কাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা এর বিবরন

আমাদের এই পোস্টগুলোতেকাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা এর বিবরণ বর্ণনা করা হবে। কলার জনপ্রিয়তা পুরো বিশ্বজুড়ে। উষ্ণ জলবায়ু এলাকায় কলার উৎপাদন বেশি হয়। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় কলার উৎপত্তিস্থল বলে মনে করা হয়। বাংলাদেশ সহ আরো বহু দেশে কলা বেশি খাওয়া হয়। বাংলাদেশের নরসিংদী,মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, যশোর, বরিশাল, বগুড়া, রংপুর, জয়পুরহাট, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুর জেলায় ব্যাপকভাবে কলা চাষ করা হয়। তবে রাজশাহী জেলাতেও কাঁঠালি কলা চাষ করা হয়। বাংলাদেশে উচু জমি গুলোতে সারা বছর কলা চাষ করা হয়।

ভূমিকা

কলা একটি উপকারী পুষ্টিগুণ সম্পন্ন ফল। বিশেষ করে কাঁঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক। আমরা সবাই কলা খেতে অনেক পছন্দ করি। শরীর গঠনের জন্য বাচ্চাদের কলা খুবই প্রয়োজন। কলার বহু পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। ১০০ গ্রাম কলায় যে খাদ্য উপাদান আছে তা হল পানি ৭০.১ গ্রাম, আমিষ ১.২ গ্রাম, ফ্যাট ০.৩ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৮ গ্রাম।
আশ ০.৪ গ্রাম, শর্করা ৭.২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৮৫ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৫০ মিলিগ্রাম, আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ৮ মিলিগ্রাম, মোটশক্তি ১১৬ মিলিগ্রাম। এছাড়াও পর্যাপ্ত পটাশিয়াম বিদ্যমান। এই পোস্টগুলোতে কলার বিভিন্ন উপকারী ও অপকারী দিক ও অন্যান্য গুণ ও ঔষধি গুণ বর্ণনা করা হলো।

কলা খাওয়ার অপকারিতা

পাকা কলা খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। কাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা এর পাশাপাশি অপকারিতা বিদ্যমান। যেহেতু কলা আমরা সহজে পাই সেহেতু কলার অপকার ও জানা দরকার। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় বেশি কলা খাওয়া ঠিক না কারণ বেশি কলা খেলে ঘুমের সমস্যা হতে পারে।

 ওজন কমাতে আমরা কলা খেলেও বেশি কলা খাওয়াতে ওজন বেড়ে যায়। কলাতে সুগারের পরিমাণ বেশি হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব বেশি কলা খাওয়া ঠিক নয়। বেশি কলা খেলে দাঁতের সমস্যা হতে পারে। যদি ঠান্ডা লাগে অথবা গলা ব্যথা হয় কলা না খাওয়াই ভালো। 

মাইগ্রেনের সমস্যা আছে তাদের কলা না খাওয়াই ভালো। কলায় টাইরামাইন উপাদান থাকায় মাইগ্রেনের সমস্যা হয়। কলা বেশি খেলে পটাশিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে হাইপারক্যালিমিয়া রোগ হয় যার কারণে শরীর সহজে ক্লান্ত হয়, হৃদ স্পন্দন ‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌‌ অনিয়মিত হয়। 

বেশি কলা খেলে কলাতে থাকা ট্রিপটোফ্যান অ্যামাইনো এসিড থাকায় মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা হ্রাস পায় ক্লান্তি ও ঘুম ঘুম ভাব হয়। বেশি কলা খেলে ভিটামিন বি ৬ থাকায় স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হয়। এছাড়াও আরো অনেক অপকার রয়েছে। এজন্য নিয়ম মেনে কলা খাওয়া প্রয়োজন। 

বেশি কলা খাওয়া ঠিক না। যাহারা বদহজম, কাশি ও হাঁপানিতে ভুগতেছেন তাদের কলা খাওয়া ঠিক না। আয়ুর্বেদদের মতে দুধ অথবা দুধ জাতীয় খাবারের সঙ্গে কলা খাওয়া ঠিক না। পাচনতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে বদহজম ও এসিড রিফ্লাক্সের সম্ভাবনা থাকে।

ভরা পেটে কলা খেলে কি হয়

কলা সব সময় ভরা পেটে খাওয়া প্রয়োজন। কলাতে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে যেগুলো খালি পেটে খেলে হজমের সমস্যা হতে পারে। কলা ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম থাকাই ভরা পেটে কলা খেতে হবে। খালি পেটে কলা খেলে ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য রক্ষা হবে না এলোমেলো হয়ে যাবে।

