পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ

 মলদ্বার অথবা মলদ্বারের শিরা গুলো ফুলে যায় এবং প্রসারিত হয়ে গেলে এই রোগ কে পাইলস অথবা হেমোরয়েড বলি। পাইলস হলে অত্যাধীক কষ্ট হয়। পাইলসের অবস্থানের উপর নির্ভর করে মলদ্বারের ভিতর অথবা মলদ্বারের চারপাশের ত্বকের অবস্থা নির্ভর করে পাইলসের শ্রেণীবিভাগ করা যায়। 

সাধারণত কষ্টকাঠিন্য থেকে এ সমস্যাগুলো তৈরি হয়। পাইলস খুব সাধারণ রোগ। যে কারো হতে পারে। শতকরা ২৫ ভাগ মানুষের পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আজকের বিষয় পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ। এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

ভূমিকা

পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। বাহ্যিক ভাবে পাইলস খুব সাধারণ ও অস্বস্তিকর ধরন। সাধারণত এগুলো মলদ্বারের চারপাশে ত্বকের নিচে হয়। পাইলসের কারণে মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি ও ব্যথা হয়। পরবর্তীতে সেটা রক্তপাত হয় ও জমাট বাঁধে। জমাট বাধা পাইলস গুলো সাধারণত নীল কালার দেখায়।  

আরও পড়ুনঃ ওজন কমাতে টক দই খাওয়ার নিয়ম

অভ্যন্তরের পাইলস মলদ্বারে অভ্যন্তরীণ আস্তরণের বিকাশ লাভ করে। এগুলো সাধারণত ব্যাথাহীন বড় না হলে স্পষ্ট হয় না। এগুলো থেকে রক্তপাত হয়। বড় হয়ে গেলে ফোটা ফোটা রক্ত পড়ে। একপর্যায়ে মলদ্বারের বাইরে প্রসারিত হতে পারে। এই সমস্যাটা খুব অস্বস্তিকর।

 পাইলস এর চিকিৎসা ঔষধের নাম

পাইলসের চিকিৎসায় হেমোরয়েড‌ পিলো হেমোরয়েড ক্রিম ও রেক্টাল সাপোজিটরি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পাইলস সমস্যায় ডাইনি হেজেল অর্থাৎ ওষুধ ধারণকারী প্যাড ব্যবহার করতে পারেন। হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে দিনে ২-৩ বার ১০ থেকে ১৫ মিনিটের জন্য মলদার ভিজিয়ে রাখুন।পাইলস এর হোমিও চিকিৎসা করা হয়।  , 

হোমিও ডাক্তারদের মতে যে ওষুধগুলো ব্যবহার করা হয় তা হল নাক্সভূমিকা, সালফার, পডোফাইলাম, পালসেটিলা ইস্কিউলাস,কলিনসোনিয়া, কারবোভেজ, হ্যামামেলিস, আসিডমিউর, অ্যালো,ইগনেশিয়া,পিওনিয়া ইত্যাদি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। একটি প্যাকেটে করে কিছু বরফ নিতে হবে।

 মলাশয়ের উপর থেকে লাগিয়ে রাখলে উপশম পাওয়া যায়। অনেক সময় বিছানায় শুয়ে থাকা অবস্থায় পা উপরে রাখলে গোটা গুলোতে রক্ত চলাচল হয় ও উপশময় হয়। মলাশয় পরিষ্কার ও শুকনা রাখতে হবে। মলত্যাগ করার পরে হাত দিয়ে ঘষাঘষি করা যাবে না।পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ এইটি জেনে খাদ্যাভাস পরিবর্তন করতে হবে।

পাইলস এর প্রাথমিক লক্ষণ

 পাইলস হলে পায়খানার সঙ্গে লাল বর্ণের তাজা রক্ত যায়। টয়লেট পেপার ব্যবহার করলে সে টয়লেট পেপার দ্বারাই বোঝা যায়। রক্ত বাহির হয়েছে। পাইলস হলে পায়ুপথে এনাল কুশন গুলো থেকে রক্ত ক্ষরিত হয়। এ রক্ত বাহির হয়ে জমাট বাধার সুযোগ পায় না। যার কারনে লাল রক্ত দেখা যায়।

