জিন জাতীর অস্তিত্ব ও রহস্যের ইতিহাস
জিন জাতী হলো ইসলাম ধর্মের গ্রন্থ আলকোরআনে বর্ণিত একটি জীব/ সৃষ্টি। প্রাক ইসলামী যুগেওর জিন জাতী সংক্রান্ত বিশ্বাস আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন জাতীর মাঝে ছিল। আরবি জিন শব্দের অর্থ হল যা গুপ্ত, অদৃশ্য, অন্তরালে বসবাসকারী অথবা অনেক দূরবর্তী। আমাদেরন জিন জাতীর অস্তিত্ব ও রহস্যের ইতিহাস জানা দরকার।
বিজ্ঞান এখনও জিনের অস্তিত্ব বিশ্বাস করেনা । তবে বিভিন্ন সমাজে কিছু কিছু মানুষ কর্তৃক জিন বশ করা বা জিনদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি প্রচলিত আছে। ইসলামি বিশ্বাস মতে, জীনের অস্তিত্ব আলকোরআন দ্বারা প্রমাণিত।
ভুমিকা
জিন জাতীর অস্তিত্ব ও রহস্যের ইতিহাস সম্পর্কে কাহারো সন্দেহ করার অবকাশ নাই। জিনের অস্তিত্ব সম্পর্কেআলকোরআন ও অন্যান্ন ধর্মগ্রন্থে উল্লেখ আছে । এ জন্য মুফাসসিরগণ বলেছেন, ইমানদার গন কেউ জিনের অস্তিত্ব অস্বীকার করতে পারেনা। কারণ কুরআন ও হাদিসে অনেক বার জিনদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও জানুনঃ আমলকির উপকারী পুষ্টি ও ওষধি গুনাগুণ
কোরআন মাজিদে একটি সুরা আছে জিন জাতি সম্পর্কে। আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারিমে বলেছেন ‘আমি জিন ও মানুষকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি’ (সুরা যারিয়াত : ৫৬)।
এই আয়াত থেকে দুটি বিষয় পরিষ্কার করা হয়েছে, প্রথমত, আল্লাহ তায়ালা মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছেন। দ্বিতীয়ত, মানুষ ও জিন জাতিকে আল্লাহর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন।
জিন জাতীর আদি পিতা-মাতা
জিন জাতীর অস্তিত্ব ও রহস্যের ইতিহাস জানা আমাদের প্রয়োজন। জিন জাতীর আদি পিতা-মাতার নাম আজাজিলের মাতার নাম নীলবিহু ছিল। নীলবিহু জাতির ৫ম নেতা হামুছের মেয়ে । নীলবিহুর আকৃতি ছিল নেকড়ে বাঘের মত ও স্বভাবও ছিল নেকড়ে বাঘের মত ।
ঐ সময় জিন জাতীর মধ্যে নীলবিহুর ন্যয় সুন্দরী আর কেও ছিলনা ।জিন জাতীর বাবা ইনসানের আদি পিতা আবুল জিন্নাত সামুম। হাদিস শরীফে রয়েছে যে, আবুল জিন্নাত সামুমকে আগুনের শিখা দিয়ে তৈরি করার পর আল্লাহপাক বলেন, “তুমি কি চাও”।
উত্তরে জ্বীনন্নাত সামুম বলে, “আমি ও আমার জাতীর জন্যে তিনটি বস্তুু চাই এ দুনিয়াতে যেন অদৃশ হয়ে থাকতে পারি, বৃদ্ধ হওয়ার পর আবার যুবক হয়ে মারা যেতে পারি এবং মারা যাওয়ার পর এ পৃথিবী থেকে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারি। আল্লাহ তায়ালা তার দাবী গ্রহন করেন এবং দুনিয়াতে প্রেরণ করেন।
জিনের সৃষ্টিরহস্য
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন আর জিনকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে। আল্লাহ তায়ালা মানুষ ও জিন জাতির সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কে বলেন, ‘মাটির শুকনো ঢিলের মত পচা কাদা থেকে তিনি মানুষ কে সৃস্টি করেছেন ।আর জিনদের সৃস্টি করেছেন আগুনের শিখা থেকে (সুরা আর রহমান : ১৪-১৫)।
এখানে আল্লাহ মানুষ ও জিনদের সৃষ্টির রহস্য বর্ণনা করেছেন। কাদামাটি রোদে শুকানোর পরে যে পোড়ামাটির রূপ নেয়, তা থেকে আদমকে সৃষ্টি করেছেন। আর জিন জাতীকে সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াবিহীন গাঢ় আগুনের লেলিহান শিখা থেকে।
শয়তান জিন জাতিরই অংশ।জিনের ধর্ম আল্লাহ তায়ালা কুরআন মাজিদ নাজিল করেছেন মানুষ ও জিন জাতীর জন্য। মানুষের জন্য যেমন কোরআন অনুযায়ী আমল করা জরুরি, জিনের জন্যও জরুরি। আল্লাহ ও নবীর (সাঃ) প্রতি ঈমান রাখা মানুষের জন্য যেমন আবশ্যক, জিন জাতীর জন্যও আবশ্যক।
