ননীবিহীন দুধ খাওয়ার উপকারিতার বিবরন
দুধ স্তন্যপায়ী প্রাণীর স্তন্যগ্রন্থি হতে নিঃসৃত একপ্রকার সাদা পদার্থ। ইহা অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ খাদ। যারা অনেক মোটা তাদের জন্য ননীবিহীন দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। দুধ শিশুদের জন্য একমাত্র পুষ্টিকর খাদ্য। সাধারণত ৬ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুরা মায়ের দুধ পান করেন।
শিশুদেরকে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে সাল দুধ খাওয়ানো দরকার। শিশুদেরকে শাল দুধ খাওয়ানো হলে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। বল একজন সুস্থ সবল মাতা দুধ খাওয়ানোর মাধ্যমে শিশুদেরকে সুস্থ-সবল পুষ্টিগুণ সম্পন্ন হিসেবে গড়ে তোলে।
ভূমিকা
আমরা এখানে প্রাণীদের দুধ নিয়ে আলোচনা করব। আমরা অধিকাংশ মানুষ গরুর দুধ খাই। গরুর দুধের সঙ্গে মহিষের দুধ, উটের দুধ, ও ছাগলের দুধ খাওয়া যায়। কোন না কোনভাবে দুগ্ধজাত খাবার আমরা প্রতিদিনই খাই।
আরও পড়ুনঃ কাঠালি কলা খাওয়ার উপকারিতা এর বিবরন
ননীবিহীন দুধ খাওয়ার উপকারিতার বিষয়গুলো জানা দরকার। কারন আমাদের মধ্যে যারা মোটা অথবা যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের জন্য ননী বিহীন দুধ খাওয়ার প্রয়োজন।
আসুন আমরা এই পোস্টে দুধের উপকারিতা। গর্ভবতীদের জন্য দুধের উপকারিতা। শিশুদের জন্য দুধের উপকারিতা। দুধের উপাদান সমূহ বিষয়গুলো এই পোস্টগুলোতে আলোচনা করা হবে।
গরমদুধের উপকারিতা
গরম দুধ এর সবচেয়ে বড় উপকারিতা হলো গরম দুধ তাড়াতাড়ি হজম হয়। দুধ দ্বারা তৈরি খাবার হজমে সমস্যা হয়। তাদের জন্য গরম দুধ খাওয়া অনেক উপকারী। কারণ গরম দুধ তাড়াতাড়ি হজম হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে রাতে ঘুমানোর সময় এক গ্লাস গরম দুধ খান।
দুধ ল্যাক্টোজেন সমৃদ্ধ হয় ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে। রাতে ঘুমানোর আগে এক গ্লাস গরম দুধ পান করে ঘুমালে ঘুম ভালো হয়। গরম দুধে এমাইনো এসিড সক্রিয় হয় এবং ভালো ঘুম হয়। ঠান্ডার সমস্যা হলে এক গ্লাস গরম দুধে এক চামচ মধু মিশিয়ে খান।
ঠান্ডা লাগা ভালো হয়ে যাবে। মেয়েদের পিরিয়ডকালীন পেটে ব্যথা হলে দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করেন। ব্যথা ভালো হয়ে যাবে। গরম করে ও ননীবিহীন দুধ খাওয়ার অনেক উপকারিতা আছে।
ঠান্ডা দুধ খাওয়ার উপকারিতা
যাদের গরম দুধ খেলে হজমের সমস্যা হয় তারা ঠান্ডা দুধ খেতে পারেন। কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ঠান্ডা দুধের সঙ্গে ইসবগুল ভুষি মিশিয়ে খেতে পারেন। কোষ্টকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে। ঠান্ডা দুধে প্রচুর ইলেক্ট্রোলাইট থাকে। এই ইলেক্ট্রোলাইট ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ঠান্ডা দুধ ওজন কমায়। ঠান্ডা দুধে থাকে ক্যালসিয়াম শরীরের বিপাক ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।
