আমলকির উপকারী পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ
আমলকির উপকারী পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ আছে। ফল ও পাতা দুটিই ওষুধরূপে ব্যবহার করা হয়। । আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে । আমলকি খেলে ভিটামিন সি এর চাহিদা পুরন হয়যাদের দাতের স্কার্ভি রোগ আছে আমলকি খাওয়ার ফলে তা ভালো হয়ে যায়। যাদের অপারেশন করা হয় ঘা শুকানোর জন্য আমলকি গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে।
ভুমিকা
আমলকি অত্যান্ত গুরুত্ব পুর্ন ফল। আমলকির উপকারী পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ আছে। ভিটামিন সি জাতীয় ফলের মধ্যে আমলকি সবার উপরে। আমাদের আমলকি নামক ওষধী গুন সম্পন্ন ফল ব্যাপারে জানা দরকার।
প্রত্যেক বাড়িতে একটি করে আমলকি গাছ লাগানো দরকার। আসুন আমরা আমলকি গাছ লাগাই। আমলকির গুনাগুন সম্পর্কে জেনে নিই।
আমলকির পুষ্টিগুণ
আমলকির উপকারী পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ আছে।আমলকীতে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজি লেবুর চেয়ে ৩ গুণ ও ১০ গুণ বেশি ভিটামিন 'সি' রয়েছে। আমলকীতে কমলার চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ।
আরও জানুনঃ কাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা এর বিবরন
কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন 'সি' রয়েছে, ১০০গ্রাম আমলকিতে ৯ মাক্রোগ্রাম ক্যারোটিন থাকে, ০.০৩ মি.গ্রা থায়ামিন, ০.০১মি.গ্রা রিবোফ্লোভিন ও ১.২ মি.গ্রা লৌহ পাওয়া যায়। ৫০ মি.গ্রা ক্যালসিয়াম ও ২০ মি.গ্রা ফসফরাস থাকে ।
আমলকির খাওয়ার উপকারিতা
আমলকির উপকারী পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ আছে। ভিটামিন সি থাকায় অপারেশনের ঘা শুকাতে ইহা খুব ভাল কাজ করে ।. আমলকির রস কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যা দূর করতে পারে। এছাড়াও এটি পেটের গোলযোগ ও বদহজম দুর করতে সাহায্য করে।
এক গ্লাস দুধ বা পানির মধ্যে আমলকি গুঁড়ো ও সামান্য চিনি মিশিয়ে দিনে সকাল, সন্ধা খেতে পারেন। এ্যাসিডিটির সমস্যা দুর করতে সাহায্য করে। আধা চূর্ণ শুষ্ক ফল এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে খেলে হজম সমস্যা কেটে যাবে। খাবারের সঙ্গে আমলকির আচার হজমে সাহায্য করে।
প্রতিদিন সকালে আমলকির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এতে ত্বকের কালো দাগ দূর হবে ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়বে। আমলকি চুল মজবুত, চুলের বৃদ্ধি, খুকসি দুর, ও চুল পাকা দুর করতে সাহায্য করে ।
ইহা খেলে শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ে, পেশী মজবুত হয়, পাকস্থলি ও হৃদযন্ত্র সুস্থ থাকে । ইহা চোখের দৃষ্টি শক্তি বৃদ্ধি করে,চোখে পানিপড়া, চুলকানি দুরকরে ।এতে রয়েছে ফাইটো-কেমিক্যাল যা চোখের সঙ্গে জড়িত ডিজেনারেশন প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
নারিকেল তেলের সাথে শুকনো আমলকি মিশ্রিত করে চুলে ব্যাবহার ব্যাবহার করলে চুল ঝর ঝরে হয় ও চুল বড় হয়। আমলকির রস করে সে রস খেলে হাঁপানি ও কাশি ভালো হয়। যাদের যক্ষা হয়েছে আমলকির রস খেলে যক্ষা নিরাময় হয়।
খালি পেটে আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
খালি পেটে আমলকি খাওয়া হলে, আমলকির প্রাকৃতিকভাবে ডিটক্সিফিকেশনের বৈশিষ্ট্যগুলো সবচেয়ে কার্যকর হয় বলে মনে করা হয়। এটি শরীরের হজমের কাজ সহজ করে, যা টক্সিনকে আরও দক্ষভাবে ধংস করে। আমলকির উচ্চ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুলো ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিকেলের প্রভাব দূর করে আরও ডিটক্সিফিকেশনে কাজ করে ।
গর্ভাবস্তায়আমলকি খাওয়ার উপকারিতা
আমলকির মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক উপাদান হবু মায়েদের মধ্যে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনাকে কমিয়ে দেয়।. আমলকীর জুস গর্ভস্থ শিশুর স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই গর্ভাবস্থায় হবু মা-কে আমলকী খেতে বলা হয়।
গর্ভাবস্থায় মাদের অনেক পরিবর্তন দেখা যায় এই কারনে খাবারের রুচি থাকেনা ।আমলকি খাওয়ার কারনে রুচি ফিরে আসে ।জ্বরও মুত্রনালির সংক্রামন থেকে রক্ষা করে । এসিডিটি সমস্যা হলে তা দুর করে।
গর্ভাবস্থায় হাত ও পায়ের পাতা ফুলে যাওয়া খুবই সাধারণ লক্ষণ।যা আমলকি খেলে দুর হয় । কারণ, আমলকিতে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এ ছাড়া আমলকিতে প্রচুর পরিমাণে জলীয় উপাদান থাকায় এটা দেহকে হাইড্ৰেট রাখে । .