মহানবী (সাঃ) তায়েফ থেকে ফেরার পথে জিনদের একটি দল নবীজির খেদমতে হাজির হয়ে ঈমান গ্রহণ করেছেন। কোরআন মাজিদে সেই ঘটনার বিবরণ দিয়ে সুরা জিন অবতীর্ণ করা হয়। আল্লাহ তায়ালা তাদের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা কুরআন মাজিদে এভাবে বর্ণনা করেছেন।
,বলুনঃ আমার প্রতি ওহী নাযিল করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল কোরআন শ্রবণ করেছে, অতঃপর তারা বলেছেঃ আমরা বিস্ময়কর কোরআন শ্রবণ করেছি যা সৎপথ প্রদর্শন করে। ফলে আমরা জিন জাতীর অস্তিত্ব ও রহস্যের ইতিহাস এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করি।
আমরা কখনও আমাদের পালনকর্তার সাথে কাউকে শরীক করব না। আরও বিশ্বাস করি যে, আমাদের পালনকর্তার মহান মর্যাদা সবার উর্ধ্বে। তিনি কোন পত্নী গ্রহণ করেননি এবং তাঁর কোন সন্তান নেই।
জিনের বাসস্থান
জিন জাতীর অস্তিত্ব ও রহস্যের ইতিহাস পড়লে জানা যায় জিনেরা সাধারণত মনুষ্য-লোকালয়ে বসবাস করে না। বসবাসের জন্য তারা নির্জন জনমানবহীন এলাকা, মরুভূমি, পরিত্যক্ত বাড়ি, নোংড়া ও আবর্জনাযুক্ত স্থান পছন্দ করে। বিশেষ করে বাথরুমে অনেক খারাপ জিনের অবাধ বিচরণ থাকে।
আরও জানুনঃ আমাশয়ে বেলের উপকারিতা সম্পর্কে জানুন
তাই নবীজি (সাঃ) বাথরুমে প্রবেশের সময় দোয়া পড়তে বলেছেন। জিনের জাতীর আকৃতি জিন জাতী মূল আকৃতি বদলে মানুষ ও পশুপাখিরআকৃতি গ্রহন করতে পারে। কখনো শেয়াল-কুকুরের আকৃতি গ্রহন করে, কখনো মানুষের আকৃতি গ্রহন করে, কখনো সাপ-বিচ্ছুর আকৃতি গ্রহন করে। বেশ কিছু হাদিসে এমন ঘটনার বর্ননা আছে ।
মক্কার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি সুরাকা ইবনে যুশামের আকার ধারণ করে একজন জিন সাহাবি বদরযুদ্ধে অংশ নিয়ে ছিলেন। একটি দীর্ঘ হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে এক দুষ্টলোকের ঘটনা বর্ণিত আছে যে, সে প্রতি রাতে জাকাতের মাল চুরি করতে আসত। আবু হুরায়রা প্রতি রাতেই তাকে ধরে ফেলতেন।
কিন্তু লোকটি বিভিন্ন অনুরোধ করে মাফ নিয়ে চলে যেত। পরের রাতে আবার চুরি করতে আসত। পরপর তিন রাত সে মানুষটিকে ধরার পর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আবু হুরায়রাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আবু হুরায়রা! তুমি কি জানো তুমি এই তিন দিন কার সঙ্গে কথা বলেছ?’ তিনি বললেন, ‘না।’ নবীজি বললেন , ‘এটা ছিল শয়তান।’ (বুখারি : ২৩১১)
জিন জাতীর আজব তথ্য
জিন জাতীর অস্তিত্ব ও রহস্যের ইতিহাস ব্যাপারে হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সফরসঙ্গী হিসেবে মক্কার জঙ্গলে দেখতে পাই এক বৃদ্ধ লাঠি ভর করে চলছিল। তাকে দেখে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন তুমি জিন হবে।’ সে বলল‘জি হ্যাঁ।’
তার জবাবে রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নাম কি ? সে বলল, ‘আমার নাম হামা ইবনে হীম ইবনে আকিয়াস ইবনে ইবলিশ। রাসুল (সাঃ) বললেন তোমার ও ইবলিসের পার্থক্য দুই পুরুষ ।’ সে জবাব দিলো, ‘জি হ্যাঁ’। হুজুর (সাঃ) প্রশ্ন করলেন: ‘তোমার বয়স কত?’ সে জবাবে বলল, ‘দুনিয়ার বেশির ভাগ সময় আমি দেখেছি।
যে রাতে কাবিল কর্তৃক হাবিল নিহত হয় তখন আমার বয়স ছিল কয়েক বছর। আমি সেটা দেখছিলাম এবং খুশি হচ্ছিলাম আর লোকদের উত্তেজিত করছিলাম। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন: ‘এটা তো খুব খারাপ কাজ ছিল।’ সে বলল, ‘হে আল্লাহর প্রিয় নবী! আপনার প্রতি দরুদ ও সালাম নাজিল হোক।