বেশি ক্যালরি খরচ করে। এক গ্লাস ঠান্ডা দুধ খেলে দু-তিন ঘন্টা আর কিছু খাওয়ার ইচ্ছা থাকে না। খাওয়ার প্রবণতা কমার জন্য ওজন কমে। যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগেন। যাদের বুক ও পেট জ্বালাপোড়া করে তাদের জন্য ঠান্ডা দুধ খাওয়া অনেক ভালো। রোজ আধা গ্লাস ঠান্ডা দুধ খেলে সমস্যাগুলো দূর হবে।
দুধের মধ্যে কি কি উপাদান আছে
দুধ একটি আদর্শ পুষ্টি সম্পন্ন খাবার। অধিকাংশ লোকই দুধ অনেক পছন্দ করে। দুধের তৈরি খাবারের কোন শেষ নাই। দুধ অত্যান্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবার। দুধের পুষ্টিগণ নিয়ে আলোচনা করা হবে। ১০০ গ্রাম গরুর দুধে নিম্নলিখিত উপাদান রয়েছে। পানি ৮৭.৮গ্ৰাম, প্রোটিন ৩.২ গ্রাম, চর্বি ৩.৯ গ্রাম।
স্যাচূরেটেডফ্যাটি অ্যাসিড ২.৪ গ্রাম। মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাটিএসিড ১.১ গ্রাম। পলিআনস্যাচুরেটেড০.১ গ্রাম। কার্বোহাইড্রেট ৪.৮ গ্রাম। কোলেস্টেরল ১৪ মিলিগ্রাম। ক্যালসিয়াম ১২০ মিলিগ্রাম। শক্তি ৬৬ কিলো ক্যালরি। এছাড়া অ্যামাইনো এসিড পটাশিয়াম ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন বিদ্যমান।
রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা
ক্যালসিয়াম ফসফরাস পটাশিয়াম ভিটামিন এর ভান্ডার হলো দুধ। আমরা প্রত্যহ রাতে ঘুমানোর সময় এক গ্লাস দুধ খাই। রাতে দুধ খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হবে। রাতে দুধ খেলে দুধের প্রোটিন খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করে।
আর আমাদের হৃদযন্ত্র কেউ ভালো রাখে। রাতে দুধ খেলে নারী-পুরুষ উভয়েরই হাড় ও পেশী শক্তিশালী হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি হয়। রাতে এক গ্লাস গরম দুধ খেয়ে ঘুমালে সকালে উঠলে শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সারাদিন কাজ করার শক্তি পায়।
ননীবিহীন দুধ খাওয়ার উপকারিতার বিবরন
প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস ননীবিহীন দুধ খাওয়ার ফলে কোলেস্টেরল কমিয়ে শরীর সুস্থ রাখে এবং ওজন কমানোর সাহায্য করে। দুধ থেকে ননী তুলে নিলে ননীবিহীন যে দুধ থেকে ভিটামিন অ্যামাইনো অ্যাসিড কমে না। যারা ডায়েট করতেছেন তাদের জন্য ননীবিহীন দুধ খাওয়ার অনেক উপকার রয়েছে।
ননী বিহীন দুধ খেলে শরীরের ওজন বাড়ে না। অপরদিকে অ্যামাইনো এসিড ও ভিটামিন এর গুনাগুন গ্রহণের ফলে শরীরে পুষ্টি উপাদান বেড়ে যায়। যাদের অনেক ওজন তারা যদি ননীবিহীন দুধ খান। দুধের চাহিদাও মিটবে আবার ওজনও বেশি হবে না। ননী বিহীন দুধের সঙ্গে ওটস মিশিয়ে খেতে পারেন।