আমলকী খেলে অন্তঃসত্ত্বাদের রক্তচাপ ঠিক থাকে। আমলকিতে থাকা ভিটামিন সি রক্তনালি প্রসারিত করতে সাহায্য করে, যা স্বাভাবিক রক্তচাপ ধরে রাখে এবং রক্তচাপ বাড়তে দেয় না।অনেকের গর্ভাবস্থায় মাড়ি থেকে রক্ত বের হয় ।
যার ফলে মুখ দুর্গন্ধ হয় । আমলকীতে থাকা ভিটামিন সি এ সমস্যা থেকে মুক্তি দেয় ।। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় দাঁত ভালো রাখে। দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধে সহায়তা করে।
আমলকি আচার
প্রথমে ৩০০ গ্রাম আমলকি নিয়ে ভালো করে ধুয়ে গ্রেটারের সাহায্যে চিকন চিকন করে কেটে নিতে হবে। কড়াইয়ে এক চামচ পাঁচফোড়ন ,দুইটা শুকনো মরিচ , এক চামচ কালো সরিষা. দিয়ে ভেজে নিতে হবে। ভাজা মসলাগুলো গুঁড়ো করে নিতে হবে।
আরও জানুনঃ ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম
কেটে নেওয়া আমলকি গুলো কড়ায় দিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচড়া করতে হবে। আমলকির মধ্যে স্বাদমতো লবণ দিয়ে আমলকির ভিতরে থাকা পানি শুকানো পর্যন্ত আস্তে আস্তে নাড়তে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে আমলকি নামিয়ে একটা পাত্রে রেখে দিতে হবে।
পুনরায় কড়াইয়ে 200 গ্রাম চিনি দিয়ে সাথে হালকা পানি সহ আস্তে আস্তে নাড়তে হবে। চিনি গলে পানি হলেই তুলে রাখা আমলকি দিয়ে দিতে হবে। কিছুক্ষণ পরে সামান্য বিট লবণ ও সামান্য মরিচের গুঁড়া দিয়ে মিশিয়ে নিতে হবে।
আস্তে আস্তে নাড়নের ফলে আমলকি গুলো শুকনো হলে গুড়ো করা মসলাগুলো দিয়ে দিতে হবে। কিছুক্ষণ নেড়ে তাতে পাতি লেবুর রস দিয়ে দিতে হবে।আরেকটু নেবে শুকনা অবস্থায় পাত্রে রাখতে হবে। এ আচার খেতে খুব মজা। সর্দি কাশি হলে কয়েক দিন এটা খেলে সর্দি কাশি ভালো হয়ে যায়।
আমলকির হজমি গুলি তৈরি
১ কেজি আমলকি নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। চুলাযর কড়াইতে পানি দিয়ে ভালো করে সিদ্ধ করে নিতে হবে। আমলকি সিদ্ধ হয়ে গেলে তুলে নিতে হবে। অতঃপর আমলগুলির ভিতর থেকে বীজ গুলো বাইর করে নিতে হবে।
বীজ বাহিরে করে নেওয়ার পরে আমলকি গুলো মিহি করে বেটে নিতে হবে। পুনরায় কড়াইতে এক কেজি গুড় নিতে হবে। গুড় গুলো ফুটিয়ে নিয়ে এর মধ্যে মিহি করা আমলকি গুলো ছেড়ে দিতে হবে। গুড়ের মধ্যে আমলকি দিয়ে দেওয়ার পরে আস্তে আস্তে নাড়তে থাকতে হবে।
অতঃপর এর ভিতর আধা চামচ সাদা লবণ, আধা চামচ বিট লবণ ,এক চামচ জিরার গুড়া, দুই চামচ গোল মরিচের গুঁড়া, সামান্য হীং, চার চামচ আমচুর পাউডার মিশিয়ে নাড়তে হবে।
পানি শুকিয়ে গেলে উপাদান গুলো কড়াই থেকে তুলে নিতে হবে। ছোট ছোট গুলি করে নিতে হবে। এভাবে আমলকির হজমি গুলি তৈরি করে দীর্ঘদিন খাওয়া যায়। ইহা খেলে ভালো হজমের কাজ করে। এছাড়া বমন বমন ভাব হলে সেটাও দূর করে।
শিশুদের জন্য আমলকির উপকারিতা
আমলকির উপকারী পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ বিদ্যমান। শিশুদের জন্য আমলকি অত্যন্ত উপকারী।আমলকিতে পুষ্টি উপাদান ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, কার্বোহাইড্রেট, মিনারেল, ফাইবার থাকায় বাচ্চাদের পুষ্টি যোগায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ও ব্যাকটেরিয়া জাতীয় রোগ প্রতিরোধ করে।