ভরাপেটে কলা খেলে কলায় থাকা পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম এর কার্যকারিতা বৃদ্ধি হয়। ম্যাগনেসিয়াম এর কারণে হার্ট ভালো রাখে আলসার দূর করে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। ভরা পেটে কলা খেলে হিমোগ্লোবিনের উৎপাদন বাড়ে পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

রাতে ভরা পেটে দুধ এর সঙ্গে কলা ও মধু মিশিয়ে খেলে যৌন রোগ ভালো হয়। ভরা পেটে কলা খেলে শারীরিক এনার্জি বৃদ্ধি পায়। শরীরের দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর হয়। রাতে খাওয়ার পরে দুধ কলা দিয়ে ভাত খেতে অনেক মজা লাগে।

পাকা কলা খাওয়ার উপকারিতা

কাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক বেশী।যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ বলেছেন পাকা কলায় শরীরের ত্বক উন্নত করে ম্যাঙ্গানিজ কোলাজেন তৈরির মাধ্যমে ত্বকে তারুণ্য ধরে রাখে এবং ত্বকের ক্ষতি ও বলিরেখা দূর করার সাহায্য করে। নিউইয়র্ক এর পুষ্টি পরামর্শকের মতে পাকা কলা খেলে মলাশয় সুস্থ রাখে।

জন ফোকস বলেন পাকা কলাতে ইলেক্ট্রোলাইট থাকায় দেহে খনিজের ভারসাম্য বজায় থাকে। পেশি টান পড়া কমায়। পাকা কলা খেলে শরীরে খনিজ লবণের ভারসাম্য বজায় রাখে। বিবাহিত পুরুষদের জন্য পাকা কলা খাওয়া খুব দরকারি।

কলাতে পটাশিয়াম থাকার জন্য পুরুষদের যৌন হরমোন টেস্টোস্টেরন বৃদ্ধি করে। যার কারনে যৌন শক্তি অটুট থাকে। গলায় রক্ত বৃদ্ধিকারী এনজাইম ব্রোমেলেন শুক্রানুর মান বৃদ্ধি করে। যার কারণে আমাদের প্রতিদিন পাকা কলা খাওয়া দরকার।

কলা খাওয়ার সঠিক সময়

পুষ্টিবিদগণ বলেছেন সকালে কলা খাওয়া অনেক ভালো। সকালে কলা খেলে সারাদিন পুষ্টিগুণের উপকারিতা পাওয়া যায়। প্রচুর শর্করা আছে তাই সকালে নাস্তার পরে কলা খাওয়া দরকার। আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে কলা খাওয়ার উত্তম সময় হলো সকালের নাস্তার পরে সকাল আটটা থেকে ১১ টা পর্যন্ত। এ সময় কলা খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ পায়।

পাকা কলা খাওয়ার নিয়ম

সাধারণত বেশিরভাগ সময় খালি কলা ছিলে খাওয়া হয়। কলা খাওয়ার আরো কিছু নিয়ম আছে। কলা খাওয়ার পরে এক ঘণ্টার মধ্যে পানি খাওয়া যাবে না। কলাতে পুষ্টি উপাদান গুলো বিদ্যমান। এছাড়া কলা ভারি খাবার যা খেলে খুব সহজে হজম হয় না। সেজন্য কলা খাওয়ার একঘন্টা পরে পানি খেলে হজমে কোন সমস্যা হয় না।

দুধ দিয়ে কলা খাওয়া যায়। স্মুদি শেখ কেক ব্রেড এগুলোর প্রধান উপকরণ হলো কলা। তাই এভাবে কলা খাওয়া যায়। তবে আয়ুর্বেদ গন মনে করেন কলা দুধ একসাথে খাওয়া ঠিক না। কলা দুধ একসঙ্গে খেলে বুকে কফ জমে যায় ও হজমেও সমস্যা হয়।

কাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা

কাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা অনেক।কাঠালি কলা খাওয়ার ফলে মানসিক চাপ কমে। কাঠালি কলা খাওয়ার ফলে কিডনি সুস্থ ও ভালো থাকে। কাঁঠালি কলার মধ্যে পর্যাপ্ত এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় পাকস্থলীতে হজমের পরিমাণ বাড়ায় এবং গ্যাস্ট্রিক ও আলসার রোধ করে। কাঠালি কলায় ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম প্রোটিন শর্করাসহ আরো অনেক উপাদান বিদ্যমান।
যার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শারীরিক শক্তি যোগায়। কাঠালি কলা খাওয়ার ফলে হৃদ যন্ত্র ভালো থাকে। কাঠালী কলায় পর্যাপ্ত পটাশিয়াম থাকায় নিদ্রাহীনতা দূর করে ও ভালো ঘুমের সহযোগিতা করে। কাঠালি কলা খাওয়ার ফলে কলার ভিতরে পটাশিয়াম থাকায় মাথা যন্ত্রণা ও যাদের স্নায়বিক সমস্যা আছে সেটা দূর হয়।

নিয়মিত কাঠালি কলা খেলে ডায়াবেটিস সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কাঠালি কলা খেলে যাদের অ্যালার্জি আছে এলার্জি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কাঠালি কলায় ক্যালসিয়াম ম্যাগনেসিয়াম বিদ্যমান। গুলোর কারণে শরীরের হাড় ও পেশি মজবুত করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

সকালে কলা খাওয়ার উপকারিতা

সকালে কলা খেলে শরীরকে দ্রুত শক্তি প্রদান করে। কারণ এতে উচ্চ পরিমাণ শর্করা আছে। সকালে কলা খেলে কলায় পটাশিয়াম থাকায় হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। সকালে কলা খেলে পেটের সমস্যা দূর করে পেটে অস্থিরতা থাকলে তাও নিরাময় করে।

কলা সেরোটোনিন উৎপাদনের সাহায্য করে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে। কলা ডাইজেস্টিভ সমৃদ্ধ হওয়ায় পাচন প্রক্রিয়া ভালো করে। পেটের কোন সমস্যা থাকলে তাও দূর করে। কলায় পটাশিয়াম থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

সকালে কলা খেলে কলায় থাকা ভিটামিন বি ৬ ও ম্যাগনেসিয়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে খালি পেটে কলা খাওয়া উচিত নয়। নাস্তা করার পরে কলা খাওয়া উচিত।

দুধ কলা খাওয়ার উপকারিতা

কলা স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী। যাহাদের ওজন কম এবং শরীর অনেক ক্ষীন তাদের জন্য রাতের খাবারের পরে দুধ কলা দিয়ে ভাত খাওয়া প্রয়োজন। তাহলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায় এবং কলা ও দুধের পুষ্টির উপাদান একসঙ্গে পায়।

শরীরের দুর্বলতা কেটে যায়। তবে অনেকে বলেন দুধ এবং কলা খাওয়ার মধ্যে ২০ থেকে ৩০ মিনিট সময় পার্থক্য হওয়া দরকার। যারা নিরামিষ ভুঝি তাদের জন্য দুধ কলা একসঙ্গে খাওয়া যেতে পারে।

নিয়মিত কলা খাওয়ার উপকারিতা

নিয়মিত কলা খেলে শরীরের ইউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি হয় ও রোগ প্রতিরোধ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। ফ্রি রেডিকেল কে কম করে এবং শরীরের কোষগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। নিয়মিত কলা খেলে ভিটামিন সি ভিটামিন এ ও ভিটামিন ই প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে শরীরের ইমিউনিটি শক্তি বৃদ্ধি করে।

যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন অথবা ক্রীড়াবিদ অথবা বিভিন্ন খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকেন তাদের নিয়মিত কলা খাওয়া প্রয়োজন। কারণে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম নির্গত হয়। যার ফলে শরীর থেকে ইলেকট্রোলাইট ও খনিজ উপাদান ঘাটতে হয়। নিয়মিত কলা খাওয়ার ফলে ইলেক্ট্রোলাইট ও খনিজ উপাদান এর ভারসাম্য রক্ষা হয়।

যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে তাদের নিয়মিত কলা খাওয়া প্রয়োজন। যাদের ওজন অতিরিক্ত কম তাদের জন্য কলা খাওয়া দরকার। কলাতে লেকটিন নামক প্রোটিন থাকায় ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ লিউকোমিয়ার বৃদ্ধি রোধ করে।

লেখক এর মন্তব্য

কাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা দিক অনেক। বিশেষ করে পাকা কলা এর গুনাগুন শেষ করা মুশকিল। কলা সহজ প্রাপ্য ফল। প্রায় আমরা নিয়মিত কলা খেয়ে আমাদের শরীরের পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করব। কলা সম্পর্কে জানতে আমাদের এই পোস্ট আপনাদের পাশে থাকবে। আশা করি পোস্ট ভালো লাগবে। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url