 অনেকের আবার পায়খানার সঙ্গে গাড়ো খয়েরি রং এর রক্ত দেখা যায়। কালো ও নরম পায়খানা হয়। এই অবস্থা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।পায়ুপথের মুখের অংশগুলো বেরিয়ে আসে। পাইলস হলে সাধারণত মলত্যাগের পরে এনাল কুশন গুলো বাইরে বেরিয়ে আসে। এগুলো আবার কিছু সময় পরে ভিতরে ঢুকে যায়। 

যদি না ঢুকে তাহলে আঙ্গুল দিয়ে ঢুকিয়ে দিতে হয়। অনেকের আবার এমন পর্যায়ে যায় যে আঙ্গুল দিয়ে ঢোকানো যায় না। মল দ্বারে ব্যথা হয়। পাইলসের কারণে মলদ্বারের তীব্র ব্যাথা হয়। পাইলসের অবস্থা যদি এমন হয় যে আঙ্গুল দিয়ে ঢোকানো যায় না। তাহলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয় এবং তীব্র ব্যথা হয়।

 চিকিৎসা না করলেএই ব্যথা দু-তিন দিন ও থাকতে পারে। এছাড়া পায়ুপথে আঠালো জেলির মত পদার্থ বাহির হইতে পারে। মলত্যাগ করার পরেও মনে হয় পেট পরিষ্কার হয়নি। আবার মলত্যাগ করা দরকার। মলদ্বার  চুলকানি হয়। পায়ুপথে অথবা মলদারের চারিদিকে পর্যাপ্ত চুলকায়। অথবা পায়ুপথে জেলীর মত বাহির হয়। 

পাইলস কেন হয় 

কিছু কিছু অনিয়মের কারণে পাইলস হয়। অনিয়ম গুলো নিম্নরূপ শক্ত বা কষা পায়খানা যাকে বলা হয় কোষ্ঠকাঠিন্য। মলত্যাগের সময় জোরে চাপ দেওয়া, অনেক সময় ধরে মলত্যাগ করা। পায়খানার ভাব হওয়ার পরেও পায়খানা আটকে রাখা। শারীরিক পরিশ্রম না করা। অতিরিক্ত ওজন হওয়া। 

এছাড়াও গর্ভাবস্থায় শারীরিক পরিবর্তনের কারণেও অনেকের পাইলস হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। সাধারণত নিয়ম তান্ত্রিক খাওয়া ও আষ যুক্ত খাবার খাওয়া ও শারীরিক পরিশ্রম করলে পাইলস  হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। বার্ধক্য জনিত কারণে পায়ুপথের ত্বক অনেকের পাতলা হয়ে যায়। 

যার কারণে খুব তাড়াতাড়ি পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় কিছু কিছু মানুষ আছে পায়ুপথে সহবাস করে। পায়ুপথে সহবাস করার ফলে মলদ্বারের ত্বক পাতলা হয়ে যায়। 

যার কারণে পাইলস হতে পারে। বারবার ডায়রিয়া হলে অথবা বেশি বেশি কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাইলস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। পাইলস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য এর চিকিৎসা করতে হবে।

পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ

পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া দরকার। চা অথবা কফি খাওয়া পুরোপুরি বাদ দিবেন। টক জাতীয় খাবার যেমন তেতুল লেবু টক আম কমলা লেবু ভিনেগার ইত্যাদি যুক্ত খাবার খাবেন না। আমিষ যাতীয় খাবার যেমন মাংস ডিম এগুলো পুরোপুরি বাদ দিবেন। অতিরিক্ত ভাজাপোড়া অথবা তেল দিয়ে ভাজা এগুলো খাদ্য বাদ দিবেন।

আরও পড়ুনঃ জেনে নিই সুষম খাদ্য কাকে বলে

 ধূমপান ও মদ্য পান পুরোপুরি ছেড়ে দিতে হবে। ভারী ব্যায়াম করা বাদ দিবেন তবে হাটাহাটি চলবে। পাইলস অবস্থায় বাহিরে সফর অথবা অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকা অথবা অনেক রাত জেগে কাজ করা বাদ দিতে হবে। প্রচুর পানি পান করতে হবে, কমপক্ষে ৩ -৪ লিটার। 