আরও জানুনঃ বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানের নামের তালিকা
বাচ্চাদের কাশি হলে অথবা ঠান্ডা লাগার সমস্যা থাকলে প্রতিদিন ১৩০ থেকে ১৪০ গ্রাম আমলকির চূর্ণ খাওয়ানো যেতে পারে। এছাড়া আমলকির রস মধু দিয়ে দিনে দুইবার সেবন করলে সর্দি-কাশি ও ঠান্ডা লাগা ভালো হয়ে যায়।
বাচ্চাদের এলার্জি থাকলে এলার্জি দূর করার জন্য আমলকি বীজের শাঁস চুর্ন করে ২৪০ থেকে ৪০০ গ্রাম মধুর সাথে খাওয়াতে পারলে বাচ্চাদের এলার্জি দূর হয়। পানিতে আমলকি দিয়ে গরম করার পরে উক্ত পানি আবার ঠান্ডা করে বাচ্চাদের গোসল করান।বাচ্চাদের চুলকানি খসখসে ত্বক নরম হয় ও চুল ঘন কালো হয়।
বাচ্চাদের ডায়রিয়া ও বমন বামন ভাব হলে ২০০ মিলিগ্রাম আমলকি বীজের গুড়া মধু সহকারে খেলে ডায়রিয়া ভালো হয়ে যায় বমন ভাব দূর হয়ে যায়। ব্যাকটেরিয়াজনিত চোখের কোন সমস্যা হলে আমলকি সহযোগে পানি ফুটিয়ে ছেকে নিয়ে চোখে ব্যবহার করলে ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ ভালো হয়।
বাচ্চাদের কোথাও কেটে গেলে আমলকি পানি দিয়ে ধুইলে রক্ত বন্ধ হয়। সামান্য সিদ্ধ আমলকির সঙ্গে মধু মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়ালে বাচ্চাদের স্মৃতিশক্তি ও মেধা শক্তি বৃদ্ধি হয় ও ইমিউনিটি বাড়ে।
আমলকি খেলে বাচ্চাদের হার্ট ও লিভার ভালো থাকে, রক্তকণিকা তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আমলকির রস বাচ্চাদের হাড় মজবুত করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এই জন্য বলা হয় আমলকির উপকারী পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ আছে।
আমলকির অপকারিতা
আমলকি খাওয়া খুবই উপকারী বলে মনে করা হয়। তবে আমরা অনেকেই জানি না আমলকিরও অনেক অপকারিতা রয়েছে। লিভারের ক্ষতি করতে পারে ।আপনি যদি আমলকি এবং আদা একসঙ্গে খান, তবে এটি আপনার লিভারে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে। অ্যাসিডিটি বাড়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।
রক্তচাপকে প্রভাবিত করে.প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া করে ।যারা ব্লাডপ্রেসার ও কিডনির সমস্যায় ভোগেন তাদের বেশী আমলকী খাওয়া ঠিক নয় ।কারণ এটি সোডিয়ামের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। এ ফল শরীরের তাপমাত্রা কমিয়ে দেয় ।যার ফলে জ্বর ও সর্দি হতে পারে । সর্দি ও কাশিতে আক্রান্ত হলে এ ফল না খাওয়ায় ভালো
লেখকের মন্তব্য
আমলকির উপকারী পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ সম্পন্ন ফল । এ ফল ব্যাবহার করে প্রাকৃতিক ভাবে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা যায় । এজন্য আমাদের বেশী বেশী এ ফল খাওয়া উচিৎ । আশা করি আমলকি সম্পর্কে জানতে আমাদের এ পোষ্ট গুলো সহায়ক হবে। কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করবেন। আর ভাল লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
পোস্টটি ভালো লেগেছে