জাফরানের সঙ্গে ননীবিহীন দুধ মিশিয়ে খেতে পারেন। সেই ক্ষেত্রে সর্দি কাশি থাকবে না। মস্তিষ্কের বিকাশ হবে ও মেধা বৃদ্ধি হবে। আসুন আমরা সবাই ননী বিহীন দুধ খেয়ে দুধের স্বাদ গ্রহণ করি এবং দুধের ক্ষতিকর দিক থেকেও বাচি।
দুধ খাওয়ার উপকারিতা
দুধ এমন এক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন পানীয় যা আমরা সবাই খেতে পছন্দ করি। দুধের প্রয়োজনীয় অ্যামাইনো এসিড ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য উপাদান থাকায় আমরা দুধ খেলে শরীরের গঠন ভালো থাকে। শরীরে পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হয় না। ল্যাকটোজেনের জন্য দুধ মিষ্টি লাগে।
দুধে রাইবোফ্লোভিন থাকায় দুধ খেলে মুখের ঘা ও জিহ্বার ঘা ভালো হয়ে যায়। দুধে ট্রিপটোফ্যান থাকাই দুধ খেলে ভালো ঘুম হয়। নিয়মিত দুধ খেলে হাড়ের ব্যথা উপশম হয় ত্বক চুল উজ্জ্বল হয়। দুধের সর মুখে লাগানো অথবা অন্যান্য ত্বকে লাগান।
মুখমণ্ডল ও ত্বক স্বাস্থ্যজ্জ্বল হবে ত্বক উজ্জ্বল হবে ও ত্বক নরম এবং তরতাজা থাকবে। যাদের ঠান্ডা লাগার সমস্যা আছে। জাফরানের সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেলে সর্দি কাশি ভালো হয়ে যাবে শরীরের প্রদাহ কমবে মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটবে, মেধা বৃদ্ধি হবে।
দুধ খাওয়ার পদ্ধতি
দুধ খেয়ে শরীরের উপকারিতা জানার জন্য দুধ খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি জানা দরকার। যাদের ননীবিহীন দুধ খাওয়ার প্রয়োজন তারা ননীবিহীন দুধ খাবেন। অনেকে মিল্কশেক খান তাতে খুব বেশি দুধের উপকার আসে না। আয়ুর্বেদিক শাস্ত্রবিদ দের মতে আম কলা তরমুজ টক জাতীয় কোন ফল এর সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খাওয়া ঠিক না।
কলার সঙ্গে দুধ মিশিয়ে খেলে শরীর থেকে বজ্র পদার্থ বের হয়ে আসতে পারে না। যার কারণে সর্দি কাশি অথবা এলার্জির মত অসুস্থতা হতে পারে। শরীরের মাসল বৃদ্ধি করতে হলে সকালে দুধ খেতে হবে। রুটির সঙ্গে দুধ জ্বাল দিয়েও খাওয়া যেতে পারে। বিভিন্ন মিষ্টি কারক পিঠা দুধ মিশ্রিত করে খাওয়া যেতে পারে। দুধ দিয়ে পায়েস তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে।
লাচ্ছা সেমাই ফিরনি ইত্যাদি শুধু দুধ দিয়ে তৈরি করে খাওয়া যায়। দুধ বিভিন্ন প্রক্রিয়া জাত করে যেমন দই ছানা এগুলো তৈরি করেও খাওয়া যায়। আয়ুর্বেদ মতে খাওয়ার এক ঘণ্টা পরে দুধ খাওয়া দরকার। এক গ্লাস দুধের সঙ্গে এক চামচ হলুদ দিয়ে মিশ্রিত করেও খেতে পারেন দুধ। এক গ্লাস দুধে এক চামচ মধু মিশিয়ে করে খেতে পারেন।