প্রতিদিন তিনবার মূলা অথবা গাজর এর শরবত খেতে হবে। ভাত তরল করে ডাউল সহ খাওয়া যেতে পারে। ব্রেকফাস্ট এ সবজি অথবা লাল আটার রুটি খেতে পারেন। দুপুরে মুগ ডাল দিয়ে খিচুড়ি অথবা নরম ভাত খেতে পারেন। রাতে সাধারণত লাল ময়দার রুটি খাবেন।

অথবা লাল চালের ভাত মুগ ডাল অথবা সবজি দিয়ে হালকা খেতে পারেন।প্রচুর ফাইবার যুক্ত ফল যেমন তরমুজ পেঁপে ডালিম পেয়ারা ইত্যাদি খেতে পারেন। অ্যালোভেরার জুস খেতে পারেন। চিয়াসিড তালমাখনা ও ইসুবগুলের ভুষি সহ মিশিয়ে খেতে পারেন।

কি খেলে পাইলস ভালো হয়

পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ জেনে নিয়ে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে বাঁচতে বেশি বেশি আষ ও ফাইবার যুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন শাকসবজি ফলমূল লাল চাল আর ভাত ও লাল আটা রুটি। প্রচুর পরিমাণ পানি খেতে হবে যার কারণে পায়খানা যাতে নরম হয়। অর্থাৎ দিনে কমপক্ষেদুই লিটার পানি খেতে হবে। 

সাধারণত কয়েকদিন আমিষ জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। বিশেষ করে মাংস জাতীয় খাবার এগিয়ে চলা দরকার। মলত্যাগের সময় খুব জোরে চাপ দেওয়া যাবে না। আস্তে আস্তে মলত্যাগ করতে হবে। মলত্যাগের সময় অনেক সময় ব্যয় করা যাবে না। 

প্রয়োজন হলে পায়খানার চাপ হওয়ার কারণে আবার টয়লেটে যাওয়া যেতে পারে। কোন সময় আটকে রাখা যাবে না। এখানে আটকে রাখলে কোষ্ঠকাঠিন্যতা বেড়ে যায়। নিয়মিত ব্যায়াম ও শরীরচর্চা অথবা কাইক পরিশ্রম করতে হবে। অতিরিক্ত ওজন হলে কমাতে হবে।    

পাইলস এর প্রাথমিক চিকিৎসা      

পাইলস এর ব্যথা ভালো করার জন্য প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করা দরকার। এছাড়া ব্যাথা দূর করার জন্য পাইলস এর জায়গাটুকু কুসুম কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা যায়। 

ছোট বাচ্চাদের গোসল করানোর মত গরম পানি কোথাও রেখে তার উপর বসে থাকতে হবে। এইটা দিনে তিনবার করতে হবে। কোথাও বসতে গেলে বালিস ব্যবহার করে তার উপর বসাই ভালো। একটা প্যাকেটে কিছু বরফ নিয়ে সেটি তোয়ালা দিয়ে জোড়ে পায়ুপথে লাগানো যায়।

 শুয়ে থাকার সময় পা উঁচু করে রাখলে পাইলসের জায়গাটি রক্ত চলাচল শুরু হয়।যার কারণে ব্যথা দূর হয়। পায়ুপথ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে ও শুকনা রাখতে হবে। মলত্যাগের জায়গা ঘষাঘুষি না করাই ভালো। ৬-৭ দিন এভাবেই চিকিৎসা করে ভালো না হলে চিকিৎসকের কাছে পরামর্শ নিতে হবে।

পাইলস এর মলম

পাইলস হলে নিম্নলিখিত মলম ব্যবহার করা যায়। ।যাইলো ৫% অয়েন্টমেন্ট। জেসিকেইন ৫% এগুলো পায়ুপথে দিনে তিনবার ব্যবহার করতে হবে।

লেখক এর মন্তব্য

পাইলস হলে কি কি খাওয়া নিষেধ এ বিষয়ে আজকের পোস্টে আলোকপাত করা হয়েছে।আমরা যদি নিয়ম তান্ত্রিক খাদ্য অভ্যাস মেনে চলি তাহলে পিইলস নিতে বেঁচে থাকব। 

যেহেতু পাইলস কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেই বেশি হয়। আসুন আমাদের খাপ খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করে আষ জাতীয় খাবার বেশি খাই। আশা করি এই পোস্ট গুলো ভাল লাগবে। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url