেজি দুধের ক্রিমের দরকার হয়। এক্ষেত্রে নির্ভর করে দুধের ফ্যাটের উপর। ৩০-৩৫ কেজি দুধ জাল দিয়ে সর তুলে রাখতে হবে। আর বাকি দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করা যাবে। সরগুলি শিলপাটায় পিষে নিতে হবে। অতঃপর পানির সঙ্গে মিশিয়ে মাখন তৈরি করে নিতে হবে।

আরও জানুনঃ কাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা এর বিবরন

তৈরী করা মাখন আস্তে আস্তে চুলার আচে জাল দিতে হবে। এক পর্যায়ে ঘি হয়ে যাবে। অতঃপর কড়াই থেকে তুলে ঠান্ডা করে নিতে হবে। ঠান্ডা করে নেওয়ার পরে ঘি গুলো একটা বয়োমে রাখতে হবে। উক্ত বোয়োম ফ্রিজে রেখে অনেক দিন পর্যন্ত ঘি খাওয়া যায়।

গাওয়া ঘি কিভাবে তৈরি করে

দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি মেনে গাওয়া ঘি তৈরির অনেক পদ্ধতি আছে। গাওয়া ঘি খেতে খুব সুস্বাদু এবং সুগন্ধটা অনেক বেশি। গাওয়া ঘি তৈরি করতে হলে প্রথম দুধের সর ১ কেজি পরিমাণ মতো ঠান্ডা পানি,মাটির পাত্র, একটা কাঠের চামচ নিতে হবে। প্রথমে দুধ জাল দিয়ে আস্তে আস্তে সর তুলতে হবে। সরগুলো ডিপ ফ্রিজে রাখলে ৬-৭ দিন রাখা যায়।

অতঃপর সরের পরিমাণ এক কেজি হয়ে গেলে ঘি তৈরির কাজ শুরু করা যায়। সরগুলো প্রথমে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে অথবা শিলপাটায় পিষে নেওয়া যেতে পারে। অতঃপর ব্লেন্ড করা সর গুলো পাত্রে পানি দিয়ে তার মধ্যে দিতে হবে। ব্লেন্ড করা স সর সহ পানি একটি সুতির কাপড় দিয়ে ছেকে নিতে হবে। ছেকে নিলে সেটা মাখন হয়ে গেল।

মাখনে জেন কোন পানি না থাকে। চুলায় মাখন গুলো কড়াইয়ে অল্প আচে আস্তে আস্তে নাড়তে হবে। সবগুলো মাখন পুড়ে গাড়ো বাদামী রঙ হয়ে যাবে। তখন ঘি হয়ে যাবে। ঠান্ডা করে নিতে হবে। ঠান্ডা হলে হলে ঘি গুলো বয়োমে রেখে সংরক্ষণ করতে হবে।

দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি

গরুর দুধ জাল দিয়ে আস্তে আস্তে সর সংগ্রহ করে নিতে হবে। সবগুলো সংগ্রহের ক্ষেত্রে ফ্রিজে রেখে দিতে পারেন। সরগুলো সংগ্রহ হয়ে গেলে উক্ত সর গুলো ফ্রিজ থেকে বের করে নিতে হবে। অতঃপর সরগুলো শিলপাটায় পিষে অথবা ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ব্লেন্ড করে নেওয়ার পরে উক্ত সরগুলো বাটিতে পানি নিয়ে পানির ভেতর ছেড়ে দিতে হবে।

পানি থেকে মাখনগুলো সব ভেসে উঠবে। অতঃপর একটি সুতির কাপড় দিয়ে মাখনগুলো ছেকে নিতে হবে। মাখন ছাকা কাপড়টি ৪ থেকে ৫ ঘন্টা রেখে দিতে হবে। তাহলে মাখন থেকে সব পানি ঝরে যাবে। অতঃপর উক্ত মাখনগুলো চুলায় অল্প আচে করাই জাল দিতে হবে।

জাল দেওয়ার সময় ঘন ঘন নাড়তে হবে। মাখন গুলো যখন গাড়ো বাদামি কালার হয়ে যাবে। তখন কড়ায় তুলে ঠান্ডা করতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে ছেকে ঘি গুলো বয়োমে সংরক্ষণ করতে হবে। হয়ে গেল দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি।য

ঘি খাওয়ার পদ্ধতি

দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি অনুযায়ী ঘি বানালে উন্নত মানের হবে। ঘি একটি উপকারী ও শক্তিবর্ধক খাদ্য। বাঙালিরা সবাই ঘি অনেক বেশি পছন্দ করে। সুস্বাদু রান্না তৈরিতে ঘি এর প্রয়োজন হয়। বিরিয়ানি, কাচ্চি, তেহেরি, সহ ভালো ভালো রান্নায় ঘি ব্যবহার হয়। সাধারণত ওজন কমানোর জন্য সকালে ঘি খাওয়া হয়।

আরও জানুনঃ কাচা আম খাওয়ার অপকারিতার বিবরন

সকালে ঘি খেলে ভালো কোলেস্টেরল বাড়েএবং অতিরিক্ত চর্বি জমা হতে রক্ষা পাওয়া যায়। ঘি যেকোন তরকারিতে সাধ বাড়ানোর জন্য ঘি ব্যবহার করা হয়। ডায়েট করার সময় চা অথবা কফির সঙ্গে ঘি মিশিয়ে খাওয়া যায়। ঘি মিশিয়ে চা অথবা কফি খেলে শরীরে ফ্যাট বার্ন হয়। গরম দুধ অথবা গরম ভাতের সঙ্গেও ঘি খাওয়া যায়।

এছাড়া ভর্তা বা বিভিন্ন ভাজিতেও ঘি ব্যবহার করা হয়। যাদের ত্বক সবসময় শুষ্ক থাকে তারা পানির সাথে ঘি মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়া ঘি শরীরের ত্বকে মালিশও করতে পারেন। তাহলে ত্বক নরম ও তরজা হবে।

এছাড়া কোথাও ব্যাথা পেলে অথবা ফুলে গেলে ঘি গরম করে মালিশ করলে ব্যথা ফুলে যাওয়াটা ভালো হয়। যাদেরঠোট কালো হয়ে যায় ঠোঁটে ঘি ব্যবহার করলে ঠোঁট গোলাপি কালার হবে । এছাড়া লাচ্চা সেমাই তৈরি করে ভাজতে ঘি প্রয়োজন হয়।

লেখক এর মন্তব্য

আজকে পোষ্টের বিষয় দুধের সর দিয়ে ঘি বানানোর রেসিপি। আজকের এই পোস্টগুলো দেখলে বুঝতে পারবেন ঘি কিভাবে তৈরি করতে হবে। দুধের সর দিয়ে ঘি কিভাবে তৈরি করা যাবে। মাখন কিভাবে তৈরি করতে হবে। ঘি কিভাবে খেতে হবে। এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি পোস্ট গুলো ভালো লাগবে। ভালো লাগলে লাইক শেয়ার ও কমেন্ট করবেন।য


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url