এক গ্লাস দুধে সামান্য জাফরান মিশিয়ে খেতে পারেন। এক গ্লাস দুধে এক চামচ আদার গুড়া দিয়ে খেতে পারেন। এক গ্লাস দুধ আধা চামচ দারচিনির গুড়া দিয়েও খেতে পারেন। এক গ্লাস দুধে দুই চামচ ইসবগুলের ভুষি দিয়ে খেতে পারেন। আপনার সাদমতো আরও বিভিন্ন রকম ভাবে ও দুধ খেতে পারেন।
গর্ভবতীদের দুধ খাওয়ার উপকারিতা
গর্ভকালীন সময়ে দুধ একটি উপকারী খাবার। গর্ভকালীন সময়ে মায়েরা ক্যালসিয়াম ও মিনারেলসের অভাবে ভোগেন। দুধ খেলে গর্ভবতীর মাদের ক্যালসিয়াম মিনারেলের চাহিদা পূরণ হয়। মনে রাখবেন এই সময় দুধ খেলে আপনার পুষ্টির সঙ্গে সঙ্গে সন্তানও পুষ্টিমান হবে। তাছাড়া কথা আছে গর্ভকালীন সময় দুধ খেলে ভুমিষ্ট বাচ্চা ফর্সা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে গর্ভকালীন মায়েরা পর্যাপ্ত দুধ খেলে বাচ্চার ডায়াবেটিস ২ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। দুধে আয়রন থাকায় গর্ভবতী মায়েদের আয়রনের অভাব পূরণ হয় ও বাচ্চা মেধাবী হয়। দুধ খাওয়ার ফলে গর্ভবতী মায়েদের সন্তানের হাড়ের গঠন ভালো হয়। গর্ভকালীন সময় গর্ভবতীরা পর্যাপ্ত দুধ খেলে গ্যাসটিক সমস্যা দূর হয়।
দেহের তরলের ভারসাম্য রক্ষা হয়। গর্ভকালীন সময় যদি অতিরিক্ত ফ্যাট না খেতে চান তাহলেননীবিহীন দুধ খাওয়ার ব্যবস্থা করবেন। সর্বোপরি গর্ভবতী মায়েরা দুধ খেয়ে শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করবেন। পেটে থাকা সন্তানের শারীরিক বৃদ্ধি মস্তিষ্কের বৃদ্ধি ও মেধাবিকাশে সহায়তা করবেন।
দুধ খাওয়ার অপকারিতা
যাদের কিডনিতে পাথর হয়েছে তাদের জন্য দুধ না খাওয়াই ভালো। এছাড়া কিডনি অসুস্থ হলে দুধ না খাওয়াই ভালো। যাদের শরীরে ল্যাকটেজ হরমোনের অভাব রয়েছে তাদের দুধ না খাওয়াই ভালো। যাদের এলার্জি আছে দুধ না খাওয়াই ভালো। কারণ অনেকে মনে করেন দুধে এলার্জি আছে।
যারা আলসার অথবা গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগী তাদের দুধ না খাওয়াই ভালো।দুধ খেলে পেট ব্যথা অথবা ডাইরিয়া হতে পারে।যাদের পেটে অপারেশন করা আছে তাদের দুধ না খাওয়াই ভালো। তবে অপারেশনের ঘা শুকিয়ে গেলে দুধ খাওয়া যাবে। অতিমাত্রায় দুধ না খাওয়াই ভালো। একজন প্রাপ্তবয়স্ক এক থেকে দুই গ্লাস দুধ খেতে পারেন।
লেখক এর বক্তব্য
দুধ আমাদের জন্য একটি অপরিহার্য খাদ্য। খাদ্য উপাদানের সবকটি উপাদানই দুধে বিদ্যমান। সবারই দুধ খাওয়া দরকার। যারা অত্যাধিক মোটা অথবা ডায়াবেটিস সমস্যা আছে তাদের জন্য ননীবিহীন দুধ খাওয়ার প্রয়োজন।
আসুন আমরা প্রত্যেকে খাবারের তালিকায় দুধ রাখি। দুধের বিভিন্ন গুনাগুন জানতে আমাদের এই পোস্টগুলো আপনাদের সহায়তা করবে। কোন কিছু জানার থাকলে কমেন্ট করবেন। ভালো লাগলে লাইক কমেন্ট ও শেয়ার করবেন।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url