আমি সে লোকদের মধ্যে একজন যারা নূহ (আঃ)-এর প্রতি ঈমান এনেছিল এবং আমি ও তার পবিত্র হাতে তওবা করেছি ।তার বিভিন্ন্কাজে সহযোগিতা করেছি ।’ অতঃপর সে বৃদ্ধ জিন কান্নায় ভেঙে পড়েন । অতঃপর সে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বললেনআল্লাহর কসম, খুবই লজ্জিত যে, আমি কাফের থেকে যাব, আমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
হজরত মূসা (আঃ) আমাকে তওরাত শিখিয়েছিলেন এবং হজরত ঈসা (আঃ) আমাকে ইঞ্জিল শিখিয়েছেনএবং আপনি আমাকে কোরআন শিখিয়ে দিন।’ অতঃপর হুজুর (সাঃ) তাকে কোরআন শিখিয়ে দেন।একটি বর্ণনায় বলা হয়েছে, হুজুর (সাঃ) তাকে কোরআনের মাত্র দশটি সূরা শিখিয়েছিলেন।
আমরা তাঁর মৃত্যুর খবর পাইনি এবং আমরা তাঁকে দেখিওনি। জীবিত আছে কিসে নাই আল্লাহই ভালো জানেন ।
জিনে আক্রান্তের লক্ষন
কিছু দুষ্ট জিন আছে, যারা সুযোগ পেলেই মানুষের ক্ষতি করে বসে। আক্রান্ত লোকের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়। ঘুমন্ত অবস্থায় হঠাৎ কেঁদে ওঠা, উচ্চ স্বরে কথা বলা, জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলা এবং ঘুম থেকে আতঙ্কিত অবস্থায় বসে পড়া বা দাঁড়িয়ে যাওয়া ।
আরও জানুনঃ অলিভ অয়েল তেল ব্যবহারের নিয়ম
জাগ্রত অবস্থায় এমন কিছু দেখা, যা স্বপ্ন মনে হবে। হঠাৎ বেহুঁশ হয়ে যাওয়া। সব সময় ভীতু ভাব থাকা। কখনও ভিন্ন ভাষায় কথা বলা। আশ্চর্যজনক আচরণ প্রকাশ পাওয়া, যেমন অল্প সময়ে বহুদূর চলে যাওয়া। মেয়েদের ক্ষেত্রে স্বামী-সন্তান ও সংসার বিরক্তিকর হয়ে ওঠা। কোরআন তেলাওয়াত শুনলে অস্থির হয় ।
যেহেতু খারাপ জিনেরা এসব সহ্য করতে পারে না। ভয়ংকর স্বপ্ন দেখা। যেমন—কালো কুকুর, কালো সাপ, কালো বিড়াল অথবা পাহাড় বা উঁচু স্থান থেকে পড়া, পানিতে পড়া। শরীরের ভারসাম্যহীনতা অনুভব করা। অল্পতেই রেগে যাওয়া।
সর্বদা ঘুমের ভাব লেগে থাকা। কাজকর্মে অনীহা । একাকী ও নির্জনতা পছন্দ করা। সাধারনত বাচ্চা ও নারীদের বেশী ক্ষতি করে । ক্ষতিকর জিন থেকে বাচার উপায় সবসময় পবিত্র থাকা। কোনো কারণে গোসল ফরজ হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব গোসল করা।পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা অজু অবস্থায় থাকা ঘরে নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করা।
বিশেষ করে সুরা বাকারার শেষের তিন আয়াত তেলাওয়াত করা। প্রতি নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা। ঘুমানোর সময় আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমানো। ঘরে কোনো প্রাণীর কঙ্কাল ও মূর্তিজাতীয় জিনিস না রাখা।
নির্জন বা ময়লার স্তূপ, আগুনের কুণ্ডলীর কাছে একাকী না যাওয়া। জনমানবহীন স্থান, গভীর জঙ্গলে রাতের বেলায় একাই না যাওয়া।সকাল-সন্ধ্যা সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস তিনবার করে পড়ে হাতের মধ্যে ফুঁক দিয়ে শরীরে মুছে নেওয়া।
লেখকের মন্তব্য
জিন জাতী আমাদের জন্য অনেক ভয়ের কারন ।তাই জিন থেকে আমাদের সাবধানে থাকা দরকার ।সাধারনতঃ দুষ্ট জিনেরা মানুষের ক্ষতি করে ।আমরা যদি সবসময় পবিত্র থাকি এবং পোষ্টে আলোচিত আমল করতে পারি তাহলে জিন থেকে রক্ষা পাব ।
আমরা জিন জাতীর অস্তিত্ব ও রহস্যের ইতিহাস বিশ্বাস করি। আশা করি পোষ্টগুলো ভালো লাগবে। ভালো লাগলে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করবেন ।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url